হ্যালো টেকটিউনস জনগন, কেমন আছেন আপনারা সবাই? বর্তমান সময়টা ভাল না গেলেও ভবিষ্যতে আমরা সবাই ভাল কাটাতে পারবো, আর এজন্য আপনাদের যা করতে হবে তা হল বাসার মধ্যে থাকতে হবে আর টেকটিউনসের নিত্যনতুন টপিক আর সার্ভিস নিয়ে জানতে সবসময় টেকটিউনসে ভিজিট করতে হবে। আর এই নিত্যনতুন টপিক আর সার্ভিসের ধারা বজায় রাখার নিমিত্তে, আজকে আমি আপনাদের সাথে একদম নতুন একটি টপিক নিয়ে হাজির হলাম। আর আপনারা এই টিউনের মাধ্যমে জানতে পারবেন অনেক নতুন নতুন সব তথ্য।
আপনি কী জানেন আজকে আমরা যে এলইডি (LED) লাইট, এলইডি (LED) টিভি, মনিটর মোবাইল স্ক্রিন ব্যবহার করি তা একটি নভেল পুরষ্কার প্রাপ্ত গবেষণা? আমরা হয়ত তা অনেই জানি না।
আমরা আজকের যে ধবধবে সাদা এলইডি (LED) ব্যবহার করি সেটির আসলে সাদা আলো নয়। ধবধবে সাদা আলোর জন্য দরকার হয় নীল এলইডি (LED)।
আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো এই নীল এলইডি (LED) নিয়ে।
আমরা দৈনন্দিন যেসব প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করে থাকি তা তৈরি করা প্রায় অসম্ভব ছিল যদি না এই নীল এলইডি (LED) আবিষ্কার হতো। আর স্মার্টফোন, টিভি, কম্পিউটার, আইপ্যাড এবং আরও অনেক আধুনিক প্রযুক্তি, বিদ্যুত-সাশ্রয়ী এলইডি (LED) স্ক্রীন ইত্যাদি ই নীল এলইডি (LED) এর কারণে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তছাড়া এই এলইডি (LED) এর কারণে বিভিন্ন ধরনের উজ্জ্বল আলোকিত ছোট ছোট গ্যাজেট তৈরি করা সম্ভব হয়েছে যা কিনা সংখ্যার দিক থেকে এলইডি (LED) স্ক্রীনকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এখন আসুন নিচের আলোচনা থেকে এলইডি (LED) লাইট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
আমরা বিশ্বের ২০-৩০% বিদ্যুত খরচ করি শুধু লাইট জ্বালানোর জন্যে আর এর থেকে প্রায় ৬% গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়ে থাকে।
আর আমরা জানি যে, এলইডি (LED) লাইট গুলি প্রায় ৮০% কম বিদ্যুত শক্তি ব্যবহার করে এবং ইনক্যান্ডেসেন্ট লাইটের থেকে এলইডি (LED) বাল্বগুলি প্রায় ২৫ গুন বেশি স্থায়ী হয়, আর এই এলইডি (LED) লাইট গুলির কারণেই বিশ্বব্যাপী বিদ্যুত-সাশ্রয় করা আমাদের পক্ষে অনেক সহজ হয়েছে।
তবে ১৯৬০ সালে যখন প্রথম এলইডি (LED) আবিষ্কার করা হয়েছিল তখন এটা এতো বেশি ব্যবহার করা হয়নি যা বর্তমানের তুলনায় অনেক সীমিত আকারে ব্যবহার করা হয়েছিল।
৯০ দশকের আগের কথা, যখন জাপানের বিজ্ঞানীরা বর্ণালী রঙের লাইট আবিষ্কারের জন্য গবেষণা করছিল আর এই গবেষণা থেকে তারা আবিষ্কার করতে চেয়েছিল: নীল এলইডি। আর এখন এই নীল রঙের লাইট আবিষ্কার করতে যেয়ে কত কিই না নতুন করে আবিষ্কার হয়েছিল তার ইয়াত্তা নেই।
এর আগে ১৮৭৯ সালে টমাস এডিসন ইনক্যান্ডেসেন্ট লাইট আবিষ্কার করার পরে, বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় ধরে এই ইনক্যান্ডেসেন্ট লাইটের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মত। আর আমাদের ছোট বেলাই তো এই লাইটের আলোতে কেটে গেছে।
তবে সবচেয়ে বিপত্তির কথা হল, এই ইনক্যান্ডেসেন্ট লাইট অনেক বেশি বিদ্যুত খরচ করে, যা বিদ্যুত শক্তি তাপ শক্তিতে কনভার্ট হয়ে বিদ্যুতের অপচয় হয় এবং এই লাইটগুলি বেশি দিন স্থায়ী হয় না।
আর ১৯৩০ সালের দিকে ফ্লুরোসেন্ট লাইট (টিউব লাইট) ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল। যদিও ইনক্যান্ডেসেন্ট লাইটের থেকে ফ্লুরোসেন্ট লাইট (টিউব লাইট) অনেক উজ্জ্বল এবং বিদ্যুত-সাশ্রয়ী ছিল তবুও এই লাইট ইনক্যান্ডেসেন্ট লাইটের আদর্শ প্রতিস্থাপন ছিল না। কেননা এই লাইটে আছে বিষাক্ত পারদ, বেশি অন ও অফ করলে বেশি দিন স্থায়ী হয় না এবং সম্পূর্ণ কাঁচের বডি হওয়ায় ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় তো আছেই। ফলে এর থেকেও আরও ভাল মানের লাইট আমাদের দরকার ছিল যা উপরে বর্ণিত সকল সমস্যার সমাধান হবে এমন একটি লাইট।
১৯৬১ সালের দিকে, Texas Instruments কোম্পানিতে কাজ করার সময়- গ্যারি পিটম্যান এবং জেমস আর বিয়ার্ড একটি লেজার ডায়োড তৈরির চেষ্টা করার সময় দুর্ঘটনাক্রমে প্রথম প্রাকটিক্যাল আলোক নির্গমনকারী ডায়োড আবিষ্কার করেছিলেন।
প্রথম এলইডি (LED) থেকে ইনফ্রারেড আলো নির্গত হত, যা আমরা আমাদের চোখ দিয়ে দেখতে পাই না এবং পরে এটি রিমোট কন্ট্রোলের জন্য এটি অপরিহার্য বস্তু বা উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। আপনারা যারা আগের দিনের রিমোট ব্যবহার করেছেন তারা হয়তো খেয়াল করেছেন রিমোটের সামনে একটি LED লাইট থাকে। এটাই সেই প্রথম আবিষ্কার হওয়া LED লাইট।
এরপর, পরবর্তী তিন দশকে, বিজ্ঞানীরা লাল এবং সবুজ এলইডি (LED) লাইট আবিষ্কার করতে পেরেছিল কিন্তু তারা নীল রঙের এলইডি (LED) লাইট আবিষ্কার করতে পারেনি- যা সাদা আলো তৈরি করার জন্য দরকার ছিল।
তবে সাধারন ইনক্যান্ডেসেন্ট লাইট থেকে এলইডি (LED) লাইট আলাদা, কেননা এলইডি (LED) লাইটে কোন ফিলামেন্ট থাকে না যা জ্বলে উঠবে, ফলে এলইডি (LED) লাইট গরম হয় না এবং এই লাইটে অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ হয়।
আর তাই সবচেয়ে বড় ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানিগুলি একটি পাওয়ারফুল নীল এলইডি (LED) লাইট তৈরির জন্য চেস্টার কমতি রাখে নি। কিন্তু এই নীল এলইডি (LED) লাইট আবিষ্কার করার জন্য তারা প্রায় ৩০ বছর ধরে গবেষণা করেছিল।
এই নীল রঙের এলইডি (LED) লাইট তৈরি করার মূল উপাদান হল গ্যালিয়াম নাইট্রাইড Gallium nitride (GaN), আর এই রাসায়নিক যৌগটি ল্যাবে তৈরি করা অনেক কষ্টসাধ্য বা অসম্ভব ব্যপার ছিল। বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন তা তৈরি করার জন্য এবং তারা ব্যর্থ হচ্ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত নীল আলো তৈরি করার জন্য বিজ্ঞানীরা অন্য কিছুর দিকে মনোনিবেশ করে। অবশেষে তারা সেমিকন্ডাক্টর ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে নীল এলইডি (LED) লাইট তৈরি করবে বলে মনঃস্থির করে।
তবে বেশ কয়েকটি অনুকূল পরিস্থিতির কারণে জাপানের নিচিয়া (Nichia) একটি ছোট রাসায়নিক কোম্পানির বিজ্ঞানী শেষ পর্যন্ত তা আবিষ্কার করে।
প্রথমত, অল্প বাজেট থাকার কারণে বিজ্ঞানী শুজি নাকামুরা স্ক্র্যাচ থেকে লাল এবং ইনফ্রারেড এলইডি তৈরি করতে বাধ্য হয়েছিল, এবং যা তৈরিতে তার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল।
এরপরে, ৮০ এর দশকে বেশিরভাগ কোম্পানি গুলি মেশিন ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এলইডি (LED) তৈরির উপদান তৈরি করেছিল। আর এগুলি করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছিল। পরে নীল এলইডি (LED) ট্রায়াল করার সময় তা অকেজো হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল।
আর এর দ্বিতীয় কারণটি ছিল গ্যালিয়াম নাইট্রাইড Gallium nitride (GaN) ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত, যা অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতে "ডেড এন্ড" হিসাবে বিবেচিত একটি পদার্থ ছিল।
তবে এই রাসায়নিক যৌগটি ব্যবহারের জন্য নাকামুরার (Nakamura) এর ব্যক্তিগত ইচ্ছা ছিল। কেননা তিনি এর উপরেই পিএইচডি করেছিল। নাকামুরার (Nakamura) এর ইচ্ছা ছিল, নীল আলোর জন্য লেখা রিসার্চ পেপার প্রকাশ করা হলে সেটি তাঁর ডিগ্রি অর্জনে আরও সহজ হবে। তবে তিনি হয়ত তখনও জানতেন না যে তিনি বিশ্ব জয় করার গবেষণা হাতে নিয়েছেন।
এরপর আবার তিনি ল্যাবে ফিরে গেলেন, কোন ধরনের ছুটি না নিয়ে এবং তার প্রতিদিনের কাজের রুটিনে কোন ধরনের চেঞ্জ না করে দিনের পর দিন পরিশ্রম করতে লাগলেন। আর এ সময়টা তার কাছে অন্য সময়ের থেকে অনেকটা ভিন্ন ছিল।
পরবর্তীতে তিনি নিচিয়া (Nichia) কোম্পানিকে এলইডি (LED) তৈরির ইকুইপমেন্ট কেনার জন্য রাজি করেছিলেন। স্ক্র্যাচ থেকে শুরু করার পরিবর্তে, তিনি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত ইকুইপমেন্ট এর ছোট কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। তার বিস্তৃত অভিজ্ঞতার ফলে তিনি লাল এবং ইনফ্রারেড এলইডি (LED) তৈরির কাজে ব্যবহৃত ইকুইপমেন্ট এর ছোট কিছু পরিবর্তন করছিলেন।
ঠিক এক বছর পরে, নাকামুরা (Nakamura) সফলভাবে প্রথম গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের তৈরি করে। তাঁর পদ্ধতিটি “Two-Flow MOCVD” নামে পরিচিত, আর আজঅব্দি তার এই পদ্ধতি পৃথিবীর সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। আর সেই সময়ে অন্যান্য জাপানি বিজ্ঞানীদের থেকে তিনিই প্রথম উজ্জ্বল নীল রঙের এলইডি উৎপাদন করতে সক্ষম হন।
আর তাই সেই থেকে এলইডি (LED) শিল্পে নিচিয়া (Nichia) এখনও শীর্ষ স্থান দখল করে আছে, আর তাদের উৎপাদিত এলইডি (LED) অ্যাপল সহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে আসছে।
আর ২০১৪ সালে সুজি নাকামুড়া (Shuji Nakamura) তার আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন, পাশাপাশি নাকামুরার সাফল্যের পূর্বে আরও দুজন জাপানী বিজ্ঞানী উচ্চমানের গ্যালিয়াম নাইট্রাইড উপকরণ তৈরি করতে পেরেছিলেন।
দেখতে ছোট, বিদ্যুত-সাশ্রয়ী এবং অত্যন্ত উজ্জ্বল এলইডি (LED) একটি বিপ্লব শুরু করেছে এবং এখন প্রায় প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক্সে পণ্যে এটি ব্যবহৃত হয়। চিন্তা করা যায়, এটি ছাড়া আমরা বর্তমানে যা ব্যবহার করছি তার বেশিরভাগই ব্যবহার বা তৈরি করা সম্ভব হত না।
এছাড়াও উন্নয়নশীল বিশ্বে এটি জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ব্যপক প্রভাব রয়েছে: সোলার প্যানেল এবং ছোট ব্যাটারির মাধ্যমে এই এলইডি (LED) জ্বালানো সম্ভব, যার ফলে যাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সরকারের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল, এমন 1.2 বিলিয়ন লোকের বাড়িতে আলো পৌছেছে।
আর এই লোকদের বেশিরভাগই এখনও আলোর জন্য কাঠ বা তেল জ্বালাচ্ছেন যা শুধু অপচয়ই নয়, বরং এর কারণে পরিবেশ অনেক দূষিত হচ্ছে।
এছাড়াও একটি হিসেবে করে দেখা গেছে, সকল লাইট যদি এলইডি (LED) তে রুপান্তর করা হয় তাহলে বার্ষিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণকে হ্রাস করবে যার পরিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন-চতুর্থাংশ গাড়ির উৎপাদিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমান।
আর এটি বায়ুশক্তি বা সৌরশক্তির চেয়েও আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতির উপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে। এবং এই মানব সৃষ্ট ক্রিয়াকলাপের কারণে পরিবেশের উপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলছে ফলে বৈষিক উষ্ণায়ন হুহু করে বাড়ছে। আর এই কারণে আমাদের শক্তি সঞ্চয় করার আকাঙ্ক্ষা আগের চেয়ে কয়েক গুন বেড়ে গেছে যাতে করে আমরা কার্বন নিঃসরণকে হ্রাস করতে পারি।
নীল এলইডি (LED) নিয়ে আমার আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চই অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন আর সাথে সাথে জানতে পেরেছেন এটা তৈরি করতে কতটা পরিশ্রমই না করতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। তাদের এই পরিশ্রমের কারনের বর্তমান বিশ্ব এমন অনেক কিছুই তৈরি করতে পেরেছে যা প্রায় অসম্ভব তৈরি করা। আমার আশা আমরা সবাই এলইডি (LED) লাইট ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং এর অপচয় রোধে সজাগ হবো। তো যাই হোক আমার এই আলোচনা আপনাদের কাছে কেমন লাগলো আর কোয়ারেন্টিনে আপনাদের সময় কিভাবে কাটাচ্ছেন তা টিউনমেন্ট করে জানিয়ে দিন।
আমি এরকম নিত্যনতুন কাজের টিউন নিয়ে টেকটিউনসে হাজির হবো নিয়মিত। তবে সে জন্য আপনার যা করতে হবে তা হলো আমার টেকটিউনস প্রোফাইলে আমাকে ফলো করার জন্য 'Follow' বাটনে ক্লিক করুন। আর তা না হলে আমার নতুন নতুন টিউন গুলো আপনার টিউন স্ক্রিনে পৌঁছাবে না।
আমার টিউন গুলো জোসস করুন, তাহলে আমি টিউন করার আরও অনুপ্রেরণা পাবো এবং ফলে ভবিষ্যতে আরও মান সম্মত টিউন উপহার দিতে পারবো।
আমার টিউন গুলো শেয়ার বাটনে ক্লিক করে সকল সৌশল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। নিজে প্রযুক্তি শিখুন ও অন্য প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানান টেকটিউনসের মাধ্যমে।
আমি রায়হান ফেরদৌস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 194 টি টিউন ও 131 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 73 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।