Amazon যেভাবে নতুন স্টার্টআপ-দের জন্য হুমকি

টিউন বিভাগ প্রযুক্তি কথন
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মত আজকেও চলে এসেছি নতুন এক বিশ্লেষণ মূলক টিউন নিয়ে। আজকে আমরা Amazon নিয়ে আলোচনা করব।

শুরুর গল্প

২০১৩ সালের জুন মাসে Silicon Valley এর নতুন স্টার্ট-আপ June, বাজারে প্রথম স্মার্ট ওভেন নিয়ে আসে। আধুনিক এই ওভেনটি ছিল  ওয়াইফাই এনেভল, রেসিপি দেখার জন্য ছিল ডিসপ্লে, সাথে একটি ক্যামেরাও সংযুক্ত ছিল যার মাধ্যমে রুমে কি পরিমাণ খাবার দাবারে আছে তা ট্র্যাক করার ব্যবস্থাও ছিল। এই ওভেনটির সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল এটি Alexa যুক্ত যার মাধ্যমে পুরো ডিভাইসটিকে ভয়েসের কমান্ডের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যেত। চমৎকার এই ওভেনের মাধ্যমে জুন মার্কেট লিডার হয়ে যায় এবং বড় বড় ইনভেস্টররা যেমন, Foundry, Eclypse, Amazon এর মত কোম্পানিরা সেখানে ইনভেস্ট করা শুরু করে।

এক বছর পর ২০১৯ সালে Amazon নিজেদের স্মার্ট ওভেন লঞ্চ করে। তারাও এতে ওয়াইফাই সহ Alexa ভয়েস কন্ট্রোল সুবিধা দেয় এবং  June এর থেকে অর্ধেক মূল্যে। আর এই স্টার্ট-আপ এর মাধ্যমে June এর সাথে Amazon এর সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়।

রিটেইলিং -এ Amazon এর রাজত্ব

এক দিক থেকে ভাবলে এটা Amazon এর জন্য নতুন কিছু না, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিলেটেইটার হওয়াতে প্রতিবছর তারা শত শত নতুন পণ্য বাজারে নিয়ে আসেতেই পারে কিন্তু তাদের নতুন স্মার্ট ওভেন নিয়ে আসার পেছনে কি অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল? হ্যা! বর্তমানে কোম্পানিটি নতুন নতুন স্টার্টআপ বিজনেসদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে কোন কোম্পানি নতুন পণ্য নিয়ে আসলে Amazon  চাইলেই সেটা ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

বাজারে যেকোন পণ্য নিয়ে এসে চাইলেই Amazon রাজত্ব করতে পারে কারণ তারা এখন এমন এক কোম্পানি হয়ে দাঁড়িয়েছে যাদের কাছে মিলিয়ন মিলিয়ন ক্রেতা এবং তাদের ডাটা সংরক্ষিত। ক্রেতারা সহজেই তাদের পণ্য গ্রহন করে আর এটাই নতুন নতুন বিজনেস স্টার্টআপদের জন্য হুমকি। চলুন দেখে নেয়া যাক Amazon পরবর্তীতে কাকে পরাস্ত করলো।

আমরা Amazon  এর সক্ষমতা গুলো খুঁজে বের করতে পারলেই তারা আসলে কি কারণে হুমকি সেটা বুঝতে পারব।

Amazon এর বৃহৎ তথ্যভান্ডার

Amazon পরবর্তীতে কি নিয়ে আসবে বাজারে? স্মার্ট লাইট, থার্মাল নাকি স্মার্ট ওভেন? এই সব কিছু নির্ভর করে ডাটার উপর। একটা সিদ্ধান্ত কতটা ভাল বা কার্যকর হব সেটাও নির্ভর করে ডাটার উপর, এই দিক থেকে Amazon সবচেয়ে বড় সুবিধা নেয়। Amazon যেকোনো কোম্পানি থেকে তারা অনেক বেশি ডাটার মালিক। তাদের কাছে মানুষের বিলিয়ন মিলিয়ন ডাটা সংরক্ষিত আছে। সবচেয়ে বড় রিটেইলার হওয়াতে তাদের হাজার হাজার ক্রেতাদের বিভিন্ন তথ্য তাদের কাছে মজুদ আছে। যেমন তাদের কাছে ক্রেতারা কি ধরনের পণ্য সার্চ করে, মূল্যের সাথে ক্রেতাদের ক্রয় ইচ্ছে কি রকম, ডিসকাউন্টে তাদের রিয়েকশন কি রকম ইত্যাদি তথ্য। তাদের কাছে বিশ্বের সকল ক্যাটাগরির এই বৃহৎ ডাটা থাকার কারণে তারা খুব সহজেই বের করতে পারে কোন কোম্পানিকে সহজেই পরাস্ত করা যায়। সুযোগ বুঝে যেমনটা তারা স্মার্ট ওভেনের ক্ষেত্রে করেছিল।

রিটেইলিং -এ Amazon এর বিভিন্ন ধাপ

আমি এখন Amazon কিভাবে একটি পন্য বাজারে নিয়ে এসে একছত্র আধিপত্য করে এবং কেন বাকি কোম্পানি গুলো তাদের সাথে পেরে উঠে না সেটা বর্ণনা করা চেষ্টা করব। চলুন তাদের ধাপ গুলো দেখে নেয়া যাক।

১ম ধাপ, নতুন পন্য তৈরি

প্রথমে Amazon ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে এবং নতুন পণ্য বানানো আরম্ভ করে আর এর জন্য কিসের দরকার?  টাকা।  Amazon বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করে রেখেছে ইঞ্জিনিয়ারদের পেছনে যারা পণ্যের ডিজাইন করবে এবং ম্যনুফেকচারিং এর পেছনে যারা পণ্য বাজারজাতকরণ করবে।

২য় ধাপ, অর্থসংস্থান

বিশাল অর্থের অগমনের জন্য Amazon সব সময় একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ই-কমার্স বিজনেসের জন্য তাদের ফ্রি ক্যাশ ফ্লো এর দারুণ সুযোগ আছে, অর্থের আগমন শুধু এজন্য হয় না যে তারা অনেক প্রফিটেবল কোম্পানি, তারা মাঝে মধ্যেই সাপ্লাইয়াদের একটি নীতি মানতে বাধ্য করে। তারা কাস্টমারদের থেকে প্রায় ১৮ দিন আগেই টাকা নিয়ে নেয় এবং পরবর্তীতে তা সাপ্লাইয়াদের পরিশোধ কর‍ে।

অন্যদিকে তাদের বৃহৎ অনলাইন সার্ভিস - AWS এর বিজনেস থেকেও অর্থের আগমন ঘটে। আমরা জানি তাদের অনলাইন বিজনেস গুলো খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে অধিক মুনাফা অর্জনে AWS - অনলাইন বিজনেস দারুণ ভূমিকা পালন করছে।

আর এভাবে সহজ অর্থের আগমন Amazon কে আরও এগিয়ে নিয়েছে। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিভিন্ন লোন অথবা ব্যয় বহুল উপায়ে মূলধন সংগ্রহ করতে হয় সেখানে Amazon- এর ক্যাশ অফ ক্যাপিটাল হচ্ছে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। এর মধ্যমে তারা তাদের পণ্যের মূল্য নির্ধারণে পায় দারুণ সুবিধা।

আমি গত একটি টিউনে বলেছিলাম শাউমি তাদের ফোনের মুনাফা ৫% লিমিট করে অনলাইন বিজনেসকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। চাইলে দেখে নিতে পারেন। শাউমি Xiaomi তাদের ব্যবসার মুনাফা কেন ৫ পারসেন্ট এর মধ্যে সীমাবন্ধ করে দিয়েছে?

৩য় ধাপ, পণ্য বাজারজাতকরণ

এটা সবাই আমরা সবাই জানি, যেকোনো একটি পণ্য বাজারে আনার পর Amazon খুব স্বাভাবিক ভাবেই অন্যদের থেকে বেশি সুবিধা পাবে কারণ Amazon- এর কম্পিটেকটিউনসভ এডভান্টেজ বেশি। ওভেন বিক্রি করতে June কে যেভাবে শ্রম দিতে হবে Amazon কে সেরকম দিতে হবে না।

চলুন একটা উদাহরণ দেখে নিই। June ওভেন বাজারে ওভেন নিয়ে আসার পর সেটা অনলাইনে তাদের ওয়েবসাইটের এর মাধ্যমে মার্কেটিং করতে হয়েছে। তারা তাদের পণ্য প্রমোটের জন্য বিশাল একটা অর্থ দিয়েছে Google এবং Facebook কে। অন্যদিকে Amazon তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপণ তাদের প্লাটফর্ম এর মাধ্যমেই দিয়েছে যাতে তাদের অনেক অর্থ ব্যয় বেচে যায়। ফলে তারা প্রাইজ কাটের মাধ্যমে rপণ্যের মূল্য সল্প রাখতে পেরেছিল এবং সাথে তাদের পণ্যের ব্র্যান্ড ভ্যালু তো ছিলই।

অন্যদিকে আমরা যদি দেখি Amazon- এর বৃহৎ  অনলাইন ই-কমার্স স্টোর যা প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাফিক পায় সেখানও চাইলে তারা তাদের নতুন পণ্যের প্রমোশন করতে পারে। তারা চাইলে ওয়েবপেজের যেকোনো জায়গায় পণ্যের ব্যানার দিয়ে বিনা মূল্যে ক্রেতা মনোযোগও আকর্ষণ করতে পারে।

৪র্থ ধাপ, মূল্য নির্ধারণ

এবার যদি আমরা মূল্য নির্ধারণে আসি, আমরা এতক্ষণ জানলাম Amazon কিভাবে মার্কেট রিসার্চ, মূলধন সংগ্রহ, মার্কেটিং এ দারুণ সুবিধা পায়। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাজার হাজার অর্থ ব্যয় করতে হয় সেখানে Amazon এর সুবিধা গুলোর কারণে Amazon- এর প্রাইজ কাট করা খুবই সহজ। আবার June এর মত কোম্পানি গুলো ফান্ড পাবার জন্য বারবার এটা প্রমান করতে হয় তারা অধিক পণ্য বিক্রি করতে পারছে সেখানে Amazon- এর এমন কিছুই করতে হয় না।

তাদের স্বল্প মূল্যে পণ্য বিক্রিয়ের পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে  তারা  ইনভেস্টরদের কম মুনাফা মেনে নিতেও বাধ্য করে। তারা সব সময় ইনভেস্টরদের এটা বুঝায় যে স্বল্প সময়ের জন্য মুনাফা কম হলেও তা দীর্ঘসময়ের জন্য লাভের।

Amazon এর ইকো-সিস্টেম

Amazon কখনো তাদের কোন পণ্যকে একক ভাবে চিন্ত করে না।  তারা তাদের সকল পণ্যের একটা ইকো-সিস্টেম তৈরি করে নিয়েছে যেমন, তারা একটি মোমবাতিতে বিক্রিতে ১ টাকা লস করে সাথে সাথে ই-বুক দিয়ে আরও ৩ টাকা লাভ করে নেয়। আবার তারা যদি Amazon Eco কমমূল্যে বিক্রি করে তারপরেও তার মুনাফা উঠে আসে Amazon Advertising, Amazon Prime, Amazon Music দিয়ে। একই ভাবে স্মার্ট ওভেন June থেকে কম মূল্যে বাজারে এনে তাদের কিছু লস হলেও সেই টাকা উঠে আসে তাদের Amazon prime, Amazofresh, Alexa দিয়ে।

Amazon অনলাইনের এই যুগে দিনের পর দিন নতুন নতুন সার্ভিস নিয়ে আসছে আর মানুষকে তাদের ইকো-সিস্টেমে ঢোকাচ্ছে।

শেষ কথাঃ

একটি কোম্পানি যখন বাজারে নিজেদের আলাদা একটা ভ্যালু তৈরি করে ফেলতে পারে তখন তাদের পক্ষে বাজার দখল করা খুবই সহজ একটা বিষয়। Amazon বাজারে আলাদা ভ্যালু তৈরির পাশাপাশি তাদের পণ্যের আলাদা একটা ইকো-সিস্টেম তৈরি করে ফেলতে পেরেছে যার মাধ্যমে তারা রিটেইলিং বিজনেসে সবার সেরা। তবে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয় Amazon এর ইউজার বেজ অনেক শক্ত হলেও তারা যদি সঠিক মানের পণ্য দিতে না পারে তাহলে তারাও অন্য কোম্পানির হুমকির স্বীকার হতে পারে।

কেমন লাগল আজকেই এই টিউনটি তা অবশ্যই জানাবেন। এই টিউন পড়ে আপনার কি মনে হয় তা অবশ্যই টিউমেন্ট করুন।

পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আমাদের সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন কারণ আপনার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস