আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আপনারা জানেন আমি প্রায়ই বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে বিশ্লেষণ মূলক টিউন করে থাকি। টিউন গুলোতে কোম্পানির বিভিন্ন ভাল দিক খারাপ দিক, তাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, সুযোগ প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি উঠে আসে। আজকে ফোনের দাম ও পারফর্মেন্স বিশ্লেষণের পালা। তো চলুন শুরু করা যাক।
একটি ফোনের পারফর্মেন্স কেমন হবে তা অনেক ক্ষেত্রে দামের উপর নির্ভর করে না। আমরা যদি পিসির কথা বলি তাহলে বলতে হবে, হ্যাঁ একটি পিসি বা কম্পিউটারের পারফর্মেন্স কতটা ভাল খারাপ হবে তা তার দামের উপর নির্ভর করে। কারণ যখন আমি কম্পিউটারে ভাল ভাল যন্ত্রাংশ ব্যবহার করব তখন এমনিতে পারফর্মেন্স ভাল হবে সাথে সাথে দামও বেশি পরবে। তবে এই ধারনা শুধু মাত্র কম্পিউটারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফোনের ক্ষেত্রে নয়।
আমরা যদি কম্পিউটারের প্রসেসর এর কথা বলি তাহলে বলতে হবে মূলত দুইটি প্রসেসর বাজারে জনপ্রিয় একটি হচ্ছে Intel অন্যটি হচ্ছে AMD। বাজারে Intel প্রসেসর এর দাম তুলনামূলক বেশি এবং Amd কিছুটা কম। এবার যদি ফোনের দিকে আসি, বেশির ভাগ ফোন গুলোতে ব্যবহৃত হয় Snapdrago অথবা Mediatek চিপ। অন্য দিকে Apple, Samsung, Huawei আবার নিজেদের ডিজাইন করা আলাদা চিপ ব্যবহার করে।
যদি সফটওয়্যার এর দিক থেকে চিন্তা করি তাহলে দেখা যায় উইন্ডোজ ইন্সটল দেয়ার সময় কিছু কিছু অ্যাপ ইন্সটল হয়ে যায়। সেদিকে আমরা কিন্তু কখনো খেয়াল করি না। ল্যাপটপ আমাদের যে ব্র্যান্ড এরই হোক সেখানে আমরা উইন্ডোজ ব্যবহার করবো এবং আমাদের মত করে সফটওয়্যার ইন্সটল করে নেব। আগে থেকে কি দেয়া আছে বা না আছে সেটা দেখার বিষয় না বা আমরা দেখিও না। এবার যদি ফোনের ক্ষেত্রে দেখি সেটা কিন্তু এক না। কারণ আমাদের সব ফোনে এন্ড্রয়েডে থাকলেও ব্র্যান্ড অনুযায়ী আলাদা সফটওয়্যার থাকে এবং ফোনের ফিচারও ভিন্ন ভিন্ন হয়। পিসির ক্ষেত্রে উইন্ডোজ যদি অফিসিয়ালি কোন আপডেট না দেয় সেক্ষেত্রে তেমন কোন ঝামেলা হয় না কিন্তু ফোনের ক্ষেত্রে নিয়মিত আপডেট দিতে হয়। তারমানে সফটওয়্যারের দিকে পিসি থেকে ফোন কোম্পানিগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়।
ফোনের ক্যামেরা! খেয়াল করে দেখবেন অনেকে ফোন কেনার আগে ভাল করে যাচাই বাচাই করে কোন ফোনের ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেল। বর্তমান স্মার্ট-ফোন গুলোতে ক্যামেরা এবং অন্যান্য সেন্সর খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলো দিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করা হয়। পিসির ক্ষেত্রে কিন্তু তেমন না সেখানে ক্যামেরা নিয়ে কেউ এতটা মাথা ঘামায় না আর সত্য কথা বলতে ওয়েবক্যাম ছাড়া পিসিতে ক্যামেরার কোন কাজও নেই। ফোনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ফিচার আসে এবং সেটা বিশাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বাজারে আনা হয় পিসির ক্ষেত্রে এই দিকটা মিল আছে যেমন মাইক্রোসফট এর Surface Book এবং এপলের Macbook এর ক্ষেত্রে এমন কিছুটা হয়।
এবার যদি মূল্য নির্ধারণের দিকে আশাকরি? এখানে চলুন Microsoft Surface এর কথা চিন্তা করি। একটি পিসি তৈরি হয় কয়েকটি আলাদা আলাদা কম্পোনেন্ট এর উপর ভিত্তি করে যেমন, হার্ডওয়্যার, র্যাম, প্রসেসর, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি। আপনি যদি ২ জিবি র্যাম ব্যবহার করেন সেখানে আপনার পারফর্মেন্স থাকবে এক রকম এবং যদি ৮ জিবি ব্যবহার করেন সেখানে থাকবে অন্য রকম যা কিনা দামের উপর দারুণ ভাবে নির্ভর করবে। ধরুন Microsoft Surface Book Pro - এর যেমন হাই কনফিগারেশন তেমনি মূল্যমান হাই এবং একই সাথে তার পারফর্মেন্সও থাকবে দারুণ। এতে সহজেই বুঝা যাচ্ছে মূল্য নির্ধারণে ফোনের পারফর্মেন্স সব সময় সমান থাকে না।
মানুষ সব সময় ফোন বেশি দাম দিয়ে ভাল পারফর্মেন্স এর জন্যই কিনে এমনটা নয়। কখনো কখনো মানুষ বেশি দাম দিয়ে ব্র্যান্ড কেনে। আমরা স্বভাবতই আমাদের বন্ধুবান্ধবদের সামনে নিজেদের আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিগত বস্তু ব্যবহার করি তার মধ্যে ফোন অন্যতম। মানুষ নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে দামি ফোন ব্যবহার করে এর উদাহরণ হতে পারে আই-ফোন।
আই-ফোন আর অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পারফর্মেন্স দামের দিকে তুলনা করলে কখনো এক হবে না এটা আমাদের সবারই জানা। পিসির ক্ষেত্রেও ব্যবহারকারী চায় তার পিসি থাকুক সবার চেয়ে আলাদা কিন্তু সেক্ষেত্রে পারফরমেন্স এবং পিসির দাম কিন্তু একই সরলরেখায় অবস্থান করে। অনেকে পিসি ব্যবহার করে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে আবার অনেকে ব্যবহার করে গেমিং এর জন্য সেক্ষেত্রে তারা দামি কিবোর্ড, 3D মনিটর ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে।
পিসি কোম্পানি এবং ফোন কোম্পানির কথা যদি ব্যবসায়িক দিক থেকে চিন্তা করি তাহলে দেখব, পিসি মেকিং কোম্পানি পিসি তৈরি করে এবং বিক্রয় করে, পিসি কেনার পর ব্যবহারকারী কি করছে বা না করছে সেটা তাদের দেখার বিষয় না বা এটা নিয়ে ভাবতে হয় না কিন্তু ফোনের ক্ষেত্রে কিন্তু এমন নয়। ফোন বাজারে ছাড়ার পর থেকে ইউজারের ব্যবহার পর্যন্ত তাদের সাপোর্ট দিতে হয় সফটওয়্যার আপডেট রাখতে হয়৷ অনেক ফোন কোম্পানি আবার ইন্টারনেট সার্ভিস এর মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করে যেমন, শাউমি।
শাউমি ফোন বিক্রি করে মুনাফা অর্জনের চেয়ে ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যম মুনাফাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, ইন্টারনেট সার্ভিসের ব্যবসায় বর্তমানে দারুণ এক ব্যবসায়, যা Amazon, Facebook, Google, Microsoft, Alibaba, Tencent এর মত লাভজনক কোম্পানি গুলো প্রমাণ করে দিয়েছে। সুতরাং শাউমি তাদের প্রধান বিজনেস হিসাবে ইন্টারনেট সার্ভিসে বেশি বিনিয়োগ করতে চায়। দেখে নিতে পারেন, শাউমি Xiaomi তাদের ব্যবসার মুনাফা কেন ৫ পারসেন্ট এর মধ্যে সীমাবন্ধ করে দিয়েছে?
অন্যান্য গতানুগতিক ফোন কোম্পানি গুলো যা করে সেটা হচ্ছে তারা হার্ডওয়্যার বিক্রয় করে টাকা লাভ করতে চায় করে সেখানে শাউমি, প্রথমে কম মুনাফা করে ফোন বিক্রি করলেও পরবর্তীতে কাস্টমারেকে ধরে রাখতে চায় এবং তাদের সার্ভিস ব্যবহারে মাধ্যমে অধিক মুনাফা করতে চায়।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে সার্ভিস বিজনেস কিভাবে কাজ করে? আমরা সবাই আসলে জানি যে কিভাবে প্রিমিয়াম সফটওয়্যার গুলো আয় করে। তারা প্রথমে ব্যবহারকারীকে এটা ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিলেও পরবর্তীতে তাদের পে করতে হয় অথবা তারা এড দেখানোর মাধ্যমে আয় করে করে থাকে। আর এভাবেই তাদের ব্যবসায় বৃদ্ধি পায়। শুধু শাউমিই নয় Samsung, Apple এর মত কোম্পানিও সার্ভিসের মাধ্যমে আয় করছে। যেমন Apple কোয়াটারে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের মত আয় করছে শুধু মাত্র তাদের সার্ভিসের মাধ্যমে।
এতক্ষনে হয়তো এটা পরিষ্কার হয়েছে যে পারফর্মেন্স কেমন হবে তা সব সময় দামের উপর নির্ভর করে না আর কম্পিউটারের বিজনেস মডেল আর ফোনের বিজনেস মডেল সম্পুর্ণ আলাদা। বর্তমানে কম্পিউটারের পাশাপাশি ফোন আমাদের কাছে বিভিন্ন কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আবার অনেকে বেশি দাম দিয়ে ফোন কিনি যা দিয়ে দুইটি পিসি একসাথে বানানো যায়। তো আপনি কত টাকা দিয়ে ফোন কিনলেন এবং তার পারফর্মেন্স কেমন হবে তা কখনোই আগে থেকে ধারনা করতে পারবেন না। কিছু কিছু ফোন হয়তো আপনাকে ভাল ক্যামেরা দেবে কিন্তু সেই ফোনে গেম খেলতে পারবেন না আবার কোন কোন ক্ষেত্রে উল্টো হতে পারে।
কেমন লাগল আজকেই এই টিউনটি তা অবশ্যই জানাবেন। এই টিউন পড়ে আপনার কি মনে হয় তা অবশ্যই টিউমেন্ট করুন।
পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আমাদের সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন কারণ আপনার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।