আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আপনারা জানেন আমি প্রায়ই বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে বিশ্লেষণ মূলক টিউন করে থাকি। টিউন গুলোতে কোম্পানির বিভিন্ন ভাল দিক খারাপ দিক, তাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, সুযোগ প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি উঠে আসে।
কিছু আগেই আপনাদেরকে যেভাবে iPhone ও Android একসময়ের টেক-ওয়ার্ল্ডের দানব ব্ল্যাকবেরি BlackBerry কে হত্যা করে গল্প শুনিয়েছি। নিশ্চয়ই তা আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।
তো আজকেও এমন একটি টিউন নিয়ে হাজির হলাম, আজকে আমি নোকিয়ার একদম শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাদের শুরুটা কি দিয়ে ছিল, তাদের সফল হবার সেই গল্প, ভুল গুলো কি ছিল, কি করতে পারতো সব কিছু আলোচনা করব। তো চলুন শুরু করা যাক।
নোকিয়া নিজেকে গ্লোবাল ফোর্স হিসাবে তৈরি করেছিল যাদের শুরুটা ছিল একটু অন্যরকম।
গল্পটা শুরু হয় ফিনল্যান্ড থেকে, বিশ্ব জুড়ে ফিনল্যান্ড বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত। হ্যাভি মেটাল ব্যান্ড, সোউনা, উন্নত বাসস্টপ এগুলোর চেয়ে সব চেয়ে বেশি যার জন্য পরিচিত সেটা হচ্ছে নোকিয়া। হ্যাঁ আপনার আমার সেই পছন্দের নোকিয়ার সূচনা ফিনল্যান্ড। বর্তমানে নোকিয়াতে ১, ০০০০০ লোক কাজ করছে এবং বছরে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার আয় করছে।
আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ফ্রিডরিক ইডসন ফিনল্যান্ডে ক্যাপিটালাইজ করতে চায় এবং একটি কাগজের কল প্রতিষ্ঠা করে। কিছুদিন পর সে ২য় কলটি প্রতিষ্ঠা করে নোকিয়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী নোকিয়া ভার্টু এর পাশে। এখানে উল্লেখ্য নোকিয়া একটি শহরের নাম। এই শহরের নাম থেকে নোকিয়া নামের সূচনা।
কিছু বছর পর ফ্রেড্ররিক, লিও ম্যাক কেলেন নামক এক ব্যক্তির সাথে পার্টনারশিপে আসেন যার পাশের দেশ ফিনল্যান্ডে আরও কয়েকটি কাগজের কল ছিল। লিওম্যাকলেন আলোচনা করে ফ্রেডরিকের সাথে একটি পাবলিক কোম্পানি তৈরি করে Nokia AB নামে। কোম্পানিটি থেকে ফ্রেডরিক যখন অবসর গ্রহণ করে তখন ম্যাকলিও নোকিয়া নদীকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করেন।
একই সময়ে এডওয়ার্ড পোলন নামে এক ব্যক্তি Finnish Rubber Works নামে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে, যা সাধারণত রাবার জাতীয় পণ্য তৈরি করতো যেমন পায়ের বুট এবং গাড়ির টায়ার।
১ম বিশ্ব যুদ্ধদের পর ম্যা-কলিনের Nokia AB কোম্পানিটি Finnish Rubber Works এর সাথে একীভূত হয়ে আগের মতই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং একই সাথে কাগজ উৎপাদন করতে থাকে। ৩য় কোন কোম্পানি হিসাবে নোকিয়া পরিবারে যোগ দেয় ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া Finnish Rubber কোম্পানি। Finnish Rubber কোম্পানিটি নোকিয়ার সাথে যোগ দেয় ১৯৩২ সালে।
২য় বিশ্বযুদ্ধের ধংস্বাত্বক অবস্থার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন কোম্পানিটিকে পুনরায় Finnish Cable Works হিসাবে দাঁড় করায়। কোম্পানিটি টেলিফোন এবং বৈদ্যুতিক তার বিক্রয় করতো এবং এর মাধ্যমে তাদের ভাগ্য খুলে যায় এবং শক্তিশালী কোম্পানি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে এবং নতুন নতুন মার্কেটে প্রবেশ করার সুযোগ পায়।
তাদের সেই একীভূত কোম্পানিটি থেকেই আজকে আমাদের সুপরিচিত নোকিয়া কোম্পানির উদ্ভব। তারা একই সাথে কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাতো যেমন, টিভি, কাগজ উৎপাদন, গ্যাস মাস্ক, প্লাস্টিক এবং কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি।
সত্তর শতকের দিকে নোকিয়া টেলিফোন প্রযুক্তির দিকে গুরুত্ব আরোপ করে। কোম্পানিটি ১৯৮১ সালে প্রথম আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক ফোন নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং টেলিফোনের জন্য ডিজিটাল সুইচের উদ্ভাবন করে। টেলিফোনের যে লম্বা ইতিহাস আমরা জানি সেটা এখান থেকেই আসে এবং এখান থেকেই টেলিফোন প্রযুক্তি সেলুলার সিস্টেমের দিকে এগোতে থাকে।
ষাটের শতকের দিকে নোকিয়া ইতিমধ্যে রেডিও টেলিফোন তৈরি করে ফেলেছিল। যেগুলো গাড়িতে এবং মিলিটারি ক্ষেত্রে ব্যবহার হতো। ১৯৭৮ সালে তারা দাবি করে পুরো ফিনল্যান্ডে তাদের রেডিও টেলিফোন কভারেজ পাওয়া যাবে।
১৯৭৯ সালে নোকিয়া, একটি টিভি প্রস্তুতকারী কোম্পানি, যার নাম ছিল Silora এর সাথে একীভূত হয়ে বিশ্বের প্রথম সেলুলার নেটওয়ার্ক হিসাবে Nordic Mobile Telephone Network তৈরি করে। যা ছিল রেডিও নেটওয়ার্ক সিস্টেমের উন্নত রূপ।
এবং এটাই ছিল তখনকার 1G নেটওয়ার্ক।
৮০ শতকের প্রথম দিকে নোকিয়া তাদের প্রথম ফোন Mobira Senator নিয়ে আসে কিন্তু অতিরিক্ত ওজন (প্রায় ১০ কিলোগ্রাম) এর জন্য তারা এর অর্ধেক ওজনের অন্য আরেকটি ফোন আনে যার নাম ছিল Mubarak Talkman। এই ফোন গুলোর নাম কারফোন (Car Phone) ছিল কারণ সেগুলো শুধুমাত্র গাড়ির মাধ্যমে বহন করা যেত।
প্রথম পোর্টেবল সেলুলার ফোন যার নাম ছিল Mobius Cityman। যার ওজনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে, ওজন নেমে আসে মাত্র ৮০০ গ্রামে। ফোনগুলোর দাম তখন ছিল অত্যধিক ২৪০০ FIM বা বর্তমান প্রায় ৮২০০ ডলার। এই অপ্রত্যাশিত দামের জন্য ফোনটি ছিল ধরা ছুঁয়ার বাইরে।
কিন্তু তখন US এর প্রেসিডেন্ট Mikhail Gorbachev এর হাতে এই ফোনের একটি ছবি রাতারাতি ফোনটিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায়৷ এটি হয়ে উঠে শক্তি ও প্রতিপত্তির প্রতীক। ফোনটিকে তখন ডাকা হতো Gorba নামে।
নোকিয়া তাদের সেলুলার নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখে এবং সেলুলার নেটওয়ার্ক থেকে আধুনিক নেটওয়ার্ক 2G GSM নেটওয়ার্ক তৈরি করে। ১৯৮৭ সালে 2G নেটওয়ার্ক পুরো ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পরে। এর মাধ্যমে ডাটা ডিজিটাল ভাবে স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ পায় এবং টেক্সট মেসেজিং এর সূচনা হয়।
১৯৯১ সালের জুলাই মাসে ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী 2G নেটওয়ার্ক দিয়ে প্রথম কল করেন এবং এর এক বছর পর তিনি বিশ্বের প্রথম টেক্সট মেসেজটি পাঠান। টেক্সট মেসেজটি ছিল "Merry Christmas"।
এই নেটওয়ার্ক পরবর্তীতে বিশ্বের প্রায় ৩ বিলিয়ন ব্যবহারকারীর বিশাল এক নেটওয়ার্কে পরিণত হয়।
৯০ শতকের প্রথম দিকে নোকিয়া কিছুটা আর্থিক সমস্যায় পতিত হয়। একীভূত কোম্পানি থেকে নোকিয়া আলাদা হয়ে যায় এবং টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি হিসাবে আলাদা সত্ত্বা তৈরি করে।
১৯৯৪ সালে নোকিয়া তাদের প্রথম ২১০০ মডেলের ফোনটি বাজারে নিয়ে আসে। ফোনটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয় যা যে কেউ ব্যবহার করতে পারতো। ফোনটিতে ছিল নোকিয়ার সেই বিখ্যাত রিংটোন এবং স্নেক গেম। ফোনটি খুব জনপ্রিয়তা পায় এবং সারা বিশ্বে প্রায় ২০ মিলিয়ন ফোন বিক্রি হয়। যেখানে তাদের টার্গেট ছিল ৪ লাখ।
তারা মাত্র ৪ বছরে ইউরোপে ৫ মিলিয়ন থেকে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর ফোন কোম্পানিতে পরিণত হয়। অতিরিক্ত ফোন চাহিদা মিটাতে তা হিমশিম খাচ্ছিল। ফোন তৈরিতে তারা মটোরোলা এবং Ericsson এর মত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।
সুতরাং নোকিয়া তাদের সাপ্লাই চেইনে পরিবর্তন আনে কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল শুধু মাত্র জাপান থেকে ম্যাটে-রিয়াল এনে ফোন তৈরি করে তাদের এই বর্ধিত চাহিদা ধরে রাখা যাবে না। তারা খুব ভাল ভাবে বুঝতে পেরেছিল কিভাবে তাদের নিজের দেশেই টেকনোলজি উন্নত করা যায়। এজন্য তারা তাদের দেশের পাঁচটি কোম্পানি থেকে ম্যাটে-রিয়াল নিয়েই ফোন বাজারের চাহিদা ধরে রাখতে কাজ করে যায়। আর এভাবে নোকিয়া যখন তাদের সাপ্লাই সমস্যার ও সমাধান করে ফেলে তখন এটি সমসাময়িক সকল ফোন কোম্পানি থেকে নিজেকে স্বতন্ত্র এবং আলাদা শক্তিশালী স্বত্বা হিসাবে গড়ে তুলে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তাদের আয় ৫ গুন বেড়ে যায় এবং মোবাইল কোম্পানিতে আধিপত্য করার মধ্যমে বিশ্বের সব চেয়ে বড় মোবাইল কোম্পানি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এবং প্রায় ১৪ বছর একই জায়গায় অবস্থান করে। ২০১১ সাল পর্যন্ত নোকিয়া ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন কোম্পানি।
২০০৩ থেকে নিরলস গবেষণা ও নোকিয়া মোবাইলের নতুন নতুন উদ্ভাবন অব্যাহত ছিল এবং সারা বিশ্বে নোকিয়া ছড়িয়ে পরে। মনে করে দেখুন তখন আপনাদের পরিবারের কারো না কারো কাছে একটি নোকিয়া ফোন ছিলই। Nokia 1010 আমাদের দেশেই এর বিক্রয় অনেক গুন বাড়িয়ে দেয়। তখন ফোন মানেই ছিল নোকিয়া। সবার মনে একটা আলাদা মনোভাব তৈরি হয়ে গিয়েছিল এই নোকিয়া নিয়ে। সেই সময় নোকিয়া তার দক্ষ লোকবল নিয়ে তৈরি করেছিল বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ফোন কোম্পানি।
২০০১ সালে নোকিয়া তাদের প্রথম ক্যামেরা ফোন বাজারে নিয়ে আসে। সেটি ছিল Nokia 7650 পরবর্তীতে তারা ভিডিও ক্যামেরা সম্মিলিত ফোনও আনে ২০০২ সালে এবং সেটি হচ্ছে Nokia 3650
খুব তাড়াতাড়ি তারা বাজারে নিয়ে আসে 3G ফোন। 3G সুবিধার ফোন Nokia 6650 এর মাধ্যমে ফোনে দ্রুত ওয়েব ব্রাউজ, মিউজিক ডাউন-লোড, টিভি দেখার সুবিধা পাওয়া গিয়েছিল।
২০০৫ সালে নোকিয়া তাদের Nokia 1100 ফোনটি নাইজেরিয়াতে বিক্রি করা শুরু করে এবং বিশ্বব্যাপী ফোনটি খুবই জনপ্রিয়তা পায়। সারা বিশ্বে এই মোবাইল ফোনটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২ মিলিয়নে ছাড়িয়ে যায়।
তখনকার সময় স্মার্ট-ফোন মানেই ছিল নোকিয়া সিম্বিয়ান ফোন। নোকিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় ফোন ছিল Symbian ফোন গুলো। সেটা বর্তামান অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে কয়েক গুন জনপ্রিয় ছিল এবং এই জায়গায় তারা ছিল অদ্বিতীয়। সিম্বিয়ান ফোন গুলো জনপ্রিয় হবার কারণ গুলো যদি বলি তাহলে বলতে হবে, ফোন গুলোতে ক্যামেরা যথেষ্ট ভাল ছিল, 3G সহ আধুনিক সকল সুবিধা ছিল ফোন গুলোতে, তাদের নিজেদের ছিল বিশাল অ্যাপ স্টোর এছাড়াও হাজার হাজার থার্ড পার্টি অ্যাপ তো ছিলই।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বিশাল এই কোম্পানির আজকে এই অবস্থা কেন? নোকিয়ার বিশাল বাজার হারানোর পেছনে অনেক গুলো কারণ আছে সেগুলো নিচে আলোচনা করব কিন্তু আমার মনে হয় তাদের অবনতির পেচকে অভ্যন্তরীণ ম্যানেজমেন্টই দায়ী ছিল। তারা ইউজারদের চাহিদা এবং ক্রয় ক্ষমতা সঠিক ভাবে বিবেচনায় নিতে ভুল করেছিল।
এমনি এক সময় আই-ফোন বাজারে আসে এবং সাথে সাথে আই-ফোনের কাছে ফিজিক্যাল বাটনের ফোন গুলো খুবই নগণ্য হয়ে পরে এবং ফোন গুলো বাজার হারাতে শুরু করে। আই-ফোন তখন ছিল একমাত্র ফোন যাদের মাল্টি-টাস্ক টাচক্রিন রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।
বাজারে যখন আই-ফোন আসলো তখন প্রায় সকল ফোন ব্যবহারকারী আই-ফোনের দিকে ঝুঁকে যায়। বাটন ফোনের দুনিয়ায় নতুন কিছু আবির্ভাব সবাইকে আকৃষ্ট করে।
নোকিয়া তাদের Symbian অপারেটিং সিস্টেমে দারুণ সফলতা পায় এবং তখনকার সময় স্মার্ট-ফোন মানেই ছিল Symbian ফোন। বাজারে যখন টাচ স্ক্রিন চলে তখন নোকিয়াও টাচক্রিন এর Symbian ফোন উৎপাদন করা শুরু করে। যেমন Nokia 5800।
কিন্তু তখন বাজারে আই-ফোনের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে। করণ তারা আই-ফোন থেকে ভাল ফিচার কম দামেই পাচ্ছিল।
নোকিয়ার Symbian চালিত স্মার্ট-ফোন গুলো অ্যান্ড্রয়েড এর সাথে পেরে উঠছিল না। কারণ আমরা হয়তো জানি। অ্যান্ড্রয়েড এর অ্যাপ গুলো ছিল অনেক বেশিই উন্নত এবং ইউজার-ফ্রেন্ডলি। এভাবে আস্তে আস্তে ইউজাররা এন্ড্রয়েডের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে।
আমরা উপরে তৎকালীন কিছু স্মার্ট-ফোন নিয়ে আলোচনা করলাম যাদের নোকিয়াকে দমাতে যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। একবার খেয়াল করে দেখুন নোকিয়া ছিল সমাজে সকল শ্রেণী ফোন, অন্য দিকে আই-ফোন আর অ্যান্ড্রয়েড ছিল কিছুটা উপরের শ্রেণীর। তো সাধারণ শ্রেণীর মানুষ গুলো কেন নোকিয়াকে ছেড়ে দেয়?
নোকিয়া যখন তাদের ক্যামেরা বা ভিডিও ফোন গুলো নিয়ে আসে তখন সেই ফোন গুলোর দাম মোটামুটি বেশিই ছিল। মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলে সেটা নিম্ন বিত্তদের জন্য ছিল স্বপ্নের মত। এই দিকটা কাজে লাগায় চাইনিজ কিছু কোম্পানি। আমরা যদি আমাদের দেশের দিকেই তাকাই তাহলে দেখতে পারব, বাজারে Sprint, Symphony ফোন গুলো আসে এবং খুবই জনপ্রিয়তা পায় কারণ মানুষ মাত্র ৫০০০ হাজার টাকা খরচ করে নোকিয়া ১৫০০০ টাকা দামের ফোনের সুবিধা পাচ্ছিল। আমার এখনো মনে আছে রাস্তা ঘাটে যেখানে সেখানে মানুষ ফোনগুলো হাতে নিয়ে বাজাতে বাজাতে যেত৷ নতুন এই সুবিধা কিন্তু অনেক ক্রেতাকে নোকিয়া থেকে দুরে নিয়ে যায়।
বাজারে যখন চারদিকে অ্যান্ড্রয়েড প্রায় সমসাময়িক সকল ফোন কোম্পানি তাদের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করছে তখন নোকিয়া তাদের পুরাতন অপারেটিং সিস্টেমেই আটকে থাকে। নোকিয়া অফিসিয়ালি ঘোষণা দেয় তারা তাদের অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করবে না। এটাই ছিল তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। ফলাফল সরূপ তাদের শেয়ারের দাম ৪০ মার্কিন ডলার থেকে পরে ২ মার্কিন ডলারে নেমে আসে।
তাদের আরেকটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, তাদের নতুন অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে মাইক্রোসফট কে সিলেক্ট করা। আমরা সবাই জানি মাইক্রোসফটের ফোন গুলো কতটা বিরক্তিকর (সবার কাছে নাও হতে পারে কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটাই মত দেয়)। নোকিয়া যখন এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম নিজেদের ফোন ইন্সটল দেয় তাদের ক্রেতা সংখ্যা এবং লয়াল কাস্টমার সংখ্যা অতিদ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।
মোট কথা প্রযুক্তি সবসময় গতিশীল। আজকে যা স্বপ্নের মতো কাল তা বাস্তব হয়ে যেতেই পারে। মানুষের চাহিদারও কোন শেষ নেই, মানুষ সব সময় চায় নতুন কিছু পেতে এবং জানতে। মানুষের এই চাহিদাকে প্রাধান্য নিয়ে টেক বিশ্বকে এবং টেক কোম্পানি গুলোকে এগিয়ে যেতে হয়। চাহিদার গুরুত্ব না দিয়ে এর আগে অনেক কোম্পানি হারিয়ে গেছে। যদি আমরা ব্লেকবেরির কথা বলি তাহলে বলতে হবে সেটা ছিল এক সময়ের প্রযুক্তি দানব প্রতিষ্ঠান কিন্তু এখন শুণ্য যার আলোচনা আগের টিউনে হয়েছে। আপনি যদি ব্যবহারকারীদের চাহিদা মিটিয়ে যেতে পারেন আপনি সফল হবেন।
নোকিয়া তাদের জায়গা ধরে রাখতে পারতো যদি তারা তাদের উদ্ভাবনী শক্তিতে অটল থাকতো। যখন সারা বিশ্ব অ্যান্ড্রয়েড এর দিকে ঝুঁকে যায় তখন তারা অ্যান্ড্রয়েড কে বর্জন করে। এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল। আমরা এটা জানি অনেক পরে নোকিয়া বাজারে কিছু অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়ে আসে কিন্তু তখন খুব বেশিই দেরি হয়ে যায় আর ততদিনে নোকিয়ার জনপ্রিয়তাও কমে যায়। তাদের জনপ্রিয়তা যখন শীর্ষে ছিল তখন এই ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ ছিল।
কেমন লাগল আজকেই এই টিউনটি তা অবশ্যই জানাবেন। এই টিউন পড়ে আপনার কি মনে হয় তা অবশ্যই টিউমেন্ট করুন।
পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আমাদের সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন কারণ আপনার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।
দারুণ লাগলো পড়ে। আরও চাই এমন পোস্ট।