T-Series – সবচেয়ে বেশি দেখা এবং এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইউটিউব চ্যানেল এর আদ্যোপান্ত পর্ব – ১

বর্তমানে ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি যেই চ্যানেলটি দেখা হয়েছে তার নাম হচ্ছে T-Series. T-Series বর্তমানে যেই Rapid growth এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেই হিসেবে সামনের মাসের মধ্যে PewDiePie, ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইব করা চ্যানেলকে, ছাড়িয়ে যাবে। একটি বলিউড মিউজিক প্রোডাকশন কোম্পানি এত কম সময়ের মধ্যে কীভাবে এত দ্রুত এত বিশাল সাব্রক্রাইবার বেজ এবং ইউটিউবের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেখা ইউটিউব চ্যানেল হয়ে উঠল, সেই গল্পের আগে আজকে আমরা জানব টি সিরিজ এর পেছনের গল্পটি।

টি-সিরিজ এর যাত্রা শুরুর গল্প

সময় ছিল ১৯৪৭ সাল, তখন গুলশান কুমার এবং তার ফ্যামিলি Punjab থেকে Dehli তে মুভ করেন। Dehli এসে গুলশান কুমার এর বাবা ফল বিক্রি করা শুরু করেন বাজারে ছোট্ট একটা দোকানে। ধীরে ধীরে সেই ফল বিক্রির টাকা জমিয়ে সেই টাকা দিয়ে তার বাবা নিজের ফল বিক্রির দোকান দেন, তারপর সেই ব্যবসা থেকে বেশ ভাল প্রফিট হতে থাকলে সেই টাকা জমিয়ে প্রথম Business Transition ঘটে এবং সম্পূর্ণ নতুন ব্যবসা দেন, ক্যাসেট বিক্রির দোকান। ব্যবসা ভাল চলছিল, ১৯৭০ এর দিকে গুলশান কুমার তার বাবার ক্যাসেট ব্যবসা take over করে তার নাম দেন, Super Cassettes.

সেই সময় Music Label Disk এর মত বড় চাকতির মত দেখতে বিশাল আকারের ক্যাসেট চল ছিল খুব। কিন্তু এই ক্যাসেট গুলোর বেশ কিছু সমস্যা ছিল, যেমন এইসব ক্যাসেট খুব লিমিটেড এমাউন্ট এ প্রোডিউস করা হত এবং এর Cost ও অনেক বেশি পড়ত। যেহেতু ইন্ডিয়া তখন একটি Sensitive Financial অবস্থা এর মধ্যে ছিল, তারা তখন কম টাকায় যেই জিনিস ই পেত সেটা লুফে নিত। ১৯৭০ এর শেষের দিকে Sony Japan একটি নতুন ক্যাসেট প্লেয়ার নিয়ে আসে যেটাকে “two-in-one” বলা হয়ত। এই প্লেয়ার দিয়ে রেডিও শোনার পাশাপাশি ছোট ছোট ক্যাসেট দিয়ে গান শোনা যেত। গুলশান কুমার এই অপরচুনিটিকে খুব সুন্দর করে ব্যবহার করে বড় লেবেল এর গান গুলোকে পাইরেসি করে ছোট ছোট ক্যাসেটে ঢুকিয়ে সেল করা শুরু করল।

এই ক্যাসেটগুলো যেহেতু সেই বড় লেবেল থেকে ছোট ছিল, Easily Transportable ছিল, ছোট হওয়ায় খরচ কম পড়ত, তাই সেল করাও যেত কম প্রাইজে তাই দেখতে দেখতে Super Cassette, Indian Music Industry এর বিশাল একটি অংশ ধরে ফেলল। বলা বাহুল্য এখানে গুলশান কুমার আরও কিছু সুবিধা পায়, ১৯৭০ এর শেষের দিকে এবং ১৯৮০ এর শুরুর দিকে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে Small Scale Business হিসেবে ধরা হত এবং এইরকম বিজনেস এর জন্যে সরকার থেকে লোণ দেয়া হত। গুলশান কুমার লোণ নিয়ে ক্যাসেট এর ম্যাস প্রোডাকশন শুরু করেন। ফলে তখন ক্যাসেট বানাতে খরচ হয়ত ৭ রুপি করে এবং সেল করা হচ্ছিল ২০-২৫ রুপিতে। গুলশান কুমার বেশ ভাল রকমের একটি প্রফিট মার্জিন পাচ্ছিলেন। অন্যদিকে লেভেল বা ডিস্ক টাইপ গুলোর সেলার

GCI & Polymor সেল করছিল ৩৬-৪৫ টাকায়। ফলে গুলশান কুমার almost পুরো মার্কেট ধরে ফেলে এই ছোট ক্যাসেট দিয়ে। এর মাঝখানে Super Cassette, T-Series নামে বিজনে গ্রো করা শুরু করে। ১৯৮০ সালের দিকে বিজনেস যখন বেশ ভাল মত রান করছিল, তখন গুলশান কুমার, Legit ভাবে Business টা শুরু করতে চাইল। গুলশান কুমার তখন কভার গান বানানোর ট্রেন্ড শুরু করেন। পুরাতন গান নতুন সিঙ্গার দিয়ে নতুন ভাবে গাওয়ানো। তখনকার কভার গানের কিছুই কপি করা হয়ত। টিউন সেম রেখে সব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নতুন করে গান বানানো হয়ত। কিন্তু এখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো তখনকার সময়ের সুপ্রিম কোর্টের দেয়া Law। সেই Law অনুযায়ী একটি গান রিলিজ হওয়ার তিন বছর পর ঐটার কভার বের করা যাবে এর আগে নয়। ফলে গুলশান কুমার একদম শুরুর দিকের গান গুলো কভার করানো শুরু করলেন।

তারপর ১৯৯০ সালে টি-সিরিজ প্রথম মুভি Produce করল, ‘Aashiqui’। গুলশান কুমার এর মিউজিক সেন্স খুব ভাল হওয়ায় সে বুঝতে পেরেছিলেন কি টাইপ গান পাবলিক খাবে, সেই অনুযায়ী বানানো হল, Aashiqui মুভির গান সেই সময় হিট লিস্ট এ চলে যায়। এখনো বেশ পপুলার। সব কিছুই ঠিক-ঠাক চলছিল, এর মাঝে বিপত্তি বাধল ১৯৯৭ সালে “Hum Aapke Hain Koun.!” মুভির একটি গান কভার পড়ে। ঐ টাইমে গানটি অনেক হিট ছিল, এই গান কভার এর ফলে যেহেতু ডি-কোম্পানি লোকসান এর মধ্যে পোরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই তারা গুলশান কুমার এর বিরুদ্ধে মামলা করে দিল। ফলে সুপ্রিম কোর্ট T-Series কে Three Years Waiting Period দিয়ে দেয়। এর পর ইন্ডিয়ান সকল বড় বড় মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি এর কোম্পানি গুলোর Representative গুলো যেমন, Tips Industry (Tips), Venus এর মত কোম্পানি গুলোর সাথে গুলশান কুমার বসে চেন্নাই এর একটা রেস্টুরেন্ট এ। সেখানে অন্যান্য Representative দাবী জানায়, গুলশান কুমার এর T-Series মার্কেটে একচেটিয়া ব্যবসা করছে, তাদের প্রচুর লস হচ্ছে। গুলশান কুমারকে T-Series বন্ধ করার দাবী জানায়। গুলশান ও সম্মত হয়ে বলে ঠিক আছে আমি ছেড়ে দিব।

কিন্তু তারা হয়ত সন্তুষ্ট হতে পারে নি, তার কয়েকদিন পর গুলশান কুমারকে হত্যা করা হয়। এর পর থেকে T-Series এর দায়িত্ব আছেন, গুলশান কুমার এর ভাই ভূষণ কুমার এবং ছেলে কৃষাণ কুমার।

কৃষাণ কুমার যেহেতু এই যুবক ছিলেন তাই সে টেকনোলোজি এবং ট্রেন্ড এর হিসেবে T-Series কে এগিয়ে নিয়ে যায়। এবং ১৩ মার্চ ২০০৬ সালে প্রথম ইউটিউব চ্যানেল create করা হয়। কিন্তু ৪ বছর যাবত কোন ভিডিও আপলোড করা হয় নি, অবশেষে ২০১০ সাল থেকে রেগুলার T-series এর সকল গান এবং মুভি ধীরে ধীরে আপলোড শুরু হয়।

বর্তমানে Indian Music Market এর ৬০% মার্কেট শেয়ার টি-সিরিজ এর এবং ইউটিউবে রয়েছে ৬৭ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার, PewDiePie এর সবস্ক্রাইবার এর সংখ্যা থেকে কিছু কম।

PewDiePie ২০১৩ সালের পর থেকে ইউটিউবের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইবার base এর খেতাব নিয়ে আছে। সেই জায়গা দখল এর জন্যে আসছে ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি এর কোম্পানি T-Series.

দ্বিতীয় পর্বে থাকবে, T-Series এত কম সময়ে এত দ্রুত গ্রো কীভাবে করল ইউটিউবে। সেটার সম্পূর্ণ In-Depth Analysis.
Stay Tuned!

Level 0

আমি আবির রায়হান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস