কম্পিউটারের কনফিগারেশন বলতে আমরা সাধারণত কি বুঝি? ইন্টেল বা গিগাবাইটের মাদারবোর্ড, কোর আই থ্রি প্রসেসর, আট জিবি র্যাম, ১ টেরা হার্ড ডিস্ক-এই তথ্যগুলো দিয়েই তো আমরা সাধারণত বুঝে থাকি। এখন নতুন করে যোগ হয়েছে কম্পিউটারের জেনারেশনের বিষয়টি। চলমান দ্রুতধারার উন্নয়নের সাথে কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের কি ধরনের পরিবর্তন হলো গত ১০ বছর বা তারও বেশী সময়ে।
এজন্য আমরা গিগাবাইটের মাদারবোর্ড নির্ধারণ করলাম যেহেতু এই ব্র্যান্ডটি সবাই ব্র্যান্ডটি চেনে। প্রথমত আমরা জানব গিগাবাইটের জিএ-৮আই৮৬৫জিএমই মাদারবোর্ডটি সম্পর্কে। যা ৮৬৫ মডেলের বোর্ড নামে পরিচিত ছিল। এটি একটি পেন্টিয়াম ফোর প্রসেসর সমর্র্থিত মাদারবোর্ড। নর্থ ব্রিজ ও সাউথ ব্রিজ নামের দুইটি মূল চিপসেট রয়েছে-মূলত নর্থব্রিজের চিপ মডেলটির কারণে বোর্ডটির নামকরণ আমরা চিনে থাকি ইন্টেল ৮৬৫ চিপসেট মাদারবোর্ড। অডিও ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে রিয়েলটেক এসি৯৭ অডিও। সেই সাথে আছে সর্বোচ্চ ১০০ এমবিপিএস স্পিডের ইথারনেট কন্ট্রোলার।
এই মাদারবোর্ডটি দুইটি চ্যানেল অর্থাৎ দুটি স্লটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দুই গিগাবাইট র্যাম সাপোর্ট করে। তখনকার ডিডিআর র্যামগুলোর বাস স্পিড ছিল সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাহার্টজ। স্লটের মধ্যে ছিল একটি এজিপি অর্থাৎ এক্সেলেরেটেড গ্রাফিক্স পোর্ট স্লট ও তিনটি পিসিআই স্লট। এগুলোতে এক্সটার্নাল সাউন্ড কার্ড, টিভি কার্ড, ল্যান কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার হয়। মাদারবোর্ডের ভেতরের অংশে সংযোগ ছিল একটি ২০ পিন পাওয়ার কানেক্টর, একটি ৪পিন ১২ ভোল্টের পাওয়ার কানেক্টর, ফ্লপি কানেক্টর, আইডিই হার্ডডিস্ক কানেক্টর, ২টি সাটা কানেক্টর, ফ্রন্ট প্যানেল, ফ্রন্ট অডিও, ফ্রন্ট ইউএসবি কানেক্টর ইত্যাদি। ব্যাক প্যানেল অর্থাৎ পিসির পিছনে সংযোগের জন্য ছিল একটি ভিজিএ পোর্ট, একটি করে পিএস২ মাউস-ও পিএস২ কীবোর্ড পোর্ট, একটি প্যারালাল ও একটি কম পোর্ট, ৪টি ইউএসবি পোর্ট, একটি আরজে-৪৫ পোর্ট এবং অডিও পোর্ট ইত্যাদি। এই মাদারবোর্ডটি মূলক উইন্ডোজ এক্সপি চালানোর উপযোগী ছিল।
এবার জানব এখনকার প্রজন্মের অর্থাৎ ২০১৭-১৮ সালে চলমান গিগাবাইটের একটি মাদারবোর্ডের তথ্য সম্পর্কে। জিএ-বি২৫০-ডিএস৩এইচ মাদাবোর্ডটি তৈরী করা হয়েছে ইন্টেলের ষষ্ঠ ও সপ্তম প্রজন্মের প্রসেসরের জন্য। এটি ইন্টেলের কোর আই থ্রি, কোর আই ফাইভ, কোর আই সেভেন ইত্যাদি প্রসেসর সমর্থিত মাদারবোর্ড। এছাড়াও এটি সকেট ১১৫১ মডেলের ইন্টেল পেন্টিয়াম ও সেলেরন প্রসেসর সাপোর্ট করে। বোর্ডটিতে প্রসেসর লাগানোর জন্য রয়েছে ১১৫১ সকেট। এর মূল চিপসেট হিসেবে রয়েছে ইন্টেলের বি-২৫০ এক্সপ্রেস চিপসেট।
এই মাদারবোর্ডটিতে চারটি র্যাম সকেট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬৪ গিগাবাইট পর্যন্ত র্যাম একসঙ্গে সাপোর্ট করে। এই র্যামগুলো ২১৩৩ ও ২৪০০মেগাহার্টজ পর্যন্ত বাস স্পিড সমর্থিত। বোর্ডটিতে রয়েছে ইন্টেলের এইচডি গ্রাফিক্স। এখানে উল্লেখ করতে হচ্ছে নতুন প্রজন্মের মাদারবোর্ডগুলোতে গ্রাফিক্সের ব্যপক উন্নয়ন করা হয়েছে। তিন ধরনের গ্রাফিক্স পোর্ট রয়েছে এই বোর্ডটিতে। ডি-সাব অর্থাৎ ভিজিএ পোর্টটিতে সর্বোচ্চ ১৯২০ বাই ১২০০ পর্যন্ত রেজ্যুলেশন সাপোর্ট করে। ডিভিআই পোর্টটিতেও সর্বোচ্চ ১৯২০ বাই ১২০০ পর্যন্ত রেজ্যুলেশন সাপোর্ট করে এবং এইচডিএমআই পোর্টটিতে সর্বোচ্চ ৪০৯৬ বাই ২১৬০ অর্থাৎ ৪কে পর্যন্ত রেজ্যুলেশন সাপোর্ট করে। এর গ্রাফিক্সের বিশেষ সুবিধা হলো একই সাথে তিনটি মনিটর ব্যবহার করা যায় এই বোর্ডটির মাধ্যমে। অডিওর জন্য রয়েছে রিয়েলটেকের এইচডি অডিও যা ২/৪/৫:১ ও ৭:১ পর্যন্ত অডিও আউটপুট দেয়। ইন্টারনেটের জন্য রয়েছে রিয়েলটেকের জিবিই ল্যান চিপ যা দিয়ে সর্বোচ্চ ১ গিগাবাইট প্রতি সেকেন্ডে ডাটা ট্রান্সফার সম্ভব। ২৫০ মডেলের এই মাদারবোর্ডটির ভিতরকার সংযোগের মধ্যে রয়েছে ১টি ২৪ পিন পাওয়ার কানেক্টর, ১টি আট পিনের পাওয়ার কানেক্টর, ১টি এক্স১৬ পিসিআই এক্সপ্রেস স্লট। ২টি পিসিআই এক্সপ্রেস এক্স ১ স্লট। স্টোরেজ ব্যবস্থার জন্য রয়েছে ১টি এম.টু অর্থাৎ এসএসডি কানেক্টর ও ৬টি ৬জিবি প্রতি সেকেন্ড সমর্থিত সাটা পোর্ট।
ব্যাক প্যানেলে রয়েছে- ১টি পিএস২ মাউস অথবা কীবোর্ড পোর্ট, একটি ভিজিএ পোর্ট, একটি ডিভিআই পোর্ট, একটি এইচডিএমআই পোর্ট, চারটি ইউএসবি ৩.১ ও ২টি ইউএসবি ২ পোর্ট, একটি আরজে ৪৫ পোর্ট ও অডিও পোর্ট। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মূলত উইন্ডোজ-১০ চলার উপযোগী এই বোর্ডটি এবং সেটি সপ্তম জেনারেশনের প্রসেসরের মাধ্যমে। তবে ইউন্ডোজ-১০, বা ৮.১ বা ৭ চলবে ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রসেসর দিয়ে।
এখন আমরা জানব গঠনগত দিক থেকে দুইটি মাদারবোর্ডের কি তারতম্য রয়েছে। প্রথমত দেখেছি নতুন মডেলের বোর্ডে পাওয়ারের জন্য রয়েছে ২৪ পিন ও আট পিন কানেক্টর-যেখানে আগে ছিল ২০পিন ও ৪ পিন কানেক্টর। প্রসেসরের সকেটটি দেখবেন এখানে নতুন মডেলে ১১৫১ পিনের সকেট ও পুরনোটিতে ৪৭৮ টি পিনের সকেট রয়েছে যার পিনগুলো থাকে প্রসেসরের মধ্যে। র্যামের স্লটের ক্ষেত্রে নতুন মডেলের বোর্ডটিতে রয়েছে চারটি সকেট। পুরনো মডেলে আইডিই কানেক্টর রয়েছে যা নতুন বোর্ডে নেই। পুরনো মডেলে এজিপি স্লট রয়েছে যা আপডেট হয়ে পিসিআই এক্সপ্রেস স্লটে রূপান্তর করা হয়েছে। পিসিআই স্লটের কোন অপশন নতুন বোর্ডে নেই যেখানে পুরনোটিতে তিনটি স্লট রয়েছে। নতুন বোর্ডে ফ্লপির কোন কানেক্টর নেই, যেখানে পুরনোটিতে একটি কানেক্টর আছে। নতুন বোর্ডে ৬টি সাটা কানেক্টর থাকলেও পুরনোটিতে রয়েছে ২টি। আমরা আরেকটু গভীরে যাই, এখানে দেখা যাচ্ছে পুরনো বোর্ডটিতে নর্থ ব্রিজ ও সাউথ ব্রিজ নামক দুইটি চিপসেট রয়েছে যেখানে নতুন বোর্ডটিতে একটি চিপে কম্বিনেশন করা হয়েছে। তাছাড়া, নতুন বোর্ডগুলো এখন সাধারণ ক্যাপাসিটরের জায়গায় সলিড ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়েছে যা অনেক দীর্ঘস্থায়ী। অডিও ও ইথারনেট চিপ অনেক উন্নত ও আরো বেশী ফাংশনাল করা হয়েছে নতুন মডেলগুলোতে। সবকিছু মিলিয়ে এই ১০ বছরের ব্যবধানে ক্লোন পিসির মাদারবোর্ড গুলোতে ব্যপক উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে যার শেষ কোথায় আমাদের পক্ষে তা অনুমান করাও সম্ভব নয়। ভালো থাকবেন সবাই, আবার আসব নতুন কোন প্রযুক্তি কথনে। প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে আমার কিছু বিশ্লেষণ খুব সহজে ও স্বল্প সময়ে জানতে আমার ব্লগ সাইটটি ভিজিট করার আমন্ত্রণ রইল: https://gadget-insider.blogspot.com
আজকের টপিক সংক্রান্ত একটি ভিডিও রয়েছে আমার ব্লগে। আশা করি সবার ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।
আমি Sam Thesyst। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 78 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।