সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়ের এ যাত্রা যেমন মানুষের জন্য কল্যান বয়ে নিয়ে এসেছে, ঠিক তেমনি পরিবেশ ও মানুষের জন্য অনেক সমস্যার কারনও হয়ে দাড়িয়েছে। তবে আজকে আমি আপনাদের যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তা মানবসভ্যতার জন্য যথেষ্ট কল্যানকর বলে আমি মনে করি। সম্প্রতি একদল গবেষক এমন এক ধরনের ব্যাটারি আবিষ্কার করেছে যা মানুষের থুতুর মাধ্যমে রিচার্জ হয়।
শুনতে অভাক লাগছে তাইনা? আমরা অনেকেই লেবু, টমেটো এবং কমলা থেকে ব্যাটারি তৈরি করেছি। আর এখন আপনি থুতু থেকেই ব্যাটারি তৈরি করতে পারবেন। এটা সম্ভব হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে, যার নেপথ্যে রয়েছে Binghamton বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাদের আবিষ্কৃত ব্যাটারি কাগজ এবং ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। এই ব্যাটারি রিচার্জ করার জন্য থুতু ব্যাবহৃত হয়।
মুখের একফোটা থুতুর মাধ্যমেই ডিভাইসটি একটিভ হয়ে যায় এবং ইলেকট্রিসিটি উৎপন্ন করতে শুরু করে। এর মাধ্যমে তৈরিকৃত ইলেকট্রিসিটি একটি LED লাইটকে ২০ মিনিট পর্যন্ত জ্বালিয়ে রাখতে সক্ষম। মানুষের মুখে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে তার মাধ্যমেই এই ব্যাটারি রিচার্জ হয়।এই ব্যাটারি তৈরিতে এক ধরনের বিশেষ কাগজ ব্যাবহৃত হয় যা journal Advanced Materials Technology তে প্রকাশিত হয়।
Binghamton ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্সের প্রফেসর Seokheun Choi বলেছেন, এই ব্যাটারিতে এক ধরনের বিশেষ ব্যাকটেরিয়া সেল ব্যাবহৃত হয় যাকে বলা হয় exoelectrogens. এটি ইলেকট্রোডের বাইরে ইলেকট্রন তৈরি করতে পারে। তিনি এই গবেষনার একজন সহকারী।কাগজের এই ব্যাটারি অরিগামি আকারে তৈরি করা হয়। যার ফলে এটি সহজেই ব্যবহার করা যায়।
এই কাজের জন্য কাগজের ব্যাটারিতে Exoelectrogens নামক অণুজীব ব্যাবহৃত হয়। কাগজের মধ্যে বহুসময় ধরে এই ব্যাকটেরিয়া সংরক্ষন করা হয়। অনেকদিন ধরে সংরক্ষনের ফলে ব্যাকটেরিয়া সেলগুলো জমে শুকিয়ে যায়। Exoelectrogens তাদের সেল ওয়ালের বাইরে ইলেকট্রোডের নিকট ইলেকট্রন্স ট্রান্সফার করতে পারে।
অণুজীবগুলোর কোনো কিছু খাবার প্রয়োজন হয়। আর Choi’s battery তে থুতু থেকে দুই ধরনের জিনিস উৎপন্ন হয়। এটি অণুজীবগুলোর শুকনো সেলগুলো জাগিয়ে তুলে এবং তাদের খাদ্যের ব্যাবস্থা করে। Exoelectrogens তে থুতু দেওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যাটারি ইলেকট্রিসিটি উৎপন্ন করা শুরু করে। Choi বলেছে, এটা পৃথিবীর প্রথম ব্যাটারি যা মানুষের থুতুর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
এই ব্যাটারি তৈরিতে ব্যাবহৃত ম্যাটেরিয়াল অনেক সস্তা। যার ফলে এটি তৈরিতে খরচ অনেক কম হয়। অপরদিকে বর্তমানে প্রচলিত গতানুগতিক ব্যাটারির চেয়ে এটি অনেক টেকসই হয়। এই ব্যাটারি সহজেই Dispose করা যায়, এটি ব্যবহার করাও সহজ।এটি পোর্টেবল হওয়ার কারনে যেকোনো পরিবেশে এটি ব্যবহার করা যায়। এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয়না। এমনকি এই ব্যাটারি মরুভূমির মত বৈরি পরিবেশেও ব্যবহার করা যায়।
উপরে উল্লিখিত কাজগুলোর পাওয়ার সোর্স হিসেবে এই ব্যাটারি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ব্যাটারি পরিবেশ বান্ধব বিধায় কোনো ধরনের সাইড-ইফেক্ট নেই। তাই, আমরা এই ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারি।
এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ প্রচলিত ব্যাটারি কেনার ক্ষমতা রাখেনা। তাদের জন্য এটি আশীর্বাদস্বরূপ। এই ব্যাটারির ব্যবহার শুরুর মাধ্যমে তা আর্থিক ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শুধুমাত্র থুতুর মাধ্যমেই এই ব্যাটারি চালু করা সম্ভব। এমনকি কেও যদি শুকনো অনুভব করে এবং থুতু দিতে সমস্য হয়, তাহলে কয়েক ফোটা নোংড়া পানি দিলে ব্যাটারি চালু হয়ে যাবে।
এই ব্যাটারি তৈরিতে অল্প কিছু ম্যাটেরিয়াল ব্যাববহৃত হয়। ফলে এর গঠন অনেক সহজ। অল্প খরচেই এই ব্যাটারি তৈরি করা সম্ভব এবং এটা সহজে Dispose করা যায়। অন্যদিকে প্রচলিত ব্যাটারি Dispose করা কষ্টকর এবং এর ভিতরে থাক বিষাক্ত কেমিক্যাল মাটির ক্ষতি করে। Choi এর ব্যাটারি পরিবেশের জন্য উপযোগী এবং এটি অনেকদিন পর্যন্ত টেকসই হয়। তাই, নিঃসন্দেহে এটি প্রচলিত ব্যাটারির চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী।
Choi গত পাঁচ ধরে কাজ করেছেন এই ব্যাটারিকে অরিগামি আকার দেওয়ার জন্য। এই ব্যাটারি ব্যবহার করার সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই কাগজের ব্যাটারিকে সহজেই ভাঁজ করে রাখা যায় এবং সিরিজ বা প্যারালালে কানেক্ট করে ব্যাটারির পারফরমেন্স বাড়ানো যায়। তবে, থুতু বা নোংড়া পানির মাধ্যমে যে পরিমান ইলেকট্রিসিটি উৎপন্ন হয় তার মাধ্যমে একটি সেলফোন চালু করা সম্ভব হয়নি, শুধুমাত্র একটি LED লাইট চালানো গেছে।
তবে, গবেষকরা এর পারফর্মেন্স বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কারন, এর পারফর্মেন্স বৃদ্ধির মাধ্যমে ইলেকট্রিসিটির সমস্যা দূর করা সম্ভব। তাহলে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অনেক কাজে আসবে এই ব্যাটারি। কারন, উন্নয়নশীল দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল এখনো ইলেকট্রিসিটির অভাবে রয়েছে। এছাড়া, পরিবেশকে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও গ্যাসের হাত থেকে রক্ষার করতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে আমার কাছে এই প্রযুক্তি অনেক অপরিহার্য বলে মনে হয়েছে। কারন এর উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইলেকট্রিসির অভাব পূরন করা সম্ভব অপরদিকে পরিবেশ রক্ষা পাবে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও গ্যাসের হাত থেকে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আপনাদের গুরুত্বপূর্ন মতামত জানাতে অবশ্যই ভুলবেন না।
আমি সোহানুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 37 টি টিউন ও 153 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
A man who listens to his heart.