কয়েকদিন ধরে অনলাইনে, ফেসবুকে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সব খানে দেখছিলাম একটা নিউজ- পেপ্যাল বাংলাদেশে আসছে। এই সংবাদে আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ফ্রিল্যান্সাররা খুব আশান্নিত হয়েছিলেন। পেপ্যাল চলে আসলে আমাদের আর ফ্রি ল্যান্সিং করে টাকা দেশে আনার কোন সমস্যাই থাকত না। এই যে দেখুন ইন্ডিয়ায় ফ্রিল্যান্সারদের টাকা যেভাবে তাঁদের ভারতীয় ব্যাংক হিসাবে পাঠাচ্ছে, ঠিক এভাবে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের টাকাও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে পাঠাবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, পেপ্যাল সরাসরি এমন কোনো সার্ভিস নিয়ে আপাতত বাংলাদেশে আসছে না, আসছে অন্যভাবে। ইদানীং পেপ্যাল ঝুম (xoom.com) নামের আমেরিকাভিত্তিক একটি অনলাইন রেমিট্যান্স কোম্পানিকে কিনে নিয়েছে, যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে শুধু রেমিট্যান্সের টাকা পাঠানোর সার্ভিস প্রদান করবে। আর কিছুই না! অনেকটা আমাদের দেশে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন যে সার্ভিস দিচ্ছে তা করবে পেপ্যাল। তাহলে ফ্রিল্যান্সারদের লাভ হল কি?
ঝুম একটি ‘অনলাইন’ রেমিট্যান্স কোম্পানি। ঝুমের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হলে প্রথমে xoom.com–এ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রদত্ত ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ঝুমের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে টাকা পাঠাতে হবে। টাকা পাঠানোর ‘উৎস’ হিসেবে ব্যাংক হিসাব, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের নম্বর দিতে হবে। গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকের হিসাবের নম্বর উল্লেখ করা যাবে।
xoom.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখা গেছে যে টাকা পাঠানোর ‘উৎস’ হিসেবে যেসব ব্যাংকের হিসাব নম্বর দেওয়া যাবে, তাতে পৃথিবীর বহু দেশের বহু ব্যাংক রয়েছে। আর ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের যে নম্বর ব্যবহার করা যাবে, তা যেকোনো ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা ভিসা ও মাস্টার কার্ড হতে হবে। কিন্তু টাকা পাঠানোর উৎস হিসেবে ‘পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট’ নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। লক্ষণীয় যে অন্যান্য রেমিট্যান্স কোম্পানির মতো ঝুমের কোনো সরাসরি এজেন্টও নেই, যেখানে গিয়ে ক্যাশ প্রদান করা যাবে।
যেহেতু পেপ্যাল (PayPal) ‘জুম’ নামের এই অনলাইনভিত্তিক রেমিট্যান্স কোম্পানিকে কিনে নিয়েছে, তাই আশা করা যায় যে অচিরেই কোম্পানিটি ঝুম সিস্টেমে টাকা পাঠানোর উৎস হিসেবে ‘পেপ্যাল হিসাবকে’ অন্তর্ভুক্ত করবে। তখন আমাদের দেশের অগণিত ফ্রিল্যান্সার সরাসরি তাঁদের পেপ্যাল অ্যাকাউন্টে যে ডলার জমা হবে, তা ঝুমের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনতে পারবেন।
পেপ্যাল ইদানীং তাদের ঝুম সার্ভিসের জন্য ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। অচিরেই ব্যাংক দুটি ঝুমের সেবা চালু করবে। কিন্তু তা হবে শুধু রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য।
এই ব্যাংক দুটির মাধ্যমে আমাদের দেশে পেপ্যালের ঝুম সার্ভিস চালু হলেও দেশের অগণিত ফ্রিল্যান্সার এর সুবিধা নিতে পারবেন না, যদি নিচের দুটি শর্ত পূরণ না হয়—
(১) যদি ঝুমের মধ্যে প্রেরকের ‘টাকার উৎস’ হিসেবে পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট অন্তর্ভুক্ত করা না হয় (অর্থাৎ পেপ্যাল সিস্টেম ও ঝুম সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা না হয়) এবং
(২) যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট থেকে আনা টাকাকে রেমিট্যান্স হিসেবে গণ্য না করে (পেপ্যালে সঞ্চিত টাকা বাংলাদেশে বসবাসকারীদেরই টাকা, তাই এ টাকাকে রেমিট্যান্স বলা যায় না)।
উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ায় পেপ্যাল যেভাবে ফ্রিল্যান্সারদের টাকা পাঠায়, তা রেমিট্যান্স নয়। এটাকে একধরনের সার্ভিস এক্সপোর্টের টাকা বলা যায়, যা গতানুগতিক রেমিট্যান্স পদ্ধতিতে সরাসরি আসে না। পেপ্যাল কর্তৃক ঝুমকে কেনার যে সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য, তা বাস্তবায়ন করতে হলে ওপরের ১ নম্বর শর্ত পূরণ করতেই হবে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, ‘কত দিনে’। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকও পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে আনতে চায়। তাই আশা করা যায় যে ২ নম্বর শর্ত পূরণে দুই পক্ষের সবাই পেপ্যালের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাবে। অর্থাৎ, ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবেই গণ্য করা হবে। তাই আমরা আশা করতে পারি আমাদের হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তার দীর্ঘদিনের একটি বিরাট সমস্যা এই মুহূর্তে না হলেও অদূর ভবিষ্যতে সমাধান হবে।
পেপ্যালের ২০৩ টি দেশের কাজ করার লিস্টিং থাকলেও প্রকৃতপক্ষে মাত্র ২৫ বা ২৯ টি দেশে পেপ্যাল লোকালি ফোল সার্র্ভিস ফাংশনাল রয়েছে। বিভিন্ন দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম, কারেন্সি, আইন, টেকনিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ভিন্ন থাকায় পেপ্যালের অপারেশনও দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। পেপ্যাল কেন একটি দেশে কাজ করে না সেই ফ্যাক্টগুলো সাধারণত গোপনই রাখে তারা। কিন্তু সাধারণত ধারণা করা হয় একটি দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম, রিস্ক, বিজনেস কেইস, ট্যাক্সেশন, ইউএস ব্যান ইত্যাদি ফ্যাক্ট হয়ে থাকে।
২০৩টি দেশের মধ্যে মাত্র ১০৭ টি দেশ তাদের অর্থ লোকাল ব্যাংকে উইথড্রো করতে পারে। তার মানে বাকি ৯৬টি দেশ থেকে অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারলেও গ্রাহকরা লিমিটেড বা কোন ভ্যারিফাইড অ্যাকাউন্ট পাচ্ছেন না। প্রকৃতপক্ষে এসব ক্ষেত্রে কান্ট্রি ইনডেক্স ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। এখনকার মতই ইউএস অ্যাকাউন্ট (মাস্টার কার্ড / পেওনিয়ারের মতো) ভ্যারিফাইড মাস্টার কার্ড লাগবেই। তাই টাকা উইথড্রো করতে গেলে সেই একই পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে যা এখন আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা করছে পেওনিয়ার বা অন্যান্য মাস্টার কার্ড দিয়ে। পেপ্যালের সেবার ধরণ ও পরিধি দেশভেদে যেহেতু ভিন্ন হয় তাই তার ব্যাংকিং কালচার, স্যোশিও ইকোনমি ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে পেপ্যাল বা ইন্টারন্যাশনাল ইনওয়ার্ড অনলাইন পেমেন্ট নিয়ে বিভ্রান্তির অন্যতম কারণ আমাদের প্রকৃত ধারণার অভাব। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে পেপ্যাল আসা নিয়ে প্রতিবার এক ধরণের আশ্বাস আসছে। প্রকৃতপক্ষে পেপ্যাল বাংলাদেশে না আসার ক্ষেত্রে সরকারের আইসিটি ডিভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিসের একক ব্যর্থতা নয়। পেপ্যাল সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি প্রাইভেট কোম্পানি যারা তাদের প্লান, পলিসি, রোডম্যাপ, ফিজিবিলিটি, রিস্ক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্ম-পরিকল্পনা করে থাকে।
বাংলাদেশে পেপ্যাল বা এই ধরণের অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে নিয়ে কাজ করতে গেলে সবার আগে আমাদের বুঝতে হবে কারা এটার স্টেক হোল্ডার এবং কাদের কি ভূমিকা নিতে হবে। যেমন পেপ্যালের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে প্রধান স্টেক হোল্ডার। তাই বাংলাদেশ ব্যাংককেই লিড নিতে হবে বা মিটিং করতে হবে, পলিসি ঠিক করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে তাতে আমাদের সকল ব্যাংক, আইসিটি ডিভিশন, বেসিস একসাথে একযোগে কাজ করতে হবে।
আমরা যারা পেপ্যাল নিয়ে বেশি সাফার করি তার একটি কারণ যেমন টাকা বিদেশ থেকে সহজে আনা আবার আরেকটি কারণ কিন্তু পেপ্যাল ব্যালেন্স অনলাইনে খরচ করা। সেটা বিভিন্ন প্রয়োজনে, সেটা ডোমেইন কিনা থেকে শুরু করে, ফরেক্স করা, অনলাইন বেট খেলা, টিকেট কেনা, অনলাইন শপিং করা, ই-বে বা অন্যন্য ডিল, অফার নেয়া, ডিজিটাল সার্ভিসের সাবক্রিপশন করাসহ হাজার সেবা, পণ্য এবং উপকরণ পেতে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমরা অন্য দশটি উন্নয়নশীল দেশের মতই এসব পেতে চাই, সম্ভবত আমাদের বাস্তবতায় এই স্বপ্ন হয়তো পূরণ নাও হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিয়ম একই রকম। দেশের বাইরে টাকা পাঠানো বা বিদেশী সাইটে বা অনলাইন ক্রয়ে কড়াকড়ি আরোপ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও হয়তো ভারতের মত আমাদের দেশে এরকম আইন করবে যে পেপ্যাল দিয়ে কোন গুডস বা সার্ভিস কেনা যাবে না বা টাকা ৭ দিনের বেশী পেপ্যাল অ্যাকাউন্টে রাখা যাবে না, বিদেশে টাকা ট্রান্সফারসহ অর্থপাচার রোধে সকল ব্যবস্থাই থাকবে। তাই আমাদের জানা উচিত পেপ্যাল অন্য দেশে যে সেবা বা সুযোগ দিয়ে থাকে বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে তা দেয়ার সুযোগ নেই। কেউ খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন- পেপ্যালের ২৫ হতে ২৯ টি ফুল স্কেল অপারেটিভ দেশেগুলো ছাড়া অন্য দেশগুলোতে কি ধরণের লিমিটেড সেবা দিয়ে থাকে। তাহলে অনেকটাই বাস্তব ধারণা মিলবে যে বাংলাদেশে পেপ্যালের গুরুত্ব কতটুকু !
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অনেকেই যা মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যংকের পলিসি সাপোর্ট থাকলেই হয়তো পেপ্যালের চলে আসা সহজ। প্রকৃতপক্ষে শুধুমাত্র পলিসি ব্যাক-আপ দিয়ে অনলাইন পেমেন্ট প্রডাক্ট চালু করা সহজ নয় কারণ পলিসিগুলোও অটোমেশন করতে হবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট।
পেমেন্ট গেটওয়ে যেমন ইন্টারন্যাশনালি দরকার তেমনি লোকালিও দরকার। যেখানে বাংলাদেশে একটিও লোকাল অনলাইন পেমেন্ট গেইটওয়ে নেই। যদিও আমাদের কয়েকটি মার্চেন্ট পেমেন্ট সার্ভিস আছে। এসএসএল কমার্স, ইজিপেওয়ে, আমারপে, ওয়ালেটমিক্স ইত্যাদি যা কয়েকটি ব্যাংক এবং মোবাইল ট্রাঞ্জেকশন প্রসেসরকে কানেক্ট করে এমন হাব বা গেইটওয়ে তৈরি হয়েছে। কিন্তু মধ্যবর্তী ইস্যূয়িং ব্যাংক, অথরাইজিং ব্যাংক, মাস্টার কার্ড বা ভিসা ফি, এমএসপি সার্ভিস ফি দিয়ে গ্রাহক সেবা বা ই-কমার্স বিপ্লব কঠিন।
গত প্রায় এক দশক ধরে সকল কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে সেন্ট্রাল ব্যাংক একটার পর একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে কোর ব্যাংকিং সিস্টেম ডেপ্লয় করানো হয়েছে। এখনো কিছু ব্যাংক ডিসেন্ট্রালাইজ ব্রাঞ্জ ব্যাংকিং মডিউল দিয়ে কাজ করাচ্ছে। এসিএইচ (অটোমেটিক ক্লিয়ারিং হাউজ) অনেক আগেই ইমপ্লিমেন্ট করা হলেও সেটা সম্ভবত চেক ক্লিয়ারিং, পস, এটিমে কাজ করছে। যদিও ইন্টারব্যাংক ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য বিইএফটিইএন (বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক) চালু করা হয়েছে তারপরও প্রকৃত চিত্রে যতটুকু জানি প্লাস ওয়ান ডে লাগে তার অন্যতম কারণ হয়ে থাকতে পারে এখনও সব কোর-ব্যাংকিং সিস্টেমের সাথে রিয়েলটাইম কানেক্টিভিটি হয়নি। সেক্ষেত্রে বিশেষ ফাইল আপলোড করে কাজ সাড়া হয় যার ফলে সেটেলমেন্ট এবং রিকনসিলিয়েশনে টাইম লাগে।
কারেন্সি রোটেশন ল বাংলাদেশের জেনেরিক এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে অনলাইন পেমেন্টের নেচার যেহেতু অন্যরকম তারপর রিয়েলটাইম তাই এটার কি পলিসি মেইনটেইন করতে হবে তা ঠিক করতে হবে। তাছাড়া আমাদের চার্জব্যাক বা রিফান্ড পলিসিগুলোও সেট করতে হবে যেহেতু বাংলাদেশের কালচার ভিন্ন তাই এটার মিটিগেশন প্রসেসগুলোও ভিন্ন হবে।
তাছাড়া সাইবার-ল, ফ্রডলেন্ড ল, ম্যান-ইন- ব্রাউজার এট্যাক (এম-আই-বি),আই-ডি থেফড, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিশিং, অটুমেটিক হারভেস্টিং অফ কাস্টমার ডেটা ভায়া বটনেট এবং হ্যাকিংয়ের মতো বিষয়গুলোতে আমাদের মিটিগেট করতে হবে। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে যাতে পেপ্যাল বা অন্যন্য ইন্টারন্যাশনাল, ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে সহজেই কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশকে এখনও যারা ছোট প্লটিং মনে করছেন সেটা তাদের ইনফিরিয়র ডিসঅর্ডার। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদশের সাধারণ মানুষ তথাপি এই যুব সম্প্রদায় প্রমান করেছে বিভিন্ন সেক্টরে আমরা অন্যতম পটেনশিয়াল রাইজিং ইকোনমি, নেক্সট এশিয়ান টাইগার (নট অনলি ক্রিকেট), মেচিউর, ক্যাপাবল। এটা আমরা যদি কাজে লাগাতে না পারি সেটা আমাদের ব্যার্থতা এবং দূর্ভাগ্য।
আমরা যে পেপ্যালের জন্য থেমে নেই তার প্রমান আমাদের ফ্রিল্যান্সার এবং আইটি কোম্পানিগুলো যারা বছরে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে তেমন কোন বাধা বা সমস্যা ছাড়াই। প্রায় সব আইটি কোম্পানিগুলো আউটসোর্সিং কাজ করছে এবং আমরা নরমাল ব্যাংকিং চ্যানেলেই প্রতি মাসে কোন বাধা ছাড়াই লাখ লাখ ডলার নিয়ে আসছি। ফ্রিল্যান্সারও সহজেই টাকা উঠাতে পারছেন লোকাল ব্যাংকে, স্ক্রিল, পেওনিয়ার, নেটেলার বা আরও অনেক সেবাদাতা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি যারা মাস্টার কার্ড প্রভাইড করছে।
পেপ্যাল অনেক সহজলভ্য কিন্তু ব্যায়বহুলও বটে। আমাদের প্রয়োজন নিজেদের পেপ্যাল বা লোকাল পেমেন্ট গেটওয়ে যা ই-কমার্সের জন্য বা পি টু পি, ইন্টার-ব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য। আমাদের বিদেশে কর্মরত শ্রমিক ভাইদের উপার্জিত ১৬ বিলিয়ন ডলার আনার জন্য শতশত মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি মানি বা রেমিটেন্স ট্রান্সফার লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পিছনে ধর্ণা দেয়। বর্তমানে ৩৫০টিরও বেশি মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করে।
বর্তমানে আমাদের যাদের অনলাইনে উপার্জিত টাকা বাংলাদেশে আনার প্রয়োজন পড়ে তারা খুব সহজেই অনলাইন কারেন্সি নেটেলার, পারফেক্ট মানি, বা স্ক্রিল ইত্যাদি ই-কারেন্সি ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি আপনার মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড থাকে তাহলে কাজটা আরও সহজ। তবে আমি জানি যে একটা মাস্টারকার্ডের মালিক হওয়া বেশ ঝামেলার। তাছাড়া এতে করে টাকা আনা গেলেও, টাকা রিচারজ করে অনলাইনে পেমেন্ট করাটা আরও ঝামেলার। তারা চাইলে ভার্চুয়াল কার্ড এর সাহায্য নিতে পারেন। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সার্ভিস Qcard Asia সীমিত পরিসরে বিজনেস শুরু করেছে। ধরুন, আপনি অনলাইনে অ্যামাজন থেকে কিছু কিনতে চান, কিংবা গোড্যাডি থেকে ডোমেইন কিনতে চান, খুব সহজে কিউকার্ড দিয়ে এই সকল পেমেন্ট করতে পারবেন। সাথে আরও সুবিধা হল যে আপনি বিকাশ কিংবা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে আপনার কার্ড রিচার্জ করতে পারবেন। তাহলে এইসব বিকল্প গুলো আমরা ব্যবহার করছি না কেন? কেন পেপ্যাল আসার প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছি আর উদাস হয়ে পেপ্যালের অপেক্ষা করছি?
সহজ কথা হচ্ছে- আমাদের প্রমান করতে হবে নিজেদেরকে। এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যে পেপ্যালের কাছে আমাদের দেশে আসার আবদার করতে হবে না, তাদের অফিসে বসে আমাদের দেশের কর্মকর্তাদের ঘণ্টার পর ঘন্টা মিটিং করতে হবে না। বরং পেপ্যালের মত শতশত কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যাংকের পিছনে ঘুরবে তাদের অপারেশন লাইসেন্সের জন্য।
তথ্য সুত্র ঃ
প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেস ও ডেইলি স্টার পত্রিকা।
এবং আরও সাহায্য পেয়েছি ফ্রিল্যান্সার মোঃ শফিউল আলমের ব্লগ থেকে।
আমি মীর আযহার আলি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 13 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নাম মীর আযহার আলি। পেশায় একজন ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট। পাশাপাশি অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও অন্যান্য বিষয়ে ব্লগে লেখালেখি করছেন। সাম্প্রতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি বিষয়ে তিনি আপডেট থাকতে পছন্দ করেন। তার বিভিন্ন লেখাগুলো পড়ার জন্য ঘুরে আসতে পারেনঃ http://www.forexing24.com/ ব্লগ থেকে।
কিউ কার্ড যে নতুন প্রতারণা নয় তার নিশ্চয়তা কে দিবে? BD Card International এর নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আপনি ঘুরে ফিরে আপনার পোষ্টগুলোতে শুধু কিউ কার্ড, কিউ কার্ড চিৎকার করছেন। ঘটনা কী!