বন্ধুরা আমি জানি এরকম অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মনে প্রশ্ন থাকে একটি রিমুভেবল ব্যাটারি এবং একটি নন-রিমুভেবল ব্যাটারি নিয়ে। আজকের টিউনটি পড়তে থাকুন কেনোনা আমি আজ এই বিষয় নিয়ে অনেক ভালো একটি বর্ণনা দিতে চলেছি যা আপনার মনে সন্দেহ এবং ভুল ধারণা দুটিই দূর করে দেবে। আপনি যদি নিয়মিত পাঠক হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই জানেন যে আমি ভূমিকাতে বেশি সময় লাগাতে একদম পছন্দ করি না, তাই চলুন মূল বিষয়ের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়া যাক।
আপনারা হয়তো লখ্য করে থাকবেন যে অ্যাপেল আইফোন শুরু থেকেই তাদের ফোনে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যবহার করে আসছে। তাতে কিন্তু কারো কোন মাথার ব্যাথা ছিল না। কিন্তু যেই স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি এস৬ ফোনে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যবহার করে দিল তাতেই হাজারটা টিউমেন্টের সূচনা ঘটতে আরম্ভ করে দিল। যাই হোক, অনেক ব্যবহারকারীর মনে প্রশ্ন থাকে যে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ওয়ালা ফোন বেশি ভালো না রিমুভেবল ব্যাটারি ওয়ালা ফোন বেশি ভালো? আবার আমরা প্রায় সবাই মানুষের শোনা কথা নিয়ে বেশি নাচতে পছন্দ করি। আপনাকে হয়তো কোন বন্ধু এসে বল্ল যে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ফোন একদম বেকার, ব্যাটারি খোলা যাবে না, একদমই কেনা উচিৎ নয়। আর সেটা শুনে আপনিও তালে তাল মেলালেন। আর আপনিও আরো ১০ জন বন্ধুকে গিয়ে একই গান শুনালেন। তো আসলে কোন বিষয়ের উপর ভুল ধারণা এভাবেই বিস্তার লাভ করে। আজকে টিউনের একদম গভীরে প্রবেশের পূর্বে একটি জিনিষ জেনে নিন আর সেটা হলো বাস্তবিক ভাবে রিমুভেবল ব্যাটারি বা নন-রিমুভেবল ব্যাটারি বলে কিছু থাকে না। কি আশ্চর্য হয়ে গেলেন? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? দাঁড়ান, এখনো লাইন পুরা হয়নি। আসলে মোবাইল ফোনে যা থাকে তা হল একটি ইউজার রিমুভেবল ব্যাটারি এবং আরেকটি হল নন ইউজার রিমুভেবল ব্যাটারি।
অর্থাৎ এক ফোন এমন থাকে যেখানে ইউজার রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ইউজার মানে একজন ব্যবহারকারী, মানে আপনি বা আমি। ব্যবহারকারী নিজে থেকে ব্যাটারি পরিবর্তন করতে পারে বলে ইউজার রিমুভেবল ব্যাটারি এবং একজন ইউজার নিজে থেকে ব্যাটারি পরিবর্তন করতে না পারলে অর্থাৎ যে ফোনে পারে না সেটি হল নন ইউজার রিমুভেবল ব্যাটারি ফোন। নন ইউজার রিমুভেবল ব্যাটারি তো আপনি বা আমি পরিবর্তন করতে পারবো না কিন্তু যেকোনো মোবাইল রিপেয়ার শপে বা মোবাইল সার্ভিস সেন্টারে ঐ বাক্তি অনেক সহজেই ব্যাটারি পরিবর্তন করে দিতে পারবে। তো এই সমস্যা তো দূর যে ব্যাটারি বেড় করা সম্ভব এবং পরিবর্তন করাও সম্ভব। এবার চলুন আলোচনা করি নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কেন পড়লো আমাদের।
আগের দিনের ফোনে কিন্তু এমনটা হতো না কিন্তু আজকের দিনে এটি একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে যে আপনার ফোনের ব্যাটারি নন-রিমুভেবল হবে [স্মার্টফোন ব্যাটারির বিশেষ যত্ন নেবার উপায় সমূহ]। এর পেছনে আসলে আলাদা আলদা দুই তিন কারন রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
এবার চলুন আলোচনা করি আমাদের মনের মধ্যে আটকে থাকা কিছু ভুল ধারণা নিয়ে। দেখুন অনেকে মনে করে থাকেন যে নন-রিমুভেবল ব্যাটারির ফোন মানে আর পরে ব্যাটারি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এ বিষয় তো আপনি পরিষ্কার ভাবে জেনেই গেছেন যে আসলে ব্যাটারি পরিবর্তন করা সম্ভব। হাঁ, ২-৩ বছর পরে প্রায় সব ফোনেরই ব্যাটারির সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আপনি ভেবে দেখুন তো আপনি কি কোন ফোন একটানা ৩ বছর ব্যবহার করেন? হাঁ অনেক সময় কোন ফোন ভালো সার্ভিস দেয় বলে একটানা ব্যবহার করা হয়, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে কোন ফোন ১-২ বছর ব্যবহার করার পরে আমরা বিক্রি করে দেই। এবং তখনকার সময় কোন নতুন ফোন কিনে ফেলি। তো এই অবস্থায় আপনাকে ব্যাটারি পরিবর্তন করার প্রয়োজন পরবেই না। আর যদি পরেও কি সমস্যা? অনেক সহজ ব্যাপার, যে কাজ আপনি নিজে করতেন সেটা ব্যাস কোন সার্ভিস সেন্টারে গেলেই ২-৩ মিনিটে করে দেবে। এবং তারা আপনার থেকে অবশ্যই বেশি দক্ষ।
আবার অনেকে মনে করেন যে ফোনের ব্যাটারি ইউজার রিমুভেবল হওয়াটা অনেক বেশি সুবিধার। একসাথে দুইটি ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারবো। একটি চার্জ করে ব্যাকআপ হিসেবে রাখবো এবং আরেকটি ব্যাটারি ফোনে লাগানো অবস্থায় থাকবে। সত্যি? আচ্ছা আপনি আমাকে বলুন তো, আপনি কি কখনো এমন করে আপনার ফোন ব্যবহার করেছেন? হাঁ, এটা করা যায়। একদম যে অসম্ভব সেটা বলছি না। কিন্তু আপনি কেন আরেকটি ব্যাটারি কিনতে টাকা ইনভেস্ট করবেন? আর আজকের দিনে কে একসাথে দুইটি ব্যাটারি নিয়ে ঘোরাফেরা করে? যখন আপনার কাছে দুটি ব্যাটারি থাকবে তখন ভাব্বেন আরে ফোনে তো বেশি চার্জ নাই তো ব্যাটারি পাল্টাই। আবার ভাব্বেন তো আরেকটা ব্যাটারি চার্জ করি। তারপরে ভাব্বেন ফোনটা চার্জে লাগাই, তারপর আবার ব্যাটারি, আবার ফোন। উফফ…… আপনার লাইফ একদম কঠিন হয়ে যাবে। 😀 😀 😀 আজকের দিনে ব্যাটারি চার্জ সমস্যা এড়ানোর জন্য আমরা একটি ভালো পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করে থাকি [ভালো পাওয়ার ব্যাংক কেনার কিছু টিপস]। যেটা অনেক ভালো একটি সমাধান। তাছাড়া আপনি বাড়িতে থাকুন, অফিসে থাকুন, গাড়িতে থাকুন, সবজায়গাতেই কিন্তু অনেক সহজে আপনার ফোন চার্জ করতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন [১৫ মিনিটে ব্যাটারি ফুল করার প্রযুক্তি]।
তো ফোনের ব্যাটারি বারবার পরিবর্তন করার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলাটায় উত্তম। কেনোনা এমনটা করতে গিয়ে ফোনের পেছনের অংশটি ঢিল হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া বেশি ব্যাটারি পরিবর্তনের ফলে ব্যাটারি পিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এবং ব্যাটারির কানেক্টরে দাগ পরে গিয়ে ব্যাটারি অকেজো হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া নন-রিমুভেবল ব্যাটারির ফোনে সিম এবং মেমোরি কার্ড খোলা মেলা করা অনেক বেশি সুবিধার হয়ে থাকে [মেমোরি কার্ড কেনার আগে জানুন]।
এবার আসি সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা নিয়ে। অনেকে মনে করেন যে ফোন হাং হয়ে গেলে কি করবো? যেমনটা দেখা যেতো আগের নোকিয়া সিম্বিয়ান ফোন গুলোতে। ফোন হাং হয়ে গেলে ব্যাটারি খুলে ফোন রি-স্টার্ট করতাম। কিন্তু ফোনের ব্যাটারিই না খোলা গেলে কীভাবে ফোন রি-স্টার্ট করবো? দেখুন এখনকার দিনের মডার্ন স্মার্টফোন গুলো অনেক কম হাং হয় আর যদি হাং হয়েও যায় তবে ব্যাটারি না খুলে রি-স্টার্ট করার সুবিধা রয়েছে। আপনি যদি আইফোন ব্যবহার করেন তবে আপনার ফোনের পাওয়ার বাটন এবং হোম বাটন একসাথে ১০ সেকেন্ডের জন্য চেপে রাখুন আপনার ফোন রি-স্টার্ট হয়ে যাবে। আপনি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করলে, আপনার ফোনের পাওয়ার বাটন কিছু সময় ধরে রাখুন, আপনার ফোন রিস্টার্ট হয়ে যাবে [আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কেন আপডেট আসেনা?]। তো এটা নিয়ে মাথা ব্যাথা করার কোন চিন্তা নেই বন্ধুরা।
তো এই ছিল কারন যার জন্য নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা পড়েছিলো আমাদের। আর এটি অবশ্যই ভালো একটি বিষয়। কেনোনা এটি ব্যবহারে আপনার ফোনের ডিজাইন অনেক বেশি সুন্দর হয়ে যায়, এবং এটি অবশ্যই মূল্য রাখে। আর তাছাড়া আমাদের অবশ্যই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমাদের অবশ্যই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিৎ। আর তবেই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে স্মার্টফোন প্রজন্ম [স্মার্টফোন প্রজন্ম কি শেষের পথে?]। আর আপনার অবশ্যই এটার উপর কোন ভাবার দরকার নেই যে আপনার ফোনের ব্যাটারি রিমুভেবল না নন-রিমুভেবল অ্যাবল। ব্যাস একটি ভালো মানের ব্যাটারি হলেই হলো যেটা আপনি চার্জ এবং ডিসচার্জ করবেন [কুইক চার্জিং প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন]। যাই হোক বন্ধুরা আজকের টিউন এই পর্যন্তই ছিল। আশা করছি টিউনটি অবশ্যই উপভোগ করেছেন। তাই অবশ্যই টিউনটি শেয়ার করে আমাকে সমর্থন করুন। এবং অবশ্যই আপনার যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত জানাতে নিচে আমাকে টিউমেন্ট করুন।
বিঃদ্রঃ কিছু জন্মগত চোর রয়েছে যারা আমার টিউন কপি করে ব্যাট ক্রেডিট দিতে চুলকায়। আবার জিজ্ঞাস করলে বড় বড় কথা বলে। আমিই নাকি কপি করছি। যাই হোক, চোরের মুখ লাগা সম্ভব নয়। সবার উদ্দেশ্যে বলছি, আমার লেখা যেকোনো টিউন সেটা টেকটিউনস থেকে হোক আর টেকহাবস থেকে হোক আপনি যেকোনো কোথাও শেয়ার করতে পারবেন কোন সমস্যা নাই। কিন্তু দয়া করে উপযুক্ত ক্রেডিট প্রদান করবেন। ভাই অরিজিনাল কনটেন্ট তৈরি করা অনেক কষ্টের কাজ। অনেক গবেষণা করতে হয় কোন ভালোমানের টিউন করতে। আশা করি আমাকে ভুল বুঝবেন না।
পূর্বে প্রকাশিত- Techubs
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
ভাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে বিস্তারিত টিওন করলে ভাল হয়।