সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের নিত্য ব্যবহার্য কম্পিউটার ইনপুট সিস্টেমের অন্যতম অংশ তথা কম্পিউটার কিবোর্ড সম্পর্কে বিষ্ময়কর তথ্য সম্বলিত আমার আজকের টিউন।
আমরা জানি কম্পিউটার একা একা চলতে পারে না। কম্পিউটার ব্যবহারকারীর নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে শুধু। এই নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমরা কম্পিউটারে মাউস এবং কিবোর্ড সংযুক্ত করে থাকি। সুতরাং কম্পিউটার পরিচালনায় মাউস এবং কিবোর্ড এর গুরুত্ব কতোটুকু সেটা নিশ্চয় আপনাদের বুঝিয়ে দিতে হবে না। ল্যাপটপ কম্পিউটারে সংযুক্ত ট্র্যাকপ্যাড এক্সটার্নাল মাউসের ব্যবহার কমিয়ে দিলেও কিবোর্ড কিন্তু সব কম্পিউটারে স্বরূপে বিদ্যমান থাকে। আজ আমরা তাই কম্পিউটার কিবোর্ড সম্পর্কে বিষ্ময়কর কিছু তথ্য জানবো।
কম্পিউটার কিবোর্ড কম্পিউটারের অন্যতম ইনপুট সিস্টেম হলেও এটার কোন ইউনিক লেয়াউট নেই। বিভিন্ন অঞ্চলে বা দেশে কিংবা ব্যক্তিবিশেষে একেক জন একেক ধরনের কিবোর্ড লেয়াউট ব্যবহার করে থাকেন। যেমন আমরা বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ যে কিবোর্ড লেয়াউট ব্যবহার করি তার নাম QWERTY কিবোর্ড। যাহোক, এসব আপনারা পরেও জানতে পারবেন। এখন চলুন ধারাবাহিক ভাবে কিবোর্ড সম্পর্কে বিষ্ময়কর তথ্যগুলো জেনে নেই। সাবধান থাকবেন চোখ যেন সর্বোচ্চ কপাল পর্যন্তই উঠে। তার বেশি উঠলে কিন্তু বিপদ হতে পারে।
শিরোনাম দেখেই নিশ্চয় আতকে উঠেছেন অনেকেই? ঘেন্নায় কিবোর্ডে নিশ্চয় হাত রাখতে ইচ্ছে করছে না? অথবা কেউ ভাবছেন বেটা টিউনার নিশ্চয় ফাজলামি করছে। আমার এতো সুন্দর কিবোর্ড দেখলেই চুমা খেতে ইচ্ছে করে অথচ এটা নাকি পাবলিক টয়লেট এর চেয়েও ৫গুন নোংরা! যাহোক, মুদ্দা কথা হলো যদি কোন কিবোর্ড টানা এক বছর পরিষ্কার করা না হয় তাহলে সেখানে যে পরিমান ময়লা জমে থাকে সেটা প্রায় পাবলিক টয়লেট এর চেয়ে ৫গুন নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি করে। আসলে আপনি যদি কিবোর্ডটাকে একটু খুলে দেখেন তাহলে নিজেই চমকে যাবেন ভেতরে ময়লার পরিমান দেখে।
এ কারনে নিজেদের স্বাস্থ সুরক্ষা এবং পরিচ্ছন্ন কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য প্রতি এক মাস অন্তর কিবোর্ড ভালো করে পরিষ্কার করা উচিত। যেহেতু কিবোর্ড পরিষ্কারের জন্য কাপড় কিংবা পানি কোনটাই ঠিক মতো ব্যবহার করা যায় না এজন্য কোন ব্লোয়িং মেশিন কিংবা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করা উচিত। আমি ব্যক্তিগত ভাবে পরামর্শ দিবো কিবোর্ড পরিষ্কারের জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে। যেকোন দোকানে ২০০-৫০০ টাকার মধ্যে ইউএসবি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কিনতে পাওয়া যায়। এবার তো নিশ্চিন্ত হলেন তাহলে?
কী-লগার সম্পর্কে আপনাদের আইডিয়া আছে কিনা জানিনা। হ্যাকারেরা কী-লগার ব্যবহার করে আপনার কম্পিউটারের প্রত্যেকটি কীস্ট্রোক সম্পর্কে জানতে পারে। মানে আপনি কম্পিউটারে কী লিখলেন, কী পাসওয়ার্ড দিলেন, কী কী কমান্ড টাইপ করলেন সবকিছু। সাধারনত মেইল, কীজেন, ক্র্যা-ক ইত্যাদির মাধ্যমে কী-লগার কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সেটা ব্যবহারকারীর অজান্তেই ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে এবং আপনার যাবতীয় কী-স্ট্রোক এবং স্ক্রিনশট হ্যাকারকে মেইলে সরবরাহ করে থাকে।
কারও কম্পিউটারে কী-লগার ইনস্টল করা থাকলে সেটা খুব সহজেই বুঝা যায় না। কী-লগার থেকে বাঁচতে কম্পিউটারে সব সময় ভালো মানের ইন্টারনেট সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। যে কারও পাঠানো মেইল ভেরিফাই না করে ওপেন করবেন না। তাছাড়া বন্ধু, শত্রু কিংবা আইটি স্পেশালিস্ট বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ড এর মেইলগুলোও চেক করে তারপর ওপেন করুন যদি সেখানে কোন এটাচমেন্ট থেকে থাকে। কারন ফেসবুক আইডি হ্যাক করার এর চেয়ে সহজ পদ্ধতি আর নেই।
আমি আগেই বলেছি যে আমরা কম্পিউটারে যে কীবোর্ড লেয়াউট ব্যবহার করি তার নাম QWERTY কিবোর্ড লেয়াউট। তবে QWERTY কিবোর্ড ছাড়াও বর্তমানে আরও জনপ্রিয় দুটি কিবোর্ড লেয়াউট হলো Dvorak এবং Colemak কিবোর্ড। এই বাকী দুই লেয়াউট এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারফোরমেন্স হলো Colemak কিবোর্ড এর এবং তারপর দ্বিতীয় অবস্থানে Dvorak কিবোর্ড। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে Colemak কিবোর্ড এর চাইতে QWERTY কিবোর্ড এর চেয়ে ৮০% বেশি আঙ্গুল নাড়াতে হয়। আর Dvorak কিবোর্ড এর চাইতে ৫০% বেশি আঙ্গুল নাড়াতে হয়।
এর মানে দাড়ালো আপনি যদি Colemak কিবোর্ড ব্যবহার করেন তাহলে আমাদের প্রচলিত কিবোর্ড এর চেয়ে ৮০% দ্রুতগতিতে টাইপ করতে পারবেন। অনুরূপ ভাবে Dvorak কিবোর্ডে ৫০% দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবেন। আপনার যদি পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে তাহলে আমার মনে হয় কিবোর্ড লেয়াউট পরিবর্তন করার সময় এসে গেছে। নতুন এর প্রতি আকর্ষন থাকলে কিবোর্ড লেয়াউট চেঞ্জ করা দিয়েই শুরু করা যাক.
আমাদের কাছে বহুল ব্যবহৃত QWERTY কিবোর্ড লেয়াউট ব্যবহার করে আপনি ১০, ০০০ (দশ হাজার) শব্দ লিখেন তাহলে এই পরিমাণ শব্দ লিখতে আপনার হাতের আঙ্গুলগুলো প্রায় ১ মাইল পরিমাণ রাস্তা পরিভ্রমণ করতে পারে। তবে অন্যান্য কিবোর্ড লেয়াউট ব্যবহার করলে এই পরিশ্রমটা বহুগুণে কমে যাবে।
নন-ল্যাটিন কিবোর্ড লেয়াউটগুলোতে মাল্টিপল কিবোর্ড লেয়াউট থাকে। যেমন কোরিয়ান কিবোর্ড লেয়াউটগুলোতে Dubeolsik এবং Sebeolsik লেয়াউট উভয়েই রয়েছে। তবে মজার ব্যপার হলো এরাবিক লেয়াউটে। কারন ম্যাক এবং উইন্ডোজ পিসির জন্য তাদের দুই ধরনের লেয়াউট রয়েছে। মানে ম্যাক থেকে উইন্ডোজে কিংবা উইন্ডোজ থেকে ম্যাকে গেলে আপনার খবর আছে।
টেকটিউনস প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান টেকটিউনস সিইও মেহেদী হাসান আরিফ ভাই একদিন কিবোর্ড লেয়াউট নিয়ে এক বিশাল আলোচনা করেছিলেন আমার সাথে। কিবোর্ড সম্পর্কে এতো তথ্য আমি আগে শুনিনি কিংবা দেখিওনি। তবে শুধু কিবোর্ড লেয়াউট না, আরও অনেক দিন আরও অনেক অনেক কথা শুনার সৌভাগ্য হয়েছিলো মেহেদী ভাইয়ের মুখ থেকে।
তবে সেই সুযোগ কিন্তু আপনারও রয়েছে। যদি হতে চান একজন গর্বিত টেকটিউনস টিম মেম্বার কিংবা টেকটিউনস সুপ্রিম টিউনার তাহলে সে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এখনই। তাড়াতাড়ি এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে চলে আসুন টেকটিউনস টিমে। আমরা তো আপনারই অপেক্ষায়।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে।
আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
ধন্যবাদ ভাই অনেক কিছু জানতে পারলাম