সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আধুনিক কম্পিউটারের প্রকারভেদ এবং এর আদিঅন্ত নিয়ে আমার আজকের মেগাটিউন!
কম্পিউটারকে আমরা বিভিন্ন ভাবে শ্রেণবিন্যস্ত করে থাকি। তার অধিকাংশ জুড়েই থাকে কম্পিউটারের সাইজ, ফাংশনালিটি, ইনপুট আউটপুট সিস্টেম সম্পর্কিত বিষয়াদি। যদিও শাস্ত্র মতে যে যন্ত্রের মধ্যে একটি মাইক্রোপ্রসেসর রয়েছে তাকেই কম্পিউটার বলা যায় কিন্তু আমরা সাধারন মানুষেরা কম্পিউটার বলতে কিছু বিশেষ শ্রেণীর ডিভাইসকেই বুঝি। আমাদের স্বল্প জ্ঞানে আমরা সাধারনত সেই সব ডিভাইসকেই কম্পিউটার বলে আখ্যায়িত করি যাদেরকে মাউস, কিবোর্ড এর সাহায্যে ইনপুট দেওয়া যায়। সেই ইনপুট বিশ্লেষণের জন্য তাদের একটি প্রকৃয়াজাতকরণ ইউনিট রয়েছে এবং সেটার ফলাফল দেখানোর জন্য রয়েছে একটি ডিসপ্লে। আমাদের এই বিশ্লেষণ ক্ষমতা দ্বারা কম্পিউটার কথাটি একটি বিশেষ জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে। সেখানে কম্পিউটার মানে ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ ছাড়া আর কিছু মাথায় আশাকরি।
সাধারনত যে সব কম্পিউটার কেবল একজন ব্যবহারকারীর জন্য তৈরী করা হয় তাদেরকে পারসোনাল কম্পিউটার বা সংক্ষেপে পিসি বলে। যদিও অ্যাপল ম্যাকও একটি পারসোনাল কম্পিউটার তারপরেও মানুষ মনে করে, যে কম্পিউটারে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল আছে সেগুলোই কেবল পিসি। একটু হাস্যকর ব্যাপার আর কি! যাহোক, পারসোনাল কম্পিউটার তথা পিসি প্রথমে শুধুমাত্র মাইক্রোকম্পিউটার হিসাবে পরিচিত ছিলো। কারন এটা এমন একটি ডিভাইস যাতে ক্ষুদ্র জায়গায় বৃহৎ কাজের জন্য সুবৃহৎ সিস্টেম ব্যবহার করা যায়।
পারসোনাল কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এটাতে শুধু মাউস, কিবোর্ড, সিপিইউ বক্স কিংবা মনিটরই থাকবে এমনটা না। অ্যাপলের iPad ও একটি আদর্শ পারসোনাল কম্পিউটার। এবার বুঝতে পারছেন বিষয়টা?
যে সব পিসিকে বহনযোগ্য ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে সেগুলোকে ডেস্কটপ বলে। ডেস্কটপ তৈরীর প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো এটাকে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় স্থায়ীভাবে রাখা। অধিকাংশ ডেস্কটপ কম্পিউটার চালনার জন্য অনেক বেশি পাওয়ার (শক্তি), স্থাপনের জন্য বেশি জায়গা লাগলেও ডেস্কটপ এর যন্ত্রাংশগুলো এবং সমগ্র ডেস্কটপ এর দাম অনেক কম।
ল্যাপটপ কম্পিউটারকে নোটবুকও বলা হয়। সাধারনত ল্যাপটপ কম্পিউটার হলো এমন একটি কম্পিউটার প্যাকেজ যেখানে বহনযোগ্য ভাবে একটি কম্পিউটার প্রসেসর, মেমোরি, হার্ড-ড্রাইভ, ডিসপ্লে, কিবোর্ড, পয়েন্টিং ডিভাইস, ব্যাটারী থেকে শুরু করে একটি আদর্শ কম্পিউটার চালনার সবগুলো সরঞ্জাম সুষমভাবে একটি শক্ত খোলসের মাঝে সন্নিবেশিত থাকে।
নেটবুক হলো একটি আল্ট্রা পোর্টেবল কম্পিউটার যেটা ট্র্যাডিশনাল ল্যাপটপ কম্পিউটারের চেয়ে আকারে ছোট। এটা শুধুমাত্র ল্যাটপপের চেয়ে আকারে ছোটই নয় এটি চালনা করতে ল্যাপটপের চেয়ে কম শক্তির প্রয়োজন হয়। তাছাড়া এটি দামেও ল্যাপটপ এর চেয়ে কম।
পারসোনাল ডিজিটাল এসিস্টেন্ট বা সংক্ষেপে পিডিএ হলো একটি ক্ষুদ্র আকারের কম্পিউটার যেটা হার্ড ডিস্ক এর পরিবর্তে ফ্ল্যাশ মেমোরিতে ডাটা স্টোর করে থাকে। সাধারনত এই সব কম্পিউটারে কোন প্রচলিত কিবোর্ড থাকে না। তারপরিবর্তে এই কম্পিউটারে মডার্ন টাচ স্ক্রিণ থাকে। এই কম্পিউটারটি আকারে অনেক ছোট, মোটামুটি ভাবে একটি পকেট বুক এর সমান হয় এবং এটি চালনা করার জন্য খুবই হালকা ধরনের কিন্তু শক্তিশালী ব্যাটারী ব্যবহার করা হয়। নিচের চিত্রে ডেল এর তৈরি একটি পিডিএ এর নমুনা দেখানো হলো।
ওয়ার্কস্টেশনও এক ধরনের ডেস্কটপ কম্পিউটার। তবে এটি প্রচলিত ডেস্কটপ কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এতে রয়েছে অধিকতর শক্তিশালী প্রসেসর, অতিরিক্ত মেমোরি এবং বিশেষ কাজের সুবিধাযুক্ত যন্ত্রাংশ। ওয়ার্কস্টেশন দিয়ে প্রধানত ৩ ডাইমেনশনাল গেইমিং, গেইম ডেভেলপমেন্ট সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল এবং ভারী কাজ করা হয়।
যে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর সহায়তায় এর সাথে সংযুক্ত অন্য কম্পিউটারে সার্ভিস দিতে পারে তাকে সার্ভার কম্পিউটার বলা হয়। সার্ভার কম্পিউটারে রয়েছে শক্তিশালী প্রসেসর, অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন মেমোরি এবং অবশ্যই বিশাল আকারের হার্ড-ড্রাইভ।
মেইনফ্রেম হলো একটি দৈত্যাকৃতির কম্পিউটার যেটা স্থাপন করার জন্য একটি বিশাল কক্ষের প্রয়োজন হয়। এটা চালাতে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। তবে এটার সাইজের সাথে কাজের ব্যাপ্তিও কিন্তু ব্যাপক। মূলত এই কম্পিউটারগুলো এন্টারপ্রাইজ সার্ভার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
সুপার কম্পিউটার হলো এমন কম্পিউটার যার মধ্যে একাধিক হাইকোয়ালিটি কম্পিউটার একই সাথে কাজ করতে পারে। তবে বর্তমানে সিঙ্গেল সুপার কম্পিউটারও বাজারে প্রচলিত আছে। কিন্তু সমস্যা একটাই, আমাদের মতো সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বায়রে এই সব সুপার কম্পিউটার। কারন একেকটার দাম প্রায় মিলিয়ন ডলার করে। এ সময়ের সবচেয়ে পরিচিত এবং বেস্ট সুপার কম্পিউটার হলো Cray Supercomputers এর তৈরী কম্পিউটার।
বর্তমান সময়ের আলোচিত এবং ভবিষ্যতের বৈপ্লবিক কম্পিউটার হলো পরিধান যোগ্য কম্পিউটার। এগুলো এমনভাবে তৈরী করা যাতে আপনি আপনার পোশাক, চশমা এবং অন্যন্য পরিধেয় এর সাথে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এই কম্পিউটারগুলো দিয়ে কেবল বেসিক কাজ গুলো করা যায়। যেমন ই-মেইল, ডাটাবেজ, মাল্টিমিডিয়া, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
➡ ইমেইলে আমার সকল টিউনের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ টেকটিউনস » সানিম মাহবীর ফাহাদ 🙄
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
কত নদী সরোবর কি’বা ফল চাতকীর, ধারা জল বিনে কভূ মিটে কি তৃষ্ণা……..
কত শত টিউনার, কত শত টিউন! কিন্তু আপনার টিউন ছাড়া কখনোই মন ভরে না। আমাদের এতদিন অপেক্ষায় রাখার জন্য আপনার অবশ্যই সরি বলা উচিৎ।
টিউনের জন্য আজ কোন ধন্যবাদ দিব না। কারন এই টিউন আমাদের প্রাপ্য ছিলো।