হ্যালো টিউনার, টিউজিটর আর টিউডার রা কেমন আছেন আপনারা? আমি আপনাদের ভালোবাসায় ভালো আছি আর থাকবোই না কেন আমরা অধুনা সিকুয়াল টিউন 'ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার যাদের আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জানেন না কিন্তু তাঁরা এই পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছে' টিউডারদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
আমার এই সিকুয়ালের মাধ্যমে আমি এমন ব্যক্তিদের তুলে ধরার চেস্টা করেছি যারা আজকের ফ্রিল্যাসিং এর মত নয় তবে সেসময়কার ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেদের জীবনের ক্যারিয়ার শুরু করেছেন এবং পরবর্তীতে হয়েছেন টেক মহারথী। অনেকেই আমার এই সিকুয়াল পড়ে বলেছেন আসলেই তো এভাবে ভেবে দেখা হয়নি.
আমার 'ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার যাদের আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জানেন না কিন্তু তাঁরা এই পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছে' এর ১ম সিকুয়াল টিউনে আমি আলফ্রেড নোবেল, ওয়াল্ট ডিজনি, রে ক্রোক, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, চার্লস ডিকেন্স কে নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, যেখানে আমরা দেখেছিলাম কীভাবে এইসব ঐতিহাসিক ব্যক্তিগণ জীবনের প্রথম দিকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেছেন এবং পরবর্তিতে উদ্যোক্তা হিসেবে দেশকে সহ পুরো বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছেন। তারা প্রথম দিকে অনেক কষ্ট এবং সংগ্রামের মধ্যে থাকলেও পরবর্তী জীবনে তারা তাদের কর্ম, সৃজনশীলতা, দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনা দিয়ে কীভাবে নিজেদের জীবনকে একদম বদলে ফেলেন। ব্যবসা, সম্পদ এবং সম্মানের সাথে সাথে তারা তাদের জীবনে নিয়ে আসেন ভিন্ন কিছু মূল্যবোধ যা তাদেরকে নিয়ে গেছে ভিন্ন এক উচ্চতায়।
১ম সিকুয়াল - ৫ জন ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার যাদের আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জানেন না কিন্তু তাঁরা এই পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছে। (দেখতে ভুলবেন না)
আজকে আমি 'ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার যাদের আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জানেন না কিন্তু তাঁরা এই পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছে' এর ২য় সিকুয়াল টিউন নিয়ে এসেছি।
এই সিকুয়ালে আমরা আরও ৪ জন ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার এর কথা জানবো যারা না থাকলে হয়ত আমরা এই উন্নত বিশ্ব ও প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হতাম।
অ্যান্ড্রু কার্নেগীর ছিল জন্মগত মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা, যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন তেমনি অনেক দাতব্য কাজেও নিজেকে যুক্ত করেন। ঠিক একই ভাবে ভিন্ন ভিন্ন গুনের অধিকারী বিল গেটস, অ্যারন মন্টোগোমারি ওয়ার্ড, স্যাম ওয়ালটন নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক সংগ্রাম করেছেন, ফ্রিল্যান্স কাজ করে নিজেরা আত্ম-নির্ভরশীল হয়েছেন। পরবর্তীতে এই মানব সমাজকে দিয়েছেন নিজেদের উজাড় করে সেবা এবং ভালোবাসা।
সেহেতু আপনি নিজেকে দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খল এবং কর্মের মধ্যে রাখেন আপনি নিজেও অনেক বেশি মানুষের দায়িত্ব নিতে পারবেন। আপনি নিজের সাথে সাথে মানব সমাজকেও অনেক বড় উপহার এবং সেবা দিতে পারবেন।
অ্যান্ড্রু কার্নেগী যিনি ছিলেন বিশ্বের এক সময়ের সব থেকে ধনী ব্যক্তি। যিনি স্কটল্যান্ডের ছোট্ট এক কুটিরে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে উঠেন। ১৮৪৮ সালে তার বয়স যখন মাত্র ১৩ তারপরিবার অ্যামেরিকা চলে আসেন। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কন্ডিশন পরিবর্তনের আশায়। সেখানে তিনি একটি সুতার কটোন মিলে জব নেন, যেখানে তাঁকে সপ্তাহে ৬ দিন এবং ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। পরবর্তীতে তিনি অবস্থার শিকার হয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ শুরু করেন। যদিও তিনি কিছু বিক্রি করতেন না, তবে টেলিগ্রাফ ম্যাসেঞ্জার বাহক হিসাবে কাজ করতেন।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে অ্যান্ড্রু কার্নেগী পিটসবার্গের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তাদের ব্যবসা সম্পর্কে জানতেন, অন্যান্য বিজনেস এবং বিজনেসম্যান সম্পর্কেও জানতেন এবং তাদের সাথেও যোগাযোগ করতেন। দারুণ যোগাযোগ দক্ষতার কারণে পরবর্তীতে তার টেলিগ্রাফ অপারেটর পদে পদন্নিত হয়। তখন কার্নেগী ছিলেন মাত্র ১৮। খুব দ্রুত প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট থমাস অ্যালেকজান্ডার স্কটের সাথে পরিচয় হয় এবং তিনি তার যোগাযোগ দক্ষতার প্রশংসা করেন এবং আরও অনেক ভেতরের দায়িত্ব পান। কার্নেগীও তাঁকে পর্যাপ্ত সাহায্য করতে থাকলেন।
মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা তাঁকে আরও মানুষের সংস্পর্শে যেতে সহযোগিতা করে এবং তিনি খুব ভালো করতে লাগলেন সব সেক্টরে। সেই সুত্র ধরে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ওডরফ এবং পুলম্যানের বড় কোম্পানিতে সংযুক্ত হতেও তার বেশি বেগ পেতে হয় নি।
অবশেষে কার্নেগী “দ্যা ইউএস স্টিল কর্পোরেশন” নামে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, যা তাঁকে বিশ্বের সেরা ধনীর মুকুট পরতে খুব বেশি দেরি করায়নি। তার ব্যবসা ৪৮০ মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়।
যত বয়সের অভিজ্ঞতা পেয়েছি ততই মানুষ যা বলে তার থেকে মানুষ যা করে সেটাতেই বেশি মনোযোগ দিতাম।
বিল গেটস মাইক্রোসফটের প্রতীক বহন করে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আপনি তার দ্বারা অথবা তার এমপ্লয়ি দ্বারা উদ্ভাবিত কোন না কোন সফটওয়্যার ছাড়া আপনার কম্পিউটার চালাতে পারবেন না। প্রযুক্তি জগতে বিল গেটসের অবদান লিখে বলা সম্ভব না। যদিও বিল গেটস অনেকবার বিশ্বের সেরা ধনী হয়েছেন, তিনি কিন্তু একটা মধ্যবর্তী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। মাত্র ১৩ বছর বয়েসেই তিনি তার নিজের তৈরি ইলেকট্রিক মনস্টার এবং Teletype Model 33 ASR terminal নামে কিছু কম্পিউটার পার্টস বিক্রি করতেন এবং তিনি এই সিস্টেম প্রোগ্রাম করতে পারতেন।
বিল গেটস এবং তার তিন বন্ধু মিলে কম্পিউটার সেন্টার কর্পোরেশন (CCC) এর কিছু সিস্টেম হ্যাক করে ফেলেন। তিনি এ বিষয়ে ভালো এক্সপার্ট ছিলেন। সিসিসি যখন বুঝতে পারে তখন স্টুডেন্টদের ব্যান করে দেন। তখন গেটস তার কোডিং এক্সপার্টনেস দেখান এবং তাদের সিস্টেমে আরও কিছু বাগ খুঁজে বের করেন। এভাবেই গেটস এক সময় কোডিং ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠেন।
১৬ বছর বয়সে তিনি ইনফরমেশন সাইন্স ইনক.এ কোডিং ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৭ বছর বয়সে ক্লাস ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং তৈরি করেন। একই বছরে তিনি এবং তার বন্ধু পল এলেন “ট্রাফিক এনালেটিক্স” নামে ব্যবসা সহয়তা মূলক একটা টুল তৈরি করেন। যদিও এটাতে তাঁরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পান নি। গেটস এবং এলেন তখন MITS নামে একটি বড় কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেন, যারা তখন কম্পিউটার বেসড ইন্টেলের ৮০৮০ সিপিইউ তৈরির কাজে ছিলেন। গেটস তাদেরকে বলেছিল, যে তাদের প্ল্যানে তাঁরা সেই মেশিনে চালিত সফটওয়্যার তৈরি করতে পারবে। কিন্তু আসলে গেটস তাদের সাথে দেখা করার জন্য মিথ্যা বলেছিল। যদিও প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলে তিনি জানতে চান কি সেই সফটওয়্যার? তখন গেটস জানান (Micro-Soft) মাইক্রোসফট। এভাবেই মাইক্রোসফটের জন্ম।
আমি পরীক্ষায় কয়েকটি বিষয়ে ফেইল করেছিলাম, যেখানে আমার বন্ধুরা সব বিষয়ে পাস করেছিল। এখন তারা অনেকেই মাইক্রোসফটের ইঞ্জিনিয়ার আর আমি মাইক্রোসফটের মালিক।
যদি অ্যারন মন্টোগোমারি ওয়ার্ড এখনও বেঁচে থাকতেন তিনিই সম্ভাবতো বিশ্বের সেরা মার্কেটার (নিউজলেটার/সেলস লেটার) হতেন। তার প্রডাক্ট বিক্রির জন্য তিনি খুব বেশি মেইল অর্ডারের উপর নির্ভর ছিলেন এবং তিনিই ছিলেন মেইল অর্ডার বিজনেসের জনক। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি ইটের ভাটায় কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি সাধারণ কিছু পণ্য নিয়ে বিক্রি করা শুরু করেন। ১৮৬৫ সালে তিনি সামান্য কিছু কমিশনে ফ্রিল্যান্স বিক্রয়কর্মীর কাজ শুরু করেন।
অনেক সময় অনেক পণ্য শুকিয়ে যেত। তার সমাধান স্বরূপ তিনি মেইল অর্ডার বিজনেস শুরু করেন। এটার মূল কারণ ছিল কম দামে পণ্য বিক্রি করা যেত এবং বিক্রয়কর্মীর কষ্টও অনেক কম হতো।
তারপরিকল্পনা ফল দিছিলো। তিনি গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীদের কাছে শিল্পজাত পণ্য পৌছাতে চেয়েছিলেন। অনেক ঝড়ঝাপটা সামলেও ১৮৭২ সালে অ্যারন মন্টোগোমারি ১৬৩ টি প্রডাক্ট নিয়ে বিশ্বের সর্বপ্রথম মেইল লিস্ট অর্ডার বিজনেস শুরু করেন। অন্যদিক বিবেচনায় বিশ্বের প্রথম ই-কমার্স বিজনেস শুরু করেন এই অ্যারন মন্টোগোমারি।
যদি কাস্টমার পণ্য কেনার একটু অপেক্ষা করতো এবং টাকা সেভ করতে চাইতো, তাহলে তারা সবসময় মেইল লিস্ট অর্ডারের মাধ্যমে পণ্য কিনতো।
২০১৩ সাল পর্যন্ত ওয়ালমার্ট ছিল বিশ্বের সবথেকে বড় পাবলিক কর্পোরেশন। এটাতে ২.২ মিলিয়ন কর্মচারী নিয়োগ আছে এবং প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার আয় করে। এই powerhouse ফ্রিলান্সার / উদ্যোক্তা স্যাম ওয়ালটন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ওয়ালটন ওকলাহোমাতে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন কাজ করতে থাকেন শুধুমাত্র পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। তিনি তারপরিবারের গাভির দুধ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাস্টমারের কাছে ডেলিভারি দিতেন। ওয়ালটন এভাবেই একজন ফ্রিল্যান্স দুধ বিক্রেতা হয়ে যান শৈশব থেকে।
অনেক হতাশা পার করে তিনি একটি পত্রিকার সাথে যুক্ত হন এবং সেখানে পত্রিকার সদস্যপদ বিক্রির কাজ করতেন, শুধুমাত্র জীবিকা নির্বাহের জন্য। তিনি কলেজে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যও বিক্রি করতেন। এমনকি তিনি কলেজ ক্যান্টিনে খাবার সরবারাহের কাজও করতেন। এভাবেই তিনি বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স পেশার সাথে জড়িত হন।
অবশেষে ২৬ বছর বয়সে ২০, ০০০ ডলার লোণ করে একটি রিটেইল শপ শুরু করেন। ব্যবসাতে ভালো করায় আরও কয়েকটি নতুন আউটলেটের যাত্রা শুরু করেন। এভাবে তিনি ১৯৬২ সালে ওয়ালমার্টের যাত্রা শুরু করান। পরে আর কখনো তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। (সত্য কথা বলতে স্যাম ওয়ালটনের এই লেখাটুকো লিখতে যেয়ে আবেগি হয়ে পড়েছিলাম)
উচ্চ প্রত্যাশা সবকিছুর মূল চাবি।
আপনি কি এরকম ব্যতিক্রমীধর্মী ফ্রিল্যান্সারের সাথে পরিচিত যিনি এই বিশ্বে টিকে আছেন নিজের যোগ্যতা দিয়ে। জানলে আমাকে টিউমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
৩য় সিকুয়ালে থাকবে আরও কিছু অবিশ্বাসযোগ্য ঘটনা, তারা ফ্রিল্যান্সার তবে উদ্যোক্তা। তবে তাদের উঠে আসার গল্প।
ভালো লাগলে টিউমেন্ট করুন, শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...
Like ! tobe amar ken jani Ambition nei…