ফ্রিল্যান্সিং শব্দটা বর্তমান বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। আলফ্রেড নোবেল, অ্যান্ড্রু কার্নেগী, ওয়াল্ট ডিজনি বা রে ক্রোক যদি এই একুশের দশকে জন্মাতেন তাহলে হয়তো তাদেরও প্রোফাইল এই ইল্যান্স, ওডেস্কে থাকতো। তবে এটা সত্য ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) শব্দটা আবিস্কারের আগেই মানুষ ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে জড়িত।
ফ্রিল্যান্সিং হলো নিজের স্বাধীনচেতাকে ধরে রেখে কাজ করা, যা সবার কাছে দারুণ উপভোগ্য। ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান বিশ্বে দারুণ জনপ্রিয়। সবাই দিন দিন পেশাটাকে দারুণ সম্মান করতে শুরু করেছে। ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) থেকে উদ্যোক্তা হওয়ারও দারুণ সুযোগ আছে।
আজ আমি আপনাদের এই করম কিছু ফ্রিল্যান্সার (Freelancer)দের গল্পই করব যাদের আপনি ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) হিসেবে জানেন না কিন্তু জীবনের প্রথম দিকে তাঁরা ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) হিসেবেই নিজেদের মেলে ধরেছেন এবং পরবর্তিতে হয়েছে সফল উদ্যোক্তা। আজ দেখে নিন ৫ জন ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) যারা এই পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছে।
রে ক্রোক বিশ্বের সব থেকে নামকরা ফাস্ট ফুড “McDonald's Inc.” কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, যিনি এক সময় একজন সংগ্রামশীল ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন পেপার বিক্রেতা, একজন অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এবং একজন ফ্রিল্যান্স সেলস ম্যান।
তিনি নিজের তৈরি একটা যন্ত্র বিক্রি করতেন যা একসঙ্গে ৫ টি দুধের আইচক্রিম তৈরি করতে পারতো। এটা ছিল তার নিজস্ব পণ্য এবং নিজেই তা বিক্রি করতেন। তিনি সরাসরি ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করতেন এবং নিজেই সব-কিছু হ্যান্ডেল করতেন। রে ক্রোক একজন সফল সেলসম্যান ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) ছিলেন এবং তিনি অনেক বুদ্ধিমত্তার সাথে সব কিছু হ্যান্ডেল করতেন।
রাতারাতি সফলতা পাওয়ার টিপস চাইলে রে ক্রোক জানান,
“আমি রাতারাতি সফলতা পেয়েছি এটা ঠিক, তবে এই রাতটার জন্য আমাকে ৩০ বছরে হাজারো রাত অপেক্ষা করতে হয়েছে। ”
বলতে গেলে রে ক্রোক ১৫ বছর বয়স থেকেই ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) সেলসম্যান হিসেবে কাজ করছেন। তিনি যখন রেডক্রস সোসাইয়িটিতে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কাজ করতেন তখন থেকে এই ৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি একজন ফ্রিল্যান্স অর্কার। পরবর্তীতে তিনি McDonald's Inc. অধিকরণ করেন।
ওয়াল্ট ডিজনি মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে একজন ডিজাইনার। তিনি এই সময় তার এক প্রতিবেশি অবসর ডাক্তারকে তার ঘোড়ার চিত্র একে দেন। যা হেলায় ফেলে দেওয়ার মতো ছিল না। তারপর ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি কার্টুনিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তার স্কুলের নিউজপেপারে।
পরবর্তীতে তিনি ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি ফিরে তার সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং সিনেমা থিয়েটারে তার বিভিন্ন আঁকা, রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র এবং কমিক বিক্রি করার চেষ্টা করেন। কারণ তিনি জানতেন ডিজাইনার হিসাবে ইনকাম করার অনেক পথ আছে।
সেই সুত্র ধরে তিনি পেসমেন রবিনে আর্ট স্টুডিওতে ডিজাইনার হিসাবে চাকরি নেন। কিন্তু স্টুডিওটি ভালো করতে না পারায় তিনি সেখান থেকে ফেরত আসেন এবং আবার বিভিন্ন থিয়েটারে তার বিভিন্ন আর্ট বিক্রি শুরু করলেন। এভাবেই ডিজনে ফ্রিল্যাঞ্চ ফটোগ্রাফার হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরে নিজে একটা স্টুডিও দেন এবং হলিউডে বিজনেস করার পরিকল্পনা করেন। তার ভাই তাঁকে এই কাজে অনেক হেল্প করেন এবং তিনি তার ভাইয়ের সাথে শুরু করে ডিজনে ব্রাদারস স্টুডিও গড়ে তোলেন।
“আমাদের সকল স্বপ্ন সত্য হতে পারে, যদি আমাদের সেই স্বপ্ন খোঁজার জন্য পর্যাপ্ত সাহস থাকে”। - ওয়াল্ট ডিজনি
আলফ্রেড নোবেল ছোট বেলা থেকেই কবিতা লিখতে পছন্দ করতেন এবং উদ্ভাবনে বিশ্বাসী ছিলেন। তার ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) প্রোফাইল তৈরি করলে বলতে হবে, সর্বদা পণ্য ডিজাইন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে তিনি ভালবাসতেন। তিনি মূলত ডিনামাইট আবিস্কারের জন্য বিখ্যাত হয়ে ছিলেন। যদিও হাজারো ভুল এবং পর্যবেক্ষণের পর তিনি এটাতে সফল হন।
তিনি Ascanio Sobrero এর সাক্ষাতের পর নাইট্রোগ্লিসারিন আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং তিনি এটা বিক্রি করার জন্য অনেক চেষ্টাও করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। অবশেষে তিনি তার ড্রয়িং বোর্ডে ফিরে যান এবং শেষ পর্যন্ত তিনি তার পেটেন্ট আবিস্কার করতে সফল হন এবং তিনি তা বিক্রি করা শুরু করেন।
আলফ্রেড নোবেল জীবনে ৩৫৫ টি পেটেন্ট আবিস্কার করেন এবং তিনি তা নিজেই বিক্রি করতেন। তার ক্লায়েন্টরা অনেক খুশি ছিল তার প্রতি। পরবর্তীতে তিনি কিছু বিক্রয়কর্মী দিয়ে কিছু পেটেন্ট বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন।
"যদি আপনার হাজারো আইডিয়া থাকে এবং তার মধ্যে একটি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয় তাহলেই আমি খুশি। " - আলফ্রেড নোবেল।
হেমিংওয়ে একজন ক্লাসিক আমেরিকান লেখক। তাঁর প্রথম ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু হয় বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিনে লেখা পাঠানোর মধ্য দিয়ে। ১৯১৬ সালে তিনি রিং রাডনার জিনিয়র নামে একটি নিবন্ধ কলম নামে ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ১৮ বছর বয়সে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসাবে দায়িত্ব নেন ঠিক রে ক্রোক এবং ওয়াল্ট ডিজনির মতো। (মনে হয় তাদের অনুসরণ করে) পরবর্তীতে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।
অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসাবে কাজ করার সময় তিনি এগনেস ভনের প্রেমে পড়েন। যদিও এগনেস ভন তাঁকে রিফিউজ করেন। তিনি ইটালিয়ান সৈন্য বাহিনীতে সাহসিক অবদানের জন্য রুপার মেডেল পান, যদিও তিনি তার এক পা হারান। পরবর্তীতে ফিরে তিনি আবার লেখালিখিতে যোগ দেন এবং তার লেখা সাপ্তাহিক টরেন্টো স্টারে প্রকাশ পেতে থাকে।
প্যারিসে এসে তিনি প্রবাসী স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতে থাকেন এবং সেখানে তিনি তার প্রথম বই প্রকাশ করেন। প্যারিসে তিনি অনেক গণ্য-মান্য লেখকের সাথে পরিচিত হন। তিনি তার প্রথম বই “Three Stories and Ten Poems” প্রকাশ করেন।
"লেখার জন্য এক্সট্রা কিছুই নেই, শুধুমাত্র একটা টাইপ রাইটারে বসে যান এবং রক্ত ঝরাতে শুরু করুন। "
ডিকেন্স একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার অতীত জীবন খুব সচ্ছল ছিল না। যখন তার বয়স মাত্র ১২ তখন অত্যধিক ঋণের জন্য তার বাবা এবং ভাইকে কারারুদ্ধ করা হয়। যে কারণে ডিকেন্সকে নিজেই নিজের ভরন পোষণ করতে হতো। তিনি তার এক পরিচিত বন্ধুর সাথে থাকতেন।
তিনি তার স্কুল ত্যাগ করে জুতা মালিশের কাজ নেন শুধুমাত্র পরিবারের ঋণ পরিশোধ করার জন্য। এভাবে তিনি তার বাবা-ভাইকে জেল মুক্ত করেন। পরবর্তীতে তার নানির মৃত্যুর পর ৪৫০ ইউরো পান যা তার জন্য একটু প্রশান্তি আনে।
তার একমাত্র অপশন ছিল ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার কাজ করা, যেটা তার সাথে থাকা পরিবারের পরিচিত বন্ধু করতেন। প্রথমেই তিনি “A Dinner at Popular Walk” নামে লন্ডনের একটি সাময়িকীতে লেখা প্রকাশ করেন। এভাবেই ধীরে ধীরে তিনি একজন নামকরা সাংবাদিক হয়ে উঠেন। এভাবেই তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হয়ে উঠেন।
"আমি একটা বিষয়ে অধিক মনোযোগ, সময়ানুবর্তীতা এবং অধ্যবসায় ছাড়া যা করেছি, তা অন্যভাবে করতে পারি নি। "
"আপনার কি মনে হয় এই ৫ ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার ফ্রিল্যান্সিং না করে অন্য ভাবে পৃথিবীকে পাল্টে দিতে পারতেন? আপনার মতমত টিউমেন্ট এর মাধ্যমে জানান"
বিশেষ সিকুয়ালঃ ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি। দেখে নিন ৫ বিলিয়নার যারা ব্যর্থ হতে হতে সফল হলেন। তাদের সফলতার না বলা কথা!
ধন্যবাদ সবাইকে। আমি আসছি ঐতিহাসিক ফ্রিল্যান্সার নিয়ে পরবর্তী সিকুয়ালে, প্রতিনিয়ত চোখ রাখুন টেকটিউনসে।
আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...
ভালো লাগলো।