কিছুদিন আগে শেষ হল DIGITAL WORLD. এই আইসিটি মেলার অন্যতম একটা প্রান ছিল Conference গুলো। শেষ দিন আয়োজিত হয়েছিল "eCommerce Case Studies" শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান যেখানে দেশের স্বনামধন্য ই কমার্স কোম্পানির CEO রা ছিলেন। আলোচনা অনুষ্ঠানটি বেশ সাফল্লের সাথে পরিচালনা করেন সাবেক বেসিস সভাপতি, বর্তমান বিডি জবস ডট কম এবং আজকের ডিল ডট কমের CEO Mr. Fahim Mashrur. এক হল ভর্তি মানুষ দেখে প্রথমে খুশি হলাম, যাক ই কমার্স নিয়ে মানুষের আগ্রহ দিনে দিনে বাড়ছে। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝলাম, সবাই এসেছেন কিভাবে ই কমার্স বিজনেস শুরু করা যায়, কিভাবে অনলাইন উদ্যোগতা হওয়া যায় তা জানতে। এতগুলো মানুষ যদি সত্যি সত্যি ই কমার্স বিজনেস এ নামেন তাহলে ক্রেতা হবেন কারা?
অনলাইন বিজনেস বা অনলাইন এন্টারপ্রেনারশিপ এখন আর নতুন কোন বিষয় নয়। চারিদিকে হু হু করে প্রতিদিন গড়ে উঠছে অনেক অনলাইন স্টোর। প্রতিদিন ই শুনা যাচ্ছে নিত্য নতুন ব্র্যান্ড এর আবির্ভাব! যেহেতু, অনলাইন হচ্ছে সবার জন্য উন্মুক্ত স্থান তাই মুড়ি মুড়কির মত বেড়ে চলছে অনলাইন ই- কমার্স বিজনেস। এই ইন্ডাস্ট্রি টা বাংলাদেশ এ এখনও নতুন তাই সঠিক নীতিমালা এখনও তৈরি হয়নি। আপনি উদ্যোগতা হতে চান খুব ভাল কথা, কিন্তু দীর্ঘদিন এই সেক্টরে টিকে থাকতে হলে আপনাকে জেনে নিতে হবে ই-কমার্স বিজনেস এর খুঁটিনাটি। অনেকেই আছেন না জেনে না বুঝে হুজুগে একটা অনলাইন স্টোর বানিয়েছেন, কিন্তু উপযুক্ত প্ল্যানিং এর অভাবে স্টোর টা চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন এবং অবশেষে টাকা পয়সা গচ্ছা দিয়ে ব্যবসা টাই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ২০১১ সালে akhoni.com (১ম ভার্সন) এবং ২০১৩ সালে buy24.com.bd এর ব্র্যান্ড এবং ওয়েবসাইট (UI & Front-end) ডিজাইন করার সুবাদে আমি বাংলাদেশের প্রথম ই- কমার্স ডিজাইনার হবার বিরল সম্মান অর্জন করেছি এবং এই কারনে অনলাইন বিজনেস এর হুজুগ দেখে কিছু একটা লেখার প্রয়োজন অনুভব করলাম।
এটা একটা অনেক বড় টপিকস এবং এই বিসয়ে অনেক বড় বড় এক্সপার্ট রা আছেন। আমার মুল উদ্দেশ্য সুধু এটা জানানো যে Entrepreneur হতে হলে সুধু টাকা ই লাগে বা মূলধন লাগে এটা খুব ই ভুল ধারনা। একজন Entrepreneur এবং একজন Employee র মদ্ধে অনেক তফাৎ। একজন Entrepreneur কে সহজাত লিডার হতে হয় এবং সব ধরনের রিস্কের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। তাই বিজনেস শুরুর আগে, একটু পড়াশুনা করে নিন। আপনার একাডেমিক শিক্ষা যেটাই হোক না কেন বিজনেস শুরুর আগে অবশ্যই অবশ্যই নীচের বিষয় গুলো সম্পর্কে ধারনা রাখার চেষ্টা করুনঃ
Basic Finance : বিজনেস এর প্রাথমিক ধারনা, ইনভেস্টমেন্ট, Start-up cost, Variable Cost, Break-Even Point Analysis, Time value of Money ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারনার জন্য Basic Finance সম্পর্কে জানা দরকার।
Basic Marketing: আপনার সাইট এর পণ্য উপস্থাপন এবং বাজারজাত করনের জন্য Basic Marketing প্রয়োজনীয়।
Very Basic Accounting: কিভাবে petty cash মেন্টেন করতে হয় প্রতিদিনের খুচরা খরচের জন্য, Basic Journal and Ledger entry এবং আপনার accountant দারা তৈরি করা financial statement (income statement and balance sheet) সঠিকভাবে বোঝার জন্য হাল্কা accounting জানা থাকলে অনেক সুবিধা হয়।
SWOT Analysis: Strategic planning এবং Risk Management এর জন্য খুবি জরুরী।
Break-Even Analysis: প্রতিটা বিজনেস এর প্রান। নুনতম কি পরিমান প্রোডাক্ট সেল করলে আপনার মূলধন টা উঠে আসবে সেটা নির্ণয় করতে Break Even Analysis জানা খুব ই জরুরী।
Customer Relationship Management: আপনার ক্রেতাদের সাথে long বা short term business relationship মেনেজ করতে সহায়ক।
Business Model and Proposal Writing: বিশেষ করে আপনি যদি আপনার বিজনেস এর জন্য Investor খোঁজ করেন, তাহলে আপনাকে Business Model and Proposal Writing সম্পর্কে অবশ্যই ধারনা রাখতে হবে।
Effective mind blowing presentation development skill: কোন নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট বাজারজাতকরন, কিংবা বিজনেস মডেল আপনার investor কে বুঝাতে Effective mind blowing presentation development skill এর জুড়ি নেই।
Business email writing: বিজনেস এর কিছু আলাদা vocabulary আছে যা আপনাকে professional হতে সহায়তা করে। তাছাড়া, নিত্য দিনের ইমেইল এর ভাষার চেয়ে বিজনেস ইমেইল এর ভাষা একটু আলাদা। তাই, ভাল Business ইমেইল লেখার skill থাকাটা আপনার বিজনেস এর জন্যই জরুরী।
Public Speaking: যেহেতু আপনি অনলাইন উদ্যোগটা, আপনাকে প্রোডাক্ট presentation, সভা, সেমিনার কিংবা বোর্ড মিটিং এ নিয়মিত বক্তৃতা দিতে হবেই। জেনে নিন Public Speaking এর tricks!
কিছু খুব ছোট এবং সহজ অনলাইন ফ্রী কোর্স আছে যা খুব অল্প সময়েই আপনি করে নিতে পারেন আপনার অবসর সময়ে। সে রকম ই একটা program হল HP LIFE - Learning initiative for entrepreneurs. প্রতিদিন একটা একটা করে কোর্স শেষ করতে পারেন।
কিভাবে শুরু করবেন অনলাইন ই কমার্স বিজনেস!
প্রথমেই আপনাকে আপনার বিজনেস মডেল টা দাড় করাতে হবে। সবাই একটা জায়গায় এসে ভুল করে বসেন আর সেতা হল খালি ওয়েবসাইট হলেই হল আর অন্য কিছু দরকার নাই। এটা খুবি ভুল একটা ধারনা। আপনার খুব সুন্দর আক্তা ওয়েবসাইট আছে, কিন্তু সুধু ওয়েবসাইট দিয়েই তো আর বিজনেস হবেনা। তাই প্রথম কাজ টা হল বিজনেস মডেল দাড় করানো। যেমন, আপনাকে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি স্রেফ ঘরে বসে পণ্য বিক্রি করতে চান নাকি আপনি অফিস বা warehouse নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি বা Vendor দের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রি করতে চান। যদি পরের টা হয়, তাহলে আপনার ইনভেস্টমেন্টে প্রয়োজনীয় খরচ টা যুক্ত করুন। নিজের বিজনেস মডেল বানানোর আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আপনার Target Market/ Audience কারা? আপনি কি রকমারি.কম এর মত খালি একটা প্রোডাক্ট category নিয়ে বিজনেস করতে চান নাকি akhoni.com বা buy24.com.bd র মত সব ধরনের পণ্য নিয়ে বিজনেস করতে চান? এ সব বিষয় আপনার বিজনেস মডেল এ থাকা উচিত।
আপনার ব্র্যান্ডের নাম টা স্বাভাবিক ভাবেই unique হতে হবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ ের জন্য। নাম নিয়ে ইদানিং অনেক ঝামেলা। ভাল নাম পাওয়া যায় তো ডোমেইন পাওয়া যায়না, আবার ডোমেইন পাওয়া যায় তো নাম পছন্দ হয় না। তাই বিজনেস শুরুর আগেই ঠিক করে নিন কোন নামে বিজনেস করতে চাইছেন। তারপর ডোমেইন কেনার সাথে সাথে Trade License টা করিয়ে ফেলুন। নইলে আপনার ব্র্যান্ড নাম হারানর সম্ভাবনা আছে।
Hosting এর ক্ষেত্রে বললে বলতে হয়, ই- কমার্স সাইট এর জন্য নরমাল Hosting দিয়ে কোন ভাবেই কাজ চলবে না। কেননা, ই-কমার্স সাইট অন্যান্য dynamic সাইট এর চেয়ে ও সাধারনত ভারি হয়, ইউজার বেশি হয়। তাই নরমাল ১ জিবি Hosting কিন্তু আপনার সাইট এর জন্য যথেস্ট নয়। WordPress বা Open cart কিংবা PrestaShop দিয়ে সাইট বানালে অবশ্যয় নুনতম ১০ জিবি এবং Magento দিয়ে বানালে Dedicated Hosting বা Cloud Hosting এর বাজেট রাখুন। নয়ত পরে পস্তাতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার সাইট আপনার Goodwill. সাইট ১ ঘণ্টার জন্য ডাউন থাকলে কিন্তু আপনার ই বদনাম।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আপনার ব্র্যান্ড এর ডোমেইন নাম টা আপনার ASSET. আমাদের দেশে কিছু কিছু আইটি কোম্পানি বা ফ্রীলেন্সার আছে যারা ডোমেইন এবং Hosting নিজেদের অ্যাকাউন্ট দিয়ে কিনে লক করে রাখে। Client কে ডোমেইন এবং Hosting এর Control Panel দিতে চায় না। এটা করে যাতে করে আপনি তার কাছে ধরা থাকেন। পরের বছর ও যাতে তার কাছে থেকে এসব RENEW করান। এটা খুব ই খারাপ একটা চর্চা। তাই সাবধান, নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করে ডোমেইন এবং Hosting কিনুন। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর সময় ডেভেলপার কে অ্যাক্সেস দিন এবং কাজ শেষ হলে password বদল করে ফেলুন।
বিজনেস শুরুর আগে আপনার Fixed and Variable Cost সম্পর্কে ভাল ভাবে ধারনা নিন। যেমনঃ আপনার অনলাইন স্টোর ডেভেলপ করালেন, ডোমেইন কিনলেন এইসব একবার ই হয়, তাই এগুলো Fixed কষ্ট। Fixed কষ্ট টা আবার অনেকে ক্যাপিটাল বা মূলধন হিসেবে ধরে মনে করে আমার তো আর মেজর কোন COST নাই। এটা ভুল। Variable Cost টা হচ্ছে সব চেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ। কারন বিজনেস শুরুর আগে সব ধরনের Variable Cost পুরোপুরি নির্ণয় করা যায়না। তাই অনেক Variable Cost HIDDEN থেকে যায়। যেমনঃ আপনি যখন প্রোডাক্ট customer কে দেলিভারি দেবেন তখন আপনি আগা থেকে বলতে পারবেন না দেলিভারি বাবদ আপনাকে কত টাকা বরাদ্ধ রাখতে হচ্ছে। কারন কুরিয়ার এ প্রোডাক্ট এর আকার, ওজন এগুলোর উপর নির্ভর করে দেলিভারি খরচ নির্ধারণ করা হয়। এটা তো কেবল একটা উদাহরন, এই রকম আরও কত অজানা খরচ যে আছে সেটা পুরোপুরি বিজনেস শুরু না করলে নির্ধারণ করা কষ্টকর। এই ধরনের খরচ গুলোর জন্য ও আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
এবার আসেন আপনার অনলাইন স্টোর ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। প্রথম কথা ৫-১০ এমনকি ২০ হাজার টাকায় ও একটা e-commerce ওয়েবসাইট হুয়না। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন এর জন্য একটা সুন্দর এবং ব্যাবহার উপযোগী ওয়েবসাইট প্রয়োজন যা আপনি ১০-২০ হাজার টাকায় কখন পাবেন না। কেও যদি অফার করে এই টাকার মধ্যেই আপনাকে সে সাইট করে দেবে, তাহলে অবশই ধরে রাখুন সে ফ্রী বা চুরি করা template দিয়ে আপনার স্টোর ডেভেলপ করে দেবে। আর চুরি করা template এ অনেক BUG থাকে যা প্রথমে বোঝা যায় না। ১-২ মাস পর যখন আপনার স্টোর এ আস্তে আস্তে ভিসিটর আস্তে শুরু করবে, হটাত একদিন দেখবেন আপনার সাইট DOWN নাইলে HACKED. এই রকম ঘটনা অহরহ হচ্ছে প্রতিদিন। আর ১০-২০ হাজার টাকায় যে আপনাকে ওয়েবসাইট টা ডেভেলপ করে দেবে সে নিশ্চয় আপনার সাইট এর সিকিউরিটি দেবেনা কেননা তার কাজ ই হচ্ছে কোন রকমে স্টোর টা ডেভেলপ করে আপনাকে গছিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি payment নিয়ে বিদায় হওা। তাই সাবধান। আপনি প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ওয়েবসাইট এর ডিজাইন বা মুল কাঠামো পরিবর্তন করতে পারবেন না। এতে আপনার ব্র্যান্ড এর উপর Negative impression পরবে এবং ক্রেতারা বিরক্ত হবে। সাইট ডেভেলপ করবেন একবার ৩-৪ বছরের জন্য। টাকা একটু বেশি খরচ হলেও আখেরে কিন্তু লাভ হবে আপনার এবং আপনার ব্র্যান্ড এর। তাই ভেবে চিন্তে decision নিন। ডেভেলপার hire করার সময় verify করে নিন যে সে এ কাজে দক্ষ এবং আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সে আপনাকে ওয়েবসাইট টা বানিয়ে ডেলিভারি দিতে সক্ষম।
খরচের ব্যাপারে বলতে গেলে নির্দিষ্ট কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। আর ওয়েবসাইট এর ডেভেলপমেন্ট খরচ আগে থেকে বলা মুশকিল। কারন সব e-commerce সাইট ই একরকম সফটওয়্যার দিয়ে বানানো হয়না। যেমন MAGENTO দিয়ে ডেভেলপ করলে অবশ্যই বাজেট ১.৫ লাখ+ রাখবেন। কারন Magento অনেক giant একটা সফটওয়্যার এবং অনেক কঠিন। তাছাড়া Magento এর জন্য HOSTING নিতে হয় অনেক দামী, না হয় performance আশানুরূপ পাবেন না। WordPress বা Open Cart দিয়ে ডেভেলপ করালে budget 60-70 হাজার+ রাখবেন। হয়ত আপনি মুছকি হাসছেন এই লেখা পরতে পরতে...। ভাবছেন আমার পরিচিত এক ডেভেলপার এ তো বলল ৩০ হাজার টাকায় akhoni.com বা buy24.com.bd র মত সাইট করে দেবে বলছে আর এই ব্যাটা কি কয় এসব। উত্তর হল, যে ডেভেলপার সত্যি সত্যি skilled তার ২০-৩০ হাজার টাকায় আপনাকে সাইট করে দেওয়ার টাইম নাই। দেশের এখন অলিতে গলিতে ডেভেলপার কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। কিন্তু মনে রাখবেন সত্যিই যদি সে সেই মানের ডেভেলপার হয়ে থাকে তাহলে সে কাজের জন্য কখনও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে না বা আপনাকে খুব কম টাকায় ওয়েবসাইট করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেবেনা । কারন skilled ডেভেলপার দের দেশে এবং দেশের বাইরে প্রছুর চাহিদা। আর ভাল কাজের ও অভাব নাই এই সেক্টর এ। তাই আপনাকে সে সস্তায় সাইট দেবে কোন দুঃখে?
Branding সম্পর্কে আমাদের কম বেশি সবার ই ভুল ধারনা আছে। অনেকেই মনে করেন Branding টা হল নামি দামি মডেল ভাড়া করে, ফটোসুট করিয়ে বড় বিলবোর্ড দিলেই Branding হয়ে যায়। খুবি ভুল একটা ধারনা। বিলবোর্ড Branding আর একটা ছোট অংশ মাত্র।Branding মুলত যা বোঝায় টা হল আপনার Company র লোগো থেকে শুরু করে সমস্থ communication and marketing materials Branding এর পার্ট। হোক সেটা সুধু আপনার বিজনেস কার্ড বা লিফলেট সব ই Branding এর অন্তর্ভুক্ত। আপনি যেহেতু মার্কেট এ নতুন সবাইকে আপনার ব্র্যান্ড টা চেনানো অনেক জরুরী। আর এই জন্যই Branding. আমার ৬-৭ বছরের ক্যারিয়ার এ আমি অনেক Entrepreneur কে দেখেছি যাদের জাস্ট কোম্পানি লোগো ডিজাইন এর জন্য ৫-১০ হাজার টাকাও বরাদ্ধ নেই। মানে একটা লোগো যে দরকার, একটা ব্র্যান্ড Identity দরকার, সুন্দর অর্থবহুল একটা লোগো যে একটা বিজনেস কে কতটা সাপোর্ট দেয় সে সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই। একজন Entrepreneur হিসেবে আপনার জানা দরকার, বিজনেস শুরুর প্রথমেই আপনার ভাল একটা লোগো দরকার, বিজনেস কার্ড সহ অন্যান্য stationary, Brand thematic presentation template ইত্যাদি দরকার। এসব ছাড়া মাঠে নামবেন আর ধরা খাবেন অবধারিত ভাবেই। কারন হাজারো কোম্পানির ভিড়ে কে আপনাকে আলাদা করে চিনে নেবে? তাই আপনার প্রাথমিক বাজেটে এই সমস্ত বিজনেস এবং মার্কেটিং materials ডিজাইন এর জন্য নুনতম amount হলেও বরাদ্ধ রাখুন।
সুন্দর ওয়েবসাইট, লোগো ইত্যাদি তো হল, কিন্তু আপনার সাইট এ ট্রাফিক বা ভিসিটর আসবে কিভাবে? হাজারও সাইট এর ভিড়ে কে কষ্ট করে আপনার সাইট এর কথা মনে রাখবে বা ভিসিট করবে নিত্য নতুন প্রোডাক্ট আপডেট এর জন্য? এ সমস্যা সমাধানের জন্য উপায় হল ডিজিটাল মার্কেটিং। আর তড়িৎ কোন সমাধান নেই যে, আপনি চাইলেই হটাত বলা নেই কওয়া নেই লাখ লাখ ভিসিটর আসবে আপনার সাইট এ। এ জন্য দরকার সঠিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্লান্নিং।আপ্নি হয়ত বলতে পারেন আমার ফেসবুক পেজ আছে, ওখানে ১০০০ ফ্যান আছে আমার ব্র্যান্ড এর। কিন্তু সমস্যা হল এই ১০০০ ফ্যান ই কিন্তু আপনার customer হিসেবে যথেষ্ট নয়। এখনও আমাদের দেশে এসইও তেমন একটা দরকার হয়না। কেননা বেসির ভাগ ভিসিটর আসে ফেসবুক থেকে। কিন্তু কিভাবে আসবে ফেসবুক থেকে ভিসিটর? উত্তর হচ্ছে ফেসবুক অ্যাড এবং কেম্পেইন।তাই ফেসবুক অ্যাড এর জন্য বাজেট রাখুন অন্তত ৩ মাসের জন্য হলেও। ফেসবুক advertising পেজ এ গেলে সব তথ্য ওখানে দেওা আছে। কিভাবে অ্যাড দেওা জাই, কিভাবে বেশি লাইক পাওয়া যায় কিংবা কিভাবে ওয়েবসাইট এ ভিসিটর আনা যায়। এসবের জন্য প্রছুর সময় দিতে হয়। তাই আপনার যদি সময়ের স্বল্পতা থাকে তাহলে মার্কেটিং এক্সপার্ট hire করুন। প্রাথমিক ভাবে মাশে ১০-১৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ রাখলেই চলে। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি বাজেট কমাতে বা বাড়াতে পারবেন। এখনও আমাদের দেশে Digital Marketing ই বলেন আর Social Media Marketing বলেন, টা ফেসবুক এই সীমাবদ্ধ। খুব কম সংখক অনলাইন কোম্পানির Twitter, LinkedIn বা Google+ এর প্রোফাইল বা ফ্যান পেজ আছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। ইমেইল মার্কেটিং ২ ভাবে করা যায়। প্রথম টা হল, BDJOBS সহ আরও কিছু কোম্পানি active users ইমেইল ডাটাবেজ বিক্রি করে থাকে। আপনি এককালীন ৫-১০ লাখ ইমেইল আইডি কিনে নিতে পারেন এবং সেই সব আইডি তে NEWS LETTER পাঠাতে পারেন আপনার সাইট এর পণ্য কে বা আপনার ব্র্যান্ড কে হাইলাইট করে। অন্য উপায় টা হচ্ছে, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর সময়, আপনার ডেভেলপার কে বলবেন অবশ্যই যাতে NEWSLETTER SUBSCRIPTION অপশন রাখে, যাতে করে ভিসিটররা নিত্য নতুন প্রোডাক্ট আপডেট পায়। ২য় পদ্ধতির সুবিধা হল, আস্তে আস্তে এটা আপনাকে একটা বিজনেস ডাটাবেজ তৈরি করতে সাহায্য করবে। প্রতি সপ্তাহে একবার বা ২ সপ্তাহ মিলে অন্তত একবার আপনার ইউজার দের কাছে e-newsletter পাঠান প্রোডাক্ট এর আপডেট সহ। আপনি হয়ত ভাবছেন, ইউজার রা ইমেইল পড়েন না, খালি খালি এত কষ্ট করে কি লাভ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইউজার রা মেইল পরুক আর নাই পরুক, আপনার কোম্পানির বা ব্র্যান্ডের নামটাতো কমপক্ষে তাদের চোখের সামনে যাচ্ছে!!
আপনার ওয়েবসাইট এর ডিজাইন তো ডেভেলপমেন্ট এর সময় হয়েছে, কিন্তু তাও এবার কেন ডিজাইনার দরকার? কারন হচ্ছে, ecommerce সাইট এর প্রান হচ্ছে ছবি। আপনার vendor রা আপনাকে প্রোডাক্ট ইমেজ সরবরাহ করবেন ঠিক আছে, কিন্তু সেই ইমেজ এডিট করে আপনার ওয়েবসাইট ডিজাইন এর সাথে মানানসই করবে কে? আপনার ওয়েবসাইট এ প্রায় প্রতিদিন ই নতুন slide show banner, নতুন প্রোডাক্ট এর ছবি আপ করার প্রয়োজন হবে। তাছাড়া ফেসবুক অ্যাড দেবার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাড এর ডিজাইন, প্রোফাইল ফটো কিংবা টাইম লাইন কাভার ডিজাইন ও প্রয়োজন। কেননা, আপনার অ্যাড এর ডিজাইন ভাল না হলে কেও ক্লিক করবে না। এছাড়া ও রয়েছে নিত্য নৈমিত্তিক মার্কেটিং campaign. তাই একজন ডিজাইনার রেখে দিন আপনার ব্র্যান্ড এর জন্য। বেশি না, মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ করলেই আপনি পেয়ে যাবেন মতামুতি মানের ডিজাইনার। তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কোন ফ্রীলেন্স ডিজাইনার এর সাথে মাস ভিত্তিক চুক্তি করুন আরও কম টাকায়। তাতেও সমসসার সমাধান হবে। আমি অন্যান্য ব্র্যান্ড এর কথা জানিনা, কিন্তু akhoni.com এবং buy24.com.bd র নিজস্ব ডিজাইনার আছে এই সব কাজের জন্য।
আপনি ই কমার্স বিজনেস শুরু করার পর যে যে কমন প্রবলেম গুলোর সম্মুখীন হবেন তার একটা লিস্ট নিচে দেওয়া হল। বিগত ৩-৪ বছর ধরে যেহেতু এই ইন্ডাস্ট্রি তে কাজ করছি সব গুলো বিষয় আমার অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া।
০১। ভাল এবং গুনগত মান সম্পন্ন প্রোডাক্ট রাখার চেষ্টা করুন আপনার ই কমার্স স্টোরে। প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটি যেন কোন ভাবেই নিন্ম মানের না হয়, কারন এটাই হবে আপনার প্রধান GOODWILL.
০২। পণ্য বিক্রির পর পরবর্তী Customer সাপোর্ট ভাল ভাবে দিন। অর্ডার পাবার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ করে ঠিক সময়ে তার Product পাওয়া confirm করুন।
০৩। যদি আপনি কোন কুরিয়ার সার্ভিস ব্যাবহার করেন, তাহলে তাদের সাথে ভাল মত চুক্তি করুন। অনেক সময় দেখা যায় যে আপনি প্রোডাক্ট সঠিক সময়ে কুরিয়ার সার্ভিস এ পাঠিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি দেরি করে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিল। এতে কাস্টমার বিরক্ত হয় এবং বদনাম টা কিন্তু আপনার ঘারেই পরবে।
০৪। Vendor দের প্রোডাক্ট যদি নিজ অফিস বা Warehouse এ সংরক্ষন করেন তাহলে খুব ভাল ভাবে গুছিয়ে যত্ন সহকারে রাখুন। বেশ কিছ ই কমার্স সাইট এর নামে বদনাম আছে যে তারা vendor দের কাছ থেকে প্রোডাক্ট এনে এখানে সেখানে ফেলে রাখে অবহেলায়, এবং এতে কিছু পণ্য নষ্ট হয়। আপনার product এর main source কিন্তু এই vendor রাই। তাই তাদের সাথে বেবসায়িক সম্পর্ক ভাল রাখুন যতটুকু সম্ভব।
০৫। প্রোডাক্ট গুলো বাজারের রেট এর চাইতে কখনই বেশি দামে বিক্রি করার চেষ্টা করবেন না। বিশাল বদনাম হয়ে যাবে।
০৬। Customer care যতটুকু সম্ভব ভাল রাখার চেষ্টা করুন। Customer দের অভিযোগ, অসুবিধা, পণ্য সম্পর্কে মতামত খুব গুরুত্ব সহকারে যাচাই করুন।
০৭। Customer দের বিশ্বাসযোগ্যতা আদায় করতে চেষ্টা করুন, কেননা তারা আপনার সাইট এ আসে তাদের প্রোফাইল, Credit/Debit কার্ড Details শেয়ার করবেন। তো আপনার ব্র্যান্ড, স্টোর ইত্যাদি যদি প্রোফেসনাল না হয় তবে আপনি ক্রেতা হারাবেন খুব সহজেই।
০৮। প্রথম ৩-৬ মাস এমন কি পারলে প্রথম ১ বৎসর প্রফিট এর চেয়েও ব্র্যান্ড establishment এ বেশি গুরুত্ব দিন।
উপরের সমস্থ আলোচনা এবং বিষয়সমুহ আমার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। এই বিষয় গুলোর প্রতি নজর রাখলে আপনার বিজনেস এ সাফল্য আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু আপনি যদি এইসব তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মত বিজনেস করতে চান, তাহলে বদনাম টা হবে পুরা Industry র। ই কমার্স অনেক সম্ভাবনাময় একটা খাত বাংলাদেশের জন্য। আমাদের সবাই কে সজাগ থাকতে হবে যাতে করে গার্মেন্টস এর মত এই সম্ভাবনাময় খাত টা নষ্ট হয়ে যাক। সাধারন মানুষ প্রতিদিন ই নানা রকম ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছে ই কমার্স পণ্য কিনতে গিয়ে। ক্রেতারা যাতে খুব সহজেই মান সম্পন্ন প্রোডাক্ট কিনে সন্তুষ্ট হতে পারেন সেই জন্য সবার ই একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারের ও উচিত এই বিষয়টাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ই কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন করা।
Article By:
Amit Mojumder | Art Director & Web Engineer
Professional Profile: bd.linkedin.com/in/amitmojumder/
আমি Amit Mojumder। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 75 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
I am a professional tech entrepreneur, designer, developer, web engineer and author. But, beside all those designations, I am more of a "Life Long Learner" or "The Searcher" as I constantly study, research on design and various web technology related topics. My top interest relating to my profession includes as...
Thanks!!!!!!!!!!