বিজ্ঞানের খাতা [পর্ব-৩৮] :: এলিভেটর – লিফটের কথা

বিজ্ঞানের খাতা


বিজ্ঞানের খাতা- এফ রহমান।

নগর জীবনে সুখের প্রাচুর্য্য। আলো, বাতাস, পানি সব কিছুর কৃত্রিম ব্যবস্থা করা যায়। প্রকৃতির উপর নির্ভর না করলেই চলে। সাধারন মানুষের ঘরগুলো এখন একেকটি অট্টালিকা। দালানগুলো উঁচু হতে হতে আকাশে গিয়ে ঠেকেছে। আর এইসব উচু দালানে ওঠানামার সুবিধার জন্য সিড়ির পাশাপাশি এলিভেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিংশ, একবিংশ শতাব্দীর অফিস টাওয়ার, পাঁচ তারকা হোটেল, হাই-রাইজ এপার্টমেন্টসগুলো এলিভেটর ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে জিনিসপত্র স্থানান্তর করতে হয়েছে। শুরুর দিকে দ্রব্যাদি স্থানান্তরের জন্য মানুষ, পশু অথবা জলের শক্তি ব্যবহার করা হত। মধ্যযুগ পর্যন্ত মানুষ এবং পশুশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়েছে সভ্যতাকে। গড়ে উঠেছে নৃশংশ দাশ প্রথা। প্রাচীন গ্রীসে আর্কিমিডিস বলে একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী জন্মেছিলেন। আর্কিমিডিস জিনিসপত্র উঠানো নামানোর জন্য দড়ি এবং পুলির সাহায্যে কপিকল নির্মাণ করেন। খ্রিষ্টপূর্ব আশি সালে রোমের কলোসিয়ামগুলো এখনকার ফুটবল মাঠের মত খুব জনপ্রিয় ছিলো। কলোসিয়াম হলো একধরনের স্টেডিয়াম যেখানে গ্লাডিয়েটর যোদ্ধা এবং বন্য পশুর মধে লড়াই হত। লড়াই চলত মৃত্যু পর্যন্ত। এক পক্ষকে নির্ঘাত মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হত। রোমান কলোসিয়ামের এরেনা লেভেল পার হতে গ্লাডিয়েটর এবং পশুকে কিছু ভয়ংকর এলিভেটরে চড়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হত।

পৃথিবীর প্রথম এলিভেটর তৈরী করা হয় ১৭৪৩ সালে ফ্রান্সের রাজপ্রাসাদে রাজা কিং লুইস পঞ্চদশের জন্য। একজন ব্যক্তিকে বহনকরতে সক্ষম এই যন্ত্র শুধুমাত্র প্রথম তলা থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত যেতে পারত। লোকে এটাকে বলত, “Flying Chair”।  যন্ত্রটি দালানের বাইরে স্থাপন করা হয়। এটার বেলকনি দিয়ে রাজার নিকট আনা নেয়া করা হত। যন্ত্রটির নির্মান কৌশল খুব বেশী জটিল কিছু ছিলো না। একটির চিমনির ভেতরে দড়ির সাথে কিছু ওজন বাঁধা থাকতো। দড়ির অন্যপ্রান্ত বাঁধা ছিলো চেয়ারখানা। প্রহরীদের চিমনির ভেতরে ডিউটি দেয়া হয়া হত। তারা রাজার নির্দেশ অনুযায়ী দড়িতে ভার কমিয়ে বাড়িয়ে চেয়ারকে ওঠাতো নামাতো। ১৮৫০ সালে বাষ্প ও হাইড্রোলিক এলিভেটর নির্মান করা হয়। ১৮৫২ সালে এলিশা গ্রেভস ওটিস প্রথম নিরাপদ এলিভেটর তৈরী করতে সক্ষম হন। ১৮৫৭ সালে নিউ ইয়র্কে প্রথম যাত্রীসাধারনের জন্য এলিভেটর স্থাপন করেন ওটিস। ১৮৬১ সালে ওটিসের মৃত্যুর পর তার ছেলে চার্লস এবং নর্টন ওটিস ব্রাদার্স এন্ড কোং তৈরি করেন। ১৮৭৩ সালে আমেরিকায় দুই হাজারেরও বেশী ওটিস এলিভেটর স্থাপন করা হয়। বছর পাঁচেক বাদে ওটিস হাইড্রোলিক এলিভেটর চালু করে এবং ১৮৮৯ সালে ওটিস বৈদ্যুতিক এলিভেটর মেশিন স্থাপনে সক্ষম হয়। ওটিসের অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। পৃথিবীর দুইশ’র বেশী দেশে ওটিসের এলিভেটর ব্যবহৃত হয়।

আমার প্রথম এলিভেটর চড়ার অভিজ্ঞতা হয় ২০০৫ সালে। উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বেড়াচ্ছি। পরীক্ষা দেয়াই সার হচ্ছে। এতটা মানসিক প্রেসারে ছিলাম যে পরীক্ষার হলে বসলে মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। কিছুই মনে পড়ে না। তার উপর ছোটখাট সুন্দরী চেহারার এক তরুনী ম্যাডাম ডিউটি দিচ্ছিলেন। ম্যাডামের গায়ের রঙ দেখার পর আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছিলো মানুষের গায়ের রঙ এতটা হলুদাভ হয় কিভাবে। বোকা ছিলাম আমি। ঢাকা শহরের সুন্দরী মেয়েদের গোপন রহস্যের কথা তখন অজানাই ছিলো। জয়তু বিউটি পার্লার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে কি হবে সেবার আমি আর রাসেল দুইজন মিলে ঢাকা শহর ঘুরে বেরিয়েছিলাম পর্যটকের চোখে। প্রথম ঢাকা আসা, বুঝতেই পারছ যা দেখি তাতেই মুগ্ধ হই। একদিন বিকেলে গেলাম বসুন্ধরা শপিং মলে। সিড়িগুলো সব নিজে থেকে ওঠানামা করছে। আহ! এটাই তাহলে লিফট। টিভিতে কত্ত দেখেছি। আমরা লিফটে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমাদের সাথে ছিলো মির্জা জয়েন উদ্দিন। আমাদের কলেজের বন্ধু। জয়েন ঢাকায় এসে বোনের বাড়ীতে আছে মাস দুয়েক। সে অভিভাবকের মত আমাদের উপদেশ দিলো সিড়ি যখন শেষ মাথায় পৌছবে তখন সাবধান থাকতে। তা না হলে পড়ে যেতে পারি। আমরা সাবধান হলাম। দেখলাম দ্বিতীয় তলায় এসে সিড়িগুলো ফ্লোরের মেঝের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। আমার পা ঢুকে যাবে নাতো! আমি বরাবরই ভিতু ক্লাসের লোক। হার্টে ভয় কুরুকুরু শুরু করে দিলো।

=======================================================================================
বিজ্ঞানের খাতা- এফ রহমান।
=======================================================================================

চিত্রঃ অট্টালিকায় ব্যবহৃত এলিভেটর।

এফ রহমানের ব্লগ

চিত্রঃ একটি এলিভেটরের পূর্ণাঙ্গ গাঠনিক স্ট্রাকচার

Level 2

আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

দেখলাম দ্বিতীয় তলায় এসে সিড়িগুলো ফ্লোরের মেঝের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। আমার পা ঢুকে যাবে নাতো!

আমার প্রথম অভিজ্ঞতাটা মনে করিয়ে দিলেন। এরকম আমারও মনে হয়েছিল।

@ITtrickBD.Com: হকার সবসময় বিরক্তিকর।