আমি তখন স্কুলে পড়ি। আব্বুকে দেখতাম দেয়ালে লাগানো টাইপরাইটারের কিবোর্ডের ছবির দিকে তাকিয়ে প্রাকটিস করতে। আব্বু সরকারী চাকরী করেন। তখনকার সময়ে অফিস আদালতে লেখালেখি করা হত টাইপ রাইটার মেশিনে। আমরা বলতাম টাইপ মেশিন। আব্বুকে একবার টাইপে পারদর্শীতার পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো।। তাই তিনি ওভাবেই প্রাকটিস করতেন। এখন অবশ্য টাইপরাইটারের জায়গা দখল করেছে কম্পিউটারে। আব্বুকে দেখি স্বাচ্ছন্দে দ্রুত টাইপ করে যাচ্ছেন কম্পিউটারে। ইশ আমি যদি ওইরকম গতিতে টাইপ করতে পারতাম!
আপনাদেরকে গুটেনবার্গের প্রেস আর ল্যাথামের কিবোর্ডের ইতিহাস শুনিয়েছি। তাহলে আর টাইপ রাইটারের কথা বাদ থাকবে কেন! জোহান গুটেনবার্গের ছাপাখানা আবিষ্কার করার পর উদ্ভাবকদের মাথায় নতুন আইডিয়া ভর করল। আচ্ছা ছোট খাট ছাপা খানা বানানো গেলে কেমন হয়! যেই ভাবা সেই কাজ। আইডিয়াবাজরা কাজে লেগে গেলেন। প্যাটেন্ট বই ঘাটলে দেখা যাবে ১৭১৪ সালে ইংল্যান্ডের নাগরিক হেনরি মিল টাইপরাইটারের মত কোন যন্ত্রের প্যাটেন্ট নিয়েছিলেন। যদিও মিলের যন্ত্রের কোন নাম নিশানা এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। ১৮২৯ সালে মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরের উইলিয়াম বাট তার লেখার যন্ত্রের প্যাটেন্ট নেন। এই যন্ত্রে অক্ষরগুলো একটি ঘুর্ণায়মান ফ্রেমের উপর সাজানো থাকতো। বাটের মেশিনে একটা সমস্যা ছিলো। কাগজে একটি অক্ষর মূদ্রিত হতে অনেক সময় লাগতো। এক পাতা টাইপ করতে যে সময় ব্যয় হত সেই একই সময়ে কয়েক পাতা হাতে লিখে ফেলা যেত। সে জন্য বাটের লেখার যন্ত্র খুব বেশী আলোড়ন ফেলতে পারেনি।
১৮৬৭ সালে উইসকনসিনের প্রিন্টার পাবলিশার এবং পলিটিশিয়ান জনাব ক্রিস্টোফার ল্যাথাম সোলস , কার্লোস গ্লিডেন এবং স্যামুয়েল সোলের সহায়তায় প্রথম পূর্নাংগ টাইপ রাইটার তৈরী করেন। তিনি ১৮৭৪ সালে নিউইয়র্কের প্রখ্যাত অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্টান “রেমিংটন এন্ড সনস অফ লায়ন” এর নামে প্যাটেন্টের লাইসেন্স নেন। “রেমিংটন মডেল ১” বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রথম বাজারে আসা টাইপ রাইটার। ল্যাথামের টাইপরাইটারের উপর ভিত্তি করে ১৮৭২ সালে আমেরিকায় টমাস আলভা এডিসন প্রথম বৈদ্যুতিক টাইপরাইটার তৈরী করেন। কিন্তু ১৯৫০ সালের আগ পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক টাইপরাইটার সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৮৭৩ সালে রেমিংটন এন্ড সনস বিপুল পরিমানে ল্যাথামের টাইপরাইটার বাজারজাত করে। ১৯৭৮ সালে অলিভেট্টি কোম্পানী এবং জাপানের ক্যাসিও কোম্পানী বৈদ্যুতিক টাপরাইটারের উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখেন। কম্পিউটারের বদৌলতে টাইপরাইটারের উপযোগীতা ফুরিয়ে গেছে কিন্তু তাদের অবদান ফুরিয়ে যায় নি এখনো। আজকের লেখার মাধ্যমে আমি ল্যাথাম এবং এডিসনের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। এডিসন আমার জন্য এক মহাবিস্ময়! পৃথিবীর অধিকাংশ কাজপাগল বিজ্ঞানী ব্যবসা সম্পর্কে খুব একটা সচেতন ছিলেন না। কিন্ত এডিসন ছিলো তাদের ব্যতিক্রম। মেধা, প্রতিভা, দক্ষতার চরম সমন্বয় ঘটেছে এডিসনে।
আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।
আমার বাসায় এখনো একটা টাইপরাইটার আছে,এখনো কাজ করে! 😉
কিন্তু ওটা স্টোর রুমে অযতনে রাখা। ;-(