রাস্তায় যানজটে আটকে থাকতে কারোরই ভালো লাগে না। জ্যামে বসে আমার অনেকদিন মনে হয়েছে যদি আলাদিনের চেরাগের দৈত্য আমাকে জিজ্ঞেস করত তুমি আমার কাছে কি চাও? আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতাম আমাকে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির উপায় বলে দাও। কিন্তু চেরাগের দৈত্য তো কেবল দাদী নানীর মুখে বলা গল্পেই আছে। বাস্তবে কি এর অস্তিত্ব আছে? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম। দুই বন্ধুর সাথেও আলোচনা করলাম।
আমরা উত্তর যা পেলাম তা খুব একটা অযৌক্তিক নয়। যেহেতু এই আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত যান্ত্রিক বাহন গুলোই আমাদের এই যন্ত্রনার মূলে তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মত করেই প্রযুক্তির সাহায্যে এর সমাধান করতে হবে। উত্তরের সাথে সাথে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন জেগে উঠলো, তবে এ প্রযুক্তির বাহন কি হবে?
শুরু হল মাথার আনাচে কানাচে উত্তর খোঁজা। এটা-সেটা কত কিছু যে মাথায় খেলে গেল তার হিসাব নেই। আবার সেগুলো বাদও দিতে হল সবদিক বিবেচনা করে। আমাদের এমন এক প্রযুক্তি পন্য প্রয়োজন যেটা সস্তা, আমাদের কাছে এখনই আছে অর্থাৎ যার জন্য আবার নতুন করে টাকা খরচ করতে হবে না। সেই যন্ত্র বহু ব্যবহারের সুবিধা সংবলিত হতে হবে। আর হতে হবে এমন কিছু যেটা আমাদের কাছে কখনোই বাড়তি বোঝা মনে হবে না। সব মিলিয়ে আপনি যে উত্তর পেয়েছেন আমিও তা পেলাম। হ্যাঁ মোবাইল ফোনের কথাই বলছি আমি।
কিন্ত বুঝলাম মোবাইল ফোনের এসব বৈশিষ্ট আছে। কিন্তু এতো বড় কাজের ভার চাপানোর জন্য কতটা যোগ্য সে? মোবাইল ফোন তো আর ট্রাফিক পুলিশ না যে যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে আমরা বাদে আর সবাইকে বলবে, এ রাস্তায় যাওয়া যাবে না। এ রাস্তা দিয়ে শুধু আপনারা যাবেন। বাকিরা গেলে জ্যাম লাগতে পারে। তারা অন্য রাস্তা দিয়ে যাবে। তাহলে কি করতে পারে মোবাইল ফোন? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে প্রয়োজন কিছুটা ধান বানতে শিবের গীত করা। মানে ট্রাফিক জ্যামের কারন অনুসন্ধান করা। দেখা যাক কি কি কারনে ট্রাফিক জ্যাম হয়।
ঢাকা শহরে রাস্তার সংখ্যা এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতূল। গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত আরেকটা সমস্যা হচ্ছে সবাই একই গতবাঁধা রাস্তা ধরে চলাচল করে। এখন অন্য রাস্তার কি অবস্থা সেটা জানার কি উপায়? মাঝে মাঝে বাসা থেকে মতিঝিল যাওয়ার সময় দেখি আমি যে রাস্তা ধরে বাসে যাচ্ছি, সেই একই রাস্তা ধরে রিক্সা-সিএনজি কিংবা অন্যান্য গাড়ি যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেরই গন্তব্য মতিঝিল। বাসের না হয় একটা নির্দিষ্ট রুট মেনে চলতে হয় কিন্তু তোমরা কেন বাপু একই রাস্তা ধরে যাওয়ার চেষ্টা করে জ্যাম বাঁধাও? আরও তো দুইটি রাস্তা মতিঝিলের দিকেই গিয়েছে। সেগুলোতে জ্যমও নেই। চাইলেই সময়ের আগেই সেই রাস্তা দুটি ধরে আগে আগে গন্তব্যে যাওয়া যায়। উত্তর পাই না। জ্যাম দইয়ের মত জমতে থাকে। জমা দই খুব আকর্ষনীয় হলেও জমে যাওয়া জ্যাম সবারই ঘাম ছুটিয়ে দেয়।
আসলে সমস্যা হচ্ছে সবাই ধরেই নেয় ঢাকার সব রাস্তায় জ্যাম থাকবে। তাই কেউ অন্য কোন রাস্তার কথা চিন্তাও করে না। কিন্তু কোনভাবে যদি আগে থেকেই কোন রাস্তার কি অবস্থা তা জানা যায় তবে তো পোয়া বারো। কিন্তু কে জানাবে? উন্নত দেশে জিপিএস ব্যবস্থা চালু থাকলেও বাংলাদেশে এখনো এ সুবিধা পাওয়া যায় না। এটাই স্বভাবিক। যেটা যেখানে দরকার সেটা সেখানে থাকলে তবে তো আর দুনিয়ার শৃঙ্খলা ঠিক থাকে না।
আমাদের এই দেশে যে সম্পদ আছে সেটা ব্যবহার করেই কোন সমাধান বের করা দরকার। আর তা খুব শিঘ্রয়ই। তখন আমার মাথায় আসল তবে কি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায় এক্ষেত্রে? এধরনের সেবা পেতে প্রয়োজন সহজে বহনযোগ্য এমন যন্ত্র যেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দুনিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। মোবাইল ফোন এখন তা অনায়েসে পারে। আর দরকার তথ্য সরবরাহকারী একটি যন্ত্র। কি হতে পারে? সেন্সরের কথা যদি আপনি ভেবে থাকেন তাহলে সেটা খুব একটা ভুল না। কিন্তু সেক্ষেত্রে সেন্সর স্থাপন করার প্রশ্ন দাঁড়ায়। কার এতো দায় পরেছে যে রাস্তায় রাস্তায় সেন্সর স্থাপন করবে! এতো খরচ বহন করার মত বিলাসিতাও আমাদের মত গরীব দেশের সরকারের নেই। তবে কি আছে সরকারের? আছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো নিরাপত্তা ক্যামেরা। যেগুলো কোটি কোটি টাকা খরচ করে বসানো হয়ে গেছে। প্রয়োজন শুধু সেগুলোর সাথে মোবাইলের সংযোগ স্থাপন করা। কিভাবে করা যায়?
এক্ষেত্রে প্রয়োজন একটা সফটওয়্যার যেটা ভিডিও ইনপুট নিয়ে সেগুলোকে সরল ডেটায় রুপান্তর করে মোবাইলে পৌঁছে দিবে। মোবাইল সেগুলো আরেকটা সফটওয়্যারের সাহায্যে ব্যবহার উপযোগী করে দেখাবে। প্রথম সফটওয়্যারটা না থাকলেও দ্বিতীয়টি গুগলের কল্যানে এখনই আছে। গুগল মোটামুটি কাজ চালানোর মত একটা ম্যাপও তৈরি করেছে। আমাদের যা করতে হবে তা হল এই ম্যাপ ব্যবহার করে পথনির্দেশ আর রাস্তায় যানবাহনের পরিমান প্রদর্শন করা। এই গেল মোটামুটি কাজের ধারা। এবার মোবাইলে ব্যবহার উপযোগী এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন দরকার। অ্যাপ্লিকেশনটির নাম দেওয়া হল Traffic Hawk. দেখি তাহলে কিভাবে কাজ করবে এই অ্যাপ্লিকেশনটি।
মনে করি, আমি খিঁলগাও থেকে মতিঝিল যাব। সেক্ষেত্রে আমি কমলাপুর হয়ে কিংবা শাহজাহানপুর হয়ে যেতে পারি। সেক্ষেত্রে আমার মোবাইলে আমি Traffic Hawk চালু করে লিখবো, From- Khilgaon; To- Motijheel. আমার মোবাইলের পর্দায় তখন আমাকে দেখানো হবে আমি দুইটি সম্ভাব্য রাস্তা ব্যবহার করতে পারি। গুগল ম্যাপের সাহায্যে সম্ভাব্য রাস্তা দুইটির যথাসম্ভব বিবরন আমাকে দেখানো হবে। পাশাপাশি কোন রাস্তায় ট্রাফিকের অবস্থা কেমন তাও দেখানো হবে গাড় এবং হালকা রঙ দ্বারা নির্দেশ করে। এবার আমি যে রাস্তায় জ্যম কম সে রাস্তা ধরে অন্য আরো অনেকের আগে গন্তব্যে পৌঁছে যাব।
গেল সব বুদ্ধি করার পালা। এবার কিভাবে চালু করা যায় এ সুবিধা। আমাদের আছে ক্যামেরা, গুগল ম্যাপ। প্রয়োজন মোবাইল অপারেটরদের বুঝানো যে এটা একটি লাভজনক কাজ হতে পারে পাশাপাশি তোমাদের সুনামও বাড়বে, আর প্রয়োজন প্রথম যে সফটওয়্যারটি লাগবে তা তৈরির টাকা। এছাড়া গুগল ম্যাপ আর সরকারের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে দক্ষ কারো সহায়তাও প্রয়োজন। অর্থাৎ, এই আকাশ কুসুম কল্পনা সার্থক হবার নয়। বাঙ্গালী কোনদিন জ্যম থেকে মুক্তি পাবে না।
এমন সময় বাংলালিঙ্ক নামক মোবাইল অপারেটর আয়োজন করল গ্র্যান্ড মাষ্টার সিজন টু আইডিয়া প্রতিযোগীতা। এবারের বিষয় ইন্টারনেট বেজড অ্যাপ্লিকেশন। সবই তো আমাদের Traffic Hawk এর সাথে মিলে যায়। দুরু দুরু বুকে আইডিয়া জমা দিয়ে দিলাম সবকিছু বিস্তারিত লিখে। তারপর স্রেফ ভুলে গেলাম কি হয়েছিল। কিন্তু আমাকে অবাক করে প্রায় মাসখানেক পর ফোন করে জানানো হল আমাদের আইডিয়া প্রায় ২২০০০ থেকে সেরা ১৫ তে জায়গা করে নিয়েছে। ইতিমধ্যে ফেসবুক ভোটিং শুরু হয়েছে। আমাদের এই Traffic Hawk অ্যাপ্লিকেশনটি যদি আপনি প্রয়োজন মনে করেন তবে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে এই যাত্রায় অন্যতম সহযোগী হয়ে উঠুন। ভোট দিতে এখানে ক্লিক করুন।
https://www.green-red.com/apps/banglalink-grandmaster/pages/idea/1198
অথবা,
https://www.facebook.com/banglalinkmela/app_349006625190464?app_data=%2Fidea%2F1198
অথবা, (শর্ট লিংক)
http://on.fb.me/SpEjFn
তাহলে আর অপেক্ষা না করে আসুন নিয়ন্ত্রন করি গতিময় সময়কে। সময়ের সাথে এই যুদ্ধে নিজেকে এগিয়ে রাখতে ব্যবহার করি প্রযুক্তির এই বাহনকে। ছড়িয়ে দেই মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বের পুরোন স্লোগান আবার নতুন করে।
আমি ফেসবুক গুরু। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 45 টি টিউন ও 547 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
In this farewell There's no blood There's no alibi 'Cause I've drawn regret From the truth Of a thousand lies 回 আমি সত্য বলতে পছন্দ করি, সেটা যতই কঠিন হোক না কেন। সত্য বলতে কখনো পিছপা হতে চাইনা। 回 বিশ্বাস করতে পছন্দ করি। আমি মনে করি যে কোন সম্পর্কের মূল...
all that is necessary now to realize that is the right sponsor.