আজকের একটি সংবাদ, এমএলএম পিটিসি কোম্পানী 'স্কাই ল্যান্সার ডট কম' ৯০ হাজার গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করে পালিয়ে গেছে এবং বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই ছিল ঐ কোম্পানির গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানের মোট গ্রাহক সংখ্যা ৯০ হাজার এবং তাঁদের কাছ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রতারিত হয়েছে এটা বোঝার পর স্কাই ল্যান্সার অফিস ভাংচুর করেছে ২০০-২৫০ গ্রাহক।
এটিই শুরু এবং শেষ নয়, এমন খবর আসছে এবং আমরা সেসব খবরে অভ্যস্ত হয় যাচ্ছি। এসব কিছুই হচ্ছে প্রশাসন এর চোখের সামনেই।
২/৩ বছর আগে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে একটি হিড়িক লেগেছিল, তা হলো 'জুমলা বা অন্য কোন ফ্রেমওয়ার্ক' শেখা। নানা কর্মশালা আর ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয় করার আহবান। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবি সংগঠনও (যেমন বেসিস, এ২আই প্রজেক্ট) জুমলা নিয়ে আয়োজন করেছিল কর্মশালা। অনেক ছাত্র এবং বেকার তরুন কর্মশালায় অংশ নিয়ে অনলাইনে ক্যারিয়ার শুরু করেছিল, কেউ কেউ ঐ অবস্থান থেকে আজকে সফল পেশাজীবি হয়েছেন।
আমার অনেক প্রোগ্রামার/কম্পিউটার প্রফেশনাল বন্ধু যদিও 'জুমলা'র সমালোচনা করে বলতেন, 'জুমলা আমাদের ছেলেদের অলস এবং মেধাশূন্য করে তুলছে, তারা কোডিং ভুলে যাচ্ছে। ' বিষয়টি নিয়ে আমি সরাসরি মন্তব্য না করলেও, একটি মডারেটেড ভূমিকায় ছিলাম। ভাল লাগতো পরিচিত বিভিন্ন ছেলেদের অনলাইনে ডলার আয় করতে দেখে।
আর সম্প্রতি, ছাত্র-তরুনদের মধ্যে 'ক্লিক করে ডলার আয়' করার যে ফালতু প্রবণতা চালু হয়েছে, তা খুবই অশুভ আমাদের তরুন সমাজের জন্য। এমএলএম এবং অল্প সময়ে কোটিপতি হবার স্বপ্নে বিভর লক্ষ তরুন। আর এই স্বপ্ন নিদ্রায় প্রতারণার কাঁথা-বালিশ নিয়ে হাজির হয়েছে কিছু তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন প্রতারক। দেশেই তৈরি ওয়েবসাইট দিয়ে, বিদেশী কোম্পানী বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ছাত্র-তরুনদের।
জুমলা শিখে ৫০-১০০ ডলার আয় করার পর কিছুটা জ্ঞান অর্জন করতো একজন তরুন এবং কোন বিদেশী ক্লায়েন্ট এর ওয়েবসাইট তৈরির প্রজেক্টে কাজ করে নানা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতো। আর এখন শুধু কিছু ভূয়া লিংকে ক্লিক করে ডলার আয় করার ফালতু কাজ, যা ছাত্র-তরুনদের সময় এবং মেধা দুই নষ্ট হচ্ছে। সাথে বোনাস হিসেবে থাকছে 'প্রতারণা'।
সম্প্রতি ইউনিপে২ইউ এর একজন মফস্ফল এজেন্টের (বর্তমানে পলাতক অবস্থায় ঢাকাতে) সাথে কথা হলো, সে প্রায় কোটি টাকার মালিক এবং তার হিসাব মতে তার সার্কেলে বেশির ভাগ সদস্য হচ্ছে গৃহবধু, মধ্য বয়স্ক নারী এবং অল্প বয়স্ক তরুন। যারা আসলে না বুঝেই শিকার হচ্ছে প্রতারণার। আর লজ্জায় এবং শক্তির অভাবে 'ঠকে' যাবার কথা কাউকে বলে না।
একুশে টিভিতে ধারাবাহিকভাবে 'এমএলএম' এর বিভিন্ন কোম্পানির প্রতারণা দেখাচ্ছে.ভয়াবহ. একটি জাতীয় দৈনিকে দেখলাম "দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের" নামে ভূয়া ব্যাংক একাউন্ট করে প্রতারণা হয়েছে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
অনেক বদনাম আর অব্যবস্থার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাত আমাদের একটি সফল/উল্লেখযোগ্য খাত। ওডেস্ক সহ বিভিন্ন অনলাইন আউটসোর্সিং সাইটে বাংলাদেশের তরুনদের একটি ভাল অবস্থান এবং সুনাম আছে, যা কিন্তু ১/২ দিনে গড়ে ওঠেনি। কিন্তু নষ্ট হতে সময় লাগবে না, যদি আমাদের দেশের তরুন-যুব আউটসোর্সিং ফ্রিল্যান্সাররা ভাল-মন্দের পার্থক্য ধরতে না পারেন এবং প্রতারণার শিকার হয়ে আত্নবিশ্বাস হারিয়ে এ সেক্টরে কাজ বন্ধ করে দেয়।
সরকারের বিভিন্ন সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে কেন নিশ্চুপ? কেন বেসিস, কম্পিউটার কাউন্সিল, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চুপ বসে আছেন? Enough is enough!
লেখক : সম্পাদক, নিউজনেট
আমি নিউজনেট বিডি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আসলেই এই সব বাজে সাইট, যত ডিজিটাল প্রতারনার ফাদ। সবাইকে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আচ্ছা এই সম্পর্কে কোন টিভি চ্যানেল কিংবা কোন জাতীয় পত্রিকা প্রতিবেদন ছেপেছে কি? জানালে বা লিংক দিলে আমায় উপকারে আসে। যাতে আরো ১০ জনকে সজাগ করতে পারি।-ধন্যবাদ