ধরুন, আপনি অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। বিশেষ কোনো ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি একটি পন্যের অর্ডার দিলেন এবং যথারীতি পেপাল কিংবা মাস্টারকার্ডে সেটার বিল পরিশোধ করলেন। আপনি কি ভেবেছেন, আপনার দেওয়া গোপন তথ্য চুরি হতে পারে! অথবা, আপনি নিজেই এ ধরণের একটি ওয়েবসাইট চালু করেছেন; মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করবে কেন? কোন বিশ্বাসে তারা আপনার ওয়েবসাইটে এসে তাদের পাসওয়ার্ড ইত্যাদি গোপন তথ্য প্রদান করবে?
এই সমস্যার সমাধানে ওয়েবসাইটগুলোকে এক ধরণের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। যা জানিয়ে দেয় একটি সাইট নিরাপদ কিনা কিংবা কতটুকু নিরাপদ। ব্রাউজার থেকে সার্ভার এবং সার্ভার থেকে ব্রাউজারে তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে তথ্য চুরি হবে না, এটি সুনিশ্চিত করার জন্যে ওয়েবসাইটগুলোকে SSL/TLS সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। SSL এবং TLS হল যথাক্রমে Transport Layer Security ও Secure Sockets Layer-এর সংক্ষিপ্ত রুপ।
ওয়েবসাইটের ঠিকানার (URL) শুরুতে http:// থাকে, নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। এই http:// হল একটি Application Protocol, এর পূর্ণরূপ HyperText Transfer Protocol; কিন্তু আপনি কি লক্ষ্য করেছেন কিছু সাইটের ঠিকানার শুরুতে https:// থাকে? https:// শুধুমাত্র সেই সাইটগুলোতেই থাকে, যেগুলো SSL/TLS সার্টিফিকেট প্রাপ্ত। এই https:// হল HyperText Transfer Protocol Secure-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। প্রকৃতপক্ষে এই সাইটগুলো গোপন তথ্যাদি (বিশেষ করে পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য গোপন নম্বর) আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে নিরাপদ।
(বামদিকে অনিরাপদ এবং ডানদিকে নিরাপদ ওয়েবসাইট)
আরেকটা বিষয়, সাইটের ফেভিকন (URL-এর বামদিকে ছোট আইকন টাইপ Image) সাধারণত ১৬x১৬ পিক্সেলের হয়। কিছু সাইটে দেখবেন এই অংশটি তুলনামূলক বেশি চওড়া। এগুলোতে ফেভিকনের পাশে খানিকটা বর্ধিত অংশ থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাইটের নাম লেখা থাকে এখানে। বর্ধিত অংশ আবার বিভিন্ন রঙয়ের হয়ে থাকে। সাধারণত নীল, হালকা নীল, হালকা সবুজ এবং সবুজ রং থাকে। এগুলো নিরাপত্তা মাত্রা নির্দেশ করে। একটি সাইট কতোটা নিরাপদ সেটি বুঝতে পারবেন এর ফেভিকনের পাশের এই রং দেখে।
(বামদিকে অনিরাপদ এবং ডানদিকে নিরাপদ ওয়েবসাইট)
বিশ্বব্যাপী কিছু স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান আছে যারা SSL/TLS সার্টিফিকেট প্রদান করে। একটি সাইট নিরাপদ নিশ্চিত করে তারপরই এরা স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। SSL/TLS সার্টিফিকেটযুক্ত কোনো সাইটের ফেভিকনের উপর মাউস কার্সর রাখলেই দেখতে পাবেন কোন প্রতিষ্ঠান ওই সাইটকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
পরিপূর্ণ তালিকা দেখে নিতে পারেন এই লিংক থেকে।
বেশ কিছুদিন হল আমাদের দেশে ক্লিক পার্টিদের উৎপাত বেড়েছে। আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং-এর ‘সনাতন’ সংজ্ঞা এরা পাল্টে দিয়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে আউটসোর্সিং-এর উপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ ধরেন নিয়েছে আউটসোর্সং মানেই MLM আর বসে বসে ক্লিক করা।
আমি এ নিয়ে আগেও বলেছি; বলতে গিয়ে ক্লিকবাজদের ঝাড়ি, হুমকিধামকি সহ্য করতে হয়েছে। এদের ফেরাতে পারি নি। যাঁরা এসব ক্লিক পার্টিতে যুক্ত, তাঁদের বলছি- আপনাদের এইসব সাইট SSL/TLS সার্টিফিকেট প্রাপ্ত কিনা একবার যাচাই করুন, অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো দেখুন, অনলাইনে কেনাকাটার সাইটগুলো দেখুন। Paypal, Ebay ইত্যাদি সাইটে SSL/TLS আছে কিনা দেখুন, আর দেখুন আপনাদের ক্লিক পার্টির ওয়েবসাইটের কী অবস্থা!
আমি নাজমুল আহসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 20 টি টিউন ও 134 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
চমৎকার তথ্যবহুল একটা টিউন। নতুন কিছু বিষয় জানলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂