টেকটিউনস-এর নীতিমালা breach না করে আমি এই লেখাটি শেয়ার করলাম অরিজিনাল লেখার লিংক সহ, যেটি এখানে দেখতে পাবেন। সামান্য একটু এডিট করা লেগেছে কারণ মূল লেখাটিতে কিছু জায়গায় বানানগত ত্রুটি ছিল।
---------------------------------------------------------------
রাজা দুষ্মন্ত বড়ই চিন্তিত। বিগত দু’দিন যাবৎ শকুন্তলাকে দেখা গিয়াছে মোবাইলে কোন এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে ফাইট দিতে। সে ঘন ঘন ছোট বার্তাও পাঠাইতে থাকে। আবার ফিরতি বার্তা পড়িয়া মুচকি মুচকি হাসে। তাহাকে ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কথা সুধাইলে সে বলে, তুমার তাতে কি? 'ইয়ে'তে চুল্কাচ্ছে?বেটা বুড়া ভাম! আজকাল রিক্সাওলারা পর্যন্ত মোবাইল ইউস করতেসে। আর তুমি একটা আখাইস্তা, নিজের একটা মোবাইল কেনারও মুরোদ নাই,আবার নাম নিসে রাজা, হেঁহ্!
রাজা নিজে মোবাইলের ব্যাপারে অতিশয় অজ্ঞ। মোবাইলের ম-ও তিনি বুঝেন না। নিজে মোবাইল ব্যবহারও করেন না। শকুন্তলার কথায় তিনি অতিশয় মর্মাহত হইলেন। তিনি সেনাপতিকে ডাকিয়া বলিলেন, "সেনাপতি,অদ্য তুমি আমাকে মোবাইল দীক্ষা দিবে। না দিলে তোমার চাকরি ত যাইবেই,গর্দানও যাইবে।" সেনাপতি মনে মনে কহিল, "ছোঁহ! সে কি ভাবিয়াছে আমার গর্দান নিলেই আমি মারা পড়িব? ব্যাটা গর্ধবটা তো জানে না, আমার মস্তিষ্ক তো আমার হাঁটুতে।" মুখে কহিল, "রাজামশাই, মোবাইল দীক্ষা নিতে হইলে আপনাকে সাত সমুদ্দুর তের নদী পারে 'বঙ্গদেশ' নামক এক আশ্চর্য দেশ আছে, সেথায় যাইতে হইবে।" রাজা কহিলেন, "তবে নামাও জাহাজ।"
অতঃপর তাহারা সাত সমুদ্দুর তের নদী পার হইয়া সে আশ্চর্য দেশের রাজধানীতে পৌছাইলেন। সেখানে গিয়া তাহারা মোবাইল ক্রয় করিবার নিমিত্ত 'বসুন্ধরা সিটি' নামক এক বিশাল বিপণীতে গমন করিলেন। হেথায় রঙ বেরঙ্গের হরেক রকম মোবাইল দেখিয়া রাজার তো চক্ষু ছানাবড়া। এক দোকানে গিয়া সুধাইলেন, "ভাই, আমরা সাত সমুদ্দুর তের নদী পাড়ি দিয়া বানিজ্য করিতে আসিয়াছি। আপনার দোকানের মোবাইলগুলা দেখিয়া পুলকিত বোধ করিতেছি। যদি দয়া করিয়া আমদিগকে কিছু নমুনা প্রদর্শন করিতেন…." । দোকানদার একটি মোবাইল দেখাইয়া কহিল, "এইটা হইল গিয়া নকলা এন-৮৫। এইটা দিয়া গান শুনা যায়, ছবি তুলা যায়, আঠারো মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ফাইল শেয়ারিং করা যায়, ওয়েবসাইটে ঢুকা যায়, টাচ- স্ক্রীন, একবারে ১০ জনের লগে ভয়েস চ্যাট করা যায়, টিভি চ্যানেলও আসে পুরা ফকফকা, গান রাখা যায় পুরা বাইশ হাজার।" রাজা ভয়ে ভয়ে সুধাইলেন, "ভাই, এইটা দিয়া কি কথা বলা যায়?" দোকানদার রাজাকে তাহার অগ্নিদৃষ্টি দিয়া ভস্ম করিয়া দিতে চাহিল। রাজা তাড়াতাড়ি পাশের দোকানে আসিয়া পড়িলেন। ওই দোকানদার তাহাকে একটি নোকাই এন-৯৭ সেট গছিয়া দিল। রাজা তাহাকে মূল্য বাবদ পাঁচটি স্বর্নমূদ্রা দিলে সে চটিয়া কহিল, "ওই মিয়া, আপ্নের সমেস্যা কি? ট্যাকা দেন নাইলে টেংরি ভাইঙ্গা হাতে ধরায়ে দিমুনে।" সেনাপতি পাশেই ছিল। বেগতিক দেখিয়া সে দ্রুত হাজার টাকার দশটি নোট বাহির করিয়া দিল।
মোবাইল কেনা সমাপ্ত করিয়া রাজা ও সেনাপতি চলিয়া আসিলেন পলাশীর প্রান্তরে। সেথায় সেনাপতির এক দূরসম্পর্কের মাস্তুত ভাইএর সাথে তাহারা দেখা করিলেন। রাজা প্রথমে তাহাকে দেখিয়া ভাবিলেন, এ নিশ্চয় কোন সাধু বা সন্ন্যাসী হইবে। তাহার পরনে গেরুয়া বর্ণের পোষাক। মুখভর্তি দাড়ি। গলায়, হাতে নানাবিধ তাবিজ কবজ ঝুলিতেছে। পায়ে খড়মসদৃশ জুতা। সে আসিয়া কহিল, "ওয়াযযাপ গা’জ! আই এম ক্রেম্যাট।" সেনাপতি রাজার কানে কানে কহিলেন, 'কেরামত'।
রাজা তাহার নিকট এক মাস যাবত দীক্ষা লইলেন। এর মধ্যে ক্রেম্যাট তাহাকে শিখাইল, কল কেম্নে রিসিভ করিতে হয়, কেম্নে মিসকল মারিতে হয়, কেম্নে পে ফর মি কল করিতে হয়, কেম্নে একটার পর একটা অজ্ঞাত নম্বরে ট্রাই করিতে করিতে সুন্দরী রমনীদের নম্বর খুঁজিয়া বাহির করিতে হয়, কেম্নে সেইসব রমনীদের সহিত ঘন্টার পর ঘন্টা আজাইরা প্যাঁচাল চালাইয়া যাইতে হয়। তিনি আরো শিখিলেন বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত শব্দ, যেমন- বিআরবি, লোল, লিম্যাঁও, সিটিএন, টিজিএম, ডিজিএম, জিএমকে ইত্যাদি। উক্ত সময়ে তিনি খেয়াল করিলেন, ক্রেম্যাট জানি কাহার সাথে অনবরত কথা কইতে থাকে এবং বার্তা আদানপ্রদান করিতে থাকে। তিনি কৌতুহলী হইয়া সুধাইলে সে কহিল, "এইটা নান অফ তুমার বিজনেস।ভাগ হিঁয়াসে।"
রাজা তাহার কৌতুহল নিবারণ করিতে না পারিয়া এক রাতে ক্রেম্যাটের রুমের পাশে ঘাপ্টি মারিয়া গুপ্তচরবৃত্তি করিতে লাগিলেন। তিনি শুনিলেন, সে কহিতেছে, "ওহ্ শেকু ডার্লিং, তুমি হুদাই টেনশন নাও। তুমাকে আমি ভাগায়ে বিয়া করবই। তুমার মত একটা সেক্সি মালকে সামলানো কি ঐ বুড়ার কাজ"? অপর প্রান্ত কিছু বলিল। জবাবে ক্রেম্যাট কহিল, "আব্বার জিগগায়। পুরা মাকখন প্লান।" কিছুক্ষন পর সে আবার কহিল, "আব্বে তুমি টেনশন লও কেলা? হাম হে না? পুরা কোপায় ফালা ফালা কইরা দিমু"। অতঃপর রাজার ধৈর্যচ্যুতি ঘটিল। তিনি বিড়বিড় করিতে করিতে রুমে আসিয়া বাতি নিভাইয়া শুইয়া পড়িলেন।
রাজার ট্রেনিং শেষ। তিনি এখন মোবাইলে কল রিসিভ করিতে এবং রাজন্যদিগকে কল করিতে পারেন। ক্রেম্যাটকে তিনি তাহার পারিশ্রমিকস্বরূপ একটি সোনার পালতোলা জাহাজ এবং দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়াছেন। ক্রেম্যাট তাহাতে অতিশয় খুশি। সে যাইবারকালে রাজাকে একটি ফ্রি উপদেশ প্রদান করিল, "এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার।"
রাজা পুনরায় সাত সমুদ্দুর তের নদী পার হইয়া শকুন্তলার দেশে ফিরিয়া আসিলেন। তিনি বাটিতে প্রবেশমাত্র ডাকিলেন, "শকুন্তলে, প্রিয়ে, আমি ফিরে এসেছি প্রিয়ে। তোমার জন্য আমি সাত সমুদ্দুর তের নদী পার হইয়া, প্রবল সমুদ্রের বিকট সব দানবদের সাথে লড়িয়া, মোবাইল দীক্ষা লইয়া ফিরিয়া আসিয়াছি। তুমি কোথায় প্রিয়ে?"
কিন্তু তাহার দেখা মিলিল না। শকুন্তলার এক সখা আসিয়া কহিল, "সেতো এক সোনার পালতোলা জাহাজে চাপিয়া এক দরবেশের সাথে দূরদেশে যাত্রা করিয়াছে। যাইবার কালে আপনার পোষা ছাগী সুনয়নাকে লইয়া গিয়াছে।" তম্মুহূর্তে রাজার নোকাই এন-৯৭ ঝনঝন করিয়া বাজিয়া উঠিল। তিনি দেখিলেন, দুটি বার্তা আসিয়াছে। প্রথমটি আসিয়াছে ক্রেম্যাটের নিকট হইতে। রাজা শশব্যস্ত হইয়া উহা পড়িলেন। উহাতে লেখা- এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার। অতঃপর দেখিলেন, অপর বার্তাটি শকুন্তলার নিকট হইতে আসিয়াছে। উহা খুলিয়া পড়িলেন, "দুষু ডার্লিং, তুমি আসলে খুব ওল্ড ফ্যাশানড। আমাড় আবাড় ইয়াং এনার্জেটিক বেশি পছন্দ। এনিওয়ে, টিসি। বিটিডব্লিউ, তোমাড় সুনয়নাকে নিয়ে গেলাম। এত্ত কিউট একটা গোট… কোলন পি!"
রাজা তাহার বাম বুকে হাত দিয়া ধপ করিয়া বসিয়া পড়িয়া কহিলেন-"সুনয়না"!!
আমি আদনান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 51 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
সঙ্গীত-বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ।
🙂 🙂 🙂