মহাবিশ্ব ও এর উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রায়োগিক পরীক্ষা ১৪ মাস পর আবার শুরু করেছে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সিইআরএন)। সবকিছু ভালভাবেই চলছে জানিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র জেমস জিলিয়েস জানিয়েছেন, সুইজারল্যান্ড-ফ্রান্স সীমান্তে মাটির ১০০ মিটার নিচে ২৭ কিলোমিটারের বৃত্তাকার সুড়ঙ্গে স্থাপিত পরীক্ষার প্রধান যন্ত্র 'লার্জ হাড্রন কোলাইডার' (এলএইচসি)- এর সুড়ঙ্গে শনিবার দিনের শুরুতেই প্রোটন কণার রশ্মিগুলো পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত আড়াইটার পর প্রকৌশলীরা প্রথম কণার রশ্মি পুরো সুড়ঙ্গ ঘুরিয়ে আনতে সক্ষম হন। সিইআরএন এর মহাপরিচালক রফ হিউয়ার বিবিসিকে বলেন, "এলএইচসিতে পুনরায় কণার রশ্মিগুলো ঘোরার দৃশ্য দেখার বিষয়টি অনেক বড় সাফল্য।" তিনি বলেন, "মূল পরীক্ষা শুরু করার আগে আমাদের আরো অনেক পথ যেতে হবে। তবে এই মাইলফলক স্পর্শ করার মাধ্যমে আমরা ভালভাবেই সে পথে এগুচ্ছি।" সিইআরএন মুখপাত্র শুক্রবার রয়াটর্সকে বলেন, "এই মুহূর্তে তারা এলএইচসি'র টানেলে প্রোটন কণার রশ্মিগুলো ছাড়ছেন এবং রাত শুরু হলে সেগুলো ঘোরানো শুরু হবে।" তবে তিনি জানান, আগামী জানুয়ারি মাসে এলএইচসি পূর্ণ ক্ষমতায় সক্রিয় হওয়ার আগে এ পরীক্ষা যথাযথভাবে হবে না। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম বারের মতো চালুর নয় দিন পরই কারিগরি ত্র"টির কারণে নয় বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের যন্ত্র এলএইচসি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সার্ন। সিইআরএন জানিয়েছে, গতবারের পরীক্ষার সময় কারিগরি ত্র"টির কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটে তাতে কখনোই কোনো হুমকি তৈরি হয়নি।আর মেরামতের পর এবার যন্ত্রটির মান আরো ভাল হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা এবং এলএইচসি হচ্ছে এ যাবত তৈরি সবচেয়ে জটিল ও বড় মেশিন। বিগ ব্যাং এর একেবারে শুরুর মুহূর্তগুলোয় কী কী ঘটেছিল তা জানতে বিজ্ঞানীরা মেশিনটির ভেতরে আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে বিপরীত দিক থেকে প্রোটন কণা রশ্মির সংঘর্ষ ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। তবে এ পরীক্ষার কারণে সেখানে ব্ল্যাক হোল তৈরি হয়ে আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে যে গুজব রয়েছে গতবার পরীক্ষার শুরুর আগেই তা নাকচ করে দিয়েছিলেন স্টিফেন হকিংসহ এ পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা। তবে এ পরীক্ষায় 'হিগস বোসন' বা কথিত 'ঈশ্বর কণার' সন্ধান মিলবে না বলে ১০০ ডলারের বাজি ধরেন হকিং। স্কটল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস এর নামে নামকরণ করা কণাটি এখনো অনাবি®কৃত। তিনি ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসাবে এমন একটি কণার ধারণা দেন যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। আর যার ফলে সম্ভব হয় এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির। বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন বছর আগে ছোট্ট একটি মুদ্রার মতো বস্তুর ওই মহাবিস্ফোরণে (বিগ ব্যাং) গঠিত হয় মহাবিশ্বের সব গ্রহ-নক্ষত্র। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের পৃথিবীতে বিকাশ হয় প্রাণের। পদার্থবিজ্ঞান এবং মহাবিশ্বের সুপারসিমেট্রি, কৃষ্ণবস্তু ও কৃষ্ণশক্তির মতো অন্যান্য বিষয়ের রহস্য জানাও এ গবেষণার লক্ষ্য। জ্যোতির্বিদদের ধারণা, ছায়াপথ, গ্যাস, নক্ষত্র ও পৃথিবীর মতো জিনিসগুলো মহাবিশ্বের মাত্র চার শতাংশ। আর বাকি ২৩ শতাংশ হচ্ছে কৃষ্ণবস্তু এবং ৭৩ শতাংশ হচ্ছে কৃষ্ণশক্তি। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এলএইচসি'র এ পরীক্ষায় মহাবিশ্বের এই বিস্ময়কর "বিষয়ের" প্রকৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তবে অনেকের আশঙ্কা, এই গবেষণার ফলে অনেকগুলো ব্লাকহোল তৈরি হয়ে গবেষণার কেন্দ্র, ইউরোপ, এমনকি পুরো পৃথিবী গ্রাস হয়ে যেতে পারে। এছাড়া এ পরীক্ষার ফলে "স্পেস-টাইম" এ একটি "ওয়ার্ম হোল" সৃষ্টি হয়ে সেখান দিয়ে অন্য মহাবিশ্বের প্রাণীরা আমাদের হামলার সুযোগ পেয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
বিডি নিউজ হতে সংগৃহিত
আমি বৈধ মামুন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 11 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ঠিক এই খবর টার অপেক্ষায় ছিলাম। ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ