পেইড সফটওয়্যার ফ্রীতে ইন্সটল করার আগে জেনে নিন

প্রায় ৭ বছর ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করছি। সফটওয়্যার ইন্সটল করতে গিয়ে শিখলাম যে প্রায় সব সফটওয়্যার ইন্সটল করার পরে crack ফোল্ডারের ফাইল গুলো কপি কর ইন্সটলেশন ডিরেক্টরিতে রাখতে হয়। এইটাই সফটওয়্যার ইন্সটল করার নিয়ম। কেন করতে হয় সেটা জানলাম কয়েক বছর পরে। তখন মোটামুটি গর্ববোধ করতাম। হাজার হাজার টাকার সফটওয়্যার ফ্রি ব্যবহার করছি, এইটা একটা বিশাল ক্রেডিট এর ব্যাপার।

এই বিশাল ক্রেডিটের একটা সুন্দর নাম আছে। সফটওয়্যার পাইরেসি। সোজা বাংলায় চুরি! রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা আছি ২ নাম্বারে। পাইরেসির হার ৯২%। আরেকটা জরিপ বলে আমাদের রেঙ্কিং ৩ নাম্বারে। রেঙ্কিং ২-৩ যাই হোক না কেন, এটা যে কোন ক্রেডিটের ব্যাপার না তা হয়ত আচ করতে পারছেন।

কিভাবে করা হচ্ছে এই র‍্যাঙ্কিং?

ব্যাপারটা খুব সহজ আসলে। আমরা যারা ফেসবুকে পাসওয়ার্ড কখনও চেঞ্জ করেছি তারা জানি, যে কনফার্মেশন ইমেইল ফেসবুক আমাদের পাঠায় তাতে আইপি এড্রেস, ব্রাউজার, ব্রাউজারের ভার্সন, অপারেটিং সিস্টেম এগুলো লেখা থাকে। এই ইনফরমেশন তারা পায় কোথাথেকে? ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সময় ব্রাউজার ক্লায়েন্ট সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য ওয়েবসাইটকে দেয় (যদি ওয়েবসাইট জানতে চায়)। বড় বড় এই ওয়েবসাইট গুলো প্রতিনিয়তই এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করছে।

আমারা crack করা কোন সফটওয়্যার দিয়ে কিছু তৈরি করলে সেটাতেও একটা মেটা ইনফরমেশন ফাইনাল ফাইলটাতে যুক্ত হয়ে যায়, যাতে আমার সফটওয়্যার এর ভার্সন, crack করা না অরিজিনাল তার সব ইনফর্মেশনই থাকে। তাই আমরা যদি ভাবি যে চুপ করে টরেন্ট দিয়ে একটা সফটওয়্যার নামিয়ে তা দিব্বি ব্যবহার করে যাব, আর কেও জানবে না, তাহলে আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি।

crack করা হলে সমস্যা কি?

বাংলাদেশ সফটওয়্যার চুরিতে ২-৩ নাম্বারে আছে। আর যদি দেশের কথা বাদ দেই, তাহলে নিজের জন্যও মারাত্মক। crack করা এই সব সফটওয়্যার এর crack যদি নিজেরা তৈরি করি তাহলে খুব বেশি টেনশন নাই। কিন্তু যদি অন্য কেও করে দেয় তা হলেই সমস্যা। আপনি জানেন না crack করা ছাড়া আর কি কি চেঞ্জ করা হয়েছে সফটওয়্যারটিতে। স্পাইওয়ার বা মেলওয়ার আছে কিনা। হয়ত ভাবছেন, আমার crack করা এন্টিভাইরাস আছে না! সব কিছু পরিষ্কার করে ফেলবে। ভাই, এন্টিভাইরাস তো পরিষ্কার করতে চায় ই! আপনিই তো দেন না! crack করার সময় এন্টিভাইরাস অফ করে নিতে হয়। নাইলে আবার crack করা যায় না! আপনার কম্পিউটারের কত কত তথ্য প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে। আপনি টেরও পাচ্ছেন না!

আমি কি করতে পারি? আমার এত টাকা নাই!

মানুষ আপনাকে ফ্রীতে ভাল জিনিস দিতে চাচ্ছে! আপনিই নিচ্ছেন না! একটু সার্চ দিয়ে দেখেন, হাজার হাজার ওপেনসোর্স ফ্রি সফটওয়্যার আছে। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স ব্যবহার করতে পারেন। মাইক্রোসফট অফিসের বদলে ওপেন অফিস ব্যবহার করতে পারেন। টাকায় কেনা সফটওয়্যার থেকে ভাল হয়ত হবে না, কিন্তু বিশ্বাস করুন, সাধারন ব্যবহারের জন্য ৯৫% ক্ষেত্রে আপনার এই ফ্রি সফটওয়্যার গুলোতে দিব্বি চলতে পারবেন। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হবে। কিন্তু পরে ঠিকই দেখবেন সবই করা যাচ্ছে। এবং সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয়, কম্পিউটারে যে ভাইরাস বলতে একটা ব্যাপার আছে, ধিরে ধিরে আপনি সেটা ভুলে যেতে শুরু করবেন। কারণ উইন্ডোজের ভাইরাস গুলোও লিনাক্সে কাজ করে না!

আর যদি মনে করেন ফ্রি সফটওয়্যার গুলো পোষাচ্ছে না তাহলে যে সফটওয়্যারটি আপনার দরকার সেটি কিনে ফেলাই উচিত। ভাল মানের একটা সফটওয়্যার তৈরি করতে প্রোগ্রামারদের এর পরিশ্রম কিন্তু কম না। কাজের মূল্যায়ন করা উচিত। অবশ্য চাইলেও অনেক সফটওয়্যারই আমরা কিনতে পারবো না। কারণ এত বেশি পাইরেসির কারণে অনেক ভাল কোম্পানিই তাদের পন্য আমাদের দেশে বিক্রি করতে আসে না। আর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অনলাইনে কিছু কেনা আমাদের জন্য এখনও স্বপ্ন!

পাইরেসি ঠেকাতে অধিকাংশ ভাল সফটওয়্যার গুলো ক্লাউডের দিকে ঝুঁকছে। সফটওয়্যার এখন অনলাইন একাউন্ট ম্যাম্বারশিপের মাধ্যমে ব্যাবসা করছে। তাই এখনই সময়।

কিভাবে শুরু করবেন?

দির্ঘদিন উইন্ডজ ব্যবহার করে হুট করে লিনাক্স ব্যবহারটা কঠিন হবে। এভাবে চেস্টা করে দেখতে পারেন।

যেহেতু লিনাক্সে উইন্ডোজের অধিকাংশ সফটওয়্যারই নেই, তাই আর কিছুদিন উইন্ডোজ ব্যবহার করে লিনাক্সে আছে এমন ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করতে পারেন। যেমন MS Office এর বদলে Open office বা Libre Office, IDM এর বদলে FDM (Free Download Manager) ইত্যাদি। এতে করে আপনি লিনাক্সে সুইচ করলে শুধু অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া বাকি সব কিছুই পরিচিত মনে হবে। একি সাথে, অনেক গুলো সফটওয়্যার crack করার বদলে অরিজিনাল ব্যবহার করতে শুরু করতে পারবেন।

কিছু ফ্রি সফটওয়্যার যা বিকল্প হতে পারে।

পেইড সফটওয়্যারফ্রি সফটওয়্যারকি সফটওয়্যার
MS Windows 7, Windows 8.1Linux Ubuntu, Linux Mint, Linux CentOSঅপারেটইং সিস্টেম
MS OfficeLibre Office, Open OfficeOffice Suite
Adobe PhotoshopGIMPImage Editing
Adobe IllustratorInkscapeVector Graphics Editing
Adobe Reader/ Acrobat ReaderFoxit Reader, Nitro ReaderPDF Reader
Internet Download ManagerFree Download ManagerDownloader

এমন আরো অনেক অনেক সফটওয়্যার আছে। Google.com এ একটু খুজলেই পাওয়া যাবে। "Open Source Alternative for." এমন কিছু লিখে খুঁজে দেখা যেতে পারে।

শেষ কথা

তর্ক করতে গেলে অনেক কিছু নিয়েই করা যায়। উপরের সফটওয়্যার গুলো পেইড সফটওয়্যার থেকে থেকে ভাল হবে বা সমমানের হবে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। শত হলেই এগুল ফ্রি। তবুও যদি আমার কাজ চলে যায়, চুরি কেন করব। আমরা দরিদ্র দেশের দরিদ্র নাগরিক হতে পারি, কিন্তু চোর নই।

যারা এই পোস্টটি এতক্ষন ধরে পড়লেন, আশা করছি না তারা সবাই ওপেনসোর্স আর ফ্রি সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করবেন। কিন্তু একজনও যদি করেন তাহলে এই লেখা সার্থক হবে। কেউ না করলেও আমি শুরু করতে পারি। আমি আর আমার মত অনেকে মিলেই তো আমরা!

Level 1

আমি নাসিমুল ইসলাম। Ownar, Lsn Nasim, Khulan। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস