ইলন মাস্ক, যিনি বর্তমান প্রযুক্তি জগতের অন্যতম মহাপুরুষ। এবং পৃথিবীকে প্রযুক্তির চাদরে মোড়ানোর ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছেন। সময়ের সেরা দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এ ব্যক্তিটির হাতে মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেস এক্স, বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসহ নানান যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি নানাভাবে পৃথিবীতে পরিচিত। অর্থ্যাৎ পৃথিবীর সাধারণ মানুষ থেকে গণ্যমান্য বিজ্ঞানী পর্যন্ত তাকে নিয়ে ভাবে, আবার সমালোচনাও করে। মূলত ইলন মাস্কের মতো পৃথিবী জোড়া খ্যাতি অর্জনকারী ব্যক্তিদের ইতিবাচক - নেতিবাচক দুটো দিকই থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে টুইটার ক্রয় ও নানান নীতিমালা প্রণয়নে ইলন মাস্ক সবচাইতে বেশী সমালোচিত হয়েছেন।
তবে এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তার এত এত আলোচনা - সমালোচনার মধ্যে তার একান্ত নিজস্ব কিছু ওয়ার্ল্ডভিউ বা দৃষ্টিভঙ্গি আছে যেগুলো অবাক করে দিবে আপনাকে। হয়তো এর থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনে তা মেনে চলার মাধ্যমে আপনিও হিয়ে উঠতে পারেন আপনার জগতের ইলন মাস্ক।
তাই, আর দেরী না করে শুরু করা যাক এই প্রযুক্তি সম্রাটের জীবনের প্রতি তার ব্যক্তিগত কিছু দৃষ্টিভঙ্গিঃ
১। পড়াশোনা করার পাশাপাশি প্রচুর বই পড়াঃ
শুনলে হয়তো মনে হতে পারে একজন ব্যবসায়ীর তো শুধু হিসাব-নিকাশ করার সাধারণ ধারণাটা থাকলেই তো হলো। কিন্তু তা পুরোটা ভুল ধারণা। আপনি ইলন মাস্ক বা মার্ক জাকারবার্গদের মতো ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলে দেখবেন তারা প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন বই পড়ার মাধ্যমে। ইলন মাস্ক মাত্র ৯ বছর বয়সে পুরো “ Encyclopedia Britannica” পড়ে শেষ করেছিলেন। তিনি প্রায় পুরো দিনের ১০ ঘন্টা ব্যয় করতেন নানান বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়ে। এছাড়া তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে মহাকাশ সসম্পর্কিত নানান বইয়ের সমারোহ আছে।
২। পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই কাজে নামাঃ
স্পেসএক্স, টেসলা থেকে শুরু করে নিউরালিংক আর বোরিং কোম্পানিসহ নানান বাঘা বাঘা কোম্পানির মালিক ইলন মাস্ক কিন্তু আন্দাজে কোথাও ইনভেস্ট করেননা। তিনি কোনো একটা ফিল্ডে নামার আগে ঐ ফিল্ড সম্পর্কে পুরোপুরি গবেষণালব্ধ প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ এবং এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন। উদাহরণস্বরূপ, যখন তিনি মহাকাশ ও অ্যারোনেটিক্সের জগতে আসেন তখন অনেক গবেষক সমালোচনা করে বলেছিলেন, তিনি শখের বসে করছেন এবং বেশিদূর এগুতে পারবেনা। কিন্তু তিনি তাদের সমালোচনার মোক্ষম জবাব দিয়েছিলেন পৃথিবীর প্রথম প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে সফলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে মহাকাশে উড্ডয়ন আর অবতরণের মাধ্যমে। এছাড়া তিনি প্রথম প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূনর্ব্যবহার করা যায় এমন রকেট উড্ডয়ন করেন যেটি ফ্যাল্কন-৯ হিসেবে পরিচিত।
৩। ব্যর্থতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়াঃ
ব্যর্থতা মানুষের জীবনে সাফল্যের অন্যতম সিঁড়ি। তবে এই বাক্যটি বইয়ে ভালো মানালেও অধিকাংশ মানুষ তা মেনে নিতে পারেনা বাস্তব জীবনে। কিন্তু পৃথিবীর যে ক্ষুদ্র একটি অংশ ব্যর্থতাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে এগিয়ে চলে আপন গতিতে তারাই হয়ে উঠে সফলতার উপমা। ইলন মাস্ক এসমস্ত মানুষের মধ্যে একজন। একবার যুক্তরাষ্ট্রের এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেন
“:আপনি যখন পরপর তিনবার ব্যর্থ হলেন, হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা মাথায় আসেনি?
: কখনো না।
: কেন?
: আমি কখনোই হার মানিনি। মৃত্যু এলে বা একেবারে অক্ষম হলে তবেই আমি হার মানব। ”
৪। প্রচারের আগে পণ্যের মান ভালো করাঃ
আজ কালকার যুগের ব্যবসায়ী ও বড় বড় উদ্যোক্তাসহ প্রায় সবাই কোনোকিছু উদ্ভাবনের পরপরই প্রচার কাজে নেমে পড়ে। এর পেছনে হাজার হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করতে দ্বিধাবোধ করেনা। কিন্তু এক্ষেত্রে পণ্যের মান ভালো না রেখে শুধু ক্যাম্পেইনিং এ মনোযোগ দেওয়া কোম্পানিগুলো বেশিদূর এগুতে পারেনা। ঠিক তা উল্টোদিকে ইলন মাস্কের মতো আইটি উদ্যোক্তারা আগে পণ্যের মান ও এর প্রতি ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি পরিপূর্ণভাবে গবেষণা করে মার্কেটপ্লেসে ছাড়েন। যার ফলস্বরূপ, তারা তেমন সাফল্যও পান। টেসলা সম্পর্কে মাস্ক বলেছিলেন যে তিনি কখনও বিজ্ঞাপণের জন্যে অতটা টাকা খরচ করেনি যতটা না পণ্যের উন্নয়নে করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান দ্বিধায় পড়ে যায়। তারা এমন সব খাতে টাকা ব্যয় করে, যেগুলো তাদের উৎপাদনকে উন্নত করে না। ’
এখন আইটি সেক্টরের এমন ব্যক্তির শুধু পার্সোনালিটিকে ফলো করবেন নাকি তাঁর ব্যক্তিগত মনোভাব থেকে শিক্ষা নিবেন এটা আপনার একান্তই ব্যাপার।
আমি মাঈনুল ইসলাম শাফিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ডায়েরিতে যা ইচ্ছে লিখি।