সামুদ্রিক কল্পকাহিনী : ওটা কী ছিল?

যারা অফ লাইন এ পরতে চান তারা সম্পূর্ণ গল্পটি

এখান

থেকে ডাউনলোড করে নিন।

ব্যক্তিগত জীবনে আমি লেখালেখিতে কখনই অভ্যস্ত ছিলাম না। বয়স তো কম হলো না। এ পযর্ন্ত জীবনে কোন কবিতা কিংবা ছোট গল্প লিখেছি কিনা মনে পড়ে না। তারপরেও লিখতে বসলাম কারন না লিখে যাওয়াটা অন্যায় মনে হচ্ছে বা হবে আমার জন্য। তবে ইদানিং লিখার চেষ্টা করছি।  হয়তো ঘটনাটা অনেক রাঙিয়ে বর্ণনা করতে পারবো না, যেটা সাধারনত প্রফেশনাল লেখকদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে এতটুকু বলতে পারি যে, ঘটনাটি আপনাদের ভালো লাগবে। আমার জানা কোন তথ্যই বাদ পড়বে না এতে। তারমানে হচ্ছে এই যে, ব্যাপারটি সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি ঠিক ততটুকুই জানাব আপনাদের।

যাক অনেক বলে ফেললাম। এখন আমার পরিচয় দেয়া যাক। ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন ব্যবসায়ী। দেশ থেকে বিদেশে বা বিদেশ থেকে দেশে আমার আমদানী-রপ্তানীর ব্যবসা রয়েছে। আমার বাড়ি নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে। তবে আমার জন্ম হয়েছে লস এঞ্জেলসে। হয়তে প্রশ্ন করতে পারেন মহাসাগরের এক তীর থেকে অন্য তীরে কেন এলাম? তাহলে বলে রাখি এক প্রকার ব্যবসা বা জীবন বাঁচানোর তাগিদেই ম্যানহাটনে আসা। আমার বাবা ছিলেন একজন কোস্টগার্ড। তাই অধিকাংশ সময়েই তিনি সমুদ্রে কাটাতেন। আমার রক্তেও তাই সমুদ্রের লোনা গন্ধ ঢুকে পড়েছিল। তবে জীবনের অর্ধেকটা সময় পযর্ন্ত সমুদ্রের দেখা তেমন পাইনি। আমার স্ত্রী নিউজিল্যান্ড-ভারতীয় বংশদ্ভূত। আমি লস এঞ্জেলসে আর ও নিউজিল্যান্ডের- যাক সে অন্য কাহিনী। আমার দুটো ছেলে একটি মেয়ে। ছেলে দুটো বড়, মেয়েটি ছোট।

বয়স তখন আনুমানিক পয়ত্রিশ। দেহে তখনও যৌবনের ভাটা পড়েনি। একবার এক বিকেলে বারান্দায় বসে পাইপ টানছিলাম আর রাস্তা দিয়ে লোকজনের আসা যাওয়া দেখছিলাম। এমন সময় আমার এক পুরোনো বন্ধুর আগমন ঘটল। আমরা এক সাথে স্কুলে পড়তাম।ওর বাবা আমার বাবার বন্ধু ছিল। তিনি ছিলেন একটি তিমি শিকারী জাহাজের নাবিক। আমার বন্ধুটি ওর বাবার পদাঙ্ক অনুসরন করেছে। প্রায় আট বৎসর পর ওর সাথে দেখা। বন্ধুকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরলাম।

আমার যদি চোখ ঠিক থেকে থাকে তাহলে এ্যাডমন্ড তুই এখন আমার সামনে দাড়িয়ে আছিস, আমি বললাম।

তুই নির্ভূল বলেছিস, জোসেফ বুড়ো খোকা।

ওহ্, ভাবতেই পারিছিনা, এ্যাডমন্ড, আজ এই বিকেলে তুই, সেরা একজন নাবিক, যে কিনা নাওয়া খাওয়া ভূলে সারাক্ষন তিমি নামক উজবুক আর বিশাল মাছের পেছনে ধাওয়া করে, এখানে আমার সামনে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছিস!

বিশ্বাস কর, জোসেফ, আমি এই তিমি শিকারী বুড়ো এ্যাডমন্ড, তোর সামনে বসে আছি, বিশ্বাস না হলে আমার চেয়ারটা লাথি মেরে একবার ফেলে দিয়ে দেখ।

পাঠক আমি আগেই বলেছি, এ্যাডমন্ড আমার বাল্যবন্ধু। তাই আমাদের মধ্যে এ রকম হেয়ালীপূর্ণ কথাবার্তা হর-হামেশাই হত। দুষ্টুমিতেও ছিলাম আমরা এলাকার সেরা। এক কথায় চরম ডানপিঠে।একদা দুজন মিলে একটি সওদাগরী জাহাজ ডুবিয়েই দিয়েছিলাম তার তলা ফাঁক করে দিয়ে। যাক অনেকদিন পর বন্ধুকে দেখে সেই হেয়ালীপূর্ণ ধরন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।

তারপর কি মনে করে এই নিবোর্ধ বন্ধুর কাছে আজ তোর আগমন, আমি জিজ্ঞেস করলাম।

দেখ জোসেফ পলিন, তুই যদি তোর বাবা মি. গুস্তাভ পলিনের মত হয়ে থাকিস আর আমি যদি ভাবি এই ছুটিতে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দেব তাহলে কি ভূল করেছি বলে তুই বলতে চাস?

ওহ্, আমি কি গর্দভ! তু্ই একদম ঠিক চিন্তাই করেছিস মহান নাবিক মি. পল এ্যাডমন্ডের যোগ্য পুত্র এ্যাডমন্ড হল।

নে নে হয়েছে এবার থামা, হাসতে হাসতে এ্যাডমন্ড বলল।

ঠিক আছে ঠিক আছে, তাহলে এখন বল তোর ওদিকটার খবর কি? আমি জানতে চাইলাম।

কোন দিকটা, পরিবার নাকি জাহাজের খবর?

তোর পরিবার? যতদূর জানি আঙ্কেল গত হয়েছেন তিন বৎসর আগে আর আন্ট জেনেলিনা এখন থাকেন লস এঞ্জেলসে, এছাড়া আর কেই বা আছে তোর পরিবারে, তোর মত হার্ড মাইন্ডেড লোকের কাছে কোন মেয়ে আসবে জীবন নিরামিষ করতে?

দারুন একটা উক্তি করেছিস দোস্ত, আমি এখনও বিয়ে করিনি, আর মা’ও গত হয়েছেন দুমাস হল, তোকে ব্যাপারটা জানাতে পারিনি বলে দু:খিত। তবে এখন ভাবছি বিয়ে করব, আমি ছাড়া তো কেউ নেই, বংশের ধারা তো রক্ষা করতে হবে, কি বলিস?

তা যা বলেছিস, আমি বললাম, তা কোন এলাকার মেয়ে তোর পছন্দের তালিকায় পড়ে?

গতকাল রাতে এখানকার এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে, হোটেলে, মেয়ের বাবা হোটেলে চাকুরি করে, হোটেলের খাবারে ভদ্রলোকের এ্যালার্জি হয় যার কারতে প্রতিদিন মেয়েটিই হোমমেইড খাবার দিয়ে যায় বাবাকে, একদমে কথাগুলো বলল এ্যাডমন্ড।

কোন হোটেল বলতো? এখানে মানে এই ম্যানহাটনে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

আরে না, হোটেলটা নানটুকেটে। তুই তো জানিস ওটাই আমাদের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত। তাহলে তো, আমি বললাম, কাল একবার নানটুকেট যেতে হয়।

পাঠক নানটুকেট হচ্ছে একটা দ্বীপ। যেটা ম্যাসাচুসেটস উপকূলের একটা দ্বীপ। এখানে এসেই নোঙ্গর করে সকল তিমি শিকারী জাহাজগুলো।

আমি এ্যাডমন্ডকে আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বাচ্চারা এমনিতেই এ্যাডমন্ডের নামের সাথে ও চরিত্রটির ব্যাপারে আগে থেকেই জানত। কারন আমি এ্যাডমন্ড ও আমার ছোটবেলার অনেক গল্প শুনিয়েছি তাদের। তাই এ্যাডমন্ডকে ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই ওরা হইচই করে উঠল এবং তখনই ঠিক হয়ে গেল এ্যাডমন্ড আজ রাতে বাচ্চাদের সাথে ঘুমুবে আর কাল ভোরে উঠে আমরা সবাই যাব নানটুকেট।

পরদিন বিকেল নাগাদ আমরা পৌছে গেলাম নানটুকেট। এ্যাডমন্ড যে হোটেলটির কথা বলেছিল সেটি আসলে একটি সরাইখানা। আর তা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। বলতে গেলে জেটি থেকে অনেক দূরেই। প্রথম দর্শনেই সরাইখানাটি আমার অপছন্দ হয়ে গেল। সরাইখানার প্রবেশমুখটি একটি গুহার আদলে তৈরী। শুরকি ও রং মিশিয়ে একেবারে গুহামুখের মতই করেছিল এককালে। কিন্তু এখন জায়গায় জায়গায় আস্তর খসে পড়েছে। দেখলে মনে হয় বহু প্রাচীন একটি গুহামুখ, আর তাতে অনেকদিন কেউ যাতায়াত করেনি। নামটিও গুহামুখের সাথে খাপ খাইয়ে রাখা হয়েছে “দ্য কেভ অব হ্যাভেন”। এ ধরনের একটি সরাইখানার মধ্যে “হ্যাভেন” পেল কোথায় তা আমি ভেবে পেলাম না। এক ‘হেভেন’ না বলে বলা উচিত ‘অড’। কত রকম মানুষের বাস এ পৃথিবীতে আর তাদের বুদ্ধিতেও ভিন্নতা আছে। আর মিল নেই তাদের রুচিতেও। যাই হোক আমরা “দ্য কেভ অব হ্যাভেন” নামক সরাইখানাটির ভেতরে প্রবেশ করলাম। আর সাথে সাথেই দেখতে পেলাম বাহিরের মতই সরাইখানার ভেতরেও গুহার আদলে তৈরী হয়েছে। ঠিক বুঝলাম না, সরাইমালিকের গুহা এত পছন্দ কেন?

রিসিপশনে একজন মহিলা বসা। গায়ের রং কালো, হোৎকা টাইপের দৈহিক গড়ন, কোকড়ানো চুলগুলো পেছন দিকে বেণী করা। বয়স মাঝারী ধরনের। চোখ দুটোতে উজ্জল দৃষ্টি ঠিকরে পড়ছে। দেখলেই বোঝা যায় এ মহিলা ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে এবং মাথায় অনেক বুদ্ধি ধরে। জানা গেল ইনি হচ্ছেন বারমেড। বারটেন্ডারের অনুপস্থিতিতে ইনি সরাইখানার দেখাশুনা করেন। বারটেন্ডার কি একটা কাজে বাইরে বেরিয়েছে, আসবে ঘন্টা দুয়েক পর। আমরা আজ রাতে থাকার জন্য দুটি কামরা রিজার্ভ করলাম। এ্যাডমন্ড যে মেয়েটির কথা বলেছিল সে এল আমরা পৌঁছার ঘন্টা তিনেক পর। অনেক কথা হল তার সাথে, তার বাবার সাথে। ভদ্রলোকের নাম মি. জোহান বাক্নার। চেহারা ও আচার ব্যবহার মোটামুটি ভালোই।। আমাদের সকলেরই পছন্দ হল। বাচ্চারা তো বলতে গেলে একেবারে মজে গেল। ভদ্রলোকের বাচন ভঙ্গিও চমৎকার। জানা গেল, এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম মি. জোহানের। নিজের অবস্থাও ভালো ছিল। যুবক অবস্থায় তিমি শিকারী জাহাজের বাবুর্চি ছিলেন। ভালই আয় করেছিলেন। বছর বিশেক কাজ করার পর হাতে কিছু পয়সা জমে। আর তা দিয়ে একটুকরো জমি কিনে তাতে সবজি বাগান করেন মি. জোহান। সবজি বাগানের পরিচযা করত মিসেস. জোহান এবং এঞ্জেলা। কিন্তু বিধি বাম। একবার এক জলোচ্ছাসে সব ধ্বংস হয়ে যায়। মিসেস. জোহান মারা যান। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মি. জোহাস পড়েন বিপাকে। তিনি চাকরি নেন এই সরাইখানায়। আর মেয়ের নিজের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাটা সমাপ্ত করে এখন একটা প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষিকার কাজ করে। বাপ মেয়ের সংসারে এখন মোটামুটি আয় হচ্ছে ভালই। অচিরেই নিজেরা একটা সরাইখানা দেয়ার ধান্ধায় আছেন। যাক বোঝা গেল ভদ্রলোক ও তার মেয়ে একদম ফ্রী। এ্যাডমন্ড তো খুশিতে একদম গদগদ হয়ে আছে। সে একটু পরপর আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর ইশারা করে বলছে “কিরে কেমন বুঝলি?”- আমিও ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম “পরে বলব-একটু ধৈয্য ধর।“ অবশেষে এঞ্জেলা বিদায় নিল। আমরা জমায়েত হলাম আমাদের কামরায়। আমি ঠিক করেছি আমি আর সারাহ (আমার স্ত্রী) ঘুমাব এক রুমে আর বাচ্চারা ও এ্যাডমন্ড ঘুমাবে আরেক রুমে। তারপর আমি বললাম, এ্যাডমন্ড কেমন হল?

কি হল? এ্যাডমন্ডের বিস্ময়সূচক জিজ্ঞাসা।

না মানে কেমন দেখলি, কি বুঝলি?

কি বুঝলাম মানে? আরে বুঝবি আর দেখবি তো তুই আর ভাবি। তোদের নিয়ে এলামতো  সে জন্যই।

আর বাচ্চারা, আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেমন মনে হল তোমাদের নতুন আন্টিকে?

দারুন, চমৎকার, বাচ্চারা হইচই করে উঠল।

তাহলে তো হলই, আমি বললাম।

তাহলে তো হলই, মানে? তুই কি ফিট বলতে চাচ্ছিস, এ্যাডমন্ডের জিজ্ঞাসা।

আহা, এ্যাডমন্ড ব্রো, আপনি কি এখনও আমাদের মতামত বুঝতে পারেন নি, আপনি বরং মি. বাক্নার এর সাথে কথা বলুন বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করার ব্যাপারে, তুমি কি বল? সারাহ সাপোর্টের আশায় আমার দিকে তাকাল।

তুমি ঠিকই বলেছ, হানি। আমিও ঠিক একই কথা বলতে চাচ্ছিলাম।

তাহলে, এ্যাডমন্ড বলল, আমরা কাল দুপুর নাগাদ সব কথা পাকা করে ফেলছি, তারপর আর কি, হ্যা হ্যা।

হ্যা হ্যা আমিও ওর হাসির প্রত্যুত্তর দিলাম। আমাদের হাসি সংক্রামিত হল সকলের মুখে।

পরদিন দুপুরের দিকে এ্যাডমন্ড সব কিছু ঠিক ঠাক করে ফেলল। ঠিক হল আগামী সপ্তাহে রোববার স্টার সানডের বিশেষ দিনে বিয়ে হবে ম্যানহাটনে, আমাদের বাড়ীতে কাছের গির্জায়। আমরা সেদিনই ম্যানহাটনে ফিরলাম। নির্দিষ্ট সময়ই বিয়ে হয়ে গেল এ্যাডমন্ড আর এঞ্জেলার। ওদের হানিমুনও হল আমাদের বাড়িতেই। বিয়ের দু’সপ্তাহের মাথায় নানটুকেট থেকে খবর এল এ্যাডমন্ডকে সেখানে যেতে হবে, জরুরী তলব। ঐদিনই এ্যাডমন্ড নানটুকেট গেল। এঞ্জেলা রইল আমাদের কাছে। ঐ দিনটি এ্যাডমন্ড নানটুকেট থেকে গেল। পরদিন দুপুরের দিকে ফিরল ম্যানহাটনে।ও ফিরতেই ওর চোখমুখে উত্তেজনা লক্ষ্য করলাম। বুঝলাম শীঘ্রই সমুদ্রে ফিরবে ও। কেন আমার এ রকম ধারনা হল তা আজও আমি বলতে পারব না।

অনেকটা প্রাকৃতিক খেয়ালেই বা টেলিপ্যাথির জোড়েই হয়ত আমার এ রকম ধারনা হয়েছিল এবং ধারনা সত্যি হয়েছিল। কিছুটা সুস্থির হওয়ার পর সেদিন এ্যাডমন্ড আমার সাথে বারান্দায় এসে বসল।

তারপর, আমি বললাম, কেন গিয়েছিলি নানটুকেট?

আর বলিস না, এ্যাডমন্ড বলতে লাগল, ক্যাপ্টেন খবর দিয়েছিলেন। বাহক এসে বলল জাহাজে জরুরী ডাক পড়েছে, তা তো তুই শুনেছিস।

তা কি খবর, সব ঠিক আছে তো? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

হ্যা, সবকিছুই ঠিক আছে, তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই আবার সমুদ্রে ফিরতে হবে, এ্যাডমন্ড বলল।

কেন, তুই তো ছুটি এনেছিলি, আমার জিজ্ঞাসা।

তা ঠিক, তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী এমনকি রাষ্ট্রপতির আদেশ তো ফেলনার নয়, কি বলিস? এ্যাডমন্ড টিটকারির সুরে বলল আমাকে।

কি বলতে চাস তুই, ঠিক ভাবে বলতো, আমি বিরক্ত হয়ে বললাম।

চরম একটা খবর বন্ধু, এ্যাডমন্ড বলতে শুরু করল, নানটুকেট গিয়ে দেখি আমাদের জাহাজটি জেটিতে নোঙর করে আছে। ক্যাপ্টেন স্যার ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে জাহাজের ডেকে বসে আছেন। তাকে ঘীরে দাড়িয়েছে আমাদের জাহাজের প্রায় সকল কর্মচারীগন। আমিও গেলাম। আমাদের জাহাজের থার্ডমেট মি. ট্রিমিন সয়েল আমাকে একটা চেয়ার টেনে বসতে বললেন। ক্যাপ্টেন আমাকে স্বাগত জানালেন। আমিও তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম এবং প্রত্যেকের সাথে হ্যান্ডশেক করলাম।

সবাই কি এসে পড়েছে? ক্যাপ্টেন জিজ্ঞেস করলেন সহকারী ক্যাপ্টেন মি. জোহান সুইটকে।

না স্যার, একজন বাকি আছে, মি. বিলি মেন আসেন নি।

মি. বিলি মেন হচ্ছেন জাহাজের প্রধান চার হারপুনারদের মধ্যে একজন।

ঐ তো স্যার উনি এসে পড়েছেন, চিৎকার করে উঠল মি. সুইট।

হ্যা, এবার শুরু করা যাক, ক্যাপ্টেন বললেন অবশেষে। আমার কাছে চিঠিটি পৌঁছেছে গত চারদিন আগে। চিঠিটি পাঠিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মি. বার্ক এন্ডারসন। চিঠিটি আপনাদের আমি সম্পূর্ণ পড়ে শোনাচ্ছি, এই বলে মি. কেট বন্ড, আমাদের জাহাজের ক্যাপ্টেন, চিঠিটি পড়তে লাগলেন।

প্রিয় মি. কেট বন্ড, এই জেনে আমি গবির্ত যে, আপনার মত একজন ক্যাপ্টেন আছেন যিনি অসাধ্য সাধন করতে পারেন। আমি আপনার জাহাজ, আপনার নিজের এবং আপনার ক্রুদের প্রশংসা শুনেছি। আপনারা দেশের অর্থনীতির সামুদ্রিক খাতে যা দিয়েছেন তা আজ আর আমি বিস্তারিত বর্ণনা করতে চাইনা। আপনাদের জাহাজের মালিক মি. আরনল্ড হলম্যান এর কাছে অনেকবার প্রশংসা ও ধন্যবাদ পত্র পাঠিয়েছি। তিনিও তার জাহাজের সকল ক্রুদের প্রশংসা করেছেন। যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক। আপনি হয়ত শুনে থাকবেন যে, গত দুই সপ্তাহ আগে আমাদের মহাকাশ টেলিস্কোপে নানটুকেটের অধূরে সাগরে একটি অদ্ভুত প্রানীর দেখা পাওয়া গেছে। প্রানীটি দেখতে নীল তিমির মত বড়। আমরা সকলেই জানি নীল তিমির লেজ হোমোসার্কাল অথচ সেই প্রানীটির লেজ হেটারোসার্কাল। প্রানীটির মুখ দেখতে ডলফিনের মত এবং সমস্ত দেহ আঁইশে আবৃত। প্রানীটি তিমির মত পানির ফোয়ারা সৃষ্টি করতে পারে। দেহে পাখনা আছে এবং তা দেখতে হুবহু হাঙরের মত। পিঠের দিকের রঙ ধূসর এবং পেট সাদা। প্রায় দুই মিনিটের জন্য প্রানীটি সারফেসে উঠেছিল যার ফলে টেলিস্কোপ এত কিছু সনাক্ত করতে পেরেছে। আশ্চযের ব্যাপার হচ্ছে ঐ দিনের পর একে আর কোথাও দেখা যায়নি। মি. বন্ড বুঝতেই পারছেন এ রকম অদ্ভুত প্রানীর ব্যাপারে দেশের বৈজ্ঞানিক নামের ইতিহাসে নতুন একটি নামের যোগ হবে। হবে গবেষনা। হয়ত এর থেকে প্রকাশ পাবে নতুন কোন বিবর্তনের তথ্য, হয়ত পাওয়া যাবে অমূল্য ঔষধ কে বলতে পারে সে কথা?

মি. বন্ড আমি আপনার সুনামের পরিপ্রেক্ষিতে এতটুকু অনুরোধ করতে পারি, আপনি যদি প্রানীটি ধরা বা খোঁজার ব্যাপারে আমাদের নেভিকে কোনরূপ সাহায্য করতে পারেন তাহলে কৃতার্থ হব। এর জন্য অবশ্য সরকার আপনাকে যথাযথ সম্মানিত করবে। যদি আপনি সম্মত হন তাহলে আগামী সাত দিনের মধ্যে আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

এতটুকু পড়ে মি. বন্ড থামলেন। বললেন নীচে মি. বার্ক এন্ডারসনের সাইন ও সিল রয়েছে। এরপর তিনি আমাদের সকলের দিকে একবার করে চোখ বুলালেন্ এরপর জাহাজের ফার্স্টমেট মি. সলোমন করিমের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি বুঝলেন মি. করিম, এখন আমাদের কি করা উচিত?

একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মি. সলোমন আমাদের জাহাজের সবচেয়ে সাহসী ব্যাক্তি, বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারেও তার কোন জুড়ি নেই। তিনি সাথে সাথে বললেন, মি. এন্ডারসনকে আপনার সম্মতি জানিয়ে দেয়া উচিৎ স্যার। ভদ্রলোক আপনার উপর ভরসা করে আছেন। কোন চিন্তা করবেন না, আমরা প্রানীটিকে খুজে বের করব ইনশাআল্লাহ, তবে ধরতে পারব কিনা তা বলতে পারছি না, কারন প্রানীটির গতিবিধি আমাদের কাছে অজানা এবং কতটুকু আক্রমনাত্মক সেটাও।

মি. করিম কোন কথাকে জোর দিয়ে বোঝানোর জন্য উপরোক্ত “ইনশাআল্লাহ” শব্দটি প্রয়োগ করেন এবং আমি দেখেছি উনি কোন কাজ করার আগে এই শব্দটি ব্যবহার করলে তিনি সেই কাজে সফলতা পান। এটা প্রমানিত, যার চাক্ষুস সাক্ষী আমি।

যাই হোক মি. বন্ড বললেন, একেবারে আমার মনের কথাগুলোই বলেছেন মি. করিম। আপনার সদিচ্ছার প্রশংসা করতেই হয়, আমার মনে হয় অন্য সকলেই আমাদের সাথে সম্মতি জ্ঞাপন করবেন, কি বলেন সবাই?

আমরা সবাই একে একে সম্মতি জানালাম তবে জাহাজের থার্ডমেট মি. ট্রিমিন সয়েল বললেন, আমাদের আরও তথ্য নেয়া উচিত প্রানীটির ব্যাপারে, ঠিক কোথায় দেখা গেছে এবং একে জীবিত না মৃত অবস্থায় ধরতে হবে এসব ব্যাপার যা চিঠিতে উল্লেখ নেই। আপনি ঠিকই বলেছেন মি. সয়েল, আমার মনে হয় প্রানীটিকে জীবিত ধরতে বলা হবে, তবে কেন আমার এমন মনে হচ্ছে তা বলতে পারছি না, মি. বন্ড বললেন।

এরপর আরও কিছুক্ষন আলোচনার পর আমরা সবাই যে যার স্থানে ফিরে এলাম। আমাদের সবাইকে যেতে হবে আগামী সপ্তাহের সোমবারে। একেবারে প্রস্তুতি নিয়ে। এই হচ্ছে ঘটনা।

হু, শুনলাম, নিশ্চয়ই খুব এ্যাডভেঞ্চার হবে, তা তোদের জাহাজের সাথে নেভির কোন জাহাজ থাকবে নাকি? আমার জিজ্ঞাসা।

হ্যা, এ রকমই অনেকটা ইঙ্গিত রয়েছে চিঠিতে, তবে আমি শিওর না।

তোর কি মনে হয়, এ ধরনের প্রানী কি সত্যিই আছে নাকি? আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।

থাকাটা অসম্ভবতো নয়ই, বরং সম্ভব। তার কারন এখন পযর্ন্ত হাজার হাজার প্রজাতির প্রানীর অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারে নি। তাছাড়া মিউটেশন, জিন-ডিএনএ-আরএনএ এ সবের দৈনন্দিন পরিবর্তনের ফলে জীব গঠনে যে রকম বৈচিত্র্য ঘটছে তাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়, এ্যাডমন্ড বলল।

হ্যা তোর কথায় যুক্তি রয়েছে, তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস, পরিবেশ দূষনের ফলে প্রানীদেহে নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, যার ফলে দেহে অনাকাঙ্খিত কোষের সংখ্যা বাড়ছে, এতে করে জীনের পরিবর্তন ঘটাটা অস্বাভাবিক নয়। মানুষের উচ্চতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, রোগ-রালাই প্রতিনিয়ত দেহের সঙ্গী হচ্ছে। জন্মগতভাবে অনেক শিশু প্রতিবন্ধি হয়ে জন্মগ্রহন করছে, আমার মনে হচ্ছে এগুলো সবই ঘটছে পরিবেশ দূষনের ফলে, তোর কি মত?

জোসেফ, আমি তোর সাথে একমত। আসলে এসব কিছুর জন্য মানব জাতিই দায়ী। যাকে বলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।

আচ্ছা বাদ দে এসব আলোচনা, আমি বললাম, বয়সতো অনেক হল, জীবনে এখন পযর্ন্ত তেমন কোন এ্যাডভেঞ্চার হল না, কোন আনন্দও এল না, সমস্ত জীবন কাটিয়ে দিলাম শুধু ব্যবসার পেছনে। এখন আসল ব্যাপার হচ্ছে আমি তোর সঙ্গে জাহাজে যেতে চাই, নাবিকদের জীবন, সমুদ্রের প্রকৃতি আমি জানতে চাই।

কি বলছিস তুই, পাগল হয়ে গেছিস নাকি, তোর প্রানের চেয়েও প্রিয় ব্যবসা ছেড়ে তুই যেতে চাচ্ছিস এমন জীবনে যেখানে আছে আছে পযার্প্ত খাবার-না আছে কোন মেয়ে সঙ্গী, হ্যা তবে এটা ঠিক যে ওখানে আনন্দ আছে, সহকর্মীদের সাথে মজা করার যথেষ্ঠ সময় পাওয়া যায়, প্রায় একদমে কথাগুলো বলল এ্যাডমন্ড।

আমি বললাম, ব্যবসার কথা বলছিস, সে তো আমি একজনকে দায়িত্ব দিয়েই যাচ্ছি, আর সারা জীবন টাকার পেছনে ছোটার কোন অর্থ হয় না, জীবনটা উপভোগ্য, তাই শেষ জীবনটা আনন্দ ও এ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে কাটাতে চাই। আর তাছাড়া এটাও তো একটা অভিজ্ঞতা, তাই তো জানিস ছোটকাল থেকেই আমি অভিজ্ঞতার পেছনে ছুটেছি হন্যে হয়ে। বিভিন্ন দেশ ঘুরেছি শুধুমাত্র ব্যবসার তাগিদে নয়, অভিজ্ঞতার তাগিদেও। ও হ্যা তোকে বলাই হয়নি, আমি একটি বই লিখছি আমার সকল অভিজ্ঞতা নিয়ে, ভাবছি তোর সাথে  সমুদ্র ভ্রমন করে এসেই শেষ করব এর কাজ।

বই লিখছিস? এ্যাডমন্ডের দৃষ্টিতে কৌতুহল; ইন্টারেস্টিং তো, তা কি নাম তোর বইয়ের?

বইয়ের নাম হচ্ছে, আমি বললাম, “ওয়ার্ল্ড-আ হাউজ অফ এক্সপেরিয়েন্স।“

জটিল একটি নাম ঠিক করেছিস, একেবারে ইউনিক। নিশ্চয়ই তুই এর সিক্যুয়েল বের করবি?

ধীরে বন্ধু ধীরে, আমি বললাম, প্রথমটিই তো এখনও বের হল না, সিক্যুয়েল তো পরের কথা, হ্যা তবে এ রকমই ইচ্ছা আছে, পৃথিবীটাতো ক্ষুদ্র নয়। এসব কথা থাক এখন, বরং কাজের কথা বল, বল তুই আমাকে নিচ্ছিস কিনা?

তোকে না নিয়ে কি আর আমি পারি, তারপরও বলছি, তুই অনভিজ্ঞ আর তাছাড়া সমুদ্রে কত রকম দূর্ঘটনা ঘটে, এমনও দিন দেছে পেটে কিছু পড়েনি দিনরাত হাড়বাঙ্গা পরি‌শ্রম করতে হয়েছে, হাঙ্গরের মুখ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে, তিমির সাথে লড়াই, নৌকা উল্টানো, সব মিলিয়ে আমাদের জীবনের কোন সিকিউরিটি নেই। এখন তুই ঠিক কর যাবি কিনা?

আমি বুঝেছি বন্ধু, তারপরও  আমি যেতে চাই, রক্তের টানেই যাব কারন বাবার রক্ততো আমার দেহে বইছে।

বুঝেছি বুঝেছি আর বলতে হবে না-তোকে আর কোনভাবেই আমি আটকাতে পারব না। ঠিক আছে তাহলে আগামী সোমবারের জন্য তৈরী থাক। কিছু জিনিস কিনতে হবে সেটা আমি লিখে দেব আর সবার আগে প্রয়োজন ভাবীর অনুমোদন, সেটা পাওয়া গেলে আমি মনে করি আর কোন বিপদ নেই।

আমি বললাম, আমার কথার উপর এই ঘরের কেউ কখনও কথা বলেনি, আশা করি এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না, তুই নিশ্চিত থাকতে পারিস, তোর ভাবি অনুমোদন দেবে। ঝামেলা হচ্ছে বাচ্চাদের নিয়ে। ওদেরও অবশ্য ম্যানেজ করতে পারব। সুতরাং এভরিথিং উইলবি ওকে।

আমরা এখন জাহাজে। গতকাল রোববার এ্যাডমন্ডের কথা মোতাবেক সকল জিনিসপত্র কিনেছি, যেমন : স্লিপিং ব্যাগ, রেসকিউ ব্যাগ, একটি ফার্স্ট এইড কিট বক্স সঙ্গে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র, একটি রাবার ব্যাগ ইত্যাদি।

এরমধ্যে সবাই এসে পড়েছে। প্রথমেই আমরা দেখা করলাম জাহাজের ক্যাপ্টেন মি. কেট বন্ডের সাথে। ভদ্রলোকের অমায়িক ব্যবহার আমাকে অবাক করল। আমি শুনেছিলাম জাহাজের ক্যাপ্টেনরা তাদের কর্কষ ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত, আর এখানে দেখছি তার উল্টো।

এ্যাডমন্ড আমার কথা ওনাকে বলতেই উনি রাজি হয়ে গেলেন তবে প্রথমে আমাকে এ্যাডমন্ডের মত বিপদের কথা শোনালেন, যখন দেখলেন যে আমি অটল তখন আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, মি. পলিন আপনার মত একজন সাহসী লোককে জাহাজে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত, আমি নিশ্চিত আপনি অনেক সুনাম অর্জন করবেন।

আমি ওনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানালাম।

এরপর আমি একে একে পরিচিত হলাম জাহাজের সকলের সাথে। এরা হলেন, সহকারী ক্যাপ্টেন মি. জোহান সুইট, ফার্স্টমেট মি. সলোমন করিম, সেকেন্ড মেট মি. ডাবরি ক্লিমসন, থার্ডমেট মি. ট্রিমিন সয়েল, ডাক্তার মি. হেনরি ক্লিমসন, আবহাওয়া বিশারদ মি. রবার্ট দ্যান, মৎস বিজ্ঞানী মি. এ্যালবার্ট বব, হারপুনার মি. বিলি মেন, মি. জি ওলমার্ট, মি. ব্রুক ফর্স, মি. সার্প, কামার মি. টম ব্যরন, মি. ডক ক্যালমিন, বাবুর্চি মি. টম হাসিল, বাবুর্চি সহকার মি. ব্রুস অর্চিন। এছাড়াও পাঁচজন নাবিক মি. ডন উইলিয়াম, মি. টমাস কেট, মি. উইল ডায়াজ, মি রোজার স্টোন ও মি. হুয়ান কিম। আরও রয়েছে বিশজন জাহাজী। সকলেই আমার সাথে বেশ আন্তরিক ব্যবহার করল। আমি, এ্যাডমন্ড, মি. হেনরি ক্লিমসন ও মি. এ্যালবার্ট বব পেলাম একটি কেবিন-শোয়া ও বিশ্রামের জন্য।

সোমবার রাতটা আমরা জাহাজেই থাকলাম কারন মঙ্গলবার আমাদের যাত্রা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। রোববার অবশ্য থেকেছিলাম “দ্য কেভ অব হ্যাভেনে”। এঞ্জেলার বাবা মি. বাক্নার আমাদের যথেষ্ট আরামের সু ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার মধ্য সকালের দিকে আমরা জেটি থেকে জাহাজের নোঙর ছাড়ালাম। আমাদের জাহাজের কাঠামো অত্যন্ত নিরেট, ওক কাঠের তৈরী খোল এবং এজ ধরে বসানো হয়েছে মজবুত সংকর ধাতুর পাত। জাহাজের মাঝখানে অফিসার্স কোয়ার্টার। ডেকের সামনে একটি প্রকান্ড হোল তাতে চরবি, কলিজা ইত্যাদি রাখার বিভিন্ন খোপ। হোলটি ঢাকনা দ্বারা ঢাকা থাকে।জাহাজে বারটি হোয়েল বোট এবং পযার্প্ত পরিমানে রসদ রয়েছে। এ্যাফট বা জাহাজের পেছনদিকে রয়েছে রান্নাঘর, ফায়ারপ্লেস, স্তুপাকৃতি ব্যারেল ও গুদাম।

আমাদের জাহাজ চোদ্দ নট গতিতে চলতে সক্ষম। যথেষ্ট শক্তিশালী ইঞ্জিন।

দিনটি চমৎকার ছিল। জাহাজ জেটি ছেড়ে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। জেটিতে প্রায় পঁচিশটি জাহাজ নোঙর করা ছিল, ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দে প্রকৃতি হয়ে উঠেছিল উদ্দম, দূর আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছিল অগনিত অ্যালবাট্রস ও আরও অনেক নাম না জানা মাছখেঁকো পাখি। সূযর্য়ের প্রতিবিম্ব পানিতে পড়েছিল-তাকাতেই চোখ ঝলসে দিতে চাইল।

অনেকদূরে ডলফিনের একটি দল চোখে পড়ল যারা সমুদ্রের নোনা পানিতে ঝাপাঝাপিতে মত্ত ছিল। আমাদের সামনে ও পেছনে ছিল মোট সাতটি জাহাজ। তন্মধ্যে পাঁচটি তিমি শিকারী, একটি নেভির ও একটি সওদাগরী জাহাজ ছিল।

আমাদের জাহাজের নামটিই এখনও বলা হয়নি। জাহাজের নাম ছিল “হোয়েল এক্সপ্রেস”।

পানি কেটে কেটে চলছে জাহাজ। আমি আর এ্যাডমন্ড ডেকে দাড়িয়ে আছি সঙ্গে ডাক্তার সাহেব। নানটুকেট জেটি ক্রমেই ছোট হতে হতে বিন্দুরূপে আমাদের চোখে ধরা দিচ্ছে।

দেখতে দেখতে দিনটি কেটে গেল। রাতে আমাদের কেবিনে জম্পেস আড্ডা হল। আমি শোনালাম আমার দেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতার কাহিনী, এ্যাডমন্ড শোনাল তার বিয়ের ঘটনা, ডাক্তার সাহেব জানালেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক চমকপ্রদ ঘটনা ও তথ্য, মৎস বিজ্ঞানী মি. বব জানালেন বিভিন্ন মাছের স্বভাব ও আত্মরক্ষার কৌশল, সাথে চলল শুকনো মাটন কাবাব ও ব্র্যান্ডি। আমি অবশ্য ব্র্যান্ডি নিলাম না, লেমোনেড দিয়ে চালিয়ে নিলাম ব্র্যান্ডির কাজ। ডাক্তার সাহেব বললেন, আরে খাও (উনি এতটাই মিশুক যে একদিনের মধ্যে উনি আমাকে ওনার ছোট ভাই বানিয়ে ফেলেছেন, আর তাই আমাকে তুমি করে সম্বোধন করেন) মাঝেমধ্যে এক আধটু ব্র্যান্ডি গলায় ঢালতে হয়-জানোতো এটা হার্টের জন্য বিশেষ উপকারী। আমরা সাধারনত হার্ট এ্যাটাক হলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে বা ট্যাবলেট জিহবার নীচে দেই কিন্তু ব্র্যান্ডি দিয়েও এই কাজ করা যায়। তিনি আরও জানালেন, জন্তুর তেল আমাদের হার্টের বারোটা বাজালেও মাছের তেল হার্টের উপকার করে।

আমি মি. ববকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা স্যার আসলে আমরা যে উদ্দেশ্যে যাচ্ছি অর্থাৎ সেই মাছটি সম্পর্কে বিশদভাবে যদি কিছু বলতেন, এ্যাডমন্ডের মুখে ভাসাভাসা ভাবে আমি কিছু তথ্য শুনেছি এই যা, আপনি বুঝিয়ে বললে হয়ত বুঝতে পারব।

আপনাকে ধন্যবাদ(এটা মি. ববের একটা স্বভাব, কথা শুরু করার আগে বলেন, “ভালো”, আর কোন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন “আপনাকে ধন্যবাদ”, ভদ্রলোকের দৈহিক উচ্চতা হবে পাঁচফুট সাত, দৈহিক গঠন স্বাভাবিক, মোটা লেন্সের চশমা চোখে, চুল ঝুলফির কাছে পাক ধরেছে, ভ্রু টেনে টেনে কথা বলেন, কথাবার্তা ও চালচলনে অভিজাত্য প্রকাশ পায়- অন্যদিকে ডাক্তার সাহেব যেন ঠিক তার উল্টো, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, মাঝারি সাইজের উস্কোখুস্কো চুল, অধিকাংশতেই পাক ধরেছে, কথায় নিখুত আমেরিকান টান, সবসময় হেসে হেসে কথা বলেন তবে কেউ ওনার কথা না শুনলে রাগে থরথর করে কাঁপেন, এটাও বোধহয় একধরনের সৌজন্যবোধ কারন এর কিছুক্ষন পরেই তিনি স্বাভাবিক হয়ে যান, চোখে মায়াবী চাহুনি, ভ্রু জোড়া পরস্পরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত, চিকন করে ছাড়া গোফ, সামনের উপরের পাটির বামপাশের প্রি-মোলার দাত ভাঙ্গা, ঠিক ভাঙ্গা নয় বলতে গেলে ফাটা, এটারও অবশ্য একটা ঘটনা রয়েছে যা পরবর্তীতে শুনেছিলাম, সে কথায় পরে আসছি)

আসলে, মি. বব বলতে শরু করলেন, আমরাও এটা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না, শুধু কয়েক মিনিটের জন্য এর টেলিস্কোপিক ছবি দেখেছিলাম এবং এ থেকেই আমরা এর বৈশিষ্ট সম্পর্কে কিছু ভবিষ্যৎবানী করেছিলাম। তা হচ্ছে প্রানীটি দেখতে নীল তিমির চেয়ে বড় বা ছোট হতে পারে তবে তা অবশ্যই একটি পূর্ন বয়স্ক নীল তিমির সমান। মাথাটি হুবহু ডলফিনের মত চোখা এবং মাথার উভয় পাশে হাঙ্গরের মত পাঁচটি করে ফুলকারন্ধ্র রয়েছে। লেজ হেটারোসার্কাল অর্থাৎ তারকার দু’মাথার মত না হয়ে গাছের শাখার মত লম্বা যেটা কিনা হাঙ্গরের বৈশিষ্ট্য। প্রানীটির সম্পূর্ণ দেহ আঁইশে আবৃত ,অথচ হাঙ্গরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আঁইশ প্লাকয়েড। প্রানীটি তিমির মত পানির ফোয়ারা ছিটাতে পারে এবং দেহে হাঙ্গরের মত পাখনা রয়েছে। মাথাটা সম্পূর্ণ কালো, পিঠ ধূসর এবং পেট সাদা। এর লেজ কালো ও সাদার মিশ্রনে ডোরাকাটা অনেকটা জেব্রার মত। প্রানীটি সারফেসে উঠতে পছন্দ করে না কারন ঐ দিনের পর একে আর দেখা যায়নি-ঠিক কি কারনে ঔ দিন সে সারফেসে উঠেছিল সেটা আমাদের কাছে অজানা কারন আমরা টেলিস্কোপে তার দৈহিক অবস্থার কোন ধরনের ডিফিক্ট সনাক্ত করতে পারিনি। অর্থাৎ এর মূল গঠনটি হচ্ছে এ রকম-ডলফিনের মাথাটি এসে তিমির দেহের সাথে মিশেছে সাথে যোগ হয়েছে হাঙ্গরের ফুলকারন্ধ্র, সবশেষে যোগ হয়েছে হাঙ্গরের লেজ। আশ্চযের ব্যাপার কি জানেন, প্রানীটির দেহে পযার্প্ত পরিমান আঁইশ থাকলেও আমরা ফুলকারন্ধ্র সনাক্ত করতে পেরেছি। বলতে গেলে বলতে হয়, হাঙ্গর-তিমি-ডলফিন আর আঁইশওয়ালা মাছের সংকর এটি। আশ্চয্য বরই আশ্চযের ব্যাপার। আমার এত বছরের শিক্ষা, শিক্ষকতা ও গবেষনা জীবনে এমন প্রানীর কথা ভাবতেই পারিনি, এ যেন কল্পনা। জায়ান্ট, বিগ জায়ান্ট, অড জায়ান্ট, স্ট্রেঞ্জ জায়ান্ট এন্ড ওয়ান্ডারফুল জায়ান্ট। মি. ববের বক্তব্য শেষ হল।

সত্যিই আশ্চয এক প্রানী, ডাক্তারসাহেব মন্তব্য করলেন। আমিও ওনার সাথে মাথা নাড়ালাম।

স্যার, আমি আর এ্যাডমন্ড প্রানীটির বিবর্তনের ব্যাপারে কিছু আলোচনা করেছিলাম। আপনার এবং ডাক্তার সাহেবের আগ্রহ থাকলে আমি সেগুলো শোনাতে পারি। মি. বব এবং ডা. ক্লিমসন উভয়েই শোনতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন।

ও হ্যা, আরেকটি ব্যাপার পাঠকদের জানানো হয়নি, যদিও পাঠকরা হয়ত কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন তা হল, ডাক্তার মি. হেনরি ক্লিমসন এবং সেকেন্ড মেট মি. ডাবরি ক্লিমসন ভাই। মি. হেনরি বড় আর মি. ডাবরি ছোট। মি. হেনরি এই জাহাজে ডাক্তার হিসেবে আছেন ত্রিশ বছর আর মি. ডাবরি জাহাজে আছেন বার বছর ধরে। মি. ডাবরি অবশ্য প্রথমে শিক্ষানুবিশ হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন, পরে থার্ড মেট এবং তারপর পদোন্নতি হয়ে সেকেন্ড মেট হয়েছেন। ভদ্রলোক বিয়ে করেছেন মাত্র তিনমাস হল। যাই হোক, আমি ওনাদের অর্থাৎ ডাক্তার সাহেব ও মি. ববকে আমার আর এ্যাডমন্ডের আলোচনা শোনালাম।

মি. বব বললেন, আমাদের ধারনার সাথে আপনাদের ধারনা প্রায় মিলে যাচ্ছে। তবে এটা ইউনিক প্রজাতী বা দুর্লভ প্রজাতীও হতে পারে কারন প্রতিনিয়তই বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন প্রানীর সন্ধান পাচ্ছেন যারা প্রাকৃতিক এবং কোন ধরনের সংকর প্রজাতি নয়। তারমানে হচ্ছে এই যে, প্রানীটি কোন সংকর প্রজাতি হতে পারে অথবা কোন বিবর্তনের ফলে অথবা নতুন প্রজাতি হতে পারে যা এখন পযর্ন্ত অনাবিষ্কৃত। আপনারা কি বলেন?

ডাক্তার সাহেব বললেন, আপনি যেভাবে কিং চেক দিয়েছেন তাতে আমার আর কি বলার আছে বলুন, কি বল জোসেফ?

নির্ভূল, আমি বললাম।

রাতের খাবারের পর একবার ক্যাপ্টেন মি. কেট বন্ডের সাথে দেখা করলাম। হাসিখুশি চেহারা, আধাপাকা দাড়ি গলা অবধি নেমে এসেছে, চুল প্রায় সব পেকে গেছে-তবে উনি কলপ ব্যবহার করেন, গোফ ছাটা, নিখুত আচড়ানো চুল, হাতে সবসময় দামি ঘরি পড়েন, আয়ত চোখ-শীতল দৃষ্টি, পাতলা ভ্রু, সব মিলিয়ে চেহারাতে কেমন যেন একটা গাম্ভীয্য চলে এসেছে, কথায় স্প্যানিশ টান (জন্মের ব্যাপারে ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি হেসে বলেন, ‘আমার জন্ম সমুদ্রের মাঝে, জাহাজে।‘ আর ভাষায় স্প্যানিশ টানের কথা জিজ্ঞেস করায় উনি বলেন, ‘আমি যৌবন পার করেছি স্পেনে।‘) ঢিলে ঢালা পোশাক পড়েন আর ভদ্রলোকের আন্তরিক ব্যবহারের কথাতো আগেই বলেছি। ওনার রুমে যেতেই উঠে দাড়িযে আন্তরিকবাবে হাত মেলালেন (ভদ্রলোক খাটে বসা ছিলেন-হাতের ডায়েরিতে কি সব আঁকিবুকি করছিলেন।)

তারপর মি. পলিন, কেমন কাটল আমাদের জাহাজে আজকের দিনটা? মি. বন্ড জিজ্ঞেস করলেন হাসিমুখে।

অসাধারন, আমি বললাম, আপনার ক্রুরা সকলেই বেশ আন্তরিক। সত্যি কথা বলতে কি, আমি জীবনে অনেক সামুদ্রিক কাহিনী সম্বলিত বই পড়েছি, অনেক নাবিক ক্যাপ্টেনের সাথে আমার পরিচয় আছে তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকের আচরনেই আমি আন্তরিকতা দেখেছি। অথচ এই জাহাজে এত ক্রু আর সকলেই আন্তরিক-ব্যাপারটি আমার কাছে বেশ আশ্চয লাগছে।

মি. বন্ড আবার হাসলেন, বললেন, আসলে ঘটনা হচ্ছে, আমি সকলকে আনন্দের মধ্যে রাখি। যেমন, প্রতি মাসে একবার করে সকলে ভোজনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালনের জন্য একত্র হয়, তখন জাহাজ নোঙর করা থাকে, আর যখন ডাঙ্গায় থাকি তখনতো যে যার ইচ্ছে মত আনন্দ করে। যার ফলে ক্রুরা সকলেই উজ্জীবীত থাকে, কাজে ফাঁকি দেয় না। মি. বন্ড এই বলে থামলেন তারপর আবার বলতে শুরু করলেন, বয়স হয়েছে যার ফলে চাকুরি ছাড়ার জন্য আবেদন করেছিলাম, উদ্দেশ্য বাকী জীবনটা ছেলেমেয়ে নাতিনাতনীদের সাথে কাটাব। সারা জীবনে এ্যাডভেঞ্চার ও টাকা পয়সা তো আর কম আয় করলাম না। কিন্তু বোর্ড সরাসরি রিফিউজ করল। বলল, আপনার যতদিন চলার মত সমর্থ আছে ততদিন জাহাজে থাকবেন, প্রয়োজনে আপনার বেতন দ্বিগুন করা হবে, আর আপনি গেলে ক্রুরা সবাই চলে যাবে।

মি. বন্ড দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, বললেন, আমার জাহাজ ও ক্রুদের কৃতিত্বের কথা শুনে থাকবেন, বোর্ড ঠিকই বলেছে, আমি চলে গেলে ওরাও সবাই চলে যাবে, কেউ কেউ হয়ত এই পেশাই ছেড়ে দেবে, এসব ভেবে আর যেতে পারলাম না। অবশ্য আমার বেতন দ্বিগুন করা হয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে তো আর ভাবিনা। যাক অনেক কথা বললাম। এখন আপনার কথা বলুন।

আমি হাসলাম, বললাম, আমি যদি আদৌ কোন বই বের করি আর তা যদি কোন গল্প হয় তাহলে সেই গল্পের নায়ক আপনি হবেন। সত্যিই স্যার, আপনার এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কোন তুলনা হয় না। বোর্ড যে আপনাকে ছেড়ে দেয়নি আমার মনে হয় তারা কোন ভুল করেনি, তা না হলে তারা অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলত। অন্তত আমার যা ধারনা। যাই হোক অনেক রাত হল, আজ যাই স্যার, শুভরাত্রি।

মি. বন্ড বললেন, আপনার সাথে কথা বলে যারপরনাই ভালো লাগল, আপনি আবার আসবেন, আর কালতো আবার দেখা হচ্ছে, শুভরাত্রি।

আমি মি. বন্ডের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা আমাদের কেবিনে চলে এলাম। দেখলাম ডা. সাহেব এবং এ্যাডমন্ড ইতোমধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। রুমে অতি অল্প পাওয়ারের একটি বাল্ব জ্বলছে। সেটি না নিভিয়েই আমি শুয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভাঙল নাবিকদের হৈ-হুল্লোড়ে। হাতমুখ ধুয়ে ডেক এ উঠে আসলাম। দেখলাম ডা. সাহেব, ক্যাপ্টেন এবং এ্যাডমন্ড রেলিং এর কাছে দাড়িয়ে কথা বলছে। আমি এগিয়ে গেলাম।

এসো এসো, তা ঘুম কেমন হল? ডা. সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।

আমি সকলের সাথে হাত মেলাতে মেলাতে বললাম, খুব ভাল বলব না কারন মানুষের ঘুম খুব ভালোর পযার্য়ে পড়ে না, হয়েছে মোটামুটি ভালই।

তোর লেখকী ভাষা এখানেও ব্যবহার করছিস, নাহ তোকে নিয়ে আর পারা গেল না, এ্যাডমন্ড বলল।

ওর কথায় ডাক্তার, ক্যাপ্টেন দু জনেই হেসে ফেললেন।

আচ্ছা, আমি জানতে চাইলাম, এত হৈ হুল্লোড়ের মানে কী?

ও জানোনা তাহলে, ডা. সাহেব বলতে লাগলেন, মি. উইল আজ ক্রোস নেস্ট থেকে একটি তিমি দেখতে পেয়েছেন, কিন্তু আমরা পৌছানোর আগের সেটি হারিয়ে যায়, তবে এটা খুব ভালো লক্ষন। তিমি দেখার খবর শুনেই নাবিকরা চিল্লাচিল্লি শুরু করল।

পাঠক, মি. উইল ডায়াজ একজন নাবিক। তার কাজ হচ্ছে বাতাসের গতিবিধি লক্ষ্য রাখা এবং ক্রোস নেস্টে বসে থেকে চারপাশে নজর রাখা।

আচ্ছা ডাক্তার সাহেব, আমি বললাম, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি বলবেন, কি করে আপনার সামনের দাতটি ফেটেছে? এ্যাডমন্ডের কাছে শুনেছিলাম এ ব্যাপারে নাকি একটি চমকপ্রদ ঘটনা রয়েছে।

আমাদের অবাক করে দিয়ে ডা. সাহেব এবং ক্যাপ্টেন একসঙ্গে হেসে উঠলেন। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।

ডা. সাহেব অবশেষে বললেন, তাও ভালো যে এটা তুমি জিজ্ঞেস করেছ, অন্য কেউ এটা জিজ্ঞেস করার সাহসই পায় না। যাই হোক, ঘটনাটি একটু মজার আবার একটু বেদনাদায়কও বটে। ঘটনাটির একমাত্র প্রত্যাক্ষদর্শী হলেন আমাদের ক্যাপ্টেন সাহেব। এজন্যই দুজনে একসঙ্গে হেসে উঠলাম।

আজ থেকে প্রায় সাতাশ বছর আগের কথা, ডা. সাহেব বলতে আরম্ভ করলেন, এই জাহাজে উঠেছি তিন বৎসর হয়, তখন এখানকার মৎস বিজ্ঞানী ছিলেন মি. গিলবার্ট ফরেস্ট। ভদ্রলোক যেমনি সম্ভ্রান্ত ছিলেন তেমনি ছিলেন রাগী। তো প্রথম থেকেই আমার সাথে ওনার অনেক ব্যাপারেই মিলত না, কথা কাটাকাটি হত। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বলছি না, ওসব ব্যাপারের কোনটাতেই আমার দোষ ছিল না, ভদ্রলোক এসেই কথার খোঁচা মারতেন আর আমিও সেটা সহ্য করতে পারতাম না। ব্যস শুরু হয়ে যেত বাকযুদ্ধ। এভাবে চলছিল, হঠাৎ একদিন হল কি…….।

দাড়ান দাড়ান, ক্যাপ্টেন ডা. সাহেব কে থামালেন, বাকিটা আমি বলি। মি. পলিন, ক্যাপ্টেন বললেন, একদিন ডাক্তার ও মি. ফরেস্ট ভোরবেলাতেই বাকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন, তাদের তর্কের বিষয় ছিল তিমির দুধ গরুর বাচ্চাকে খাওয়ানো যাবে কিনা আর সেটা কতটুকু ফলপ্রসু হবে। মৎস বিজ্ঞানীর মত, খাওয়ানো যাবে না আর ডাক্তারের বললেন, খাওয়ালে ক্ষতি নেই। এভাবে চলছিল, একপযার্য়ে ঝগড়াটি হাতাহাতির রূপ নিল। আমি এসে বাধা দেয়ার আগেই দুজনেই পরস্পরের বিপরীতে ঘুসি বিনিময় করে ফেললেন এবং দুজনের টার্গেট নির্ভূল হয়েছিল। ডাক্তারের প্রি-মোলার দাত না ভেঙ্গে ফেটে গেল আর মি. ফরেস্টের সামনের নীচের একটি দাত ভেঙ্গে গেল। এই ঘটনার পর মি. ফরেস্ট চাকুরী ছেড়ে দিলেন, অবশ্য আমারও সে রকমই ইচ্ছে ছিল, কারন ডাক্তারতো ওনাকে পছন্দ করতেনই না, জাহাজের কোন ক্রুই তাকে পছন্দ করত না, আমি নিজেও না। এর প্রধান কারন সম্ভবত ভদ্রলোকের ঝগড়াটে মনোভাব। এই হচ্ছে ঘটনা। ক্যাপ্টেন থামলেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, মি. ফরেস্ট এখন কি করছেন বা কোথায় আছেন?

যতটুকু শুনেছি, ক্যাপ্টেন বললেন, তিনি একটি তিমি শিকারী জাহাজে চাকুরী করেন, সেই জাহাজের ক্যাপ্টেনের সাথে আমার বেশ ভালো জানাশোনা আছে। সেকানে ফরেস্ট সাহেব নাকি এই জাহাজের মতই পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। সেখানে ওনার প্রধান প্রতিপক্ষ জাহাজের আবহাওয়া বিশারদ। যার ফলে চাকুরী সেখানেও যাই যাই করছে। এ নিয়ে কত জায়গায় ওনার চাকুরী গেল তার ইয়ত্তা নেই। তবে লোকটি জ্ঞানী এবং নিজের কাজ সম্পর্কে সচেতন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, এই বলে ক্যাপ্টেন আড়চোখে ডাক্তারের দিকে তাকালেন।

ডাক্তার সাহেব বললেন, সেটা আমিও অস্বীকার করিনা। ভদ্রলোক আসলেই জ্ঞানী, আমিও তর্কের মাধ্যমে অনেক তথ্য ওনার কাছ থেকে জেনেছি।

ওহহো, মনে পড়ার ভঙ্গিতে ক্যাপ্টেন বললেন, মি. পলিন, আপনি নাস্তা করেছেন?

আমি মৃদু হেসে বললাম, এইতো যাচ্ছি স্যার।

ডাক্তার সাহেব বললেন, চলো আমিও নাস্তা করিনি, দু জন একসাথে করি গিয়ে।

ক্যাপ্টেনকে বিদায় জানিয়ে আমরা কেবিনে ফিরে আসলাম।এ্যাডমন্ড সবে খাওয়া শুরু করেছে। আমাদের দুজনকে দেখে বলল, নাস্তা নিশ্চয়ই করা হয়নি, আজ রুটির সাথে সুস্বাদু ঝিনুকের স্টু ও পনির দিয়ে নাস্তা সাড়তে হবে।

আমি আর ডাক্তার সাহেব এ্যাডমন্ডের সাথে যোগ দিলাম। নাস্তা শেষ করেই আমরা তিনজন আবার ডেকে উঠে এলাম। ক্যাপ্টেন চলে গেছেন,তবে আবহাওয়া বিশারদ মি. রবার্ট দ্যানের সাথে দেখা হয়ে গেল। উনি অনেক দূরের ডলফিনের খেলা দেখছিলেন। ভদ্রলোকের চেহারা অনেক মোলায়েম, হাসিখুশি মুখ এবং জাহাজের অন্য সকল ক্রুদের মত তিনিও সদালাপী ও প্রাঞ্জল।

কত সুন্দর প্রকৃতি তাই না, হাস্যোজ্জল মুখে জিজ্ঞেস করলেন মি. দ্যান।

সত্যিই দারুন, মি. দ্যান, আমি উত্তর করলাম।

রৌদ্রোজ্জল চারপাশ, দু চারটা টুকরো টুকরো মেঘ আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে, অ্যালবাট্রসের দল তাদের বিশাল বিশাল পাখা মেলে দিয়ে উড়ে চলছে, সূযের কিরন সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ে প্রতিফলন ঘটাচ্ছে মনে হচ্ছে যেন হাজারো হাজারো হীরে সমগ্র সমুদ্র ব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সত্যিই, এটাই একটা জগৎ, এটাই একটা পৃথিবী। যারা এই জগতে বাস করে তারা কতইনা সুখী, কতই না নিশ্চিন্ত।

আমরা চারজন নিজেদের পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে আলাপ করছি এমনই সময় হাজির হলেন ত্রিরত্ন। অর্থাৎ ফার্স্ট মেট মি. সলোমন করিম, সেকেন্ড মেট মি. ডাবরি ক্লিমসন, থার্ড মেট মি. ট্রিমিন সয়েল। ওনারা তিনজনেই আমাদের স্বাগত জানালেন। আমরাও প্রত্যুত্তর করলাম। আশ্চযের  ব্যাপার হচ্ছে তিনজন মেট-ই টগবসে যুবক। কারও বয়স তিরিশের বেশি নয়।এত অল্প বয়সে এরূপ দক্ষতা আসলেই প্রশংসনীয়।

মি. সলোমন করিমের চুল বড়, মাথার পেছন দিকে চুল ঘাড় অবদি নেমে এসেছে, কালো রঙের সিল্কি চুল, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, লম্বা জুলফি, সবার্পেক্ষা আকর্ষনীয় হচ্ছে ওনার চোখ জোড়া। চোখজোড়ায় সাবর্ক্ষনীক যেন কোন বুদ্ধি ঝিলিক দিচ্ছে। দৈহিক গঠন মজবুত, পেটা শরীর, মনে হয় প্রতিদিন ব্যায়াম করেন।

মি. ডাবরি ক্লিমসন দেখতে হুবহু ভাইয়ের মত, শুধু বয়সটা একটু কম এই যা। তবে ওনার হিটলারি গোফ নজরে পরার মত।

থার্ডমেট মি. ট্রিমিন সয়েল লম্বা, ছিপছিপে শরীর, শ্যামবর্ণ, সোনালী চুলের উচ্ছল যুবক। সবসময় ক্লিনশেভড। ওনার চোখের দিকে তাকালেও মনে হয় উনিও খুব বুদ্ধি ধরেন। তিনজনেরই বাচনভঙ্গি চমৎকার। তিনজনের সাথে খুব বেশি কথা বলার সময় পেলাম না। শুধু জানলাম শীঘ্রই সুখবর আসতে পারে। জাহাজের পেছনে চলে এলাম আমরা।

বাবুর্চি মি. টম হাসিলের মুখ লালচে আলুর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। আগুনের কাছে থাকতে থাকতে মুখে লালচে আভা ধারন করেছে। তবে উনি ফর্সা। একটু বেটে এবং ভুড়িবহুল দেহ। উনি নড়ার সাথে সাথে ওনার ভুড়িটিও নড়ে ওঠে। মাথা ক্লিন শেভড, ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি। দাড়ির রং সোনালী। ছোটছোট চোখ। তবে ওনার মুচকি হাসি দেখতে চমৎকার লাগে। আমাদের চারজনের জন্য উনি চমৎকার কফি বানালেন। জানাগেল এগুলো ব্রাজিলিয়ান কফি। কথা বলতে বলতে কখনযে লাঞ্চের সময় হয়ে এল টেরই পেলাম না। লাঞ্চ করলাম চিংড়ী মাছ ভাজা, চিকেন স্যুপ এবং তিমি মাছের দুধ দিয়ে। তিমি মাছের দুধের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, তিমিরা যখন সমুদ্র সারফেসে উঠে ফোয়ারা ছিটায় তখন বোটে করে জাহাজিরা গিয়ে দুধ নিয়ে আসে। এ এক অনন্য স্বাধ। না খেলে বোঝা যাবে না। লাঞ্চের সময় কেন জানি মনে হল আমাদের অভিযান শেষ হতে আর খুব দেরি নেই।

এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন। জাহাজী, নাবিক তথা ক্রুদের সাথে কথা বলে, আনন্দ ফুর্তি করে উপলব্দি হচ্ছে জীবনটা কতই না উপভোগ্য। একঘেয়েমিয়তা এখানে স্পর্শই করে না। চমৎকার আবহাওয়া, সুস্বাধু খাদ্য, চমৎকার বাসস্থান মোটকথা সবকিছু বিশুদ্ধ। একে একে কেটে গেল তিনটি মাস। টেরই পেলাম না। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন এলাম জাহাজে। এখন জাহাজে আমরা কাজ হচ্ছে লেখালেখি করা, ক্রুদের সাথে কথা বলা তাদের জবিনের গল্প ও অভিজ্ঞতার কথা শোনা, প্রকৃতি দেখা, রাতের আকাশের তারা পযবের্ক্ষন করা এবং ক্রুদের সাহায্য করা। এর মধ্যে প্রতিমাসে একবার জাহাজে জলসা হয়। সেটা হয় পূর্নিমার রাতে। জাহাজের ক্রুদের সবাই কিছু না কিছু করে দেখায়। একবারতো হারপুনার মি. জি. ওলমার্ট বাজি ধরে পরপর পাঁচ বোতল রাম সাবার করে দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে নাবিকরা ট্রেজার আইল্যান্ডের সেই বিখ্যাত “মরা মানুষের সিন্দুক” গানটি গেয়ে ওঠে। এই তিনমাসের মধ্যে আমরা অনেক তিমি দেখেছি কিন্তু কোনটির পেছনেই দাওয়া করিনি।কারন আমাদের টার্গেট হচ্ছে “ট্রেঞ্জ ফিস”।

অবশেষে এল সেই দিন। প্রায় সাড়ে পাচ মাসের মাথায় মেঘাচ্ছন্ন একটি দিন। আমরা সবেমাত্র নাস্তা শেষ করেছি এমন সময়ই মি. উইল ডায়াজ ক্রোস নেস্ট থেকে চিৎকার করে উঠলেন। বলতে গেলে তার কন্ঠস্বর কেপে উঠল। জাহাজের সমস্ত ক্রু ডেকে জমা হল।

কি ব্যাপার?

দেখা গেছে, দেখা গেছে, দেখা……………….গে…………ছে, মি. ডায়াজ কোনমতে বলতে থাকলেন, স্যার স্ট্রেঞ্জ ফিস এই মুহূর্তে আমাদের সামনে। মনে হল কথাটি কানে ভুল শুনেছি। ক্যাপ্টেন তড়িঘরি করে ক্রোস নেস্টে উঠে গেলেন। চোখে বাইনোকুলার লাগিয়ে রাখলেন পাক্কা পাঁচ মিনিট ছয় সেকেন্ড। অবশেষে নেমে জাহাজ এখানেই নোঙর করার নির্দেশ দিলেন। আমরাও খালি চোখে দেখতে পেলাম জগতের এযাবত কালের মধ্যে সবার্পেক্ষা অদ্ভুত জীবন্ত জীবটিকে। ক্যাপ্টেন স্যার সাথে সাথে ইউএস নেভির সাথে যোগাযোগ করলেন। তারা মাছটিকে জ্যান্ত ধরার চেষ্ঠা করতে বললেন।

ক্যাপ্টেন জানালেন, এটাকে জ্যান্ত ধরা এক কথায় অসম্ভব। সমস্ত দেহ আঁইশে আবৃত এবং প্রতিটি আঁইশে রয়েছে শতাধিক করে সুক্ষ সুক্ষ তীক্ষ্ণ কাঁটা। স্যাটেলাইটের তথ্যাবলীর সাথে বর্ননা হুবহু মিলে গেল। ইউএস নেভির কাছ থেকে প্রাণীটিকে মৃত ধরার নির্দেশ পাওয়া গেল। হারপুনাররা তাদের হারপুনে ধার দেয়ার তোরজোর শুরু করলেন। ক্যাপ্টেন তো প্রত্যেক হারপুনারের জন্য জনপ্রতি দশ হাজার ইউএস ডলার করে পুরস্কারের ঘোষনা দিলেন যদি কাজটি ঠিকমত সমাধা করতে পারে।

চারজন হারপুনার, ছয়জন জাহাজী, নাবিক মি. উইল ডায়াজ ও মি. হুয়ান কিম, থার্ডমেট মি. ট্রিমিন সয়েলসহ সবমিলিয়ে ষোলজন লোক চারটি বোটে করে “স্ট্রেঞ্জ ফিস” অভিমুখে যাত্রা করল। হারপুনাররা সদা সতর্ক। এগিয়ে থাকা প্রথম বোটে রয়েছে সবচেয়ে অভিজ্ঞ হারপুনার মি. বিলি মেন। সবাই তার নির্দেশের অপেক্ষা করছে। অবশেষে চারজন হারপুনার একসাথে তাদের অস্ত্র ছুড়লেন। অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ। চারজনের হারপুনই প্রানীটির মাথায় আঘাত করেছে। প্রথম তিনসেকেন্ড কিছুই ঘটল না। তারপর হঠাৎ করেই প্রানীটি সমুদ্র জলে ডুব মারল। হারপুনাররা তাদের হারপুনে কোন ধরনের টানই অনুভব করল না।

সেই যে গেল, গেলই। এই ঘটনার পর আরও ছয়মাস আমরা একে খুঁজে বেড়ালাম। কিন্তু বৃথা। ক্যাপ্টেনের নির্দেশে আমরা ফিরে চললাম। জেটিতে আমার ছেলেমেয়েরা, তাদের মা, এ্যাডমন্ডের শ্বশুর ও স্ত্রী উপস্থিত ছিল। আমরা সবাই আমার বাড়িতে এসে উঠলাম। বাচ্চারাসহ বড়রা আমাদের দুজনকে ঝেকে ধরল সব শোনার জন্য। আমরাও ধৈয্য ধরে সব শোনালাম। ঘটনার পর আজ প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেছে, এর মধ্যে একটি বারের জন্যও আর দেখা যায়নি স্ট্রেঞ্জ ফিসকে। এ্যাডমন্ড ফিরে গেছে সমুদ্রে। ওদের ঘরে এসেছে ফুটফুটে একটি ছেলে। হয়ত সেও বাবার মত তিমির পেছনে ধাওয়া করবে। স্ট্রেঞ্জ ফিসের দেহটি ছিল জেলি ফিসের মত থলথলে তাই হারপুনে কোন টান পড়েনি।

পূর্বে প্রকাশিত

--- সমাপ্ত ---

Level New

আমি M4H3D1 H454N। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 283 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

মানুষের কল্যানে ভালো কিছু করার ইচ্ছে আছে জীবনে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অনেক কাজ ফেলেরেখে সম্পূর্ণটা পড়লাম। সুন্দর গল্প। তবে আমার মনে হয়না প্রযুক্তির সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে।

Mehedi Bai Haking Learning er pasha pashi golpoo O likhen jantam na.tobe valo hoyese.
Donnobad.

Level 0

Download koreci. Tobe prothom besh khanikta pore valo legece. Jodio eta tech site tobe majhe majhe erokom tune valo lage.