আর্টেফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা সংক্ষেপে AI, তথ্য প্রযুক্তি এই যুগে এই AI নামটি ব্যাপকভাবে আমরা শুনে আসছি। মানুষের বদলে কার্যক্ষেত্রে কম্পিউটারের সঠিক ব্যবহারকেই সাধারণত AI বলা হয়ে থাকে। কার্যক্ষেত্রে মানুষের চাইতেও সঠিক সময়ে সঠিক এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কম্পিউটার সক্ষম হয়।
এই AI এর কারণে অলরেডি বিভিন্ন কার্যক্ষেত্রে মানুষের আর প্রয়োজন পড়ছে না। এতে একদিকে যেমন আমাদের জীবন যাপন যেরকম সহজ হয়ে যাচ্ছে ঠিক একই ভাবে অন্যদিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে এই AI এর কারণে উক্ত কার্যক্ষেত্রে মানুষজন তাদের চাকরি হারাচ্ছে!
টেকনোলজির প্রতিনিয়ত আপগ্রেডের কারণে অনান্য ক্ষেত্রের মতো AI য়েও প্রতিনিয়ত আপগ্রেড করা হচ্ছে। আর অদূর ভবিষ্যৎতে এই আর্টেফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে আমরা অনেক কাজের ক্ষেত্রেই চাকরি হারাতে যাচ্ছি! আজকে আমি টেকটিউনসে এই AI কারণে অদূর ভবিষ্যৎতে যেসকল ক্ষেত্রে মানুষ
চাকরি হারাতে যাচ্ছে যেসকল ক্ষেত্র নিয়ে সংক্ষেপে আপনাদেরকে ধারণা দিতে চেষ্টা করবো! তো ভূমিকায় আর কথা না বাড়িয়ে চলুন সরাসরি টিউনে চলে যাই! সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি জরিপে দেখা গিয়েছে যে বর্তমান যুগের প্রায় ৪৫% চাকরি আগামী ২০ বছরের মধ্যে AI এর কারণে মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে।
AI এর প্রয়োগ আমরা এই যুগেই ড্রাইভিংয়ে দেখতে পাচ্ছি! ড্রাইভার ছাড়া গাড়ি চলবে! এটা আর কোনো স্বপ্ন হয়। ইতিমধ্যে Tesla গাড়ি কোম্পানি তাদের নতুন মডেলের গাড়িগুলোকে সম্পূর্ণ ড্রাইভার বিহীন ভাবে চালানোর প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে এবং প্রজেক্টে অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছে!
অন্যদিকে Uber ও তাদের সার্ভিসে ড্রাইভার বিহীন গাড়ি সরবরাহ করা শুরু করেছে! আগামী ২০ বছরের মধ্যে ট্যাক্সি ড্রাইভার, বাস ড্রাইভার, ট্রাক ড্রাইভার, Uber ড্রাইভার, ডেলিভারী ড্রাইভার সহ সকল প্রকার ইলেক্ট্রনিকস পণ্যে ড্রাইভারের কাজটি সম্পূর্ণ অটোমেশনে রূপান্তরিক করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।
ড্রাইভারের পর AI মানুষের কাছ থেকে যে কার্যক্ষেত্রে আসবে সেটা হলো বিভিন্ন প্রকার কৃষজ কাজ। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত কৃষি কাজ নির্বাহ করে বিশ্বে অনেক মানুষ তার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু AI এর কারণে আগামী ২০ বছরের মধ্যে এই কৃষজ সেক্টরেও আসতে চলেছে তুমুল পরিবর্তন।
অতীতে আমাদেরকে মাঠ চাষ করতে মানুষের প্রয়োজন হতো, মাঠে বীজ বপন, পরিচর্যা করা, ফসল তোলা থেকে শুরু করে ফলস বাছাই পর্যন্ত মানুষের দরকার হতো কিন্তু বর্তমান যুগেই এই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের জায়গায় মেশিনের ব্যবহার অলরেডি শুরু হয়ে গিয়েছে।
আমাদের তৃতীয় স্থানে রয়েছে প্রিন্টিং এবং পাবলিশিং সেক্টরটি। বর্তমান যুগে আধুনিক বিশ্বে নিউজপেপার মিডিয়াটি প্রায় মৃত বললেই চলে। অন্যদিকে ট্রাডিশনাল মিডিয়াগুলোও ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বিলুপ্তির পথে চলেছে। এই অবস্থা আগামী ২০ বছরের ভেতর প্রিন্টিং এবং পাবলিশিং সেক্টরটিকে পুরোপুরি নিজের দখলে নিয়ে আসবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স!
বিভিন্ন দোকানে কিংবা শপিং মলে আমরা আজকাল যে ক্যাশিয়ারকে দেখে থাকি তা আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে অতি শীঘ্রই অটোমেশনের দিকে যেতে শুরু করবে। তাই আমাদের আজকের লিস্টের ৪র্থ স্থানে রয়েছে ক্যাশিয়ার সেক্টরটি। সেদিন আর বেশি দূরে নেই সেখানে শপিং মলে সেন্সর লাগানো থাকবে, আর আপনি শুধু মলে আসবেন, আপনার যাবতীয় দরকারী জিনিসপাতি সংগ্রহ করবেন এবং মলটি ত্যাগ করবেন।
আপনার ক্রেডিট কার্ড থেকে অটোমেটিক্যালি বিলগুলো কেটে রাখা হবে। ইত্যিমধ্যে আমাজনের Amazon Go নামের একটি ফিচারকে টেস্ট পর্যায়ে রাখা হয়েছে যেখানে ক্যাশিয়ার নেই!
বিশ্বের এক দেশ হতে অন্য দেশে ভ্রমণের জন্য আপনাকে বর্তমানে যে ট্রাভেল এজেসিং কাছে যেতে হচ্ছে অদূর ভবিষ্যৎতে এই সেক্টরটিতে আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স তার আধিপত্য বিস্তার করা শুরু করে দিবে।
আধুনিক বিশ্বের এখন থেকেই আর কাউকে কোনো ট্রাভেল এজেসিং তে যেতে হয় বিমানের টিকেট বুকিং করার জন্য, এমনটি হোটেলের সীট বুকিং করার জন্য এখন আর কোনো তৃতীয় পক্ষের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্য লাগছে না।
২০০০ সাল পর্যন্ত মানুষ তার হাতের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং আসবাবপত্র সামগ্রী তৈরি করতো এবং এই পেশায় অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে আসতো।
কিন্তু অলরেডি বর্তমান সময়েই এই সকল ক্ষেত্রেও আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন মানুষের জায়গাকে দখলে নিয়ে রেখেছে। এখন আর যন্ত্রপাতি তৈরি করতে মানুষের দরকার হয় না, আসবাবপত্র তৈরিতেও মানুষের হাতের ছোঁয়ার কোনো দরকার নেই।
কোনো ডাক্তার চেম্বারে, কিংবা মন্ত্রীদের কার্যলয়ে কিংবা বড় কোনো প্রতিষ্ঠানে আপনি যদি ফোন করেন তাহলে ফোনটি প্রথমে একজন কর্মী উঠাবে, আপনার প্রয়োজন বুঝে তারপরেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কিংবা ডাক্তারের কাছে কিংবা মন্ত্রীর কাছে আপনার কলটি টান্সফার করে দেবে।
এই ডিসপ্যাচার ক্ষেত্রেও আগামী ২০ বছরের মধ্যে আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স তার দখলে নিয়ে নেবে।
মজাদার হলেও এটাও সত্য যে অতি শীঘ্রই অনান্য ক্ষেত্রের মতো ওয়েটারস এবং বাবুর্চি সেক্টরেও আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে অটোমেশনের ধারাবাহিক কার্যধারা শুরু হয়ে যাবে। তখন আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে আপনাকে ওয়েটারসের সম্মুক্ষিত হতে হবে না।
আর খাবারের জন্য কোনো বাবুর্চির উপরও নির্ভর করে থাকতে হবে না। বাবুর্চিরাও কিন্তু মানুষ আর মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কিন্তু মেশিনরা ভুল করে না, তারা ১০০% নিভূর্ল রেজাল্ট দিতে সক্ষম। তাই অদূর ভবিষ্যৎতে খাবারের মান নিয়ে আপনাকে আর চিন্তিত থাকতে হবে না।
মজার ব্যাপার হলো এই যে শুধুমাত্র আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশে, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান দেশগুলোতেই ব্যাংকে মানুষ কর্মীর সংখ্যা বেশি! আধুনিক বিশ্বে অলরেডি ব্যাংকিংয়ে মানুষের চেয়ে মেশিন কর্মীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর তাহলে এটা বলার আর কোনো অবকাশ থাকে না যে অদূর ভবিষ্যৎতে ব্যাংকিংয়ে আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স পুরোপুরি দখলে নিয়ে নিবে। তখন আপনি ব্যাংকে আর কোনো মানব কর্মীকে দেখতে পাবেন না।
অনান্য ক্ষেত্রের মতো মিলিটারী সেক্টরেও অতি শীঘ্রই আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স তার দখলে নিতে চলেছে। মিলিটারী সেক্টরে পাইলটস এবং সোল্জারের ভূমিকা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
একজন দক্ষ পাইলট কিংবা সোল্জার হতে প্রতিটি মানুষকে কমপক্ষে ২৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। তারপরেও সকল পাইলট এবং সোল্জাররা একই মানের সার্ভিস দিতে পারে না। কিন্তু আর্টেফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিনারীর সাহায্যে এই সমস্যাটি আর তখন থাকবে না।
অনান্য সেক্টরের মতো ফার্স্ট ফুড সেক্টরেও অদূর ভবিষ্যৎতে আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন মানুষের কাজের উপর দখল নিয়ে নেবে। তখন বিনা অভিঞ্জতায় কাজ করার এই সেক্টরটি মানুষের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে!
তবে অটোমেশনের জন্য সবথেকে সহজ সেক্টরটি হলো এই ফার্স্ট ফুডিং সেক্টরটি। তাই মালিকেরা চাইলে এখনি তাদের ফার্স্ট ফুড কোম্পানিকে ১০০% মানুষ মুক্ত করে ফেলতে পারেন।
আজকাল বিভিন্ন কল সেন্টারে হাজারো যুবক এবং যুবতীরা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই অনান্য সেক্টরের মতোই এই সেক্টরেও এটা দখলে নিয়ে যাবে।
ইতিমধ্যে বর্তমান যুগে আমরা কল সেন্টারগুলোকে আস্তে আস্তে কর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে এবং ইন্টারনেট ভিক্তিক বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে এসকল টেলিমার্কেটারসদের কার্যালাপ পরিচালনা করা হচ্ছে।
যারা একাউন্টিং নিয়ে অনার্স কিংবা মাস্টার্রস করছেন তাদের জন্য এটি একটি দুঃসংবাদই বটে! আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ১০০% নির্ভুলতার জন্য এটি এই একাউন্টিং এবং ট্যাক্স সেক্টরটিও অতি শীঘ্রই নিজের দখলে নিয়ে নেবে।
আর একটি বড় সড় কোম্পানির যাবতীয় একাউন্টিংয়ের কার্যাবলি একজন দক্ষ একাউন্টেন্ট সামলিয়ে থাকেন এবং যারা কোটি কোটি টাকা বছরে ইনকাম করেন তাদের ট্যাক্স রোল নির্ধারণেও দক্ষ ট্যাক্স প্রিপেয়ারসও চড়া মূল্যে চাকরি করে থাকেন।
কিন্তু আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে নামে মাত্র খরচে আপনি নিজে নিজেই ঘরে বসেই আপনার সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে একাউন্টিং আপনি নিজেই সামলাতে পারবেন এবং বাৎসরিক ট্যাক্সের হার আপনি নিজেই বের করতে পারবেন।
স্টক মাকের্টের প্রায় ৯০ শতাংশ কার্যক্রম এখনই কম্পিউটার এবং সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হচ্ছে। মূলত মাত্র ১০ শতাংশ স্টক মার্কেটের কার্যক্রম মানুষের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
তাহলে এখানে বলা যায় যে আর কিছুদিনের মধ্যেই আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং কম্পিউটার পুরোপুরি ভাবে স্টক মার্কেট সেক্টরটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে! কারণ স্টক মার্কেটে হতাশা, ক্লান্তি এবং ধীরে ধীরে কাজ করা চলে না। সেজন্যই এই স্টক মার্কেটে কম্পিউটারের প্রবেশ শুরু হয়েছিল।
আমাদের লিস্টে সর্বশেষে রয়েছে কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ। অতীতে কোনো বিল্ডিং নির্মাণে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে কন্সট্রাকশন ওয়ার্কারদের উপর নির্ভর করতাম। কিন্তু বর্তমান যুগে এসে আমরা কোনো কিছু নির্মাণে এখন আমাদেরকে মেশিনের উপর বেশি নির্ভর থাকতে হচ্ছে।
বরং এবার আমাদেরকে মেশিন চালনোতে দক্ষ এমন লোক খুঁজতে হয়। কিন্তু অদূর ভবিষ্যৎতে আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সম্পূর্ণ আধিপত্যের কারণে কন্সট্রাকশন সেক্টরে আমাদেরকে আর কোনো মানব কর্মীর প্রয়োজন হবে না।
পৃথিবীর প্রায় সকল সেক্টরেই আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ধীরে ধীরে তার সম্পূর্ণ দখলে নিয়ে নিবে। কারণ আজকাল মানুষের চেয়ে মেশিনের উপর সবাই বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছে। কারণ মানুষের মতো মেশিন একই কাজ প্রতিদিন বারবার করতে করতে হাঁপিয়ে পড়ে না, মেশিনের কোনো ক্লান্তি নেই এবং তারা ১০০% নিভুর্ল রেজাল্ট দিতে সক্ষম।
আপনি আর্টেফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর এই কাজ ছিনিয়ে নেওয়া বা অটোমেশনের ব্যাপারে কোনো মতামত বা টিউমেন্ট থাকলে অথবা এই AI এর কারণে আমরা অদূর ভবিষ্যৎতে আর কি কি ধরনে চাকরি ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা হারাবো সেটা আমাদের সাথে নিচের টিউমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আজ তাহলে এ পর্যন্তই থাকুক। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি সৌশল নেটওয়ার্ক টেকটিউনসে।
টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!