বর্তমান স্মার্ট ফোন জগতে আমরা সবাই স্ন্যাপড্রাগন ও মিডিয়াটেক (অন্যান্য ও আছে কিন্তু আলোচনা এদুটো নিয়ে) চিপসেট নিয়ে নাচানাচি করি, কিন্তু অনেক মানুষই জানে না, আসলে কোনটি কেমন, কোনটি ভালো বা খারাপ। সেটা নিয়েই আজকের আলোচনা।
স্মার্টফোনে সাধারনত সর্বাধিকভাবে দুই ধরনের চিপসেট ব্যবহার করা হয়। (আরও আছে, কিন্ত বহুল ব্যাবহৃত এ দুটো) স্ন্যাপড্রাগন ও মিডিয়াটেক। প্রথমেই আলোচনা করা যাক, চিপসেট ব্যাপারটি কি?
-সহজ উদাহরন, তুলনা করা যেতে পারে চিপসের প্যাকেটের সাথে। আমরা যেগুলো খাই। দেখবেন চিপসের একটা প্যাকেট, তার ভেতর থাকে অনেক চিপস। ঠিক বলতে গেলে চিপসের প্যাকেট টা চিপসেট, আর ভেতরের চিপসগুরো একেকটা তার চিপ। অর্থ্যাত, চিপসেট হলো সকল চিপের সম্মিলিত একটি সমষ্টি, যেগুলো মোবাইলকে নিয়ন্ত্রন করে। এই চিপসেটেই থাকে প্রসেসর,গ্রাফিক্স,ওয়ারলেস কানেকশন সিস্টেম, এবং অন্যান্য সকল চিপ যেগুলোর প্রত্যেকটিই মোবাইলের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে।
চিপসেট হলো মোবাইের হৃৎপিন্ড, যেটা মোবাইলের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে, আর সেই চিপসেটেই থাকে প্রসেসর, চিপসেট মোবাইলকে নিয়ন্ত্রন করে আর প্ররসেসর সেটার গতি বাড়িয়ে দেয়। স্বভাবতই, যদি চিপসেট বেটার ভার্সন ও প্রসেসর পাওয়ারফুল দেয়, দুয়ে মিলো মোবাইল পুরাই পাংখা পার্ফমেন্স দিবে।
স্ন্যাপড্রাগন(Snapdragon/SD):
বর্তমানে আমেরিকার কোয়ালকম(Qualcomm) কোম্পানি কর্তৃক উৎপাদিত প্রসেসর এই স্ন্যাপড্রাগন। যার জন্যে একে বলা হয় কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন। এর উৎপাদন শুরু হয় আমেরিকার সান ডিয়েগো শহরে। স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর কয়েকটি কোরে বিন্যস্ত হয়। Dual core(২ টি কোর),Quad core(৪ টি কোর),Hexa core(৬ টি কোর),Octa core(৮ টি কোর). স্ন্যাপড্রাগনের সবচেয়ে পাওয়ারফুল লেটেস্ট প্রসেসর এখন পর্যন্ত SD 835. স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট SOC এ একটি সিপিইউ, জিপিইউ (অ্যাড্রিনো গ্রাফিক্স), ইমেজ প্রসেসর, মিডিয়া প্রসেসর, ডিএসপি (ডিজিটাল সংকেত প্রসেসর), সেলুলার মডেম ইউনিট, ওয়াইফাই মডিউল, রেডিও মডিউল, জিপিএস মডিউল ইত্যাদি থাকে। এই সকল মডিউল এবং প্রসেসর এর কারনে তাদের চিপ ব্যয়বহুল হয়।
ব্যাটারি লাইফ:
স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট অন্যান্য সব চিপসেট এর তুলনায় দক্ষতা পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে ভাল ব্যাটারি লাইফ দেয়। অর্থ্যাৎ, এটি পার্ফমেন্স ও যেমন ভালো দেয়, চার্জ ও সে তুলনায় বেশ কম খরচ করে।
কর্মক্ষমতা:
স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট সবচেয়ে ভাল পারফরমেন্স প্রদান করে। মাল্টি টাস্কিং, গেমিং, ভারী এবং নিবিড় কর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকারী। কম র্যামেও উরাধুরা পার্ফমেন্স দিতে সক্ষম।
Overheating সমস্যা:
স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর সাধারণত (স্ন্যাপড্রাগন 810 চিপসেট ব্যতীত) মিডিয়াটেক তুলনায় অনেক কম তাপ উৎপন্ন করে। অার তাছাড়া ও কিছু ডিভাইসে কিছু বেশী তাপ উৎপন্ন হয়, সেটা মুলত সে ফোনের সফটওয়্যার ও রমের কারনে হয়।
গ্রাফিক্স:
গ্রাফিক্স এ তারা তাদের নিজস্ব গ্রাফিক্স Adreno গ্রাফিক্স ব্যবহার করে। এখানে CPU ও GPU দুটো সবচেয়ে ভাল দক্ষতা প্রদান করে। এছাড়া স্ন্যাপড্রাগন SOC নিয়ে অনেক গবেষণা করে।
মিডিয়াটেক: (Mediatek/MTK)
এটি তাইওয়ানিজ চিপসেট। এরা দুই, চার কোর,আট কোর, দশ কোর এর মত প্রসেসর তৈরি করে।অর্থ্যাৎ ডেকা কোর পর্যন্তও তৈরি করে
ব্যাটারি লাইফ:
মিডিয়াটেক চিপসেট পারফরমেন্স আনুযায়ী অনেক বেশি ব্যাটারি ব্যবহার করে। বেশি কোর ব্যবহার এর কারনে ব্যাটারি লাইফ এর দিক থেকে এটি অনেক পিছিয়ে। সেই সাথে ফোন ব্যবহার না করলেও কোরে সখ্যা বেশী হওয়ার কারনে কিছুটা চার্জ নিতেই থাকে, যেটাকে বলা হয় Bettary Draining.
কর্মক্ষমতা:
পারফরমেন্স এ তাদের প্রসেসর বেশ ভাল। অতিরিক্ত কোরের কারণে মিডিয়াটেক প্রসেসর নিবিড় এবং ভারী কাজগুলো করতে সক্ষম এবং তারা মাল্টি এ খুব ভাল। পর্যাপ্ত র্যাম থাকলে এর কোর গুল সর্বোচ্চ দক্ষতা প্রদান করতে পারে। না হলে এটি মাঝে মাঝেই ঘুমিয়ে পরতে পারে!
Overheating সমস্যাঃ
এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এটি অনেক গরম হয়। অধিক কোর এর কারণে অধিক তাপ উৎপাদিত হয়। যেটা অনেক সময় ব্যাটারিতে এফেক্ট ফেলতে পারে।
গ্রাফিক্সঃ
মিডিয়াটেক মালি গ্রাফিক্স বাবহার করে। যা তৃতীয় পক্ষের গ্রাফিক্স, যার ফলে CPU ও GPU আলাদা হয় ও এর পারফরমেন্স সব মিলিয়ে খুব একটা ভালো টাইমিং দিতে পারে না। যার ফলে এর গ্রাফিক্স পারফরমেন্স ও তেমন ভাল না।
মিডিয়াটেকের জনপ্রিয়া ভার্সনগুলো:
Mediatek Processors – MT6752, MT6582, MT6592, MT6595, MT6732, MT6735, MT6737, MT6738, MT6750, MT6752, MT6753, MT6795, Helio X20, Helio X25.
এছাড়া মিডিয়াটেক কোন গবেষণা করে না, এরা শুধু সব অংশ কিনে SOC তৈরি করে বিক্রি করে।
Overall সব কিছু বিবেচনা করে বলা যে, দাম বেশি হলেও স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট সবচেয়ে ভাল। শুধু ভালো নানা, বেষ্ট আর মিডিয়াটেক ও খারাপ না, কারন, যখন স্ন্যাপড্রাগন ছিলো না তখন কিন্তু মিডিয়াটেক ই আমাদের স্মার্টফোন এর স্বাদ দিয়েছে। কিন্তু যখন সেইম বাজেটে স্ন্যাপড্রাগন থাকে তখন মিডিয়াটেক নেয়াটা জাস্ট বোকামি ছাড়া কিছু নয়। ☺
ভালো লাগলে টিউমেন্ট করতে পারেন আর, আমাকে ফেসবুকে 🙂 ফলো করতে পারেন।
আমি ইমতিয়াজ শুভ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 18 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
সুন্দর লিখেছেন।