السلام عليكم আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সাইটের সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের দিনের টিউন। তথ্যপ্রযুক্তির সাথে বোধ হয় নতুন করে আর পরিচয় করানোর দরকার নাই।কারন গোটা দুনিয়াটাই বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ও ব্যবহারে ঢামাঢোল অবস্থা। এক প্রযুক্তি আসছে তো, অন্যটি যাচ্ছে। যেন বলা যায় প্রযুক্তির জাদুর পরশ চলছে।যাইহোক আমরা জানি যে, বর্তমানে কোন বিষয় সেটা প্রযুক্তি হোক কিংবা প্রযুক্তির বাইরে হোক বিশ্ব রেকর্ড করতে গেলে তা মূলত গিনেস বুকে নাম উঠে আসে। যেমনঃ বিশ্বের দ্রযুতততম মানুষ, উুচ্চতম ভবন, আশ্চর্য সপ্তাবলী, গভীরতম স্থান ইত্যাদি। যাইহোক গিনেজের এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব না। বরং আলোচনা করব তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে গড়া কয়েকটি বিশ্ব রেকর্ড সম্পর্কে। তবে প্রযুক্তির দিক হইতে এই কথা বলা যায় যে, হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যার ভূবনে যেভাবে একের পর এক অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে তাতে এসব রেকর্ড যে খুব বেশী দিন টিকে থাকবে তা বলা যাচ্ছে না। খুব দ্রুতই একটি রেকর্ডের স্থান দখল নিচ্ছে আরেকটি। তাহলে এই মুহুর্তে প্রযুক্তির কয়েকটি ক্ষেত্রে কয়েকটি বিশ্বের রেকর্ডের সাথে পরিচিত হওয়া যাক।
জনপ্রিয় মাইক্রোসফটের মাইনক্রাফট ভিডিও গেইমস একটানা খেলার নতুন বিশ্ব রেকর্ডের দাবি করেছেন এক ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রিটেনের চেলটেনহাম এলাকার বাসিন্দা ওই ব্রিটিশ নাগরিকের নাম জো কেলি। তিনি একটানা ৩৫ ঘন্টা, ৩৫ মিনিট, ৩৫ সেকেন্ড সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের মাইনক্রাফট ভিডিও গেইমটি খেলেছেন। একটানা ভিডিও গেইসম খেলার বর্তমান রেকর্ড অস্ট্রিয়ার মার্টিন ফরেনলাইটনারের। তিনি ২০১১ সালে একটানা ২৪ ঘন্টা ১০ মিনিট ভিডিও গেইমস খেলে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন।
জো কেলি’র প্রায় ৩৬ ঘন্টা খেলা ভিডিও গেইমস ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস ইউটিউবে লাইভ প্রচার করা হয়েছে। জো কেলি’র একটি চলচ্চিত্র তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া তিনি একজন ব্যাকগ্রাউন্ড কন্ঠশিল্পী। কেলি গেইসম খেলা থেকে প্রাপ্ত ১৮০০ ইউরো ক্যান্সার গবেষণায় দান করেছেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি মাইনক্রাফট ভিডিও গেইমসটি খেলে থাকেন। সেসময় গেইমসটির প্রিডেভলাপমেন্ট ভার্সনটি কিনে খেলা শুরু করেন তিনি। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ভিডিও গেইমসটির ৫৪ মিলিয়ন কপি বিক্রি করেছে মাইক্রোসফট।
প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাহ্যিক রূপই সব কিছু নয়। অডিওর মত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের বেলায়ই ধরা যাক। আর এ জন্যই মাইক্রোসফট তাদের সদরদপ্তর রেডমন্ড, ওয়াশিংটনে একটি আন্তর্জাতিক মানের অডিও ল্যাব তৈরি করেছে।
পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সফটওয়্যার করটানার মত আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভাল মানের অডিওর উপর নির্ভরশীল। লি শ্যালে মুনরো, মাইক্রোসফট সার্ফেস ডিভাইসের সিনিয়র প্রকৌশলী বলেন এসব সিস্টেম কাজ করার জন্য মাইক্রোফোন থেকে শুরু করে স্পিকার পর্যন্ত ভাল মানের যন্ত্রপাতি দরকার। শুধু ল্যাব তৈরি করা নই ২০১২ সালে উইন্ডোজ ৮ এর জন্য অ্যাপফেস্ট তৈরির জন্যও প্রতিষ্ঠানটি গিনেজ বুকে নাম লিখায়। আর এজন্যই তারা পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত বা নীরব জায়গা তৈরি করেছে। এরই মধ্যে গিনেজ বুকেও বিশ্বরেকর্ডের স্থান দখল করে নিয়েছে এই চেম্বারটি।
পৃথিবীর ইতিহাসে কোন পাবলিক কোম্পানির করা সর্বোচ্চ মুনাফার নতুন রেকর্ড করেছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল।
'আইফোন সিক্স' এবং 'সিক্স প্লাস' নির্মাতা কোম্পানিটি বলেছে, গত বছরের শেষ তিন মাসে তারা মোট ১৮শ' কোটি ডলার মুনাফা করেছে। আইফোনের রেকর্ড বিক্রিই এর কারণ - বলেছে ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক কোম্পানিটি। ২০১৪ সালের ২৭শে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাস সময়ে তারা আইফোন বিক্রি করেছে ৭ কোটি ৪৫ লক্ষ। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক বলেছেন, আইফোনের চাহিদা ছিল 'বিস্ময়কর'। বাজার বিশ্লেষকদের প্রত্যাশাও ছাড়িয়ে গেছে এই বিক্রি। তবে অ্যাপলের আইপ্যাড বিক্রি হতাশ করেছে এবারও। গত বছর এর বিক্রি কমে গেছে প্রায় ১৮ শতাংশ।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই ব্রিটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোসফ্টের সার্টিফিকেট পকেটে পুরে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আয়ান কুরেসি।মাইক্রোসফ্টের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন দেশ থেকে বাছাই করা শিশুদেরকে নিয়ে কম্পিউটার সংক্রান্ত পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্বরেকর্ড করল আয়ান। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তের বিশ্বের সবথেকে কম বয়সি কম্পিউটার প্রফেশনালের তকমা ছিনিয়ে নিয়েছে এই পাকিস্থানি বংশোদ্ভূত শিশুটি। লণ্ডন প্রবাসী কভেন্ট্রির বাসিন্দা এই শিশুর পিতা পেশায় একজন আইটি কনসালট্যান্ট। স্ব্ভাবতই তাদের বাড়িতেও ভীষণ রকম তথ্য-প্রযুক্তির চর্চা রয়েছে। তার দাবি, বাড়িতে বসে মাত্র ৫ মাসেই সে সফ্টওয়্যার,হার্ডওয়ার এবং প্রোগ্রাম ইনস্টল করা শিখেছে।
মাইক্রোসফ্টে থেকে এই সার্টিফিকেট পাওয়ার পর বিবিসিকে এক সাক্ষাত্কারে ক্ষুদে কম্পিউটার মাষ্টার আয়ান জানিয়েছে, পরীক্ষাটি ভীষণ কঠিন হলেও তার কাছে খুব মজার ছিল। সে ভীষণ ভাবে ব্যাপারটা উপভোগ করেছে। বড় হয়ে ব্রিটেনে একটি টেকনিক্যাল হাব গড়ে তোলার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছে সে।
টেক্সাসের স্টিফেনির বাবা একজন মহাকাশচারী। তার বেশিরভাগ সময়টাই কাটে নাসার স্পেস স্টেশনে। বাড়িতে মেয়েকে ফোন-এস এম এস-এর বালাই নেই। এখন মেয়ে কীভাবে বাবাকে জানাবে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি? মেয়ে তাই ঠিক করল, বাবাকে এমন এক মেসেজ পাঠাবে যা পৃথিবীর বুকে আঁকা হলেও দেখা যাবে মহাকাশ থেকে। তখন কী আর স্টিফেনি জানত, যে এই মেসেজই তার নাম তুলে দেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে? মেয়ের লেখা মেসেজটি, যা পড়া যাচ্ছে মহাকাশ থেকেও ১৩ বছরের স্টিফেনি তাই হুন্দাইয়ের গাড়ি নিয়ে চলল নেভেদার ডেলামার ড্রাই লেকে। গাড়ির চাকায় ঝড় তুলে শুকনো হ্রদের বুকে লিখে দিল, আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা। ১১টা সেডান গাড়ি সাহায্য করল স্টিফেনিকে। ৫৯ মিলিয়ন স্কোয়ার ফুটের এই বার্তা স্পষ্ট পড়া যাচ্ছে নাসার স্পেস স্টেশন থেকেও।আজ পর্যন্ত বিশ্বের ইতিহাসে এটাই টায়ারের সাহায্যে আঁকা সবথেকে বড় বার্তাবাহক ছবি।
ইন্টেল তৈরি কোর আই সেভেন হচ্ছে এই মুহুর্তের দ্রুততম ডেস্কটপ প্রসেসর। এটি 4.00 গিগাটার্জ গতিতে চলতে পারে। পূর্ববর্তী ইন্টেল প্রসেসর হইতে এটি ৪০ শতাংশ ভাল পারফরম্যান্স করেছে। ওভারক্লকড সিপিইউএর ক্ষেত্রে অবশ্য গতির রেকর্ড গড়েছে এএমডির ফেনম এক্স ফোর।
জাপানের ডোকোমোর অধিকারে আছে এই বিশ্বরেকর্ডটি। এই মুহুর্তে তাদের সেবা গ্রহীতার সংখ্যা হচ্ছে সাড়ে চার কোটি, যা একটি গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড্র বটে। ২০০৬ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বের সর্ববৃহত তারবিহিন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মুকুট পরে ডোকোমো, এখনও বহাল তবিয়তে আছে। তাদের ওয়্যারলেস সেবার নাম হচ্ছে আইমোড।
2001 সালে মাইক্রোসফট এর এমএসএন ওয়েবকাস্ট কনসার্ট প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেটেরে মাধ্যমে দেখেন। এটিও একটি গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। গত ৯ বছরের বেশী সময় ধরে টিকে আছে এ রেকডৃটি। সরাসরি এই ভিডিওটি msn.com এবং msn.co.uk সরাসরি প্রদর্শিত হয়।
২০০৮ সালে বিশ্বের বৃহত্তম ডাটাওয়্যার হাউস হিসাবে গিনেজ বুুক অব ওয়ার্ল্ডস রেকর্ডে নাম লেখায়ু সাইবেস আইকিউু অ্যানালিটিক্স সার্ভার। সার্ভারে চলা এই ডাটা অয়্যারহাউসে ১ পেটাবাইট পরিমান ইনপুট ডাটা সংরক্ষিতি আছে। ১ পেটাবাইট ১,০০০,০০০ গিগাবাইটের সমান, অংকে যাকে লিখতে হবে ১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ বাইট হিসাবে। এই ডাটা ওয়্যার হাউসে ৬ ট্রিলিয়ন সারি ট্রানজেকশনাল ডাটা এবং ১৮৫ মিলিয়ন ডকুমেন্ট সংরক্ষিত আছে।
বিশ্বের বৃহত্তম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট এর নাম টেরেস্টার স্যাটেলাইট -১। এটিকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এই বছরই। উদ্দেশ্য হচ্ছে মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সেবা প্রদান। স্যাটে লাইটটির ওজন প্রায় ৭ হাজার কেজি, এতে আছে ১৮ মিটার দীর্ঘ একটি এন্টেনা আছে যেটি য গিগাহার্টজ স্পেকট্রামে সিগনাল প্রেরন করে।
স্টিলব্কস ডিজিটাল ম্যাট্রিক্স স্টোরেজ সুইচ ৩০০০ এইক সাথে ৫১২ টি এমপিইজি ফোর ভিডিও ফিড নিয়ে কাজ করতে পারে, ১.৫ জিবিপিএস গতিতে। এটিকে ব্যবহার করা হয় ভিডিও সার্ভেইল্যান্সের জন্য। একটিমাত্র সেন্টার কেবিনেটে অবস্থানরত এই মিডিয়া সুইচটি নিজের পারফরম্যান্সকে নিখূঁত রাখার প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোড নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
বিশ্বের সব চাইতে হালকা মোবাইল ফোনের নাম হচ্ছে মোডু। অ্যাপল এর জনপ্রিয় আইফোনের ওজন যেখানে ১৩৫ গ্রাম, মোডুর ওজন সেখানে মাত্র ৪০ গ্রাম। মাত্র ২.৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য িএবং ১.৪ প্রস্থবিশিষ্ট মোডু বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মোবাইল ফোনও বটে। এ ফোনে আছে ২ গিগাবাইট বিল্টইন ফ্লাশ মেমোরি। এর স্কীনের আকার ১.৩ ইঞ্চি।
আলোচনার একদম শেষপ্রান্তে। উপরোক্ত আলোচনাতে যে টপিক গুলো রিভিউ করেছি তার সব কয়টি গিনেসবুকস রেকর্ডে স্থান করেছিল। তার মধ্য বেশ কয়েকটি এখনো শীর্ষ স্থানে বিদ্যমান আছে বাকি কিছু হয়ত নতুন রেকর্ডের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। আসলে গিনেস বুকর্স রেকর্ডে কোন বিষয়ে স্থান করতে হলে এমন উঠা-নামাটাই মূখ্য বিষয়। কারন আজকের যে বিষয়টি শীর্ষ স্থান লাভ করছে আগামী কিংবা ভবিষ্যতে উক্ত বিষয় কিংবা ক্যাটাগরী পূর্ববর্তীর রেকর্ডটি অতিক্রম করে তাহলে প্রথমটি এমনিতেই নিচের স্থানে যাবে এবং বর্তমানটি শীর্ষ স্থানে থাকবে। যাইহোক বিষয়টি তুঙ্গে নই, কথা হল একবার যখন গিসেস বুকে নাম উঠে সেটি একবার হলেও সবার মুখে রটেই থাকবে। সুতরাং উপরোক্ত টেক রিভিউয়ের দিক হতে গিনেজবুকে রেকর্ডকৃত বিষয়গুলো কিছুটা হলেও আমাদেরকে চমকপ্রদ করতে পারবে বলে মনে করি। পরিশেষে আজ এখানেই শেষ করছি। সবাই ভাল থাকুন।- আল্লাহ হাফেয-
আমি এএমডি আব্দুল্লাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 157 টি টিউন ও 1046 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
সম্মানীয় ভিজিটর বন্ধুগন! সবাইকে আন্তরিক সালাম ও ভালবাসা। আশা করি ভাল আছেন। পর সংবাদ যে, আমরা একটি ব্লগ সাইট তৈরি করেছি। সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম শিক্ষা ও প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি, শিক্ষা, কম্পিউটার বিষয়ক যেমনঃ অনলাইন ইনকাম, ফ্রিল্যান্স, টিউটোরিয়াল, মুভি, গেমস, সফটওয়্যার, ভ্রমন, ইতিহাস, ভূগোল, কার্টুন, ধর্ম, টেক সংবাদ, এবং সংবাদপত্র ফিউচার...
অনেক ভালো হয়েছে লেখাটা।