মহাজাগতিক মনোজগত(সায়েন্স ফিকশান) পর্ব ১
দু’সপ্তাহ আগের কথা। কক্সবাজারের সৈকতে ছাউনি পেতে শুয়ে আছি। আমার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে পিয়া‚ আমার স্ত্রী। দীর্ঘক্ষণ সমুদ্রে দাপাদাপি করে ক্লান্ত‚ ভেজা‚ নরম শরীর নিয়ে সে জড়িয়ে ধরেছে আমায়। বিকেলের পড়ন্ত রোদ‚ সাগরের শো শো আওয়াজ‚ বাহুডোরে ললনা; আহ‚ একেই বলে জীবন!
পিয়া অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ‚ ঘুমিয়ে পড়েছে বলে ভ্রম হয়। কিন্তু আমি জানি ও ঘুমোয়নি। পাশাপাশি থাকার‚ একসঙ্গে থাকার আনন্দটুকু উপভোগ করছে।
“এক্সকিউজ মি স্যার‚ আপনি কি মেজর দীপ্ত আহমেদ?”
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি কঠিন চেহারার একটা মেয়ে পুরোদস্তুর আর্মির পোষাক পরে দাড়িয়ে আছে।
“হ্যা। কেন?”
“স্যার‚ আপনার জন্য একটা মেসেজ আছে।” সে একটা চিরকূট বাড়িয়ে দিল আমার দিকে।
আমি ছুটিতে আছি দু’দিন হয়েছে। আরও তিন দিন বাকী ছুটি শেষ হতে। আমি কাউকে জানাইওনি যে আমি সস্ত্রীক কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছি‚ তারপরও আর্মি আমাকে ঠিক জায়গায় খুঁজতে এসেছে। তারমানে হলো আমার উপর নজর রাখা হয়েছে। অর্থাৎ‚ খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটতে যাচ্ছে আমাকে ঘিরে।
আমি উঠে বসলাম। পিয়া বিরক্ত হয়েছে বেশ। হবারই কথা। মাত্র ক’দিন হলো আফ্রিকা থেকে ফিরেছি নিয়ন্ত্রণ কমিটির শান্তি মিশন শেষে। এর আগে ছিলাম পাকিস্তানে। এতদিন পর দেশে ফিরতে না ফিরতেই‚ ছুটি শেষ হতে না হতেই আবার যদি কাজে যেতে হয়‚ পিয়া আমাকে ক্ষমা করবে না।
তবে কিছু করারও নেই অবশ্য। বর্তমানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী নিয়ন্ত্রণ কমিটি‚ বিজ্ঞান কাউন্সিলের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান তারা। বিভিন্ন দেশে টেরোরিজম নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণ কমিটি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে থাকে। তিন বছর হলো নিয়ন্ত্রণ কমিটির হয়ে বিভিন্ন মিশনে যাচ্ছি আমি। কল্পনাতীত স্যালারি‚ অসংখ্য সুযোগ সুবিধা দেয়া হলেও‚ সমস্যা হলো বছরের অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকতে হয়।
আমি ইউনিফর্ম পরা মেয়েটার হাত থেকে চিরকূটটা নিলাম। টাইপ করে লেখা চিরকূট। পড়লাম।
“মেজর দীপ্ত‚ জানি ছুটিতে আছো তুমি‚ তোমাকে বিরক্ত করাটা একদমই উচিত হচ্ছে না। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ছিল তোমার সাথে। কথা দিচ্ছি মাত্র দু’ঘন্টার বেশি সময় নেব না। একটা কপ্টার পাঠাচ্ছি। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে চলে এসো। তোমার স্ত্রীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
ইতি-মেজর জেনারেল আজাদুর রহমান।”
আমি পড়া শেষে স্থানুর মতো বসে রইলাম। স্বয়ং সেনাবাহিনী প্রধান আমাকে এমন আনঅফিসিয়াল চিঠি পাঠিয়েছেন যখন‚ তখন বোঝাই যায় এর মধ্যে অনেক গভীর কোন ব্যাপার আছে।
হঠাৎ রোটরের ক্ষীণ আওয়াজে সম্বিত ফিরলো। আধুনিক হেলিকপ্টারগুলো প্রায় নিঃশব্দে চলাচল করতে পারে। তিন পাখাওয়ালা একটি দ্রুতগামী হেলিকপ্টার আমাদের ছাউনি থেকে ৩০ ফুট দূরে ল্যান্ড করেছে এইমাত্র।
দাড়িয়ে থাকা ইউনিফর্মওয়ালি তখন বলল-“স্যার‚ আপনি চিন্তা করবেন না। ম্যাডামকে হোটেলে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার।”
“না না‚ আমিই ওকে হোটেলে পৌঁছে দেই। তাছাড়া এই পোষাকে…”
“কোন অসুবিধা নেই স্যার। আমার কমান্ডিং অফিসার বলেছেন আপনাকে অত্যন্ত দ্রুত ক্যান্টনমেন্ট পাঠিয়ে দিতে। জেনারেল আজাদুর রহমানের সময়ের টানাটানি‚ তাই…!”
আমি পিয়ার কপালে চুমু খেয়ে কপ্টারে উঠে বসলাম। ওর বিষণ্ণ চোখ দু’টো আরো বিষণ্ণ হয়ে উঠল।
কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট একশো কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দূরত্বে অবস্থিত‚ কিন্তু যেতে আধাঘন্টারও কম সময় লাগল।
বালি আর পানিতে মাখামাখি শর্টপ্যান্ট পরে‚ আধন্যাংটো হয়ে যখন জেনারেলের কামরায় ঢুকলাম‚ স্যালুট দিলাম‚ তখন রীতিমতো লজ্জায় লাল হবার মতো অবস্থা আমার।
জেনারেল আজাদুর রহমান একটা বড়সড় রিভলভিং চেয়ারে বসে আছেন। বিশাল বপু নিয়ে‚ গোঁফের কিনারায় আঙুল বুলাতে বুলাতে আমাকে বললেন-” বসো দীপ্ত!”
বসলাম আমি। জিজ্ঞেস করলাম-
“স্যার‚ খুব গুরুতর কিছু ঘটেছে?”
“ঠিক তা নয়। নিয়ন্ত্রণ কমিটি আর বিজ্ঞান কাউন্সিল তোমাকে নতুন একটা মিশনে পাঠাতে চাচ্ছে। ছুটি শেষ হলেই তুমি আমেরিকা যাচ্ছ।”
“মিশনটা কোথায় স্যার? আমেরিকাতেই?”
“জানি না। আমাকে বলা হয়েছে টপ সিক্রেট মিশন! তবে এটুকু জানি যে সারা পৃথিবী থেকে বার জন অফিসারকে ডেকেছে তারা‚ সবাই বাঘা বাঘা অফিসার। অনেক যাচাই বাছাই করে নেয়া হয়েছে এদের। কাজেই বুঝতে পারছ‚ খুব বড় মাপের প্রজেক্ট এটা। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ কমিটি‚ বিজ্ঞান কাউন্সিল এবং ইউএস সরকার; সবাই একসঙ্গে এটার পেছনে খাটছে যখন!”
“এত গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে একজন ছাপোষা বাঙালি মেজরকে নিচ্ছে কেন ওরা স্যার?”
“উহু! নিজেকে এত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করো না। অহেতুক বিনয় বাজে একটা জিনিস। গত তিন বছরে সারা পৃথিবী জুড়ে যে ক’টা মিশনে তুমি গিয়েছ‚ সব ক’টা ১০০% সাকসেসফুল। তোমার পারফরমেন্স তাদের নজর কেড়েছে!”
আমি মাথা চুলকে বললাম-
“ইয়ে…মানে স্যার‚ একটা প্রশ্ন ছিল।”
“বলো!”
“শুধু এটা বলার জন্য আপনি ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন? ব্যক্তিগত ভাবে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন? আপনি একটা ফোন করলে আর্মির যে কেউ…”
আমাকে হাত তুলে থামিয়ে দিলেন তিনি। গম্ভীর কন্ঠে বললেন-
“না‚ শুধু এটুকু নয়। তোমার ভাগ্যে যে সম্মান জুটেছে‚ আজ পর্যন্ত কোন বাঙালির ভাগ্যে জোটেনি।”
“স্যার? কি সেটা?”
“এই গুরুত্বপূর্ণ মিশনে অংশগ্রহণ করার পুরস্কার হিসেবে‚ তোমাকে লাল ব্যাজ দেওয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কমিটি থেকে। আজ থেকে তুমি একজন সুপ্রিম পার্সন। কারো হাতে লাল ব্যাজ তুলে দেয়ার ক্ষমতা শুধু সেনাবাহিনী প্রধানের কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের থাকে। সে জন্য আমাকেই আসতে হলো। কাউকে সুপ্রিম পার্সন ঘোষণা করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার হাতে ব্যাজ তুলে দেয়ার নিয়ম।”
আমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম জেনারেলের হাতে ধরা ত্রিকোনাকার লাল ব্যাজটার দিকে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-
“লিটারেলি‚ এখন তোমার ক্ষমতা আমার চেয়ে অনেক বেশি!”
আমি কাঁপা হাতে লাল ব্যাজটা নিলাম জেনারেলের হাত থেকে। আনন্দিত হবার পরিবর্তে বেশ উদ্বিগ্ন হলাম আমি। কথায় বলে- উইথ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপন্সিবিলিটি। এত বড় ক্ষমতা দিয়ে কত বড়‚ বিপদজনক দায়িত্ব ঘাড়ে চাপাতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ কমিটি‚ কে জানে!
তৃতীয় পর্ব পড়তে science everything team এর সাথে থাকুন।চোখ রাখুন টেকটিউনসে.
our online magazine site
আমি সাঈদ মোহাম্মদ ফাহিম আবরার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 67 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি এস এম ফাহিম আবরার। ভালবাসি প্রযুক্তিকে জানতে। নিজের জানা জিনিস অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আমার ফেসবুক আইডি http://fb.com/lazyfahim
onek sundor.