মহাজাগতিক মনোজগত(সায়েন্স ফিকশান) পর্ব ২
আমি বেশ অস্বস্তিবোধ করছি। করার কারণও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটার ক্যাম্পাসে হাটছি আমি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা ড্যাব ড্যাব করে দেখছে আমাকে। এটাই অস্বস্তির কারণ।
একজন বাঙালি কোন আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে হাটাহাটি করতেই পারে‚ সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তার গায়ে যদি আমেরিকান আর্মির ইউনিফর্ম থাকে‚ তাহলে বোধহয় লোকের কিছুটা মনোযোগ তার দিকে সরে আসে। তবে আমার গায়ে আমেরিকান আর্মির পোষাক আছে বলেই যে সবাই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে‚ বিষয়টা এমনও নয়।
আমার কোটের বুকপকেটের উপর একটা লাল রঙের ব্যাজ লাগানো। এটাই সবার আগ্রহের কারণ। সারা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত‚ অর্থাৎ ২১২০ সাল পর্যন্ত লাল ব্যাজধারি মানুষের সংখ্যা মাত্র একশো সতের জন। সামরিক কিংবা বেসামরিক; যার বুকেই এই লাল রঙের ব্যাজ লাগানো থাকবে‚ তার ক্ষমতা প্রায় ঈশ্বর তুল্য। এদেরকে বলা হয় সুপ্রিম পার্সন। তারা যা খুশী তাই করতে পারে‚ যেখানে খুশী যেতে পারে‚ যাকে খুশী নির্দেশ দিতে পারে। একমাত্র বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি ইভানোভিচ এবং নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রেসিডেন্ট থমাস হুগো ছাড়া আর কারো নির্দেশ মানতে তারা বধ্য নয়।
খুব‚ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা নিয়োজিত‚ যাদের একটা সিদ্ধান্তে দুনিয়া ওলট পালট হয়ে যেতে পারে‚ তাদেরকেই এই লাল ব্যাজ দেয়া হয়।
সুপ্রিম পার্সনদের দেখা পাওয়া একটা দুরূহ ব্যাপার‚ যেহেতু এদের সংখ্যা খুব কম এবং ক্ষমতা অপরিসীম! সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তাকর্মী আমার দিকে ছুটে এলো। লাল ব্যাজটা দেখে খুব সম্ভ্রমের সঙ্গে জানতে চাইল-
“স্যার‚ আপনি কাউকে খুঁজছেন?”
“হ্যা। আমি জীনতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ডক্টর উইলিয়াম জোনকে খুঁজছি। কোথায় পাওয়া যাবে তাকে?”
নিরাপত্তাকর্মীটি বিনীত ভাবে বলল-
“আমার সঙ্গে আসুন স্যার। আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে।”
ডক্টর জোন নোবেল পাওয়া বিজ্ঞানী‚ দুনিয়াজুড়ে নামডাক তার। তার সঙ্গে দেখা করাটা সাধারণ মানুষের জন্য মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু লাল ব্যাজের ক্ষমতার কাছে এটা তুচ্ছ একটা বিষয়।
আমি নিরাপত্তাকর্মীর পেছন পেছন হাটতে থাকলাম। সবুজ ঘাস বিছানো মাঠ পেরিয়ে একটি বাদামি রঙের ভবনে ঢুকলাম আমরা। ভবনের তৃতীয় তলায় ডক্টর জোনের অফিস। অফিসের সামনে এসে নিরাপত্তাকর্মীটি ইতস্ততঃ ভাবে বলল-
“স্যার কিছু মনে না করলে এখানে একটু অপেক্ষা করবেন?”
সে এমনভাবে প্রশ্নটা করল‚ যেন একজন সুপ্রিম পার্সনকে অপেক্ষা করানোর অপরাধে এখনই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে (যদিও আমি চাইলে সেটা আসলেই সম্ভব! বলতে বাধা নেই‚ বিষয়টা চিন্তা করে এক সেকেন্ডের জন্য পৈশাচিক উল্লাস বোধ করলাম।)। তার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। একদিকে একজন দোর্দন্ডপ্রতাপ সুপ্রিম পার্সন‚ আরেকদিকে বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী; দুই প্রবল ব্যক্তিত্বের মাঝে ফেঁসে গেছে সে। আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম-
“কোন অসুবিধা নেই‚ আমি অপেক্ষা করছি। টেইক ইওর টাইম।”
ড. জোনের কামরার সামনের করিডোরটাতে হাসপাতালের মতো কিছু চেয়ার পাতা। এখানে ওখানে কয়েকটা ফুলের টব। জেসমিন ফুলের মন মাতানো গন্ধ আসছে টবগুলো থেকে। আমি একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। এখান থেকে ড. জোনের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীর কথোপকথন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। গম্ভীর গলায় ড. জোন নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞেস করছেন-
“কি চাই?”
“একজন আর্মি অফিসার আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান স্যার। আপনার অফিসের সামনে বসে….”
“পরে‚ বিকেলের দিকে আসতে বলল।”
“বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্যার। দয়া করে যদি একটু দেখা করেন!”
“বললাম তো বিকেলে আসতে বলো। বিরক্ত করো না।”
“ইয়ে মানে স্যার‚ উনি একজন সুপ্রিম পার্সন‚ বুকে লাল ব্যাজ ঝুলছে! ওনাকে কি করে বলি…”
“সুপ্রিম পার্সন! আশ্চর্য! বলা নেই‚ কওয়া নেই‚ কোন এপয়েন্টমেন্ট নেই‚ একজন সুপ্রিম পার্সন চলে আসল আমার কাছে! আচ্ছা আসতে বলো তাকে।”
আমি নিরাপত্তাকর্মী বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম‚সে বেরোতেই ঢুকে পড়লাম কামরায়। ঢুকতেই দেখি ড. জোনও আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন। আমি তার সঙ্গে করমর্দন করে ডেস্কের ওপাশে চেয়ার টেনে বসতেই তিনি জিজ্ঞেস করলন-
“আচ্ছা ক’দিন হলো আপনি লাল ব্যাজ পেয়েছেন?”
এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হলাম। ছোট করে উত্তর দিলাম-
“দু’সপ্তাহ!”
“আচ্ছা!” বলেই সে এমন ভাবে মাথা নাড়ল যেন বলতে চাইছেন‚ পুরান পাগলে ভাত পায় না‚ নতুন পাগলের আমদানি!
আমি অস্বস্তির সঙ্গে খুক খুক করে কেশে গলা পরিস্কার করে বললাম-
“ডক্টর জোন‚ আমার নাম দীপ্ত আহমেদ‚ মেজর দীপ্ত আহমেদ। যদিও এই মুহুর্তে ইউএস আর্মির হয়ে কাজ করছি‚ কিন্তু আসলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য আমি। বিজ্ঞান কাউন্সিল‚ নিয়ন্ত্রণ কমিটি এবং ইউএস আর্মির যৌথ উদ্যোগে একটা মিশনে এসেছি আমি।”
“কেমন মিশন?”
“দুঃখিত ডক্টর‚ এটা টপ সিক্রেট।”
“আহ‚ টপ সিক্রেট! পৃথিবীতে টপ সিক্রেটের নামে যা হচ্ছে আজকাল‚ সেগুলো বেশিরভাগই টপ বুলশিট!”
“আপনি বেশ অফেনসিভ কথা বলছেন ডক্টর!”
“ওহ স্যরি! আপনার সো কলড টপ সিক্রেট মিশনে কেমন করে সাহায্য করতে পারি?” তার গলায় স্পষ্ট ব্যাঙ্গ ঝরে পড়ল।
“আমি এসেছি ব্যক্তিগত কারণে‚ আমার মিশনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই!” বলেই আবার ইতস্তত করে বললাম-“নাকি আছে? ঠিক বুঝতে পারছি না!”
“আপনাকে দ্বিধান্বিত মনে হচ্ছে ইয়ংম্যান। আমরা‚ বিজ্ঞানীরা সব সময় একটা কথায় বিশ্বাস করি-Doubt is often better than overconfidence. কাজেই ঝেড়ে কাশতে পারেন।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম- “যদি পারতাম!” বলেই চুপ মেরে গেলাম আমি। ডক্টর জোন আবার সেই ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। কিছুক্ষণ পর লম্বা দম নিয়ে বললাম-
“ডক্টর জোন‚ আমি কিন্তু আপনার অনেক বড় ভক্ত। অনেক ব্যস্ত স্কিডিউলের মধ্যেও আমি আপনার সেমিনারগুলোতে এটেন্ড করার চেষ্টা করতাম সবসময়। জীনতত্ত্বে আমার খুবই আগ্রহ। আমার সবসময়ই মনে হয় যে আমি আর্মিতে না ঢুকলে কোন জীনতত্ত্ববীদ হতাম।”
“আই সি!”
“যাই হোক‚ কাজের কথায় আসি। আপনি আপনার শেষ পেপারে এক ধরনের জেনেটিক্যালি মডিফায়েড গাছের কথা বলেছিলেন‚ যে গাছ কেপলার থ্রি টুয়েন্টি সেভেন গ্রহটির পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারবে।”
“হ্যা‚ ভীনগ্রহে পৃথিবীর উদ্ভিদের বিকাশ ও বিবর্তনের যে স্বপ্ন বিজ্ঞানীদের ছিল এতদিন‚ সেটা আমি পূরণ করতে যাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যেই উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের সঙ্গে এই গাছটার কিছু চারা ও বীজ নিয়ে কেপলার থ্রি টুয়েন্টি সেভেন গ্রহটির উদ্দেশে যাত্রা করতে যাচ্ছি আমি!”
“শুনে খুশী হলাম ডক্টর। একটা প্রশ্ন ছিল।”
“প্রশ্ন? করুন!”
“আপনার এই গাছের একটা নমুনা আমি ন্যাশনাল বুটানিক্যাল গার্ডেনে দেখেছি। গাছের পাতাগুলোর রং ছিল হলুদাভ সবুজ।”
“হ্যা‚ তো?”
“প্রশ্ন হচ্ছে‚ এগুলোর পাতা কি গাঢ় সবুজ বা নীলাভ সবুজ হতে পারে?”
ডক্টর জোন একটু ভেবে বললেন-
“না‚ পারে না। কারণ নাইট্রোজেন আয়নের অনুপাত….”
“স্যার আমি ব্যাখ্যা শুনতে চাচ্ছি না‚ তেমন একটা বুঝবও না শুনে। আপনি কি নিশ্চিত যে গাছের পাতাগুলো গাঢ় সবুজ বা নীলাভ সবুজ হতে পারে না?”
“আলবাৎ নিশ্চিত!”
“ধন্যবাদ। উঠি।”
“আপনি শুধু এটুকু জানার জন্যই এসেছিলেন?”
“হ্যা। একটা অনুরোধ‚ আমার সঙ্গে এই সাক্ষাতের কথা আপনি গোপন রাখবেন।”
আমি চিন্তাগ্রস্ত হলাম বেশ। বেরিয়ে এলাম ডক্টর জোনের অফিস থেকে। বাতাসে গন্ধ পাচ্ছি বিপদের।
দ্বিতীয় পর্ব পড়তে science everything team এর সাথে থাকুন।চোখ রাখুন টেকটিউনসে.
our online magazine site
আমি সাঈদ মোহাম্মদ ফাহিম আবরার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 67 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি এস এম ফাহিম আবরার। ভালবাসি প্রযুক্তিকে জানতে। নিজের জানা জিনিস অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আমার ফেসবুক আইডি http://fb.com/lazyfahim
Awesome……………. Waiting for next ………