ক্রিং...ক্রিং...করে বেজে উঠল ছুটির ঘন্টা। সবাই ক্লাস থেকে বেরোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
"তোমাদের আবারো বলছি হাতে আর বেশী সময় নেই তাই তোমরা তোমাদের প্রজেক্ট তৈরির কাজে আজকে থেকেই নেমে পড়।" ক্লাসের সবাইকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেন বিঙ্গান স্যার মি. করিম। সবারই আগ্রহ সামনে মাসের বিঙ্গান মেলা নিয়ে। কিন্তু ক্লাসের সেরা ছাত্র জুরেক ক্লাস থেকে বের হল চোখ মুছতে মুছতে। হঠাত্ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলো জুরেক।
-"করিম স্যার আপনি?"
পিছে ঘুরে জিঙ্গেস করল সে।
-হ্যাঁ, আমি। আমি জানি এবারের মেলায় তোমার অংশ গ্রহন করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু আমি চাইনা তুমি এভাবে পিটারের কাছে হেরে যাও। আমি চাই তুমি তাকে দেখিয়ে দাও যে তুমিও তার চেয়ে কম নও।
-"আমি এবার বিঙ্গান মেলায পার্টিসিপেট করবনা, একথা আপনাকে কে বলল স্যার? আমিতো একটু মন খারাপ করছিলাম এই ভেবে যে, আমি গতবার এত কষ্ট করে পিটারের সাথে প্রজেক্টা করলাম। আর সে শুধু লুকিয়ে নিজের নামে প্রজেক্টা জমা দিল।" মুখে হাসি ফুটিয়ে কথাগুলো বলল জুরেক।
-"সাবাস! আমিতো এটাই চেয়ে ছিলাম জুরেক। আর ঠিকিতো, গতবার তুমি মেলায় কোন প্রজেক্ট
জমা দিতে পারনি তো কি হয়েছে, এইবার চেষ্টা কর। কথায় আছে না 'একবার না পারিলে দেখ শতবার'। আরেকটা কথা,
আমার ইচ্ছাযে এইবারের প্রজেক্টা নিজেই তৈরি করার চেষ্টা কর।" জুরেককে উত্সাহিত করার চেষ্টা করলেন তিনি।
-ঠিক আছে স্যার, এবার আমি নিজেয় চেষ্টা করব।
-ঠিক আছে, তাই কর।
এখন ঘড়িতে ৫ টা বাজে। জুরেকের ভাইয়ার বাড়ি ফিরার সময় হয়ে গেছে। জুরেক তার ভাইয়ার জন্যই অপেক্ষা করছে। তার ভাইয়া একজন ইঞ্জিনিয়ার। 'মেকার অব টেকনোলজি' এওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি বিশ্বের সবচেয়ে লজিকাল রোবট তৈরির জন্য। যাই হোক আজকে তার ভাইয়ার কাছে একটা জিনিস চাইবে। আজকে একটু দেরী করেই বাড়ি ফিরল জুরেকের ভাইয়া। জুরেককে আজকে একটু এক্সাইটেড দেখে তার ভাইয়া এর কারন জানতে চাইল। জুরেক তাকে সব খুলে বলল।
-"বেশ তো, তাইলে তোর প্রজেক্টের কাজ শুরু করে দে।" খুশী হয়ে হয়ে বলল তার
ভাইয়া।
-কিন্তু এইজন্য তোমার হেল্প দরকার ভাইয়া।
-কিসের হেল্প?
-মানে ভাইয়া আমি তোমার ল্যাবটা কিছু দিনের জন্য ইউজ করতে চাই। কারন প্রজেক্টার জন্য তোমার ল্যাব থেকে কয়েটা দামী ইন্সট্রুমেন্টের দরকার!
-ও এই কথা, তো তুই ইউজ কর। কিন্তু তোর প্রজেক্টা সম্বন্ধে কি কিছু জানতে পারি?
-অবশ্যই ভাইয়া। আমি আসলে একটা সাইবারনেটিক হ্যান্ড
বানাতে চাই।
-তাই নাকি! তো তোর এই
প্রজেক্টা চয়েস করার কারনটা জানতে পারি কি?
-ভাইয়া তুমিতো জানই আব্বুআম্মু
মারা যাওয়ার পর আমি তোমার আদর্শেই বড় হয়েছি। আর তোমার রোবটিক্স নিয়ে পড়াশুনা আমাকে এই প্রজেক্টা তৈরী করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাছাড়া আমার প্রজেক্টা যদি ফার্স্ট হয়, তাহলে এই রকম
আরো কয়েকটা প্রজেক্ট করার জন্য আমি টাকা পাব। আর আমি চাই এই গুলো গরীব লোকদের বিনামূল্যে দান করতে যাদের দুর্ঘটনায় হাত নষ্ট হয়েছে, যারা এরজন্য কাজ করতে পারে না।তাহলেই আমার এই প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে আমি মনে করি।
-নাইস! ভেরি নাইস আইডিয়া। এই জন্য তোর যা যা দরকার তা আমার কাছ থেকে চেয়ে নিবি।
-থ্যাংকস ভাইয়া।
এর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই অনেক পরিশ্রমের পর জুরেকের তার প্রজেক্ট রেডি করে ফেলেছে। হাতে এখনো অতিরিক্ত ১০ দিন আছে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজকেই তার প্রজেক্ট সারদের দেখিয়ে একটা সিগনেচার নিয়ে আসবে।তাহলে কেউ যদি তার মত কোন প্রজেক্ট তৈরি করে তাহলে জুরেকেরটার বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই আজ একটু সকালে স্কুলের পথে রওনা দিতে হবে।তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করে বাইরে বেরুতে যাবে সে, এমন কার যেন ফোন আসল।
-হ্যালো কে? ফোনটা রিসিভ করে জিঙ্গেস করল সে।
-কি খবর জুরেক?
-পিটার!
-হ্যাঁ আমি।
-কেন ফোন করেছিস তুই এইখানে?
-এমনি, শুনলাম তুই নাকি আজকাল খুব বিজি আছিস?
-আমি বিজি থাকি আর হিজি থাকি, এই তোকে মাখা খারাপ করতে হবে না।
-ঠিক আছে করবনা। কিন্তু একটা কথা তুই ভাল করে মনে রাখ, তুই যতই চেষ্টা কর এবারের সাইন্স ফেয়ারের ফার্স্ট প্রাইজ আমিই পাব।
-তুই চ্যালেঞ্জ করছিস আমায়?
-ধরেনে তাই
-ঠিক আছে সেটা ফলাফলে দিনই দেখা যাবে।
কথা না বাড়িয়ে ফোনটা কেটে দিল জুরেক। রওনা দিল স্কুলের পথে।
আজকে শনিবার। জুরেকের স্কুলে বিঙ্গান মেলা আগামীকাল।কিন্তু যেহেতু জুরেক তার প্রজেক্টের পেটেন্ট পেয়ে গেছে সেহেতু তার আর চিন্তা করার কোন কারণ নেই। যাই হোক, জুরেক তার ঘরে বসে স্টার ট্রেকের নতুন সিরিজ দেখছে। কিছুক্ষন পর কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতে গেল সে। দরজা খুলেই দেখে ছয়-সাত বছরের একটি ছোট্ট মেয়ে দাড়িয়ে আছে। জুরেক কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলে উঠল,
-ভাইয়া কিছু টাকা হবে। কাল থেকে আমি একটু পানি ছাড়া কিছু খেতে পাইনি। জুরেকে মন গলে গেল।জুরেকের একটা বড় দোষ অন্যদের থেকে সে অনেক ইমোশনাল। জুরেককে এত সুন্দর করে ভাইয়া বলে কেউ ডাকেনি কোনদিন। তাছাড়া মেয়েটি এমনভামে বলল তাতে যে কারও মন নরম হয়ে যাবে।
-তোমার নাম কি আপু?
-আয়েশা।
-তোমার আব্বু আম্মু নেই?
-আম্মু নেই, আব্বু আছে।
-তোমার আব্বু কি করে?
-কিছুনা। শুধু ভিক্ষে করে।
-কেন, কোন কাজ করতে পারে না? একটু রাগ প্রকাশ করেই বলল জুরেক।
-না, কোন কাজ করতে পারে না। কারন আব্বুর একটি হাত নেই। একটু চমকে গেল জুরেক।একটি হাত নেই! সে ভাবছে মেয়েটি জন্য কিছু করাকি যায় না। তার মাথায় একটি চিন্তা এল, তার বানানো হাতটা মেয়েটির বাবাকে দিয়ে দিলে কেমন হয়।
আমি Showmik। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 37 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
@w3cibrahim: ধন্যবাদ ভাই। যদি পোষ্টে কোন ভুল থাকে তাহলে মাফ করবেন। কারন এটা আমার প্রথম টিউন।