প্রকৃতির মাঝে এমন অনেক রহস্য থেকে থাকে, যা সচরাচর মানব মস্তিষ্ক দ্বারা সমাধান করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষের চিন্তাভাবনারও বিরাট সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং আপনি যদি ফিজিক্সের মত অনুযায়ী চিন্তা করতে সক্ষম হন তবে আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন মানব মস্তিষ্ক থ্রীডি বা তৃতীয় মাত্রার বাইরে ভাবতে সক্ষম নয়।
আমাদের পৃথিবী হল থ্রীডি বা থার্ড ডাইমেনশনের পৃথিবী। এখানে সময়কেও যদি ডাইমেনশন হিসেবে ধরা হয় তবে মোট ডাইমেনশন চারটি। যাই হোক, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ডাইমেনশন বা মাত্রা আসলে কী?
ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্সের লজিক অনুসারে ডাইমেনশন হচ্ছে মুভমেন্ট বা চলাফেরা। আমরা জানি, আমাদের পৃথিবীর মাঝে তিনটি ডাইমেনশন হল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা। এই তিন ডাইমেনশনকে বলা হয় স্থানিক ডাইমেনশন বা spatial dimension। উল্লেখ্য এই তিনটা ডাইমেনশনই মানুষের দখলে রয়েছে। কিন্তু যেটি দখলে নেই সেটি হচ্ছে টাইম ডাইমেনশন।
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের মতে টাইম ডাইমেনশন হচ্ছে একমুখী, যা শুধু ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হয়। তাই চাইলেও সময়কে অন্য তিন ডাইমেনশনের মত আগে পিছে করা যায় না। সেইসাথে থামিয়েও রাখা যায় না।
এখন থার্ড ডাইমেনশন ছাড়াও যদি আরও ডাইমেনশন থেকে থাকে তাহলে সেগুলো কীরকম বা তাদের আচরণই বা কেমন? এই চিন্তা অনুসারে আমরা হায়ার ডাইমেনশনের থিওরি নিয়ে আলোচনা করতে পারি।
প্রকৃতপক্ষে যে হায়ার ডাইমেনশন আছে তা প্রমাণিত নয়, তবে অংক দ্বারা অনেক সমৃদ্ধ। তা হলেও হায়ার ডাইমেনশন বর্তমানে হাইপোথিসিস পর্যায়ে আছে।
হায়ার ডাইমেনশনের এই হাইপোথিসিসগুলো আবার তিনটি ভাগে বিভক্ত, যেখানে রয়েছে
এখন কথা হচ্ছে, প্র্যাকটিক্যালি যদি হায়ার ডাইমেনশন দেখানো হয় তবে শুরুতে একটি বিন্দু কল্পনা করুন। এই বিন্দু দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা কিছুই প্রকাশ করবে না। যা আদতে সম্ভব নয়। কিন্তু বোঝানোর সুবিধার্তে এটিকে জিরো ডাইমেনশন হিসেবে ধরে নিন।
এবারে আরও একটি জিরো ডাইমেনশন বিন্দু নিন এবং দুটি বিন্দু আড়াআড়িভাবে যুক্ত করুন। ফলে এটিতে যে কেউ শুধু বামে এবং ডানে যেতে পারবে, চাইলেও সামনে কিংবা পেছনে অথবা ওপর-নিচ যেতে পারবে না। যা ওয়ান ডাইমেনশনকে রিপ্রেজেন্ট করে।
তাহলে এ থেকে আমরা সূত্র পাই যে,
1D equal to 2 0D points
আবার ধরুন, যদি এমনি করে টু ডাইমেনশন পেতে চান তবে এই সরলরেখা যেটা দুটি বিন্দুর সমন্বয়ে গঠিত, তার সমান্তরালে আরও এক সরলরেখা নিন। এবার দুই সরলরেখা যুক্ত করুন। তাহলে আমরা পাই, দ্বিমাত্রিক একটি বক্স যা চারটি রেখা দ্বারা নির্মিত।
ফলে আগের সূত্রানুযায়ী এবার আমরা পাই,
2D equal to 4 1D lines
এখন থার্ড ডাইমেনশন নির্ণয়ের পালা। দ্বিমাত্রিক বক্স এর মত আরও একটি বক্স নিই এবং উভয়কে যুক্ত করি। তাহলে আমরা একটি ছয় রেখার টু ডি স্কয়ার তৈরিতে সক্ষম হবো, যা আসলে থ্রী ডাইমেনশনকে রিপ্রেজেন্ট করে।
সূত্রানুসারে
3D equal to 6 2D squares
এখন বলুন তো, ফোর ডাইমেনশনের সূত্রটা কী দাঁড়াবে? অনেকে হয়তো বলবেন, ফোর ডাইমেনশন হল সময়। সেটা ঠিক আছে, তবে এ বিষয়ে বলেছি যে, সময় অপরিবর্তনীয়। তাই আগে দেখুন, যে থ্রী ডাইমেনশনের কিউবটি রয়েছে তার সাথে এবার আরেকটি কিউব নিয়ে যুক্ত করি।
ফলাফল একটি হায়ার কিউবিক। যার সূত্র নিম্নরূপ
4D equal to 8 3D cubes
ভালভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন এই হাইয়ার কিউবিকটি অন্য সব ডাইমেনশন থেকে আলাদা। কারণ এখানে একটি কিউবের সাইড থেকে রেখা বের হয়ে অপর কিউবকে ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করছে, যা আগের প্রেজেন্টেশনে ছিল অনুপস্থিত।
আমরা যে ত্রিমাত্রিক জগতে বাস করি, সেখানে চাইলেও ত্রিমাত্রিক ছায়া তৈরি করা সম্ভব নয়। কারণ ছায়ার ধর্মই হচ্ছে ডাইমেনশন হারানো। থ্রীডি সার্ফেসের ছায়া যদি টুডি সার্ফেসে ফেলা হয় তবে এটি তার ডাইমেনশন হারাবে।
একটা কিউব নিয়ে যদি দেয়ালের সামনে ধরেন তবে তার টুডি ছায়া স্পষ্ট হবে৷ এবার কিউবটি ঘোরান, তাহলে ছায়াটির অন্যান্য শেপগুলিও ঘুরতে দেখবেন৷ অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য হলেও এটা থ্রীডি ছায়া বলে ভ্রম হবে।
অনুরূপভাবে চিন্তা করুন, হায়ার কিউবিক যেটা একটু আগে তৈরি করলেন জ্যামিতিক আকারে সেটির যদি ছায়া কল্পনা করা হয় তবে কী দাঁড়াবে? হ্যা, থ্রীডি শ্যাডো। এবার থ্রীডি কিউবের মতই কিউবিককে যদি ঘোরানো হয় তবে আমরা একটি মজার জিনিস দেখতে পাব।
আমরা হায়ার ডাইমেনশনে থেকে থ্রীডি ছায়ায় তাকালে যে ছায়াটি দেখব সেটি হবে একটি থ্রীডি কিউব, যার ভেতরে থাকবে আরও একটি কিউব। হাইয়ার ডাইমেনশনের কিউবিকটি ঘোরানোর ফলে সেই ছায়াটির ভেতর থেকে কিউব বেরিয়ে এসে আবার পর্যায়বৃত্তাকারে ভেতরে প্রবেশ করবে। যা দেখতে খুবই অদ্ভুত হবে। তাহলেই চিন্তা করুন হায়ার ডাইমেনশন কতটা অদ্ভুত!
এখানেই শেষ না। হাইপোথিসিস অনুযায়ী বলা হচ্ছে, হাইয়ার ডাইমেনশন জগতে যদি থ্রী ডাইমেনশনের জগতের কেউ গিয়ে উপস্থিত হয় তবে কী হবে? সে কি অদ্ভুত কিছু দেখবে? না! সে বরং থ্রীডি চিত্রই দেখবে। এমন কেন? কারণ হায়ার ডাইমেনশন জগৎ দেখার জন্য যে প্রপার সেন্স দরকার তা আমাদের নেই। এজন্য হাইপোথিসিস বলে, হায়ার ডাইমেনশনে যদি কেউ থেকে থাকে তবে তারা আমাদের জগতকে দেখতে পাবে। কিন্তু আমরা তাদের দেখতে পাব না।
তবে অদ্ভুত হাইপোথিসিসটা হল, আপনি যখন দ্বিমাত্রিক কোনো বস্তুকে উলটে দেন তখন সেটি যেমন বিপরীত দেখতে লাগে ঠিক তেমনই আপনাকে যদি হায়ার ডাইমেনশন থেকে উল্টে পৃথিবীতে পাঠানো হয় আপনি কিন্তু উলটো হয়ে ফেরত আসবেন। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তখন আপনি হাত দিয়ে হাঁটবেন পা ওপরে রেখে।
বরং আপনার হার্ট হয়তো ডানদিকে চলে যেতে পারে। কিংবা আপনার বাম হাতটি ডানহাতে পরিণত হতে পারে। বিষয়টি হাইপোথিসিস পর্যায়ে তাই ক্লিয়ার করে বলা যাচ্ছে না, তবে কিছু একটা পরিবর্তন হবেই।
এরজন্য আপনি পুনরায় ঠিক হতেও পারবেন না। কারণ পুনরায় ঠিক হতে আপনাকে আবার হাইয়ার ডাইমেনশনে যেতে হবে এবং উল্টে পৃথিবীতে আসতে হবে, যা অসম্ভব। এখানে হায়ার ডাইমেনশন বলতে সময় বাদে চারটি মাত্রার কথা বলা হয়েছে।
পরিশেষে, হায়ার ডাইমেনশন হল এমন এক জগৎ যা সত্যিই মানব মস্তিষ্কের কল্পনার বাইরে। তা সত্ত্বেও অংকের মাধ্যমে হাজার হাজার ডাইমেনশন নির্ণয় করা সম্ভব, যা নির্ভুল।
আমি আল মাহমুদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 8 টিউনারকে ফলো করি।