সূর্য মরে গেলে কি হবে পৃথিবীর

Level 3
কাস্টমার কেয়ার এক্সেকিউটিভ, এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল টেক (প্রাইভেট) লিমিটেড, চট্টগ্রাম

বন্ধুরা আজকের টিউনের টাইটেল দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আজ আমি কি নিয়ে টিউন করতে যাচ্ছি। সূর্য মরে গেলে কি হবে পৃথিবীর। চলো জেনে নিই জানা অজানা সব তথ্য। সৌরজগতে পৃথিবীর কাছে সূর্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  কিছুই নেই। ভাল তাপ আবহাওয়া সহ প্রায় সব ধরনের শক্তির যোগান দিয়ে পৃথিবীকে প্রাণীকুলের বাসযোগ্য করে এই নক্ষত্রটি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছো, যদি এই নক্ষত্রটির মৃত্যু হয় বা বিস্ফোরণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তাহলে সৌরজগতে কি ঘটবে? কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবী। কতদিন সময় পাবে মানুষ। তার চেয়েও বড় কথা মানুষ কি বেঁচে থাকবে। জানতে হলে আজকের এই টিউনটি মনোযোগ সহকারে দেখো।

 

 

১.  সূর্য ও সৌরজগত সৃষ্টি :  নাসার তথ্যসূত্রে প্রায় ৪৬০ কোটির উপরে একটি নিহারিকা থেকে আমাদের সৌরজগৎ ও তাকে কেন্দ্র করে সূর্য নামের একটি জ্বলন্ত নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়। এই নিহারী ছিল গ্যাস এবং ধুলি করার একটি বিশাল মেঘমালা। নেবুলা তত্ত্বের সূত্র মতে অতিক্রান্ত কোন তারকার কারণে নীহারিকার কেন্দ্রে মহাকর্ষীয় পতন ঘটে। পতনের কারণে নীহারিকার বেশিরভাগ উপাদান বিশেষত গ্যাস সমূহ কেন্দ্রে গিয়ে জমা হয়, সৃষ্টি  হয় তীব্র চাপের। আর তা থেকেই জন্ম হয় সূর্যসহ আমাদের সৌরজগতের সব গ্রহ নক্ষত্র।

 

 

২. সূর্যের বিভিন্ন অঞ্চল :  সূর্যের বিভিন্ন অঞ্চল রয়েছে। অভ্যন্তরীণ অঞ্চল গুলোর মধ্যে রয়েছে কোর বিকিরণ অঞ্চল এবং পরিচলন অঞ্চল। বাহ্যিক দিকে আছে চলমান দৃশ্যমানপৃষ্ঠ বা ফটোশপেয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার, ট্রানজিশন জোণ এবং তারপরে আছে সূর্যের বৃস্থিত বাইরের বায়ুমণ্ডল। সৌরজগতের প্রায় ৯৯.৮ শতাংশের বেশি পদার্থ রয়েছে সূর্যের। নিজস্ব মধ্যাকর্ষণের ফলে একত্র হওয়া হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের একটি বিশাল বলই হচ্ছে সূর্য। হাইড্রোজেন হচ্ছে সূর্যের জ্বালানি।

৩.  সূর্যের জালানি :  সূর্যের মূল অংশ বা কোরে পারমাণবিক ফিউশন বিক্রিয়া হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে পরিণত করে। যা থেকে পৃথিবী জীবন ধারনের শক্তি সঞ্চয় করে। ৪৬০ কোটি বছরে সূর্যের প্রায়ই অর্ধেক জ্বালানি ইতিমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। বাকি যা আছে তা দিয়ে আরো ৪৫০থেকে ৫৫০ কোটি বছর এ অবস্থাতেই থাকবে। প্রতিটি নক্ষত্রই তার নির্দিষ্ট সময়ে বিস্ফোরিত হবে। সূর্যের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে। হাইড্রোজেনের অভাবে কার্য বিক্রিয়া থেমে যাবে। ক্রমান্বয়ে নক্ষত্রটি লাল দানব এ পরিণত হবে। এ সময়ে সূর্যের আকার বর্তমান সময়ের সূর্যের চেয়ে কয়েকশগুণ বেড়ে যাবে।

 

 

৪.  সূর্যের  বিবর্তন প্রক্রিয়া :  সূর্যের এই বিবর্তন প্রক্রিয়া শেষ হলে সাতশ কোটি বছর পরে এই ক্ষুদ্র সাদা বামন এর রূপান্তরিত হবে। এ সময় এটি পৃথিবীর মতো ছোট আকার ধারণ করবে। ধীরে ধীরে সূর্য একটি মৃত নক্ষত্রে পরিণত হবে। পরবর্তী কয়েক শত কোটি বছরের জন্য শীতল হবে। অবশ্য এর অনেক আগেই পৃথিবীর প্রাণের অস্তিত্ব নিশচিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা। ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরের নক্ষত্র টি থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে মাত্র ৮ মিনিট। আমাদের কাছে এই দূরত্ব টা অনেক বেশি মনে হতে পারে। তবে আগামীকাল যদি সূর্যের কোরে জ্বালানির অভাব দেখা দেয়, এবং এটি যদি সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটায়। তাহলে সুপার নোভার গতির কাছে এই দূরত্ব খুবই সামান্য হয়ে যাবে। একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে নিরাপদ থাকতে হলে বর্তমান অবস্থা থেকে পৃথিবীকে অন্তত আরো ৫০ থেকে ১০০ আলোকবর্ষ দূরে যেতে হবে। কোরে বিস্ফোরণের ফলে সূর্যের আয়তন বেড়ে যাবে।

 

 

৫.  কক্ষপথ :  প্রচন্ড তাপে  বুধ ও শুক্রগ্রহের পাশাপাশি পৃথিবীও  জ্বলে যেতে পারে। তবে সুখবর হচ্ছে সূর্য বিস্ফোরিত হলে এর ফলে সৃষ্ট শক ওয়েব পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করার মত শক্তিশালী হবে না। পৃথিবী কক্ষপথে টিকে আছে সূর্যের ভরের কারণে। সূর্যের অভাবে পৃথিবী তখন মহাকাশে ভাসতে শুরু করবে। তবে আরেকটি সুখবর হচ্ছে কক্ষ পথ থেকে বেরিয়ে মহাকাশে ভাসতে ভাসতে পৃথিবী মহাকাশের অন্য একটি সৌরজগতের কক্ষপথে আটকে যেতে পারে। তবে সেখানে আমরা সূর্যের মতো তাপ ও আলো পাবোনা। অবশ্যই কোন নক্ষত্র থাকতে হবে। যদিও পৃথিবীতে ততদিনে প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে না। তবে  যদি সূর্যের বিস্ফোরণের কোন আগাম তথ্য পাওয়া যায় তাহলে দীর্ঘ সময় পৃথিবীতে প্রাণ টিকিয়ে রাখার উপায় বের করা সম্ভব। যত দিনের খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখা যায়, ততদিন টিকে থাকতে পারা যাবে।

 

 

৬.  সূর্য বিস্ফোরণ :  সূর্যের বিস্ফোরণ ঘটার এক সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীপৃষ্ঠে তাপমাত্রা হবে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক বছরের ভেতর তা মাইনাস ৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এ নেমে আসবে। ফলে একদম তলানি থেকে উপর পর্যন্ত মহাসাগর গুলোর পানি বরফে পরিণত হবে। ১০০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পড়া হয়ে যাবে এবং ধ্বসে পড়বে। যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে তা মহাজাগতিক বিকিরণ ও গ্রহাণুর আঘাতে বিধ্বস্ত হবে।  সূর্য বিসফোরিত হলেও তা রাতারাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না বরং ধ্বংস হওয়ার জন্য আরো ১৭টি বছর লেগে যাবে। ধীরে ধীরে সূর্য আরো গরম ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এবং এটি প্রসারিত হতে শুরু করবে। এ প্রক্রিয়া চলাকালীন সূর্য তার মহা জগতের বাইরের স্তরগুলো হারাতে থাকবে। যার ফলে বিগব্যাংগের মত ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটবে। এবং পৃথিবীর মতো আরো অনেক গ্রহ ও নক্ষত্রের সৃষ্টি হবে। ঠিক যেমন একটি বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল। হয়তো এসব নক্ষত্রের কোনটাই নতুন জীবন ঘটাতে পারে। আমাদের ছায়াপথ এখন থেকে শত কোটি বছর পর কেমন দেখতে হবে তা নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা খুবই কঠিন ব্যাপার।

 

বন্ধুরা আজকের টিউনটি কেমন হলো তা টিউমেন্ট করে জানিয়ে দিও। আর আমার টিউনটি ভালো লাগলে আমাকে ফলো করতে পারো এবং এই টিউন টির জন্য একটি জোশ করে দিও। আল্লাহ হাফেজ।

Level 3

আমি সজিব মাহমুদ সাইমুন। কাস্টমার কেয়ার এক্সেকিউটিভ, এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল টেক (প্রাইভেট) লিমিটেড, চট্টগ্রাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 18 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 7 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি যে দুরন্ত, দুচোখে অনন্ত,ঝরের দিগন্ত ঝুরেই সপ্ন সাজাই।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস