টেকটিউনস এর প্রিয় বন্ধুরা ২ বছরের বেশি সময় পর আমি আবার টেকটিউনস এ ফিরে আসলাম। আশা করি সবাই ভাল আছেন। এখন থেকে আমি নিয়মিত স্যাটেলাইট টিভি বিভাগে লিখব।
টেলিভিশন বর্তমান যুগে আমাদের দৈনন্দিন বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল থেকে আমরা Music, Movie, Tv serial, News, Infotainment অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান পেয়ে থাকি।
বর্তমানে টেলিভিশন চ্যানেল সাধারনত ২ টি ভিন্ন পদ্ধতিতে ব্রডকাস্ট করা হয়ে থাকে।
এর মধ্যে প্রথমটি টেরিষ্টেরিয়াল ব্রডকাস্ট নামে পরিচিত এবং অপরটি স্যাটেলাইট ব্রডকাস্ট নামে পরিচিত।
এখন এই দুটি ব্রডকাস্ট পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
টেরিষ্টেরিয়াল ব্রডকাস্ট এ্যানালগ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের জন্য অনেক বড় গ্রাউন্ড টাওয়ার ব্যবহার করা হয়। যেমনটা ব্যবহার করে বিটিভি।
এই পদ্ধতিতে টিভি চ্যানেল রিসিভ করার জন্য সাধারন ইয়াগি (Yagi) এন্টেনা ব্যবহার করা হয় যা আমাদের কাছে টিভি এন্টেনা নামে পরিচিত। তবে আমেরিকা সহ অনেক উন্নত দেশে টেরিষ্টেরিয়াল ব্রডকাস্ট করা হয় Encrypted অবস্থায়, এ ক্ষেত্রে এন্টেনা এবং টিভির মাঝে বিশেষ ধরনের রিসিভার ব্যবহার করতে হয় যা উক্ত Encrypted চ্যানেলকে Decrypt করে টিভির পদায় দৃশ্যমান করে তোলে। সম্প্রচার টাওয়ার হতে গ্রাহকের দুরত্বের উপর প্রাপ্ত চ্যানেলের ছবি ও শব্দের মান নির্ভর করে। তাই নিদ্দিষ্ট দুরত্ব পরপর রিলে টাওয়ার ব্যবহার করে সম্প্রচারিত চ্যানেলের সিগন্যালের মান ভাল রাখা হয়।
রেডিও তে যেমন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড FM, SW, MW এ ভাগ করা থাকে তেমনি টেরিষ্টেরিয়াল সম্প্রচারেও ফ্রিকোয়েন্সি আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এ ভাগ করা থাকে। এগুলোর মধ্যে বহুল ব্যবহৃত ২ টি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড হল VHF (Very High Frequency) এবং UHF (Ultra High Frequency).
Bangladesh Television (BTV), এছাড়াও বাংলাদেশের কিছু এলাকায় DD National, DD News, NTV ও দেখতে পাওয়া যায়।
স্যাটেলাইট ব্রডকাষ্ট ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের জন্য টিভি চ্যানেল কোম্পানি ডিজিটাল সিগন্যাল সরাসরি স্যাটেলাইটে পাঠিয়ে থাকে।
স্যাটেলাইটে পাঠানো ডিজিটাল সিগন্যাল ২ ধরনের হয় । এর মধ্যে একটি হল Clear / FTA / Non-Encrypted এবং অপরটি Pay / Encrypted ।স্যাটেলাইট চ্যানেল রিসিভ করার জন্য গ্রাহককে DVB Receiver / Set Top Box / স্যাটেলাইট রিসিভার ব্যবহার করতে হয়। DVB Receiver ব্যবহার করে FTA (Free To Air) এবং Pay চ্যানেল রিসিভ করা যায়।
এক্ষেত্রে FTA চ্যানেল এর জন্য চ্যানেল কোম্পানিকে কোন টাকা প্রদান করতে হয় না। শুধু এককালিন খরচ করে কিছু যন্ত্রাংশ কিনতে হয়। উল্ল্যেখ্য বাংলাদেশের সব চ্যানেলই FTA চ্যানেল। Pay চ্যানেল দেখার জন্য মাসিক / বাৎসরিক ভাড়া প্রদান করতে হয়।
টেরিষ্টেরিয়াল সম্প্রচারের মতো স্যাটেলাইট সম্প্রচারেও ফ্রিকোয়েন্সি আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এ ভাগ করা থাকে। এগুলোর মধ্যে বহুল ব্যবহৃত ২ টি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড হল C Band এবং Ku Band (উচ্চারন Q হবে)। C Band এর চ্যানেল রিসিভ করার জন্য যে সকল যন্ত্রাংশ কিনতে হয় তার মূল্য, Ku Band এর চ্যানেল রিসিভ করার যন্ত্রাংশের থেকে কিছুটা বেশি।
Pay চ্যানেল সম্প্রচারে যে সকল Encryption সিষ্টেম ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে Conax, Irdeto, Mediagurd, Videoguard, Viaccess , Biss, PowerVu ই অন্যতম। এছাড়াও কিছু কিছু চ্যানেল ২য় প্রজন্মের ডিজিটাল ভিডিও ব্রডকাষ্টিং সিষ্টেম DVB S-2 Encryption ব্যবহার করে। ভিডিও ভিত্তিক Encryption সিষ্টেম MPEG 4, HD,3D এবং অডিও ভিত্তিক Encryption সিষ্টেম 8PSK, 2PSK আজকাল অনেক নতুন চ্যানেল সম্প্রচারে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একাধিক Encryption সিষ্টেম এক সাথে ব্যবহার করা হয়। নিচের কয়েকটি উদাহরন দেখলেই বিষয় গুলো বোঝা যাবে।
এখানে উল্লেখ্য যে প্রায় সকল Encryption সিষ্টেম, যেমন - Irdeto, Mediagurd, Videoguard, Viaccess , Biss, PowerVu এর একাধিক ভার্সন আছে। ভার্সন এর নম্বর Encryption সিষ্টেম এর নামের পেছনেই দেয়া থাকে। উদাহরন - Irdeto 2, Viaccess 3.
MPEG 4 ভিডিও Encryption এ ছবির কোয়ালিটি সাধারন চ্যানেলের ভিডিও (MPEG 2) কোয়ালিটির থেকে ৩ গুন বেশি ভালো হয়। MPEG 4 ভিডিও Encryption এ ছবি সাধারন টিভিতেই দেখা যায়।
HD ভিডিও Encryption এ ছবি HD কোয়ালিটিতে সম্প্রচার করা হয়। যা কিনা সাধারন চ্যানেলের ভিডিও (MPEG 2) কোয়ালিটির থেকে ৫ গুন বেশি ঝকঝকে এবং বেশি পরিষ্কার। HD ভিডিও Encryption এ ছবি দেখার জন্য HD ভিডিও সাপোটেড টিভির প্রয়োজন হয়।
3D ভিডিও Encryption এ ছবি ত্রিমাত্রিক অবস্থায় সম্প্রচার করা হয়। 3D ভিডিও Encryption এ ছবি দেখার জন্য 3D ভিডিও সাপোটেড টিভির প্রয়োজন হয়। ত্রিমাত্রিক ছবি আমাদেরকে কোনকিছু বাস্তবে দেখার অনুভুতি দেয়। যেমন – ক্রিকেট খেলা যদি ত্রিমাত্রিক অবস্থায় সম্প্রচার করা হয় তা দেখতে আমাদের মাঠে বসে খেলা দেখার অনুভুতি পাওয়া ।
C Band ফ্রিকোয়েন্সীঃ এটি সবথেকে পুরাতন এবং কম তরঙ্গ দৈঘ্যের ফ্রিকোয়েন্সী। তরঙ্গ দৈঘ্য কম সুতরাং ডাটা Carry করার ক্ষমতাও কম , ফলে একটি ফ্রিকোয়েন্সী দিয়ে বেশী চ্যানেল সরবরাহ করা যায় না। এর তরঙ্গ দৈঘ্য কম হওয়ায় এবং স্যিগন্যালে Noise এর পরিমান বেশী থাকায় এন্টেনার আকার অনেক বড় (কমপক্ষে ৭ ফুট ব্যসের) এবং এন্টেনা জালের/ ছিদ্র যুক্ত ধাতব পাতের তৈরী হয়। এন্টেনা জালের/ ছিদ্র যুক্ত ধাতব পাতের হওয়ায় স্যিগন্যাল এ থাকা Noise এর পরিমান অনেক কমে যায়।এতে ব্যবহৃত LNB ও আকারে বড় হয়। C Band ডিসের আকার বড় এবং দাম বেশী হওয়ায় এটি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অসুবিধাজনক তাই এর জনপ্রিয়তা দিন দিন কমছে।
Ku Band ফ্রিকোয়েন্সীঃ বতমানে এটি বহুল ব্যবহৃত এবং বেশী তরঙ্গ দৈঘ্যের ফ্রিকোয়েন্সী। তরঙ্গ দৈঘ্যে বেশী সুতরাং ডাটা Carry করার ক্ষমতাও বেশী, ফলে একটি ফ্রিকোয়েন্সী দিয়ে এক সাথে অনেক বেশী চ্যানেল সরবরাহ করা যায়। এর তরঙ্গ দৈঘ্য বেশী হওয়ায় এবং স্যিগন্যালে Noise এর পরিমান কম থাকায় এন্টেনার আকারও অনেক ছোট হয় (মাত্র ২.৫ ফুট)। এতে ব্যবহৃত LNB ও আকারে ছোট হয়। Ku Band ডিসের আকার ছোট এবং দাম কম হওয়ায় এটি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক তাই এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশী। বতমানে জনপ্রিয় প্রায় সব চ্যানেলই Ku Band ফ্রিকোয়েন্সীতে সম্প্রচারিত হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের চ্যানেল গুলো Ku Band ফ্রিকোয়েন্সীতে না হয়ে C Band ফ্রিকোয়েন্সীতে সম্প্রচারিত হয়। আশা করব ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চ্যানেল গুলোর কতৃপক্ষ বিষয়টি বুঝতে পেরে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
এই পদ্ধতিতে চ্যানেল গুলো রিসিভ করার জন্য সাধারন স্যাটেলাইট রিসিভার ব্যবহার করতে হয়। রিসিভার বাদে অন্যান্য যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে হয় সেগুলো হল –
FTA চ্যানেল এর জন্য চ্যানেল কোম্পানিকে কোন টাকা প্রদান করতে হয় না। শুধু এককালিন খরচ করে উপরে উল্লেখিত যন্ত্রাংশ গুলো কিনতে হয়। বতমানে প্রায় দুই শতাধিক চ্যানেল Free To Air অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই পদ্ধতিতে চ্যানেল গুলো রিসিভ করার জন্য একটি নিদ্দিষ্ট চ্যানেল কোম্পানি/ DTH কোম্পানির রিসিভার এবং একটি বৈধ Viewing Card প্রয়োজন হয়। Viewing Card অনেকটা Sim Card এর মতো, এতে একটি Subscription Number থাকে (অনেকটা মোবাইল নম্বরের মতো) যেটি ব্যবহার করে চ্যানেল কোম্পানি/ DTH কোম্পানিকে বিল প্রদান করতে হয়। এছাড়া অন্যান্য যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে হয় সেগুলো FTA তে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের অনুরুপ।
শুধু এককালিন খরচ করে উপরে উল্লেখিত যন্ত্রাংশ গুলো কিনতে হয় আর মাসিক/বাৎসরিক বিল প্রদানকরে অনেকগুলো জনপ্রিয় চ্যানেল উপভোগ করা যায়। এভাবে প্রায় ৩০০ শতাধিক চ্যানেল পাওয়া যায়।
চলবে...
আমি Shawan। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 27 টি টিউন ও 107 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জটিল তথ্যবহুল টিউন। 😀
আশা করছি পরের পর্বগুলো শীঘ্রই পাবো। 🙂
অক্ষরগুলো কালো হলেই বেশি ভাল লাগে পড়তে।