বাংলাদেশে টেলিভিশনের অগ্রযাত্রার কথা

টিউন বিভাগ স্যাটেলাইট টিভি
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

এক সময় টেলিভিশনকে বলা হত বিস্ময়কর আবিষ্কার। কেউ কেউ এটাকে বলতেন যাদুর বাক্স। বাংলাদেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর পিটিসি বা পাকিস্তান টেলিভিশন কেন্দ্রের মাধ্যমে। সেই সময় ডিআইটি ভবন থেকে পিটিসি’র অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো বর্তমানে যেটাকে বলা হয় রাজউক ভবন। শুরুতে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে অনুষ্ঠান প্রচার করা হত। টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম গান গেয়েছিলেন ফেরদৌসী রহমান। সেটা লাইভ প্রচার করা হয়েছিলো। আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা গানটি ছিল এই যে আকাশ নীল হল আজ এ শুধু তোমার প্রেমে। সেই সময় প্রযুক্তির অভাবের কারণে সব অনুষ্ঠানই লাইভ অর্থাৎ সরাসরি প্রচার করা হতো। অনুষ্ঠান চলতো সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। টিভি দেখার নেটওয়ার্ক ছিল ঢাকা শহরের চার পশের ১০ মাইল পর্যন্ত। তবে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ফরিদপুর থেকেও তা দেখা যেত। জাপানি টেলিভিশন কোম্পানি এনএইচকে কিছুদিনের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল টেলিভিশনের স্থাপনা তৈরি এবং পুরোপুরিভাবে তা চালু করার।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পিটিসি’র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বিটিভি বা বাংলাদেশ টেলিভিশন। ১৯৭৫ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী বিটিভি’র অফিস এবং স্টুডিও ডিআইটি ভবন থেকে রামপুরাস্থ নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়।

১৯৮০ সাল থেকে বিটিভি রঙ্গিন অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে। এটা ছিল উপ-মহাদেশের মধ্যে প্রথম টেলিভিশনে রঙ্গিন অনুস্থান সম্প্রচার। যেখানে ভারত রঙ্গিন অনুস্থান সম্প্রচারে আসে ১৯৮২ সাল থেকে। ২০০৩ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ১৪টি রিলে স্টেশন স্থাপন করা হয়। এর ফলে দেশের ৯৩% এলাকার মানুষ বিটিভি’র অনুষ্ঠান দেখতে সক্ষম হয়।

বিভিন্ন সংস্থার মাধমে বিটিভি নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠান এবং খবরাখবব্র বিনিময় করে। সেই গুলো হলে SAARC Audio Visual Exchange Programme (SAVE), Asia Pacific Broadcasting Union (ABU), Asiavsion (AVN) ইত্যাদি। বাংলদেশ যে একটা উন্নয়নশীল এবং শান্তিকামী দেশ সেটা SAVE এর মাধ্যমে সদস্য দেশে তুলে ধরা হয়। আর ABU এর মাধ্যমে ১৯৮৪ সাল থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খবরাখবর বিনিময় শুরু হয়। AVN এর মাধ্যমে ভিস্যুয়াল নিউজ কন্টেন্ট নিয়মিতভাবে অন্য সদস্য ব্রডকাস্টিং সংস্থার মধ্যে বিনিময় করা হয়। তা ছাড়া বিটিভির বার্তা বিভাগের কিছু লোকবলের প্রশিক্ষণ দেয় এভিএন। ২০০১ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর আবুর সহযোগিতায় বিটিভি ডিজিটাল গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করে। এর ফলে এক ঝাঁক পেশাদার সংবাদকর্মীরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বার্তা বিভাগের সেবা দিতে সক্ষম হন।

ঢাকার পর নাটোরে ১৯৭৪-৭৫ সালে ছোট আকারে টেলিভিশন স্টেশন নির্মাণ করা হয়। সম্প্রচার শুরু করে ১৯৭৫ সালের দিকে। আমি সেই সময়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। বসবাস করতাম বগুড়া শহরে। একদিন শুনলাম আমার বন্ধু সোহেলদের বাসায় টিভি কেনা হয়েছে। ও আমাদের পাড়ায় থাকতো। সন্ধ্যায় চলে গেলাম ওদের বাসায় টিভি দেখার জন্য। গিয়ে দেখি ওদের ঘর ভর্তি মানুষ। সেদিন দেখেছিলাম জীবনের প্রথম টিভির অনুষ্ঠান। আনন্দিত এবং পুলকিত হয়েছিলাম টিভির অনুষ্ঠান দেখে। বেশ করেকদিন গিয়েছিলাম টিভি দেখতে। এর পর আমাদের বাসায় টিভি কেনা হয়। বেশ কয়েক মাস আমাদের বাসায় লোকজান এসে ভিড় করে টিভি দেখত। মাঝে মাঝে ঢাকা কেন্দের অনুষ্ঠান বগুড়া থেকে ঝাপসাভাবে হলেও দেখা যেত। তাই অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটু পরিষ্কার ছবি দেখার প্রচেষ্টা চলতো। প্রথম থেকেই কয়েক বছর নাটোর কেন্দ্র নিজেরাই অনুষ্ঠান প্রচার করতো। পরে এটাকে ঢাকা কেন্দ্রের রিলে স্টেশন করা হয়।

বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টিভির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালের দিকে। প্রথম স্যাটেলাইট টিভির অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় ঐ বছরের ২৯ সেপেম্বরে। বিটিভি’র মাধ্যমে তখন আমেরিকার সিএনএন চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো। একই বছর বিবিসি’র অনুষ্ঠানও প্রচার শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ডিস অ্যান্টেনা কিনে স্যাটেলাইট টিভির চ্যানেল দেখার অনুমতি প্রদান করে তৎকালীন সরকার। তখন ডিস অ্যান্টেনা কেনার ধুম পরে যায়। সেই সময় বাড়ি এবং অফিসের ছাদে ডিস অ্যান্টেনা শোভা পেত। বিদেশি চ্যানেল হিসেবে প্রথম দিকে জিটিভি, স্টার টিভি, এমটিভি এই ৩টি চ্যানেল দেখা যেত। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের প্রথম বাংলা স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল হিসেবে আবির্ভূত হয় এটিএন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল হিসেবে যুক্ত হয় চ্যানেল আই, একুশে টিভি, এন টিভি ইত্যাদি। ক্যাবল অপারেটররা আসে আরেকটু পরে।

বাংলাদেশে তারবিহীন ঝকঝকে ডিজিটাল ছবি দেখা এবং নিখুঁত শব্দ শোনার জন্য নতুন এক সেবার আবির্ভাব ঘটে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে। যাকে বলা হচ্ছে তারবিহীন ডিটিএইচ সেবা। বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের মালিকানাধীন রিয়েল ভিউ বাংলাদেশে প্রথম ডিরেক্ট-টু-হোম কানেকশন (ডিটিএইচ) সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে। এই সেবা উপভোগ করার জন্য প্রাথমিকভাবে সেট-টপ বক্স ও ডিশ অ্যান্টেনা ক্রয় করতে হয়। এটা একটু ব্যয় সাপেক্ষ। যার ফলে এই সেবা খুব একটা প্রসার লাভ করেনি এখনও।

বলা চলে নব্বই দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত বিনোদনের জন্য আমরা বিটিভি এর ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলাম। কেননা তখন আমাদের হাতে অন্য কোন টিভি চ্যানেল দেখার অপশন ছিল না। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশি এবং বিদেশি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখার সুযোগ আমাদের নিকট চলে আসে। তা ছাড়া বিটিভি সব সময়ই সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করে। তাই দর্শক বিটিভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন রিমোট কন্ট্রোল চাপলেই শ’য়ে শ’য়ে টিভি চ্যানেল মুহূর্তেই দেখতে পারি। দুনিয়াদারির খবর মুহূর্তেই জানতে পারি। বিনোদনের খোরাকের অভাব যে এক সময় ছিল সেটা এখন আর নেই।

Level 4

আমি আব্দুল্লাহ আল ফারুক। Digital Marketer, Self Employed, Bogura। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 34 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 23 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস