গুগল সার্চ কনসোল কী? এর সুবিধা ও কিভাবে ব্যবহার করবেন? আপনার সাইট কিভাবে গুগলে ইনডেক্স করবেন?

টিউন বিভাগ এসইও
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

আসসালামু আলাইকুম। আমাদের অনেকেরই ব্লগার ওয়েব সাইট রয়েছে। তবে শুধু ওয়েব সাইট বানালেই কিন্তু হবেনা। ওয়েব সাইটের প্রাণ হলো ভিজিটর। যদি আপনার ব্লগ বা ওয়েব সাইটে ভিজিটর না আসে তাহলে ওয়েব সাইট বানানো বৃথা। আপনার প্রচার প্রচারনা, সেল বৃদ্ধি কিংবা সাইটে এড বসিয়ে উপার্জন। যাই করতে চান না কেন, ওয়েব সাইট তৈরীর পর আপনার প্রথম কাজ হলো সাইটের এসইও করা। এসইও এর মাধ্যমে আপনার সাইটের ভিজিটর বৃদ্ধি করা। আর এই দিক থেকে আমাদের প্রথম কাজ হলো আমাদের সাইটটিকে প্রথমে গুগলে ইনডেক্স করতে হবে। কারণ সবাই গুগলে গিয়েই সার্চ করে। যদি আপনার ওয়েব সাইট টি গুগলে ইনডেক্স করা না থাকে, তাহলে ভিজিটরের সার্চ রেজাল্টে কখনোই আপনার ওয়েব সাইট বা সাইটের কোনো টিউন আসবেনা। আর না আসলে ভিজিটরও আপনার সাইটে আসবে না। আর যদি ইনডেক্স করা থাকে, তাহলে ভিজিটরের সার্চ রেজাল্টে আপনার সাইট বা আপনার সাইটের কোনো টিউনের লিংক দেখাবে। এতে করে আপনার সাইটের ভিজিটর বেড়ে যাবে। আজকের টিউনে আমি লিখবো কিভাবে আপনার ব্লগার ওয়েব সাইটকে গুগলে ইনডেক্স করবেন। অর্থাৎ গুগল সার্চ কনসোলে আপনার ওয়েব সাইট বা ব্লগকে যুক্ত করবেন।

গুগল সার্চ কনসোল কী :

গুগল সার্চ কনসোল (Google Search Console), যা পূর্বে গুগল ওয়েবমাস্টার টুলস নামে পরিচিত ছিল, একটি ফ্রি টুল যা গুগল আপনাকে প্রদান করে আপনার ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন পারফরম্যান্স মনিটর করতে এবং উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ওয়েবমাস্টার, সাইট মালিক, এবং ডিজিটাল মার্কেটারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল।

গুগল সার্চ কনসোলের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ:

  1. ইনডেক্স স্ট্যাটাস মনিটরিং:
    • আপনার ওয়েবসাইটের কনটেন্ট গুগলের ইনডেক্সে রয়েছে কিনা তা দেখতে পারবেন।
    • কোন পেজগুলি ইনডেক্স হয়েছে এবং কোনগুলি হয়নি তা চেক করতে পারবেন।
  2. সার্চ পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং:
    • আপনার সাইটের সার্চ কুইরির (অনুসন্ধান শব্দ) ভিত্তিতে কত ভিউ ও ক্লিক পেয়েছে তা বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
    • সার্চ ইঞ্জিনে আপনার সাইটের পজিশন, ক্লিক-থ্রু রেট (CTR), এবং অন্যান্য মেট্রিকস দেখতে পারবেন।
  3. সাইটম্যাপ সাবমিশন:
    • আপনার সাইটের সাইটম্যাপ গুগলে সাবমিট করে গুগলকে আপনার ওয়েবসাইটের কনটেন্ট স্ক্যান করতে সাহায্য করতে পারবেন।
  4. মোবাইল ইউজেবিলিটি:
    • আপনার সাইটের মোবাইল ফ্রেন্ডলিনেস চেক করতে পারবেন। গুগল আপনাকে জানাবে আপনার সাইটে কোনো মোবাইল ইউজেবিলিটি সমস্যা আছে কি না।
  5. মৌলিক অ্যানালাইটিকস এবং রিপোর্টিং:
    • আপনার সাইটের ক্রলিং স্ট্যাটাস, সাইটের হেলথ, লিঙ্কগুলির বিস্তারিত, এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রিপোর্ট হিসেবে দেখতে পারবেন।
  6. ভুল কিছু চিহ্নিতকরণ:
    • গুগল আপনার সাইটে কোনো ক্রলিং অথবা ইনডেক্সিং সমস্যা চিহ্নিত করলে তা সম্পর্কে আপনাকে তথ্য দেবে এবং সমস্যার সমাধান করার নির্দেশনা প্রদান করবে।
  7. লিংক বিশ্লেষণ:
    • আপনার সাইটে কতগুলি ইনবাউন্ড লিঙ্ক (ব্যাকলিঙ্ক) আছে, এবং কোন কোন সাইট থেকে লিঙ্ক আসছে তা দেখতে পারবেন।
  8. সাইট সিকিউরিটি:
    • সাইটে কোনো সিকিউরিটি সমস্যা (যেমন ম্যালওয়ার) আছে কি না তা জানতে পারবেন এবং সমস্যা সমাধানে গুগলের পরামর্শ পাবেন।

 

(আরো পড়ুন.)

 

আপনার ব্লগার সাইটকে গুগলে ইনডেক্স করলে যে সকল সুবিধা পাবেন, তা হলো:-

  1. অর্গানিক ট্রাফিক: গুগলে আপনার সাইট ইনডেক্স হলে, এটি আপনার ব্লগকে আরও মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দেয়। সার্চ ইঞ্জিনে আপনার সাইট উপস্থিত হলে, ব্যবহারকারীরা আপনার ব্লগ পোস্টগুলিকে খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন, যা আপনাকে অর্গানিক ট্রাফিক এনে দেবে।
  2. ভিজিবিলিটি বৃদ্ধি: গুগল আপনার সাইট ইনডেক্স করলে এটি গুগলের সার্চ রেজাল্টে প্রদর্শিত হবে। ফলে, আপনার ব্লগের বিষয়বস্তু আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং ভিজিবিলিটি বাড়বে।
  3. সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO): আপনার সাইট গুগলে ইনডেক্স হওয়ার মাধ্যমে আপনার SEO প্রচেষ্টা কার্যকর হবে। ভালো SEO কৌশল ব্যবহার করে, আপনি সার্চ ইঞ্জিনে উচ্চতর অবস্থান অর্জন করতে পারবেন।
  4. কনটেন্ট আপডেট: গুগল নিয়মিতভাবে আপনার ব্লগ সাইটের কনটেন্ট আপডেট চেক করবে। ফলে, নতুন কনটেন্ট এবং পোস্টগুলি দ্রুত ইনডেক্স হবে এবং ব্যবহারকারীরা সহজেই নতুন কনটেন্ট খুঁজে পাবে।
  5. বিশ্বাসযোগ্যতা: একটি ব্লগ সাইট গুগলে ইনডেক্স হওয়া মানে এটি একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বীকৃত ওয়েবসাইট হিসেবে গণ্য হয়। এটি আপনার ব্লগের প্রতি ব্যবহারকারীদের বিশ্বাস ও আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে। কোন সাইট গুগলে ইনডেক্স হওয়া মানে ব্যবহারকারীদের নিকট তার বিশ্বস্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি হওয়া।
  6. গুগল সার্চ কনসোল: গুগল সার্চ কনসোল ব্যবহার করে আপনি আপনার সাইটের পারফরম্যান্স ট্র্যাক করতে পারবেন। এতে করে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে আপনার সাইট গুগল সার্চ রেজাল্টে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং কোনো সমস্যা হলে তা সমাধান করতে পারবেন।
  7. সাইটের র‌্যাংকিং বৃদ্ধি : গুগল সার্চ কনসোলে আপনার ব্লগ বা ওয়েব সাইট এড করার ফলে আপনার সাইটের ভিজিটর বেড়ে যায়। নতুন নতুন ভিজিটর আসে প্রতিনিয়ত। যার ফলে আপনার ব্লগ বা ওয়েব সাইটের র‌্যাংকিং বেড়ে যায়।
  8. সেল বৃদ্ধিঃ সাইটে ভিজিটর বাড়ায় আপনার প্রচার প্রচারনা যেমন বাড়বে তেমনি ইকমার্স সাইট হলে সেলও বাড়বে।
  9. আয় বৃদ্ধিঃ সর্বপরি আপনার সাইট থেকে উপার্জনও বাড়বে।

কাজের সুবিধার্থে গুগল ক্রোম ব্রাউজারের আপডেট ভার্সন ব্যবহার করুন। আপনার আপনার ব্লগার ওয়েব সাইটটি যে জি-মেইল ব্যবহার করে তৈরী করেছেন সেই জিমেইলটি এই ব্রাউজারে লগ ইন করে নিন।

গুগল সার্চ কনসোলে কিভাবে আপনার ব্লগার সাইট যোগ করবেন? :

গুগল সার্চ কনসোলে আপনার ব্লগার সাইট যোগ করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  1. গুগল সার্চ কনসোলে লগইন করুন:
    • প্রথমে Google Search Console এ যান এবং আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে লগইন করুন।
  2. নতুন প্রপার্টি যোগ করুন:
    • ড্যাশবোর্ডে গিয়ে, বাম পাশে "Property" অপশনে ক্লিক করুন।
    • তারপর “+ Add Property” বা “Add Property” বাটনে ক্লিক করুন।
  3. ওয়েবসাইট প্রপার্টি নির্বাচন করুন:
    • "Domain" অথবা "URL prefix" অপশন নির্বাচন করুন। ব্লগার সাইটের জন্য সাধারণত "URL prefix" নির্বাচন করা হয়।
    • এখানে আপনার ব্লগের পূর্ণ URL (যেমন https://yourblogname.blogspot.com) ইনপুট করুন।
  4. প্রমাণীকরণ করুন:
    • গুগল সার্চ কনসোল আপনার মালিকানা প্রমাণ করতে কিছু পদ্ধতি অফার করবে। সাধারণত, "HTML tag" অপশন ব্যবহার করা হয়:
      • "HTML tag" অপশন সিলেক্ট করুন।
      • প্রদত্ত HTML ট্যাগটি কপি করুন।
  5. ব্লগার সাইটে HTML ট্যাগ যোগ করুন:
    • ব্লগার ড্যাশবোর্ডে যান এবং "Themes" বা "Theme" এ ক্লিক করুন।
    • তারপর "Customize" অথবা "Edit HTML" এ যান।
    • HTML কোডের মধ্যে <head> ট্যাগের ভেতর কপিপেস্ট করুন HTML ট্যাগটি।
    • পরিবর্তন সংরক্ষণ করুন।
  6. গুগল সার্চ কনসোলে প্রমাণীকরণ সম্পন্ন করুন:
    • গুগল সার্চ কনসোলে ফিরে যান এবং “Verify” বাটনে ক্লিক করুন।
    • গুগল আপনার ব্লগ সাইটের কোড চেক করবে এবং যদি সব কিছু সঠিক থাকে, তাহলে প্রমাণীকরণ সফল হবে।
  7. সাইটম্যাপ সাবমিট করুন:
    • প্রমাণীকরণ সফল হলে, গুগল সার্চ কনসোলের ড্যাশবোর্ডে গিয়ে “Sitemaps” অপশনে ক্লিক করুন।
    • আপনার ব্লগার সাইটের জন্য সাইটম্যাপ ইউআরএল যোগ করুন। ব্লগার সাধারণত /sitemap.xml সাইটম্যাপ জেনারেট করে থাকে।

(সাইটম্যাপ তৈরীর প্রক্রিয়া নিচে দেওয়া হলো)

এখন আপনার ব্লগার সাইট গুগল সার্চ কনসোলে যোগ করা হয়ে গেছে। কিছু সময় লাগতে পারে গুগলকে আপনার সাইট স্ক্যান ও ইনডেক্স করার জন্য। এর পর থেকে আপনি সার্চ কনসোলে সাইটের পারফরম্যান্স ট্র্যাক করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে পারবেন।

 

ব্লগার সাইটের জন্য সাইটম্যাপ তৈরির নিয়মঃ

  1. সাইটম্যাপ URL চেক করুন:
    • ব্লগার সাধারণত আপনার সাইটের জন্য একটি সাইটম্যাপ ফাইল তৈরি করে থাকে যা আপনি সরাসরি অ্যাক্সেস করতে পারেন।
    • আপনার ব্লগের সাইটম্যাপ URL দেখতে পারেন সাধারণত https://yourblogname.blogspot.com/sitemap.xml এই ফরম্যাটে। এখানে yourblogname আপনার ব্লগের নাম দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন।
  2. সাইটম্যাপ যাচাই করুন:
    • ব্রাউজারে আপনার সাইটম্যাপ URL টাইপ করে দেখতে পারেন যদি এটি সঠিকভাবে প্রদর্শিত হয়। আপনি XML ফাইলটি দেখতে পাবেন যা আপনার ব্লগের পেজ, টিউন ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য ধারণ করে।

সাইটম্যাপ তৈরি কাস্টমাইজ করার বিকল্প:

যদি আপনি আরও উন্নত কাস্টমাইজেশন চান বা অন্য কোনো সাইটম্যাপ ব্যবহার করতে চান, তাহলে:

  1. অনলাইন টুলস ব্যবহার করুন:
    • কিছু অনলাইন টুলস যেমন XML-Sitemaps.com ব্যবহার করে সাইটম্যাপ তৈরি করতে পারেন। তবে, ব্লগার ব্যবহারকারীদের জন্য এটি প্রয়োজনীয় নাও হতে পারে কারণ ব্লগার সাইটম্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করে।

বন্ধুরা, আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। নিচের ভিডিওতে সম্পূর্ণ বিষয়টা টিউটোরিয়াল আকারে দেখানো হয়েছে। চাইলে ভিডিওটা দেখে আসতে পারেন। আজ এখানেই ইতি টানছি। এরকম নিত্য নতুন উপকারী টিউন পেতে নিয়মিত আমাদের সাইটে ভিজিট করুন। গুগল নিউজ ফলো করুন। ধন্যবাদ।

Level 3

আমি মোঃ রবিউল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 59 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 14 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

ফ্রিল্যান্সার, গ্রাফিক্স, ওয়েব, এ্যাপস ডিজাইনার ও ডেভলপার, লেখক,অভিনেতা ও পরিচালক।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস