আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে।
যেকোনো ওয়েবসাইটের জন্যই ওয়েবসাইটের স্পীড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ভিজিট করতে সময় বেশি লাগলে একদিকে যেমন ইউজার চলে যায় তেমনি এর প্রভাব পড়ে SEO তে। ওয়েবসাইটের স্পীডের জন্য প্রাথমিক ভাবে ওয়েবহোস্টিং কে আমরা গুরুত্ব দেই৷ ভাল স্পীড, হাই রেসপন্স টাইম, লো ডাউন টাইমের জন্য বেশি দামের প্যাকেজ নিই। বেশি দামে ভাল প্যাকেজ নিলেই যে হাই স্পীড পাবেন এটা ভুল ধারণা, বিশেষ করে শেয়ারড হোস্টিং এ এই ধারণা একদমই মানানসই নয়৷
আপনি যখন কোন শেয়ারড হোস্টিং নেবেন, সেটা যত দামীই হোক, আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এই একই সার্ভার কিন্তু আরও অনেক ইউজার ব্যবহার করছে। যদি নির্দিষ্ট সার্ভারে মাত্রাতিরিক্ত রিকুয়েস্ট আসে তাহলে সার্ভারের অন্য ওয়েবসাইট গুলোও কিন্তু এতে প্রভাবিত হবে। আবার আপনার ওয়েবসাইট যদি USA এর কোন সার্ভারে আপলোড করা থাকে এবং ভিজিটর বাংলাদেশী হয় তাহলে, সেই ওয়েবসাইটে পৌছাতে বা কন্টেন্ট ভিজিবল হতে সময় বেশি লাগবে৷ আর USA এর ভিজিটররা তুলনামূলক দ্রুত সময়ে কন্টেন্ট দেখবে।
তো কিভাবে আপনি এই সমস্যার সমাধান পাবেন? কিভাবে সকল দেশের ভিজিটর সমান স্পীডে আপনার ওয়েবসাইটে এক্সেস করতে পারবে, এটা নিয়েই আজকের টিউন। আজকে আমি আলোচনা করব CDN নিয়ে একই সাথে ধারণা দেবার চেষ্টা করব CDN কি এবং কীভাবে এটা আপনাকে সাহায্য করবে।
বলা হয় Speed = Money, এবং এটি বিশেষ করে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিভিন্ন গবেষণা বলে যে সমস্ত ই-কমার্স ওয়েবসাইট ০ থেকে ২ সেকেন্ডের মধ্যে লোড হয়ে যায় সেগুলোর কনভারসন রেট বেশি। প্রতি সেকেন্ড বাড়ার সাথে সাথে কনভারসন রেট ৪.৪২% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর পেছনের কারণ, যখন কোন ইউজার কোন কিছু কিনতে চায় তখন সে দ্রুত সেটা চায়, তো কোন ওয়েবসাইট লোড হতে সময় বেশি নিলে সে স্বাভাবিক ভাবেই অন্যত্র চলে যায়।
শুধু ই-কমার্স ওয়েবসাইটই নয়, অন্যান্য ওয়েবসাইটের জন্যই লোড টাইম গুরুত্বপূর্ন৷ যে সমস্ত ওয়েবসাইট ১ সেকেন্ডে লোড হয় তার Bounce Rate থাকে ৭% কিন্তু যখন এটি ৩ সেকেন্ডে লোড হয় এর Bounce Rate চলে যায় ৭% এ। একই ভাবে ৫ সেকেন্ডের জন্য Bounce Rate, ৩৮% এ চলে যেতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে CDN একটি স্ট্যান্ডার্ড স্ট্রেটেজি গ্রহণ করে যার মাধ্যমে CDN ব্যবহারকারী ইউজাররা পায় একটি লোডিং টাইম এবং হাই রেসপন্স রেট। CDN আশা করছে ২০২২ সালের মধ্যে পুরো ইন্টারনেট ট্রাফিকের ৭২% থাকবে তাদের দখলে। তারা এই দাবীটি এজন্যই করতে পেরেছে কারণ ইতিমধ্যে ইউজাররা এটি থেকে যথেষ্ট উপকৃত হয়েছে এবং ভাল ভাবে গ্রহণ করেছে।
সাধারণত আমরা যখন কোন ওয়েবহোস্টিং কিনি তখন আমাদের একটি সার্ভার দেয়া হয়। সার্ভার অনেক ধরনের হতে পারে, সেটা প্রাইভেট বা শেয়ারড সার্ভার হতে পারে। একই ভাবে খেয়াল করবেন সার্ভারটির সাথে বিভিন্ন দেশের নাম উল্লেখ থাকে যেমন Singapore সার্ভার, USA সার্ভার, অথবা Canada সার্ভার ইত্যাদি। USA সার্ভারের মানে হল আপনার ডেটা গুলো দেশের সার্ভারে সেভ থাকবে, যখন কোন ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করবে তখন সেদেশ থেকে ডেটা ভিজিটরের ফোনে প্রদর্শিত হবে।
তো এখানে দুধরনের সমস্যা হয় বা হতে পারে, প্রথমত আপনার সার্ভার যদি USA এর হয় তাহলে বাংলাদেশ থেকে কেউ এক্সেস করতে চাইলে ওয়েবপেজ লোড হতে সময় বেশি লাগতে পারে৷ সব সময় এমন হবে এটা বলা যাবে না, এটা নির্ভর করবে সার্ভারের চাপের উপর। দ্বিতীয়ত যেটা হবে, আপনি যখন কোন শেয়ারড হোস্টিং নেবেন তখন অন্যান্য ওয়েবসাইটের চাপে সার্ভার বেশি লোড থাকলে আপনার ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যেতে পারে।
আর এই সমস্যা গুলোর সমাধানে কাজ করে CDN বা Content Delivery Network। আপনি যখন CDN ব্যবহার করবেন তখন বিভিন্ন লোকেশনে আপনার সার্ভার থাকবে। মুল সার্ভার USA তে থাকলেও ভিজিটরদের জন্য আলাদা আলাদা লোকেশনে সার্ভার তৈরি হবে। যেমন বাংলাদেশের কোন ইউজার যখন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে চাইবে তখন সেই রিকুয়েস্ট USA তে না গিয়ে সর্বোচ্চ কাছাকাছি লোকেশনের সার্ভারে যাবে সেটা হতে পারে ভারত অথবা আরও কাছের সার্ভার।
ওয়েবসাইট মালিক CDN সার্ভিসকে পে করবে, বিনিময়ে তারা ওয়েবসাইটের Images, Video, Audio, HTML, CSS, এবং JavaScript ফাইল গুলো মুল সার্ভার থেকে নিজেদের বিভিন্ন সার্ভারে আপলোড করে রাখবে। প্রতিটি সার্ভার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট গুলো Cache আকারে স্টোর করে রাখবে এবং যখন প্রয়োজন তখন ভিজিটরকে প্রদান করবে।
ভিজিটর যখনই কোন রিকুয়েস্ট দেবে তখন CDN তার সবচেয়ে কাছের সার্ভার থেকে কন্টেন্ট গুলো শো করাবে। এতে রেসপন্স টাইমও বৃদ্ধি পাবে এবং দ্রুত পেজ লোড হবে। CND একই সাথে কন্টেন্ট গুলোকে তাদের ধরন অনুযায়ী অপটিমাইজ করবে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদর্শন করানো যায়। স্পিড বাড়ানোর সাথে সাথে CDN আপনার ব্যান্ডউইথও বৃদ্ধি করবে।
চলুন জেনে নেয়া যাক SEO এর জন্য কেন CDN প্রয়োজন,
বর্তমান সময়ে সকল SEO প্রফেশনালদের ওয়েবপেজ স্পীডের দিকে মনোযোগী হওয়া জরুরী। এবং এটা অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। গুগল বর্তমানে ইউজার এক্সপেরিয়ন্সকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং এর উপর ভিত্তি করেই সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং হয়৷ ২০১৫ সালে Mobile-Friendly আপডেটের থেকে করে ২০১৮ সালে পেজ-স্পীডকে গুগল অন্যতম র্যাংকিং ফ্যাক্টর বলে ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি সর্বশেষ May, 2021 আপডেটে গুগলের এলগোরিদমে ঘোষণা এসেছে, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগেও বিভিন্ন এলগরিদম গত পরিবর্তনে সাইট মালিকরা খুঁজে বের করতো কোন দিকে উন্নত করা উচিত কিন্তু এবার গুগল নিজেই জানিয়েছে কি করা উচিত।
আপনি web.dev এর মত ওয়েবটুল দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটের স্পীড, সঠিক LCP, FID এবং CLS এর ভিজুয়াল স্ট্যাবেলিটি সহ বিভিন্ন ম্যাট্রিক্স পরিমাপ করতে পারেন তবে প্রিমিয়াম CDN এগুলো আপনাকে ডিফল্ট ভাবেই প্রোভাইট করবে।
CDN প্যাকেজে সবসময় একটি কাস্টমাইজ ড্যাশবোর্ড পাবেন যেখানে আপনি বিভিন্ন পারফরমেন্স মনিটর করতে পারবেন।
CDN আপনার ওয়েবসাইটকে DDoS এর মত বিভিন্ন এটাক থেকে বাঁচাতে পারে। কারণ আপনার ওয়েবসাইটের, CDN ভিত্তিক বিভিন্ন সার্ভার থাকবে এবং আক্রমণ হলে প্রথমে এগুলোতেই প্রভাব পড়বে এবং মূল সার্ভার থাকবে সম্পূর্ণ নাগালের বাইরে।
তাছাড়া কোন এটাক বা অতিরিক্ত ট্রাফিকে কোন সার্ভার ডাউন হয়ে গেলে তাৎক্ষনিক তারা অন্য সার্ভার থেকে আপনার ডেটা প্রদর্শন করবে।
আর এভাবে CDN, আপনার ওয়েবসাইটের স্পীড এবং সিকিউরিটি নিরাপদে রাখাতে SEO এর দিকেও আপনি এগিয়ে থাকবেন।
সুবিধা থাকলেও CDN এর কিছু অসুবিধা রয়েছে, চলুন জেনে নেয়া যাক,
ইমেজ হোস্টিং এবং ইমেজ র্যাংকিং এ CDN ব্যবহার নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। প্রসিদ্ধ একজন SEO প্রফেশনাল গুগলের সিনিয়র একজন ট্রেন্ড এনালাইটিক, John Mueller কে জিজ্ঞাস করে ছিল, CDN কিভাবে ইমেজ র্যাংকিং এ অবদান রাখে। উত্তরে Mueller জানায় CDN এ ইমেজ হোস্টিং এ SEO এর কোন সুবিধা নেই। তবে SEO ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আবার এই মতামত এর বিপক্ষে।
Blue media এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন SEO এক্সপার্ট William Sen জানিয়েছে সাব-ডোমেইনে ইমেজ হোস্টিং করা নিরাপদ নাও হতে পারে কারণ গুগল কোথাও এটা নিয়ে পরিষ্কার কোন তথ্য দেয় নি। সাব-ডোমেইনে ইমেজ লাইভ থাকতে পারে তবে গুগল এটাকে শুধু মাত্র সাব-ডোমেইনের আর্কাইভ হিসেবেই দেখতে পারে।
CDN এর আরেকটি অসুবিধা হতে পারে ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট। আপনার ওয়েবসাইটের ডেটা সার্চ ইঞ্জিনে ডুপ্লিকেট দেখাতে পারে। তবে যদি সঠিক নিয়মে CDN সেট করা যায় তাহলে এই সমস্যাটি হয় না।
আপনি যদি CDN ব্যবহার না করেন এবং হোস্টিং প্রোভাইডারের সার্ভিসে সন্তুষ্ট না থাকেন তাহলে বলব দ্রুত CDN ব্যবহার করুন। কারণ গুগলের নতুন আপডেট কার্যকর হবার সাথে সাথে তারা ইউজার এক্সপেরিয়েন্সকে গুরুত্ব দেয়া শুরু করবে। আপনার ওয়েবসাইট যদি দ্রুত লোড না হয় তাহলে আপনার সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং নিচের দিকে চলে যেতে পারে। আপনার অজান্তেই রাতারাতি ট্রাফিক ড্রপ করতে পারে।
আজকে এই পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।