একজন এসইও স্পেশালিষ্ট হতে হলে আপনাকে অবশ্যই অনেক বিষয় জানতে হবে। জানতে হবে এসইও সকল খুঁটিনাটি এবং এডভ্যান্স বিষয়। থাকতে হবে নিজের অভিজ্ঞতা। শুধু ব্যাকলিংক করতে জানলে ফ্রিল্যান্সিং করে খাওয়া যায় কিন্তু একজন প্রফেশনাল এসইও এক্সপার্ট বা স্পেশালিষ্ট হওয়া যায় না।
একজন সফল সার্চ ইঞ্জিন অপ্তিমাইজার হতে হলে আপনাকে অনেক বিষয়ে অবগত থাকতে হবে। শুধু অফ পেজ অপটিমাইজেশন জানা থাকলে আপনি এসইও গুরু হতে পারবেন না। আপনাকে অন-পেজ, অফ-পেজ, কী ওয়ার্ড রিসার্চ, কনটেন্ট সব বিষয়ে ভালো পারদর্শী হতে হবে। তাই যারা অল্পতেই ভাবতে শুরু করেন যে আমি একজন এসইও এক্সপার্ট, তাঁদের উদ্দেশ্যই আজ আমার এই টিউন। এই টিউন এ আমি আলোচনা করবো যে একজন এসইও এক্সপার্ট হতে হলে বা এসইও তে ভালো কোথাও বড় পদে চাকুরি পেতে হলে আপনাকে কি কি জানতে হবে। তো শুরু করা যাক।
এককথায় বলতে গেলে বলতে হয় যদি আপনার ওয়েব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না থেকে থাকে তাহলে আপনি কখনই এসইও এক্সপার্ট হতে পারবেন না। কারণ আপনাকে এসইও করতে হবে ওয়েবসাইটেই। তাই ওয়েবসাইট কিভাবে পরিচালনা করতে হয়, কিভাবে ওয়েবসাইটকে কাস্টমাইজেশন করতে হয়, কিভাবে ওয়েবসাইট কাজ করে, সার্ভার কিভাবে কাজ করে, ডোমেইন, হোস্টিং, আইপি, সিপ্যানেল, সিএমএস ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কারণ যেকোন সময়ে আপনাকে ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করতে হতে পারে। আপনাকে তাই জানতে হবে যদি ওয়েবসাইট এ কোন ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তা কিভাবে দ্রুত ঠিক করতে হবে, কিভাবে এসইও অপ্টিমাইজ করতে হবে ইত্যাদি।
ওয়েব সম্পর্কে ধারণা নিতে হলে যে আপনাকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে হবে তা কিন্তু নয়। এসব কাজ একদমই বেসিক কাজ। তাই আপনি চাইলেই গুগলে সার্চ করার মাধ্যমে এসকল কাজ শিখে নিতে পারে।
HTML হলো ওয়েবসাইটের প্রধান একটি অংশ। এই এইচটিএমএল দিয়েই একটি ওয়েবসাইটের জন্ম হয়। আর সার্চ ইঞ্জিন যখন একটি ওয়েবসাইট ইনডেক্স করে তখন সে শুধুমাত্র ওয়েবসাইটের HTML কোড পড়ে ইনডেক্স করে। তাই আপনাকে প্রফেশনাল সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজার হতে হলে অবশ্যই HTML ভালো জানা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে প্রাথমিক ট্যাগ যেমন, <a>, alt, meta, title, <h1>, <strong>, <img> ইত্যাদির কাজ অবশ্যই জানতে হবে।
HTML জানা বলতে যে আপনাকে সব ট্যাগের কাজ জানতে হবে তা কিন্তু নয়। তাই দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। আপনি চাইলেই গুগলে সার্চ করে এসব ট্যাগের কাজ, ব্যবহার সম্পর্কে দ্রুতই জ্ঞান লাভ করতে পারে।
একটি এসইও প্রোজেক্ট ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ার জন্য একটি ভুল কীওয়ার্ড নির্বাচনই যথেষ্ট। কারণ একটি সঠিক কীওয়ার্ড নির্বাচনই পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে। অনেকে তো বলেই ফেলেন যে সঠিক কীওয়ার্ড নির্বাচন করা মানেই অর্ধেক এসইও করা।
আর সঠিক ও লাভজনক কীওয়ার্ড নির্বাচন করতে হলে আপনাকে জানতে হবে কীওয়ার্ড রিসার্চ। আপনাকে যদি এসইও এক্সপার্ট হতে হয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই কীওয়ার্ড রিসার্চ জানতে হবে। জানতে হবে কিভাবে নিশ খুঁজতে হয়, কিভাবে লো কম্পেটিশন কীওয়ার্ড খুঁজতে হয়, কিভাবে কম্পেটিটর এন্যালাইসিস করতে হয় ইত্যাদি।
এছাড়াও আপনার জানা প্রয়োজন কীওয়ার্ড ট্রেন্ডস সম্পর্কে। কোন কীওয়ার্ড কখন বেশি সার্চ হয়, কোন দেশে বেশি সার্চ হয়, কোন দেশে কত সিপিসি ইত্যাদি। কারণ সঠিক কীওয়ার্ড না ব্যবহার করলে যেমন আপনি কাঙ্ক্ষিত ভিজিটর পাবেন না, ঠিক তেমনি সার্চে ও আসতে পারবেন না। তাই অবশ্যই আপনাকে কীওয়ার্ড রিসার্চ সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান থাকা লাগবে যদি আপনি একজন এসইও স্পেশালিষ্ট হতে চান
কথায় আছে “Content is the king of SEO” তার মানে কনটেন্ট ছাড়া এসইও কল্পনাই করা যায় না। তাই আপনি যদি নিজেকে একজন এসইও এক্সপার্ট হিসাবে দাবী করেন তাহলে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে কনটেন্ট লিখতে হয়। আপনাকে নখদর্পণে রাখতে হবে যেকোন বিষয়ের উপর কনটেন্ট লেখার কলাকৌশল।
একজন প্রফেশনাল সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজার মানে একজন ভালো কনটেন্ট রাইটার ও। কারণ ভালো লেখায় হতে পারে ভিজিটর আকৃষ্ট করা এবং ধরে রাখার প্রধান হাতিয়ার। আপনি যদি আপনার লেখনীতে ভালো তথ্য সুন্দর করে উপস্থাপন করতে না ই পারেন তাহলে কিভাবে ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করবে। তাই আপনাকে জানতে হবে কিভাবে কনটেন্ট লিখবেন, কাদের জন্য লিখবেন, কি লিখবেন, কতটুকু লিখবেন, কখন লিখবেন।
কনটেন্ট রাইটিং শেখা কঠিন কিছু নয় আবার অনেক সহজ ও নয়। আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে শুদ্ধ করে লেখার ক্ষমতা থাকাতে হবে। ইংরেজি পড়ার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং সর্বোপরি লেখনীর মাধ্যমে অন্যকে বোঝানর ক্ষমতাও থাকাতে হবে। এটি একটি অধ্যাবসায়ের ব্যাপার। ভুল হোক, সঠিক হয়, লিখতে থাকুন, যতখন পর্যন্ত আপনি উন্মুক্ত ভাবে লিখতে না পারছেন ততখন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান। অন্যদের লেখার কৌশল গুলো দেখুন এবং সেই মোতাবেক নিজের লেখাকেও ঠিক করুন। দেখবেন একটি সময়ে ঠিকই আপনার লেখার হাত চলে আসবে।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এ অন-পেজ হলো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এককথায় বলতে হয় এসইওতে অন-পেজ অপটিমাইজেশন ছাড়া এসইও অন্ধ। আর যারা অন-পেজ অপটিমাইজেশন জানেন না তাদেরকে অন্ধ এসইও এক্সপার্ট বলায় শ্রেয়।
তাই আপনি যদি অন্ধ এসইও স্পেশালিষ্ট হতে না চান তাহলে আপনাকে অন-পেজ অপটিমাইজেশন জানতে হবে এ টু জেড। অনপেজ অপটিমাইজেশন এ রয়েছে অনেকগুলো শ্রেণী। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্টটি রয়েছে ওয়েবসাইটের মধ্যকার অপটিমাইজেশন। আপনাকে অন-পেজ অপটিমাইজেশন করতে হলে জানতে হবে
১। কিভাবে মেটা ট্যাগ ব্যবহার করতে হয়
২। কিভাবে টাইটেল অপটিমাইজেশন করতে হয়
৩। কিভাবে ডেসক্রিপশন অপটিমাইজেশন করতে হয়
৪। কীওয়ার্ড ডেনসিটি এবং কীওয়ার্ড রিপ্লেসমেন্ট
৫। sitemap.xml, robots.txt, webmaster tools, analytics এর ব্যবহার
৬। ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার ও লেআউট
৭। URL অপটিমাইজেশন
৮। ইমেজ অপটিমাইজেশন
৯। হেডিং ট্যাগ (h1, h2, h3)ট্যাগের ব্যবহার
১০। ইন্টার্নাল লিংকিং করতে হয় কিভাবে ইত্যাদি
তাই যদি আপনি প্রফেশলান এসইও গুরু হয়ে উঠতে চান তাহলে এই অনপেজ অপটিমাইজেশন আপনাকে জানতে হবে খুব ভালো ভাবে। অন্যথায় আপনি কখনই ভালোমানের ফ্রিল্যান্সিং বা প্রোজেক্ট হাতে নিতে বা শেষ করতে পারবেন না।
শুধু অনপেজ অপটিমাইজেশন জানলেই হবে না, আপনাকে প্রফেশনাল কাজ করতে হলে জানতে হবে অফপেজ অপটিমাইজেশন ও।
কারণ অনপেজ অপটিমাইজেশন এর পরেই অবস্থান হলো অফপেজ অপটিমাইজেশন এর। অফপেজ অপটিমাইজেশন বলতে বোঝায় ওয়েবসাইটের প্রোমোশনকে।
আবার শুধু ব্যাকলিংক বিল্ডিং ও অফপেজ অপটিমাইজেশন নয়। কারণ প্ল্যানিং ছাড়া ব্যাকলিংক বিল্ডিং করলে তা কখনই কাজে আসে না।
একজন প্রফেশনাল এসইও এক্সপার্ট সবসময় প্ল্যানিং করে অফপেজ অপটিমাইজেশন এর কাজ করে থাকেন। ওয়েবসাইটের জন্য কত গুলো ব্যাকলিংক লাগবে, কি ধরনের ব্যাকলিংক লাগবে, কোথা হতে ব্যাকলিংক
নিতে হবে ইত্যাদির প্ল্যানিং থাকে তার মস্তিষ্কে।
অফপেজ অপটিমাইজেশনে এক্সপার্ট হল হলে বিশেষ ভাবে আপনাকে যা যা জানা প্রয়োজন তা হলো
১। সকল প্ল্যাটফর্ম এ লিংক বিল্ডিং করার ক্ষমতা
২। এঙ্কর টেক্সট অপটিমাইজেশন
৩। ব্যাকলিংক ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়ার সঠিক কলাকৌশল
৪। লিংক হুইল, টায়ার ব্যাকলিংকিং
৫। পেজরেংক, পেজ/ডোমেইন অথোরিটি
৬। লিংক ম্যানেজমেন্ট
৭। সিটিয়েশন (লোকাল এসইও এর জন্য)
৮। কনটেন্ট মার্কেটিং ও প্রোমোশন
৯। গুগল পেঙ্গুইন আপডেট সম্পর্কে ধারণা ইত্যাদি।
উপরোক্ত প্রধান বিষয়গুলো বাদেও রয়েছে আরো অনেক ফ্যাক্টর। তবে আপনাকে এক্সপার্ট হতে হলে এই প্রধান বিসয়গুলো কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া চলবে না।
অনপেজ অপটিমাইজেশন ছাড়া যেমনে একটি ভালো সার্চ ইঞ্জিন বান্ধব সাইট চিন্তা করা যায় না, ঠিক সেভাবে অফপেজ অপটিমাইজেশন ছাড়া একটি সাইটকে র্যাংকিং এ আনার চিন্তা করা যায় না। তাই এসইও স্পেশালিষ্ট হতে হলে আপনার এই অধ্যায়েও পারদর্শী হতে হবে।
একজন প্রফেশনাল এসইও অপটিমাইজার মানে শুধু কাজ করে যাওয়া নয়, সম্পূর্ণ কাজ গুলোর এন্যালাইসিস করারো তার একটি বড় কাজ। তাই আপনি যদি এসইও এক্সপার্ট হতে চান তাহলে আপনাকে ওয়েবসাইট এন্যালাইসিস, ট্র্যাকিং, প্ল্যানিং ইত্যাদির দক্ষতা নিয়ে আসতে হবে
ওয়েবসাইটে কেমন ভিজিটর আসছে, কোন কোন কীওয়ার্ডএ ভিজিটর আসছে, কোন কীওয়ার্ড এ র্যাংকিং হয়েছে, কেন অন্য কীওয়ার্ড এ র্যাংকিং হচ্ছে না, সমস্যা খুঁজে বের করা এবং তার সমধান করা ইত্যাদি কাজ কিন্তু একজন এসইও এক্সপার্ট করে থাকেন। এছাড়াও যদি সে পেড কোন কিছু ব্যবহার করে তাহলে তার বাজেট নির্ধারণ, রিটার্ন অফ ইনভেস্টমেন্ট (ROI) নির্ধারণ, সেই মোতাবেক কাজ পরিচালনা করা, লিংক ট্র্যাকিং করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে হয়। এই বিষয় গুলোতে পারদর্শী না হলে ধরে নিন আপনি এখনো পূর্ণ এক্সপার্ট হতে পারেননি।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এ যদি ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে যে, আপনি যাই করেন না কেন সেটি অবশ্যই ভালো করে করবেন। অল্প বিদ্যা যেমন ভয়ঙ্কর ঠিক তেমনি অল্প এসইও জেনে নিজেকে এক্সপার্ট দাবী করাও বিপদজনক। এসইও এক্সপার্ট কয়েকমাসে হওয়া সম্ভব নয়। তবে আমি উপরোক্ত যেসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি সে মোতাবেক যদি আগাতে থাকেন তাহলে আশা করি দ্রুতই আপনি একজন সফল এসইও এক্সপার্ট হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
আর একজন এসইও এক্সপার্ট এর চাহিদা অনেক। বিদেশে তো রয়েছেই, বর্তমানে বাংলাদেশেও এসইও স্পেশালিষ্ট/এক্সপার্টদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে এখন প্রয়োজন পড়ছে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজারদের। কিন্তু দুঃখের বিষয় হয়ে যাচ্ছে যে যারাই এই সকল কাজের জন্য আবেদন করেন তারাই সঠিক ভাবে না শেখার কারণে কাজ হারিয়ে ফেলছেন।
শুধু লোকাল কাজই নয়, ফ্রিল্যান্সিং ও একই অবস্থা। বায়ারদের কাজের চাওয়া পূরণ করতে না পারায় আপনি মার্কেটপ্লেস গুলোতে দিন দিন কাজ হারাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে কতদিন? একটু পরিশ্রম করলেই কিন্তু আপনিও হয়ে উঠতে পারেন এজন সফল সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজার। তাই অযথা কাজ না জেনে বিডিং এর পিছনে সময় নষ্ট না করে কাজ শিখুন। কারণ সঠিক ভাবে এসইও না শিখলে আপনি উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না। আর এই সেক্টর যেহেতু উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি, তাই আশা করি বোকার মত এই সুযোগ কেউ নষ্ট করবেন না।
যেকোন ধরনের প্রশ্ন থাকলে টিউমেন্ট এর মাধ্যমে আমাকে জানাতে পারেন। আপনাদের সকলের জন্যই রইলো শুভ কামনা। ধন্যবাদ
আমি আল আমিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 9 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
onek helpfull, thank you vai