একটি ওয়েবসাইটের র্যাংকিং অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সেগুলোর উপর ভাল আইডিয়া থাকা দরকার। এসইও পুরো প্রজেক্ট শুরু করার আগে ওয়েবসাইটটির উপর ভিত্তি করে একটি অডিট রিপোর্ট প্রস্তুত করা উচিত। সেই অডিট রিপোর্টে কি কি বিষয়ে নজর দিতে হবে, তা নিয়েই আজকের আমার আলোচনা। এখানে বলে রাখি, আমি যে বিষয়গুলো নজর দেই সেগুলোই এখানে উল্লেখ করেছি। অন্যদের কোন আইডিয়া সেটিও শেয়ার করতে পারেন, যাতে নতুন কিছু শিখতে পারি।
নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করে অডিট চেকলিস্ট তৈরি করে নিন।
এখানে ডোমেইন লেভেল এনালাইসিস এর কিছু লিস্ট আছে। একটা সাইটের এসইও ইম্প্লিমেন্ট করতে হলে এসব কিছু বিবেচনা করা উচিত।
www VS non www: আপনার ডোমেইনের সাথে www ব্যবহার করবেন নাকি করবেননা, সেই বিষয়ে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু একবার যে ফরমেট ব্যবহার করবেন, সেটাই সবসময় ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। যেমন হতে পারে, আপনি genesisblogs.com লিখে মার্কেটিং করছেন, তাহলে সবজায়গাতে একই নাম ব্যবহার করলেই ভাল হবে। অন্য জায়গাতে, http://www.genesisblogs.com লিখার দরকার নেই।
হোম পেইজ লিংকিং কন্সিসটেন্সি : পুরো ওয়েব সাইটটিতে হোম পেইজের সাথে লিংক থাকা খুবই গুরুত্বপুর্ন। কিছু কিছু ওয়েব সাইট আছে যেগুলোর অসতর্কতার কারণে অভ্যন্তরীন পেইজ থেকে সরাসরি হোম পেইজে ব্যাক করার কোন লিংক থাকে না। ওয়েবসাইটের যেকোন পেজ থেকে হোম পেজে ফিরে আসার জন্য কোন একটা লিংক থাকা দরকার।
ক্যাপিটালাইজেসশন/লোয়ার কেস অফ ইউআরএল : ইউআরএল এ সবসময় একটি ভার্সন ব্যবহার করতে হবে। যদি ক্যাপিটাল লেটারে লিখেন, তাহলে সব সেই লেটারেই লিখবেন, যদি লোয়ার কেসে লিখেন, তাহলে সব লোয়ার কেস হবে। দুটি মিশ্রনে যাতে ইউআরএল না হয়। ASP.net প্লাটফরমে কোন কাজ করলে সাধারণত এ সমস্যাটি দেখা যায়।
ক্যানোনিকেল লিংক এলিমেন্ট: বর্তমানযুগে গুগলের র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেট কনটেন্ট অত্যন্ত বিপদজনক। এটা যদি নিজের ওয়েবসাইটের ভিতরেও ২ ভিন্ন পেজে ডুপ্লিকেট কনটেন্ট হয়, সেটিও ক্ষতিকারক। অনেক সময় ই-কমার্স সাইট গুলোতে প্রতিটি কনটেন্টের জন্য ইউনিক কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব হয় না। সেই জন্য অরিজিনাল পেইজকে ক্যানোনিকেল ট্যাগ ব্যবহার করে দেখিয়ে দিতে পারেন।
রিডিরেকশনস্: রিডিরেকশনস্ এটিও অনেক ইম্পরটেন্ট। ৩০১ কোডটি হল সাধারন রিডিরেকশন কোড ।কিন্তু যেসব জায়গায় দৃশ্যকল্প আছে সেখানে বিভিন্ন কারনে ৩০২ রিডিরেকশন প্রয়োজন। কোন ইউ আর এল টি ৩০১ এর জন্য ফিট আর কোনটি ৩০২ এর জন্য সেটিও বুঝার ব্যাপার আছে।
রোবট.টিএক্সটি ফাইল: এটিও অন্যতম একটি ফ্যাক্টর। অনেক এসইও এক্সপার্ট না বুঝে অর্থাৎ ওয়েবসাইটটির জন্য কোনটি উপযুক্ত, সেটি না বুঝেই রোবোট টেক্সট আপডেট করেন। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় কাজে লাগাতে পারেন। সাইটম্যাপটি ভালভাবে দেখুন। সেটিা দেখলেই আপনার পক্ষে খুজে বের করা সম্ভব, কোন লিংকে গুগলকে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত হবেনা, আর কোনটিতে প্রবেশ করতে অনুমতি দেওয়া যায়। সেটি নির্ধারণ করেই রোবোট টেক্সট তৈরি করা উচিত।
ইউআরএল ফ্রেন্ডলিনেস: আপনার ওয়েব সাইটের ইউআরএল স্ট্রাকচারটি সহজ হওয়া উচিত- যাতে করে যে কেউ সহজে সাইটটিতে ঢুকতে পারে এমনকি গুগল এর কাছেও আপনার পেইজটি ক্রল করা সহজ হয়্। তাই এমন ডোমেইন পছন্দ করুন, যাতে সেখানে স্পেশাল কোন ক্যারেক্টার না থাকে এবং ডোমেইন নামটি যাতে খুব বড় হয়ে না যায়।
এক্স এমএল সাইট ম্যাপ : অধিকাংশ মানুষকে দেখি সাইটম্যাপ তৈরি ব্যপারে খুব বেশি মনোযোগী হয়না। আমার নিজের মতে খুব ভালভাবে কোড লেখা এক্সএমএল সাইটম্যাপ গুগলকে সহজে ক্রল করতে সাহায্য করে। গুগলের ক্রলিংকে আরো সহজ করার জন্য ভালভাবে যত্ন নিয়ে সাইটম্যাপ তৈরি করুন।
একটি হাইলি অপ্টিমাইজড ওয়েব সাইট অবশ্যই টেকনিক্যালি ফিট হওয়া উচিত্। একটা সাইটের টেকনিক্যাল এনালাইসিসের জন্য যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা নিচে দেয়া হল:
সার্ভার স্ট্যাটাস : অধিকাংশ ওয়েব সাইটেই সার্ভার এরর হয়ে থাকে। বিশেষ করে যেসব সাইট পিএইচপি এবং এএসপি এর মত ডায়্নামিক ল্যাংগুয়েজ দিয়ে ডেভেলপ করা সেখানে সার্ভার এরর দেখা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন রকম স্ট্যাটাস কোড আছে যেমন ৪০৪, ৪১০, ৫০০,৩০১,৩০২। যদি পেজে কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে সকল পেজের স্ট্যাটাস ২০০ হবে। কিন্তু তা না হলে ওয়েব সাইটটি থেকে ৪xx এবং ৫xx এরর অবশ্যই রিমুভ করতে হবে।
পেইজ লোড লিমিট : টেকনিক্যাল লেভেল এসইও অডিটের জন্য পেইজ লোড টাইম অন্যতম একটা ফ্যাক্টর । তাই এসইও ফ্রেন্ডলি করতে পেইজ লোড টাইম রিডিউস করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি আপনার পেইজ লোড হবে আপনার র্যাংকিং ও তত ভাল হবে।
সম্পূর্ণ এসইও ক্যামপেইনের জন্য কনটেন্ট খুবই ইম্পরটেন্ট একটা এসপ্যাক্টস। তাই প্রতিটিতে একটি করে চেকলিস্ট থাকা জরুরী।
ডুপলিকেট কন্টেন্ট : ওয়েব সাইটের প্রতিটি সিংগেল পেইজে ইউনিক কন্টেন্ট থাকা আবশ্যক। কন্টেন্ট টি কখনও ঐ সাইট বা অন্য কোনো সাইট থেকে কপি করা উচিত নয়। তাছাড়া ইউনিক কন্টেন্ট অথোরিটি ইনক্রিস করতে ও সার্চ ইঞ্জিনএ ভাল মানের ভিসিবিলিটি পেতে সাহায্য করবে। আর ওয়েব সাইটটিতে নিয়মিত ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট পর্যবেক্ষণ করতে আপনি SEO Moz এর মত টুল ব্যবহার করতে পারেন।
হিডেন টেক্সট : হিডেন টেক্সট যাতে কখনও না ব্যবহার হয়, সেদিকে সতর্ক থাকা উচিত। কিন্তু একটি ওয়েবসাইটকে এসইও করার আগে আপনি যখন অডিট করবেন তখন সাইটটিতে কোন হিডেন টেক্সট আছে কিনা তা দেখতে হবে, আর তাই সাইটটির ডাবল চেক করা ভীষন জরুরী।
মিসিং টাইটেল এন্ড ডেসক্রিপশন: টাইটেল ও ডেসক্রিপশন নিয়ে কখনোও কম্প্রোমাইজ করা যাবেনা। একটা ওয়েবসাইটের জন্য অবশ্যই একটা ইউনিক টাইটেল থাকতে হবে এবং সাইটটির প্রতিটি পেইজে মেটা ডেসক্রিপশন থাকা জরুরী । গুগলের কাছে টাইটেল একটা গুরুত্তপুর্ন এসইও ফ্যাকটর, আর ডেসক্রিপশনটা অধিক ট্যানজিবল। তাই এসইও অডিট করতে হলে এই জিনিসগুলো প্রাইওরিটি লিস্টে থাকতে হবে।
ডুপ্লিকেট টাইটেল এন্ড মেটা ডেসক্রিপশন: ওয়েব সাইটে ডুপ্লিকেট টাইটেল এন্ড মেটা ডেসক্রিপশন থাকার কারনে এটির জন্য আপনার সকল র্যাংকিং গুলোতে নেগেটিভ ইমপেক্ট হবে। তাই বেটার পারফর্মের জন্য একটি ওয়েব সাইটে ইউনিক টাইটেল ও মেটা ডেসক্রিপশন থাকতে হবে।
ইমেজ ALT ট্যাগ: গুগলের অ্যালগারিদম ইমেজ সার্চ করে ইমেজের নাম, ALT টেক্সট পড়ে।
তাই প্রত্যক ইমেজেরই একটা ইউনিক নেইম থাকা এবং কীওয়ার্ডের উপর নির্ভর করে ইউনিক ALT ট্যাগ রাখা উচিত।
লিংকস গোয়িং আউট : ওয়েবসাইটটির পেজের ভিতরে অন্য সাইটের লিংক বেশি থাকলে সেটি দূর করা উচিত। একটি সাইটে ৮-১০ টি অন্য সাইটের লিংক মানা যায়। এর বেশি থাকা সাইটের জন্য ভাল হবেনা।
মিসিং হেডিং ট্যাগ : হেডিং ট্যাগ এসইওর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই ওয়েবসাইটের কনটেন্টে হেডিং ট্যাগ (h1, h2, h3) ব্যবহার করা জরুরী। একটি পেজে অবশ্যই ১টি h1 ট্যাগ থাকা উচিত।
অ্যাংকর টেক্সট : গুগলের কাছে অ্যাংকর টেক্সট এর একটা সিগনিফিকেন্ট ভ্যালু আছে, তাই কোনো ওয়েবসাইটের ভ্যালু ডিটার্মাইন করতে এটা একটা অনন্য ফ্যাকটর ।
সম্পূর্ণ একটা এসইও কনটেন্টে সোশ্যাল এনালাইসিসও প্র্য়োজনীয়্। যেমন,
শেয়ারিং বাটনঃ সকল ওয়েবসাইটে একটি শেয়ার বাটন থাকা জরুরী। এটা একটা বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু অনেক ওয়েবসাইটে এটিকে নেগলেক্ট করা হয় । ভিসিটরদের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে পেজটি শেয়ার করতে উৎসাহী করার জন্য এ বাটন জরুরী।
অ্যানালাইটিক্স :
আপনার ওয়েবসাইটটি বড় হোক কিংবা ছোট, ওয়েবসাইটটিতে গুগল এনালাইটিক্স সেট করা থাকতে হবে। গুগল এনালাইটিক্স এবং গুগল ওয়েবমাস্টার টুল ইনকামিং ট্র্যাফিকের একটা রেগুলার ট্র্যাক রাখে।
যদিও অডিটিং একটা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু এ চেকলিস্টটি তৈরি থাকলে পরিকল্পনামাফিক এসইও হবে। সফল হওয়ার সম্ভাবনা তখন বেড়ে যায়।
এ পোস্টসহ আমার আরো অনেক পোস্টগুলো খুজে পাবেন।
আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 102 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/
ভাই, বড়ই ভাল লাগল। এবার যদি আম এসইও পার্টি কিছুটা বুদ্ধিমান হয়।