আসসালামু আলাইকুম। আইটি বাড়ি এর পক্ষ থেকে সবাইকে স্বাগতম। অনেক দিন পর আবার লিখছি। ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেসে এখন এসইও এর অনেক চাহিদা। এসইও নিয়ে ফেসবুক গ্রুপ খোলার পর থেকে এই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটার সম্মুখীন হতে হয়েছে যে- “কিভাবে ক্লাইন্ট এর সাইট গুগল এর প্রথম পেজে নিয়ে আসব” হ্যাঁ, কথা কিন্তু পুরোই সত্য। এই ধরনের অনেক কাজ পাওয়া যায় বিভিন্ন ফ্রীল্যান্স মার্কেট গুলোতে যেমন- ওডেস্ক, ফ্রীল্যান্সার, ইল্যান্স ইত্যাদি। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি হয়ে দাড়ায়, বেশীরভাগ লোক যারা এসইও এর জগতে নতুন তারা বুঝতেই পারে না, কাজটি কোথা থেকে শুরু করবে, কি কি করবে, কিভাবে ক্লাইন্টকে কাজ সাবমিট করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই রকম যারা যারা আছেন তাদের জন্যই আজকের এই টিউন।
কথা আগে বাড়ানোর আগে একটু পেছনে যাই। যারা যারা এসইও এর কাজ জানেন না বা এসইও সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই তারা এই পোস্টটির অনেক কথা নাও বুঝতে পারেন। তাদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে আপনি আগে এসইও সম্পর্কে একটু জানুন বা হেল্প লাগলে কমেন্টে জানান। এই পোস্টটি শুধুমাত্র তাদের জন্যই যারা এসইও এর কাজ শিখেছেন কিন্তু ফ্রীল্যান্সিং এ নতুন।
তো চলুন ফিরে আসা যাক, ধরে নিলাম আপনি এই রকম একটি কাজ পেয়েছেন। তাহলে আপনাকে যে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো নিচে পয়েন্ট আকারে দিই তাহলে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে-
এই ধরণের কাজে আপনার প্রথম কাজ হবে আপনার ক্লাইন্টকে জিজ্ঞেস করা যে উনি ঠিক কোন ধরণের এসইও চান? এখানে দুই ধরণের এসইও হতে পারে, একটা হতে পারে লোকাল এসইও আবার আরেকটা হতে পারে ওয়ার্ল্ডওয়াইড এসইও। লোকাল এসইও বলতে বোঝায় কান্ট্রি অনুযায়ি এসইও, যেমন- ক্লাইন্ট যদি চান তার সাইট Australia তে ভাল করুক তো এই ক্ষেত্রে তিনি সবার আগে লোকাল এসইও কেই প্রাধান্য দিবেন। কারন, সাধারন ভাবে ৮০% লোকই নিজ দেশের গুগল ব্যবহার করে। অনেকে হয়ত এটা ভাবছেন যে, গুগল তো গুগল ই, এটা আবার নিজ দেশের কি, আবার অন্য দেশেরই কি?
আপনিও যদি এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে বলব, এখনি গুগলে যান, এবং উপরে যেখানে লিঙ্ক থাকে সেখানে দেখুন তো, http://google.com লিখা আছে নাকি http://google.com.bd লিখা আছে? কোনটা পেলেন? আপনার আইপি যদি বাংলাদেশের হয়ে থাকে বা আপনি যদি http://google.com কে ডিফল্ট হিসেবে সেট না করে থাকেন তাহলে অবশ্যই দেখবেন সেখানে http://google.com.bd লেখা আছে। ঠিক এই রকমই Australia এর জন্য http://google.com.au থাকে। বেশির ভাগ লোকই গুগলে সার্চ করার জন্য তাদের নিজেদের মানে লোকাল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে। আর যদি আপনার ক্লাইন্টের সাইটটি লোকাল কোন কাজের জন্য হয়ে থাকে, যেমন- কোন হাসপাতাল বা কোন গাড়ির রিপেয়ারিং সাইট তাহলে তিনি চাইবেন লোকাল র্যাঙ্কিং এ আগে থাকতে। আর এই জন্যই আগে ভাল করে সিউর হয়ে নিন ক্লাইন্ট কি লোকাল গুগল এর রেজাল্টে টপে আসতে চান, নাকি http://google.com এর রেজাল্টে টপে আসতে চান। তবে, এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল যে, লোকাল গুগল এর সার্চ রেজাল্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল গুগল এর সার্চ রেজাল্টে ৫-১০% পার্থক্য থাকতে পারে। আশা করি সবাই লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল এসইও এর ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। না বুঝে থাকলে কমেন্টে জানাবেন, এই নিয়ে আরেকটা পোস্ট করব ইনশা-আল্লাহ।
এবার সবার আগেই আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে, ক্লাইন্টের সাইটের অনপেজ অপটিমাইজেশন। তবে এক্ষেত্রে আগে ভাল করে দেখে নিন, আগে থেকেই সেটা করা আছে কিনা। যদি করা থাকে তাহলে আর করতে হবে না। অনেকেই হয়ত বুঝতে পারছেন না, অনপেজ অপটিমাইজেশন আবার কি? এটা হচ্ছে এসইও এর প্রথম ধাপ। এসইও এর এই ধাপে কিছু কাজ করা হয় যার মাধ্যমে আপনার সাইটকে সরাসরি গুগল এ সাবমিট করা হয়। ভাল করে দেখে নিন, ক্লাইন্টের সাইটটি গুগলে সাবমিট করা আছে কিনা? সাইটটির জন্য গুগল ওয়েবমাস্টার টুল ব্যবহার করা হয়েছে কিনা। সাইটটিতে গুগল অ্যানালাইটিক আছে না। এখন ভাবছেন কিভাবে বুঝবেন এইগুলো আছে কিনা? সরাসরি ক্লাইন্টকেই জিজ্ঞেস করুন এই টুলস গুলো ব্যবহার করা আছে কিনা। ক্লাইন্ট ই বলে দিবে। যদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে দেখে নিন সঠিক ভাবে ব্যাবহার করা আছে কিনা, আর না থাকলে আপনি করে দিন।
ধরলাম আপনার ক্লাইন্টের সাইটে আগে অনপেজ ছিল না এবং আপনি অনপেজ অপটিমাইজেশন করেছেন। এখন একদিন অপেক্ষা করুন। দেখুন ক্লাইন্ট এর সাইটে কোন পরিবর্তন আসে কিনা, এখানে আমি বোঝাতে চাচ্ছি, গুগল কে একদিন সময় দিন সাইটকে ক্রল করার জন্য এবং সাইটের অন্যান্য এইচটিএমএল Structure খতিয়ে দেখার জন্য। কারন ক্রল করতে বেশি সময় লাগবে না, কিন্তু আপনার সাইটের আরও অনেক কিছুই গুগল কে দেখতে হবে এই জন্য একদিন অপেক্ষা করুন এবং একদিন পর ওয়েবমাস্টার টুলস এ গিয়ে দেখুন কোথাও কোন গণ্ডগোল আছে কিনা। থাকলে ঠিক করে দিন।
এবার সময় হয়ে গেছে কিওয়ারড নিয়ে নাড়াচাড়া করার। আপনি যদি এসইও আগে জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই জানেন কিভাবে এসইও এর জন্য কিওয়ার্ড এ্যনালাইসিস করতে হয়। আপনার ক্লাইন্টের সাইটের মেইন কি ওয়ার্ড গুলো আগে এক জায়গায় লিখুন। তারপর সেই কিওয়ার্ড গুলো গুগল প্ল্যানার (আগের এডওয়ার্ড) টুলস এর সাহায্যে একটু দেখে নিন, এর কম্পিটিটর কেমন। দেখবেন এই রিসার্চ করতে গেলে রিলেটেড আরও অনেক কিওয়ার্ড বের হয়ে আসবে। সেগুলো ও লিখে রাখুন। এবার আপনার লিখা কিওয়ার্ড গুলো দিয়ে একটি এসইও নির্ভর মেটা ট্যাগ তৈরি করুন। সেই মেটা ট্যাগটি আপনার ক্লাইন্টের সাইটে স্থাপন করুন।
পার্ট-১ ঃ এখানে ক্লিক করে ইউটিউব থেকে দেখুন।
পার্ট-২ ঃ এখানে ক্লিক করে দেখুন।
আপনার ক্লাইন্টের সাইটের কনটেন্ট নির্বাচন অতি জরুরী। কনটেন্ট গুলো যেন মান সম্মত হয় এবং এসইও নির্ভর হয় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। ক্লাইন্টের সাইটে আগে থাকতেই যে সকল পোস্ট থাকবে সেগুলো এডিট করুন। এখানে কিন্তু আমি, কনটেন্ট পরিবর্তন করতে বলছি না, আমি বলছি সেই পোস্ট গুলোতে মেটা ট্যাগ যুক্ত করুন, পুরো সাইটে দেখুন কোন ডুপ্লিকেট মেটা আছে কিনা? থাকলে রিমুভ করুন। তাছাড়াও সাইটে নতুন কনটেন্ট বা পোস্ট লিখার সময় খেয়াল রাখুন এসইও এর নিয়ম মেনে লিখছেন কিনা? আর যদি ক্লাইন্ট আপনাকে দিয়ে কনটেন্ট না লিখায়, তাহলে ক্লাইন্টকে পরামর্শ দিন যে, এই এই ভাবে এসইও মেনে কনটেন্ট লিখতে।
এসইও তে ব্যাকলিঙ্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার সাইটের পেজর্যাঙ্ক বাড়াতে সাহায্য করে। অনেকেই বলে থাকেন এসইও তে হামিং বার্ড আপডেট আসার পর নাকি ব্যাকলিঙ্ক এর কোন গুরুত্ব নেই?!? কিন্তু কথাটা কতটা সত্যি বা কতটা মিথ্যা জানি না। আমার খুব রিসেন্টলি চলা ওডেস্ক এর একটি কাজে, আমি নিজে দেখেছি, নিয়মিত ব্যাকলিঙ্ক এর ফলে মাত্র দেড় মাসেই ক্লাইন্টের সাইটের পেইজর্যাঙ্ক ০ থেকে ৩ এ চলে এসেছে। বিশ্বাস না হলে নিজেই দেখে নিন-http://bostonmedicalgroup.com/
কাজেই শুরু করে দিন ব্যাকলিঙ্ক।তবে, বিশেষ করে, সোশ্যাল বুকমারকিং এবং ব্লগ কমেন্ট অনেক তাড়াতাড়ি রেজাল্ট দেয়। তবে ব্যাকলিঙ্ক এর জন্য লিঙ্ক খোজাই হল প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা আর কোন সমস্যা থাকবে না আশা করি যদি আপনি নিচের ভিডিওটি দেখেন।
শেষ কথা হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। কারন এসইও কোন অতি দ্রুত প্রসেস নয়। এটা আস্তে আস্তে রেজাল্ট দিবে। কাজ গুলো করতে থাকুন দেখবেন ক্লাইন্টের সাইটের ট্রাফিক এবং র্যাঙ্কিং এ ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
টিউনটি নতুনদের জন্য বুঝতে সমস্যা হতে পারে। এই জন্য লিখার পাশাপাশি ভিডিও টিউটোরিয়াল দেয়ার চেস্টা করেছি। এর পরেও কোন সমস্যা থাকলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে চেষ্টা করব ইনশা-আল্লাহ্।
এসইও সঙ্ক্রান্ত আমাদের ফেসবুক গ্রুপ।
টিউনটি কেমন হল কমেন্টে জানাবেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফিজ।
আমি আইটি বাড়ি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 41 টি টিউন ও 79 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
খুব সুন্দর পোষ্ট ,ব্যাখা সহকারে বুঝিয়ে দিছেন।