গুগলের নিয়মিত আপডেটের পর অনেকের ওয়েবসাইট গুগল হতে পেনাল্টি খেয়ে সার্চের পেজ থেকে নাই হয়ে যাচ্ছে। অনেকে সেজন্য এসইও নিয়ে আতংকিত আছে। এসইও করার সময় কিছু ভুল থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারলে যেকোন আপডেট হওয়ার পরও খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবনা। জেনে নেয়া যাক, এসইও করার ক্ষেত্রে বিপদ এড়ানোর জন্য কি কি ভুলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।ভুল আমরা করি।
গুগল পেঙ্গুইন সহ গত ১ বছরে যত আপডেট হয়েছে, সবগুলো আপডেটেই লোকোয়ালিটির কনটেন্টকে খুব শক্তভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছে। এ যুগে কোন ওয়েবসাইটে লোকোয়ালিটির কনটেন্ট থাকলে, সেটিকে গুগলের সার্চ রেজাল্টে থাকার স্বপ্নও দেখা উচিতনা।
লোকোয়ালিটি কনটেন্টের চাইতেও বড় ধরনের বিপদজনক কাজ হচ্ছে নকল কনটেন্ট। নকল কনটেন্ট থাকা ওয়েবসাইটকে অফপেইজ এসইও করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেও সেটিকে গুগলের সার্চের ভাল অবস্থানে আনতে পারবেননা। এক্ষেত্রে অনেক সময় গুগল আপনাকে ব্ল্যাক লিস্টেডও করে ফেলতে পারে।
অনেক ওয়েবসাইটে কনটেন্ট লেখার সময় অন্য কনটেন্টকে পরিবর্তন করে ইউনিক করা হয়। কিন্তু এই ইউনিক করার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে এমনভাবে লেখা পরিবর্তন করা হয়, যার কারনে সঠিক অর্থ থাকেনা কিংবা সঠিক অর্থ বুঝাটা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, গুগলকে ফাকি দিয়ে কনটেন্ট লিখে কোন লাভ নাই। কারণ যে কনটেন্ট দেখে মানুষ বিরক্ত হবে, সেই কনটেন্টকে গুগল কখনও পছন্দ করবেনা।
ওয়েবসাইটের ভিতরের সব পেজে একই টাইটেল এবং একই মেটা ডেসক্রিপশন থাকলে সেই ওয়েবসাইটের গুগলের পক্ষ হতে পেনাল্টি উপহার পাওয়ার খুব ভাল সম্ভাবনা আছে।
গুগল পান্ডা আপডেটের পর কোন ওয়েবসাইটে খুব বেশি বিজ্ঞাপন কিন্তু কনটেন্ট অল্প, এরকম হলেও পেনাল্টি খেতে হবে।
এসইও করার ক্ষেত্রে লিংক এক্সচেঞ্জ অনেকের কাছে খুব প্রিয়। এ কাজে উপকারও পাওয়া যায়। কিন্তু খুব বেশি পরিমানে এ কাজ করলে গুগলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায়। ফলাফল, গুগল সার্চ হতে পেনাল্টি।
ওয়েবসাইটের কনটেন্টের সকল জায়গাতে যদি একই অ্যাংকর টেক্সট দিয়ে লিংক তৈরি করা হয়, সেটাকে গুগল খুব ভাল চোখে দেখেনা। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটের অনেক জায়গাতেই SEO Training শব্দটি থাকতে পারে এবং আপনার কীওয়ার্ডও এটি। তাই বলে কনটেন্টের থাকা প্রতিটি একই শব্দে আপনাকে লিংক দিতে হবে কেন। যদি লোভ সামলাতে না পারে এই কাজটি করে থাকেন, তাহলে প্রস্তুত হন পেনাল্টি খাওয়ার জন্য।
এসইওর কাজে খুব পুরানো একটি স্পাম পদ্ধতি হচ্ছে ওয়েবসাইটের কনটেন্টে কীওয়ার্ডের ডেনসিটি বৃদ্ধি করা। কিন্তু আপনি যদি বিনা কারনে আপনার নির্দিষ্ট কীওয়ার্ডটি কনটেন্টে লিখে ডেনসিটি বৃদ্ধি করেন, সেটি হলে নিশ্চিতভাবে পেনাল্টি খাবেন। শুধুমাত্র যেসব জায়গাতে প্রযোজ্য সেসব ক্ষেত্রেই কীওয়ার্ডটি ব্যবহার করবেন।
ওয়েবসাইটের একটি পেজে একবার h1 ট্যাগ থাকতে পারে। সুতরাং যদি আপনি এর চাইতে বেশি পরিমান h1 ট্যাগ ব্যবহার করেন তাহলে পেনাল্টি খেতে হবে।
যারা জুমলা কিংবা ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করেন, তারা বেশির ভাগই ফ্রি টেমপ্লেট ব্যবহার করেন। তাদের জন্য বলব ফ্রি জিনিস ব্যবহার ছাড়ার সময় হয়েছে। কারন যারা এই ফ্রি টেমপ্লেটগুলো অনলাইনে ছেড়েছে, তারা গোপনে সেখানে তার ওয়েবসাইটের লিংক ঢুকিয়ে দিয়েছে, যাতে তার ওয়েবসাইটের জন্য একটি ব্যাকলিংক পায়। এই একটি ব্যাকলিংক দেয়ার বিনিময়ে আপনার জন্য উপহার হিসেবে অপেক্ষা করছে, গুগল থেকে বিশাল শাস্তি।
আপনার ওয়েবসাইটের ভাষা ইংরেজী কিন্তু লিংকবিল্ডিং করছেন চীনা কিংবা রাশিয়ান ভাষার কোন ওয়েবসাইটে, তাহলে গুগল মামা একটু কনফিউশনে পড়ে যায়। ফলাফল হিসেবে শাস্তি পেয়ে যেতে পারেন, যদিও চীন কিংবা রাশিয়ার গুগলে আপনার অবস্থান ভাল থাকতে পারে।
যদি আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর ব্রোকেন লিংকস থাকে তাহলে সেটাকে গুগল অ্যালগোরিদম খুব খারাপভাবে চিহ্নিত করে। এখানেও ফলাফল হিসেবে আপনার কপালে পেনাল্টি জুটবে।
ওয়েবসাইটে খুব বেশি এক্সটার্নাল লিংক থাকলে সার্চ ইঞ্জিনে আপনার অবস্থান খারাপ হয়ে যাবে। একইভাবে ওয়েবসাইটে যদি একটাও এক্সটার্ণাল লিংক না থাকে তাহলে সেটার জন্য কপালে পেনাল্টি জুটবে।
অনেক ওয়েবসাইটে দেখা যায় ঘড়ি, ভিজিটর কাউন্টার, আবহাওয়ার রিপোর্টসহ আরো অনেক ধরনের সার্ভিস। এগুলোর পিছনে অন্য ওয়েবসাইটের লিংক থাকে। এ ধরনের লিংকের জন্যও একটু রিস্ক থাকতে পারে। অর্থাৎ পেনাল্টি খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য এ ধরনের জিনিস ব্যবহার না করাই ভাল।
আমরা জানি উচ্চ পেজ র্যাংকের কোন ওয়েবসাইটে কোন লিংক দিলে সেই লিংক গুগল খুব সহজে ইনডেক্সিং হয়ে যায়। এসব ওয়েবসাইট থেকে ব্যাকলিংক পাওয়ার জন্য অনেকে কিছু পেইড করে ব্যাকলিংক সংগ্রহ করে। এসব পেইড ব্যাকলিংককে গুগল খুব বেশি পছন্দ করেনা। এ ধরনের পেইড ব্যকলিংকের কারনে গুগল সার্চ রেজাল্ট পেজ হতে পেনাল্টি খেতে পারেন।
আমাদের মেইলে প্রায়শ স্পাম মেইল পাই। এই মেইলগুলোতে সবচাইতে বেশি যেটা পেয়ে থাকি তা হল লিংক বিল্ডিং করে দেয়ার অফার। এইসব অফার দেখে যারা তাদের সার্ভিস নেয়ার চেষ্টা করে, তারাই গুগল থেকে পেনাল্টি খায়।
খুব দ্রুত সময়ে খুব বেশি লিংক করাকে গুগল বাঁকা চোখে দেখে। যতই আপনি লিগ্যাল লিংক ব্যবহার করেন, তারপরও অল্প সময়ে অধিক ব্যাকলিংকের কারনে গুগল হতে পেনাল্টি খেতে হবে।
আপনি ওয়েবসাইট তৈরি করলেন এবং সেটিতে কনটেন্ট দেওয়া শুরু করার আগেই মার্কেটিং শুরু করে দিলেন। এক্ষেত্রে গুগলের Sandbox filter অপশন থেকে আপনার ব্যপারে রিপোর্ট যাবে। ফলাফল পেনাল্টি।
অনেক সময় কিছু অ্যাফিলিয়েশন সাইট দেখি বিশেষ করে লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সাইটগুলো দেখলে মনে হয়, ওয়েবসাইট করাই হয়েছে, শুধুমাত্র অ্যাফিলিয়েশনের লিংক বসানোর জন্য। সেই ওয়েবসাইটগুলো অবশ্যই গুগল হতে পেনাল্টি খাবে।
গুগলের সার্চের অ্যালগরিদমের নতুন নতুন পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে ওয়েবসাইটকে আপডেট করতে না পারলে পেনাল্টি খেতে হবে।
সবশেষে বলব, ভাল কনটেন্ট এসইওতে আপনার কাজ অনেক সহজ করে দেয়। এখনও যারা লিংক বিল্ডিং করতে পারাকেই এসইও করা মনে করে, তাদের এখনই সাবধান হওয়ার সময়। গেস্ট ব্লগিংয়ের মাধ্যমেই এখন খুব সহজেই এবং বিপদমুক্তভাবে এসইও করা যায়। যত আপডেট এসেছে কিংবা ভবিষ্যতে যত আপডেট আসবে, সকল আপডেটেই গেস্ট ব্লগিংকেই উৎসাহিত করা হচ্ছে। তাছাড়া বাকি সব পদ্ধতিতেই কিছু বিপদ নিয়ে অবশ্যই টেনশনে থাকতে হবে।
লেখালেখি যদি না পারেন কোন চিন্তা নাই। এ ব্যাপারে আমার পোস্টটি দেখতে পারেন। কাজে লাগবে।
এবার আপনিও লেখালেখি করতে পারবেন। এ লেখাটি পড়ে হয়ে উঠুন প্রফেশনাল রাইটার
আরও কোন ভুল কারও জানা থাকলে সেটিও এখানে সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন । ভাল লাগলে নিজের ফেসবুকে সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন, যাতে সবাই বিষয়গুলো জেনে সাবধান হতে পারে।
আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 102 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/
ভাল টিউন। থ্যাঙ্কস