প্রাইভেট টিউটর দের কাজ মোবাইলের মাধ্যমে করিয়ে নেয়ার অভিনব ৫ টি উপায়!

Level 6
শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর

পাঠ্যবইয়ের পড়া যতোই স্কুলে বা কলেজে শিখিয়ে দেয়া হোক না কেন, বাড়িতে এসে প্রতিটি শিক্ষার্থীই সব এলোমেলো করে ফেলে। তাইতো বাড়িতে থাকা চাই একজন প্রাইভেট টিউটর। একজন টিউটর যে কোনো সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করে দিতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের একটি নিয়মিত রুটিনের মধ্যে রাখেন। কিন্তু বাড়িতে একজন প্রাইভেট টিউটর রাখা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই খরচ সাপেক্ষ।

কেমন হয় যদি হাতে থাকা মোবাইল ব্যবহার করে একদম বিনামূল্যে প্রাইভেট টিউটর এর সকল কাজ করিয়ে নেয়া যায়? হ্যাঁ শিক্ষার্থীর নিজের হাতে মোবাইল না থাকলেও অভিভাবকের মোবাইল ব্যবহার করে তারা পড়াশোনাকে করতে পারে আরও সহজ ও পরিকল্পিত। ইন্টারনেটে এখন ফ্রি তে হাজার হাজার শিক্ষা সামগ্রী পাওয়া যায়। এই ফ্রি সার্ভিস গুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারলে বাড়িতে কোনো প্রাইভেট টিউটর না রাখলেও চলবে। কীভাবে মোবাইল দিয়ে প্রাইভেট টিউটর এর কাজ করিয়ে নেবেন তার কয়েকটি উপায় এখান তুলে ধরা হলো।

১. ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে

ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে

বর্তমানে ফেসবুকে শ্রেণি ভিত্তিক অনেক পাবলিক এবং প্রাইভেট গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই সকল গ্রুপে একজন মেন্টর থাকেন যিনি ফ্রি তে শিক্ষার্থীদের সঠিক গাইডলাইন দিয়ে থাকেন। আপনি আপনার শ্রেণি অনুযায়ী ফেসবুকে সার্চ করতে করতে নিজের জন্য উপযুক্ত গ্রুপ খুঁজে পাবেন। এই সকল গ্রুপে নিয়মিত যুক্ত থেকে পড়াশোনায় একটা সুন্দর গতি নিয়ে আসতে পারবেন।

বেশিরভাগ শিক্ষামূলক ফেসবুক গ্রুপে নিয়মিত হোমওয়ার্ক দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সেই হোমওয়ার্ক কমপ্লিট করে গ্রুপে জমা দিতে হয়। নিয়মিত হোমওয়ার্ক না করলে শাস্তি স্বরূপ গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া হয়। তাহলে দেখুন এখানে আপনি একদম বিনামূল্যে একজন শিক্ষক পাচ্ছেন যে কিনা প্রতিনিয়ত আপনার পড়াশোনার খোঁজ খবর নিচ্ছে।

আবার পড়াশোনা বিষয়ক কিছু বুঝতে না পারলে গ্রুপের মেন্টর ও সহপাঠীরা খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেয়। আর এই ফ্রি সার্ভিস কিন্তু আপনি ২৪ ঘন্টাই পাবেন। তবে সঠিক ফেসবুক গ্রুপ খুঁজে বের করাটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং বটে। এজন্য আপনার ক্লাস অনুযায়ী পড়াশোনা বিষয়ক টপিক নিয়মিত ফেসবুকে সার্চ করলে ফেসবুক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার সামনে উপযুক্ত ফেসবুক গ্রুপ বা পেইজ প্রদর্শন করবে। এর মধ্যে থেকে সবগুলো গ্রুপেই যুক্ত হয়ে নিবেন এবং পরবর্তীতে যে গ্রুপের কার্যকলাপ আপনার কাছে উপকারী মনে হবে ঐ গ্রুপে নিয়মিত থাকতে পারবেন।

২. ইউটিউবে ভিডিও ক্লাস করে

ইউটিউবে ভিডিও ক্লাস করে

এখন যে কোনো শ্রেণির যে কোনো সাবজেক্ট এর ফ্রি ভিডিও ক্লাস পাওয়া যায় ইউটিউবে। সঠিক ভাবে যে কোনো টপিক সার্চ করলে সাথে সাথে ভিডিও ক্লাসগুলো চলে আসবে আপনার সামনে। ধরুন আপনি দশম শ্রেনির গনিত করতে গিয়ে কোনো একটা সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। সাথে সাথে পৃষ্ঠা নম্বর লিখে ইউটিউবে সার্চ করলে ঐ পৃষ্ঠার সবগুলো অংকের সমাধান চলে আসবে। এভাবে আপনি যে সাহায্য প্রাইভেট টিউটর এর কাছ থেকে নিতেন তা মেবাইলের মাধ্যমেই নিতে পারেন একদম বিনামূল্যে।

শুধু পাঠ্যবইয়ের পড়া না আপনি চাইলে ফ্রি স্পোকেন ইংলিশ ও বেসিক গ্রামার এর ক্লাস করতে পারেন ইউটিউবে। ইউটিউবে সার্চ করলেই অনেক অনেক ফ্রি কোর্স আপনার সামনে চলে আসবে। প্রয়োজন হবে না এক্সট্রা কোনো গাইড বই কিংবা নোটবই এর। আসলে ইউটিউব ক্লাস করে বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী সহ শিক্ষক পাঠ্যবই এর নতুন নতুন পড়াশোনা ভালোভাবে বুঝে নিতে পারছে। পাশাপাশি পাওয়া যায় উন্মুক্ত সাজেশন-ও।

অর্থাৎ পড়াশোনা বিষয়ক যে সমস্যা গুলো আপনি প্রাইভেট টিউটর এর কাছে সমাধান চাইতেন তার পুরোপুরি সমাধান আপনি ইউটিউব এর কাছেও চাইতে পারবেন। একজন নয় বরং বেশ কয়েকজন মেন্টর এর কাছ থেকে আপনি একই বিষয় খুব ভালোভাবে বুঝে নিতে পারবেন। ফলে পাঠ্যবইয়ের কোনো বিষয়ে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।

৩. নিয়মিত শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট ভিজিট করে

নিয়মিত শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট ভিজিট করে

আমাদের প্রাইভেট টিউটর তো পড়া শেখানোর পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত মূল্যায়ন করেন। আমরা কতোটুকু আগাতে পেরেছি তা পরিক্ষা করে দেখেন। এখন প্রশ্ন হতে পারে, মোবাইল এর মাধ্যমে পড়াশোনা করলে এমন সুযোগ হবে তো? ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বেশ কিছু জনপ্রিয় শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট তৈরি হয়ে গেছে। এই সকল ওয়েবসাইটে নিয়মিত ক্লাস টেস্ট ও মডেল টেস্ট পরিক্ষার আয়োজন করা হয়।

এই ফ্রি মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে আপনি নিজেকে যাচাই করে নিতে পারবেন। প্রতিযোগীতামূলক ভাবে আপনার ফলাফল যাচাই করতে পারবেন এবং ভুলগুলো সংশোধন করেও নিতে পারবেন। টেন মিনিট স্কুল, শিখো, শিখবে সবাই সহ অরও অনেক অনেক ওয়েবসাইট তাদের পেইড কোর্স এর পাশাপাশি এমন অসংখ্য ফ্রি মডেল টেস্ট তাদের ওয়েবসাইটে সাজিয়ে রেখেছে। তাই নিজেকে যাচাই ও নিজের অগ্রগতি নিয়ে আর চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এছাড়াও শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নোট ও সাজেশন এর পিডিএফ কপি পেয়ে যাবেন। হয়তো এই নোট বা সাজেশন আপনি আপনার প্রাইভেট টিউটর এর কাছেও পেতেন। যেহেতু এখানে ফ্রীতে পাচ্ছেন তাহলে কেন অর্থ খরচ করতে যাবেন। এছাড়াও পড়াশোনার ওপরে নিজেকে মোটিভেট রাখতে ওয়েবসাইট এর মেন্টর দের অনেক মোটিভেশনাল ভিডিও তো পাবেনই। সুতরাং আপনার কাজ হবে আপনার পাঠ্যসূচি অনুযায়ী উপযুক্ত ওয়েবসাইট টি খুঁজে বের করে সেখানে নিয়মিত সময় দেয়া।

৪. মোবাইল App ব্যবহার করে

মোবাইল App ব্যবহার করে 

আপনার পড়াশোনাকে আরও সহজ করতে বেশ কিছু মোবাইল App গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সাধারণত যে কাজগুলো প্রাইভেট টিউটর করে থাকে তা মোবাইল App এর মাধ্যমেই হয়ে যাবে। প্রথমেই আসে টাইম ম্যানেজমেন্ট এর বিষয়। একজন প্রাইভেট টিউটর তার স্টুডেন্ট এর পড়াশোনার প্রোপার টাইম শিডিউল করে দেয়। আপনি টাইম শিডিউল এর জন্য একটি App ডাউনলোড করে নিজেই সারাদিনের পড়াশোনার একটি রুটিন তৈরি করে নিতে পারেন।

প্লে স্টোরে টাইম শিডিউল App লিখে সার্চ করলে অনেক অনেক App সামনে চলে আসবে। এখান থেকে পছন্দ মতো যে কোনো একটি App ডাউনলোড করে নিজেই নিজের পড়ার শিডিউল করে নিতে পারেন। এই App গুলোর বেশিরভাগেরই রিমাইন্ডার অপশন থাকে। ফলে আপনি কোনো কাজ ভুলে গেলে App টি আপনাকে সাথে সাথে তা মনে করিয়ে দেবে। দেখুন প্রাইভেট টিউটর হয়তো আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতো দৈনিক এক ঘন্টা কিংবা দুই ঘন্টা। অন্যদিকে মোবাইলকে নিজের টিউটর বানিয়ে নিলে এটি আপনাকে সারাদিনই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।

ইংরেজি পড়তে গিয়ে কোনো ভোকাবুলারি বা ট্রান্সলেশনে আটকে গেলে সেটি আমরা নোট করে রাখি। পরের দিন টিচার আসলে আমরা ইংরেজি শব্দ বা বাক্যটির অর্থ বুঝে নেই। এই কাজটি মোবাইল এর সাহায্যে করার জন্য আপনি যে কোনো একটি ট্রান্সলেটর বা ডিকশনারি App ডাউনলোড করে নিতে পারেন। পুরো পৃষ্ঠার ছবি তুলে App এ ইনপুট করলেই কিংবা টাইপ করে ইনপুট করলে সাথে সাথে তা সঠিক অর্থ আউটপুট করবে। তাই আপনাকে ইংরেজি বোঝার জন্য আর টিউটর এর সাহায্য নিতে হবে না।

এছাড়াও শ্রেণি ভিত্তিক পাঠ্যবই ও গাইড পেয়ে যাবেন প্লে স্টোরে। আপনার যদি এখনও গাইড না কেনা হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনার শ্রেণি লিখে তার সাথে গাইড কথাটি যুক্ত করে প্লে স্টোরে সার্চ করলেই গাইড লিপিবদ্ধ মোবাইল App চলে আসবে। এখান থেকে ডাউনলোড করে আপনি গাইড বা বই পড়তে পারবেন। ফলে বইয়ের কোনো প্রশ্নের উত্তর না পাড়লে শিক্ষকের সহায়তা না নিয়ে মোবাইল App এর গাইড থেকে উত্তর সংগ্রহ করতে পারবেন।

৫. ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) ব্যবহার করে

ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) ব্যবহার করুন

এবার প্রাইভেট টিউটর দের দিন মনে হয় আসলেই শেষ হতে যাচ্ছে। কোননা ইতোমধ্যেই উন্মুক্ত হয়েছে ChatGPT এর নতুন ও আরও উন্নত ভার্সন ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni)। ওপেন এআই এর এই ফিচারটি ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই পড়াশোনার যে কোনো টপিক বুঝতে পারবেন। এটি টেক্সট এর সাথে ভয়েস ও ভিডিও ফিচার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই সরাসরি একজন টিউটর এর মতো ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) আপনাকে যে কোনো টপিক বুঝিয়ে দিতে পারবে।

ধরুন আপনি একটি গনিত বা ইংরেজি টপিক বুঝতে পারছেন না৷ তখন ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) কে ভয়েস বা ভিডিও প্রদান করে টপিক টি বুঝিয়ে দিতে বলবেন৷ ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) আপনাকে ঠিক একই ভাবে ভিডিও ও ভয়েস এর মাধ্যমে বাস্তব শিক্ষকের মতোই বিষয়টি বুঝিয়ে দিবে। ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) এর কার্যকারিতা কতোটা বেশি তা বুঝতে পারবেন এই ভিডিওটি  দেখার মাধ্যমে। কীভাবে ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) কে নির্দেশনা দিতে হয়, কীভাবে এর সাথে কমিউনিকেট করতে হয়, কীভাবে এটি আউটপুট করে তার বাস্তব উদাহরণ রয়েছে এখানে।

সুতরাং এখন তো আর প্রাইভেট টিউটর এর কাছে পড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। একজন টিউটর সারাক্ষণই আপনার হাতে থাকা মোবাইলে বসে থাকছে আপনাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করার জন্য। আর বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে ধরেই নিয়েছে ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) শিক্ষকদের দায়িত্ব অনেকাংশে কমিয়ে দেবে।

ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni)

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @  ChatGPT-4o (ChatGPT-4 Omni) 

শেষকথা

উপরোক্ত উপায় গুলো অবলম্বন করলে আশাকরা যায় একজন শিক্ষার্থী নিজের পড়াশেনা নিজেই চালিয়ে যেতে পারবে। ফলে বাড়তি টাকা খরচ করে বাড়িতে আর প্রাইভেট টিউটর রাখতে হবে না৷ তবে অভিভাবকদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, তাদের সন্তান মোবাইল ব্যবহার করে আদৌ পড়াশোনা করছে কিনা৷ প্রয়োজনে পাশে বসে থেকে নজরদারি করত হবে ছাত্র ছাত্রীর ওপরে। কেননা মোবাইল ফোন হাতে পেলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ অন্যদিকে চলে যেতেই পারে।

Level 6

আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস