“ইলেক্ট্রন প্রবাহের বীপরিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ”- কতটুকু সত্য? কেন বিদ্যুৎ প্রবাহের বীপরিতে ইলেক্ট্রন প্রবাহিত হয়?

আমরা প্রায়ই শুনে থাকি ইলেক্ট্রন যেদিকে প্রবাহিত হয় বিদ্যুৎ তার বীপরিতে প্রবাহিত হয়। এমনকি ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইতেও এ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। আসলেই কী তাই? আমরা কী এতদিন ভুল জেনে আসছি?

আমরা জানি, বিদ্যুৎ প্রবাহ মানেই হলো ইলেক্ট্রনের প্রবাহ। অর্থাৎ, কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রন প্রবাহিত হলেই একমাত্র বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। তবে আরও একটি শর্ত আছে। তা হলো- পরিবাহীর দুই প্রান্তে অবশ্যই বিভব পার্থক্য থাকতে হবে। একটি উদাহরণ দিলে সহজে বোঝা যাবে।

ধরুন আপনার কাছে দুটি পানিভর্তি বালতি আছে। একটিতে পানি একটু বেশি এবং অপরটিতে একটু কম। এখন আপনি বালতির নিচ বরাবর একটি পাইপের মাধ্যমে বালতি দুটিকে একসাথে সংযোগ করে দিলেন। স্বাভাবিকভাবেই বেশি পানিভর্তি বালতি থেকে পানি, কম পানিভর্তি বালতিতে চলতে শুরু করবে। এবং এই প্রবাহ ততক্ষণ চলতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দুটি বালতিতেই পানির পরিমাণ সমান হবে। এটিই হলো বিভব পার্থক্য। অর্থাৎ, পরিবাহীর একপ্রান্তে যদি নেগেটিভ চার্জ বা ঋণাত্মক আধান কম (ইলেক্ট্রন নেগেটিভ চার্জযুক্ত) থাকে এবং অপরপ্রান্তে তা বেশি থাকে তখনই বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে।

ইলেক্ট্রনের ঘাটতি হলো উচ্চ বিভব এবং ইলেক্ট্রনের আধিক্য হলো নিন্ম বিভব। বিদ্যুৎ নিন্ম বিভব থেকে উচ্চ বিভবের দিকে প্রবাহিত হয় বা সোজা কথায় বিদ্যুৎ যেদিকে ইলেক্ট্রন বেশি সেদিক থেকে যেদিকে ইলেক্ট্রন কম সেদিকে প্রবাহিত হয়। মানলাম ইলেক্ট্রন প্রবাহই হলো বিদ্যুৎ প্রবাহ। তাহলে কেনো বলা হলো যে, ইলেক্ট্রন প্রবাহের বীপরিতে বিদ্যুৎ প্রবাহীত হয়? এই ধারনার মূল উৎস জানতে হলে আমাদেরকে একটু পেছনের দিকে যেতে হবে।

সময়টা তখন ১৮ শতক। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন নামক জনৈক বিজ্ঞানীর গবেষণা করছেন বিদ্যুৎ নিয়ে। তখনও পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা (ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন) সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের তেমন কোনো ধারনা নেই। গবেষণার অংশ হিসাবে ফ্রাঙ্কলিন একদিন লাইডেন জার নামক একটি সুষম কাচের পাত্রকে রুমাল দিয়ে ঘষতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তিনি কাচের পাত্রে হাত দিয়ে হালকা শক অনুভব করেন। তিনি মনে করেন হাতে ইলেক্ট্রনের ঘাটতি থাকার কারণে বিদ্যুৎ তার হাতে প্রবাহিত হয়েছে এবং তিনি হাতকে নেগেটিভ আর কাচের পাত্রকে পজিটিভ ধরে নেন।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ পজিটিভ থেকে নেগেটিভ দিকে প্রবাহিত হয়। তার এই ধারণা কে বলা হয় কনভেনশনাল কারেন্ট।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ইলেক্ট্রন এর ঘাটতি বলতে পজিটিভ চার্জকে বোঝায়। সুতরাং ফ্রাঙ্কলিন এর মতে বিদ্যুৎ উচ্চ বিভব থেকে নিন্ম বিভবের দিকে প্রবাহিত হয়। এরপর অশেষে ১৮৯৭ সালে জোসেফ থমসন নামক বিজ্ঞানী ইলেক্ট্রন আবিষ্কার করেন। তিনি লক্ষ করেন যে ইলেক্ট্রন কণাগুলো পজিটিভ থেকে নেগেটিভ দিকে নয় বরং নেগেটিভ থেকে পজিটিভ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। ফ্রাঙ্কলিন এর মতবাদের সাথে যুক্ত হয় যে, ইলেক্ট্রন নেগেটিভ থেকে পজিটিভ দিকে প্রবাহিত হয়।

দুটি মতবাদ একত্রে দাঁড়ায় যে, ইলেক্ট্রন নেগেটিভ থেকে পজিটিভ দিকে এবং বিদ্যুৎ পজিটিভ থেকে নেগেটিভ দিকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ ইলেক্ট্রনের বীপরিতে দিকে। আর এভাবেই ”ইলেক্ট্রন প্রবাহের বীপরিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ “- কথাটির প্রচলন শুরু হয়।

আরও এক টি প্রশ্ন আছে। তা হলো, এই বীপরিত মতবাদের কারণে কি ইলেক্ট্রনিক্স জগতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়না? এর উত্তর হচ্ছে, না। একটি ব্যাটারির দুই প্রান্তে প্লাস ও মাইনাস দ্বারা ব্যাটারির পজিটিভ ও নেগেটিভ চিন্হিত করা থাকে। এক্ষেত্রে কোনো যন্ত্রের পজিটিভ ও নেগেটিভ চিন্হিত অংশ অনুযায়ী ব্যাটারিকে স্হাপন করলে যন্ত্রটি সচল হবে অন্যথায় যন্ত্রটি চলবে না। এসময় ইলেক্ট্রন বা বিদ্যুৎ কোনদিকে প্রবাহিত হলো তা গুরুত্বপূর্ণ না। উল্লেখ্য যে, ব্যাটারি আবিষ্কৃত হয় ১৯ শতকে।
সুতরাং, ইলেক্ট্রন প্রবাহের বীপরিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ কথাটি কনভেনশনাল বা প্রথাসিদ্ধ। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখন যদি কোথাও এই কথাটি বলা হয় তাহলে বুঝতে হবে সে ফ্রাঙ্কলিন এর কনভেনশনাল কারেন্ট এর কথা বলছে।

Level 0

আমি তাফহীম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস