বর্তমান এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার রীতিমত মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারিনা কম্পিউটারের সাহায্য বা ব্যবহার ছাড়া। টিউডারগণ প্রশ্ন করতে পারেন তা কিভাবে? সবাই তো আর ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহার করেনা। মশাই! আপনি যে স্মার্টফোনটি দিয়ে আজকের এই টিউনটি পড়ছেন তাও এক ধরনের কম্পিউটার। হতে পারে তা কিছুটা ছোটো বা সত্যিকার ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে কম ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু এটি একটি কম্পিউটার (যে যন্ত্রের কম্পিউটিং বা গণণা করার ক্ষমতা আছে তাকে কম্পিউটার বলে)। যাহোক, মূল আলোচনায় ফিরে আসি। যারা ভাবছেন একটি কম্পিউটার কেনা উচিত, তাদের অনেকের মনে একটা সংশয় থেকেই যায়, ল্যাপটপ না ডেস্কটপ, কোনটা কেনা উচিত? তাই আজকের টিউনে আমরা জানব ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপ কম্পিউটারের সুবিধা-অসুবিধা আর কর্মস্থল অনুযায়ী কাদের জন্য কোনটি বেস্ট অপশন জতে পারে। চলুন, মূল আলোচনায় যাওয়া যাক…
প্রথমেই আমরা ল্যাপটপ ও ডেস্কটপের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নিই…
১। সহজে পরিবহনযোগ্য যেকোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।
২। কেনার পর সরাসরি ব্যবহার যোগ্য।
৩। নতুন কেনার পর উইন্ডোজ ইন্সটলের ঝামেলা নেই।
৪। ব্যাটারি থাকায় বিদ্যুৎ না থাকলেও বেশ কিছুক্ষণ ব্যবহার করতে পারবেন।
৫। ল্যাপটপে বিল্টইং স্পীকার ব্যবহারের সুযোগ।
৬। বিল্টইং ব্লুটুথ ব্যবহারের সুবিধা।
৭। শুয়ে বা বসে (যেকনো জায়গায়) ব্যবহার করা সম্ভব।
৮। নতুন কেনার পর ড্রাইভার ইন্সটলের প্রয়োজন হয়না….ইত্যাদি।
১। দামের ক্ষেত্রে ডেস্কটপের তুলনায় ল্যাপটপের দাম অনেক বেশি।
২। সহজেই গরম হয়ে যায় বলে বেশিক্ষণ নির্ভিগ্নে ব্যবহার করা যায়না।
৩। প্রফেশনাল কাজ যেমন ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ইত্যাদি কাজে বেশ অসুবিধা হতে পারে।
৪। গেমিং এর জন্য ল্যপটপ ততটাও ভালো সিদ্ধান্ত নয়।
৫। ল্যাপটপের হার্ডওয়্যার আপগ্রেডিং তুলনামূলক ব্য্যয়বহুল।
৬। হার্ডওয়্যার এক্সেসরিজ তুলনামূলক ব্যয়বহুল।
১। দামের দিক থেকে ল্যাপটপের তুলনায় অনেক সস্তা।
২। নিজের পছন্দমতো পিসি তৈরী করে নেয়া যায়।
৩। প্রয়োজন হলে সহজেই আপগ্রেড করে নেয়া যায়।
৪। হার্ডওয়্যার এক্সেসরিজ তুলনামূলক সস্তা।
৫। প্রফেশনাল কাজ যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, অটোকেড, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি কাজের জন্য বেশি উপযোগী।
৬। কেসিং যথেষ্ট বড় হওয়ায় গরম হওয়ার ঝামেলা তেমন নেই বললেই চলে।
৭। কাস্টম পিসি বিল্ড করার পর নিজের ইচ্ছা মতো অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা যায়।
১। সহজে পরিবহনযোগ্য নয়।
২। তুলনামূলক বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়।
৩। শুয়ে বা বসে ব্যবহার কষ্টসাধ্য, কোন ক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে।
৪। ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায় না।
৫। ব্লুটুথ, স্পীকার ইত্যাদির মতো এক্সেসরিজ আলাদা কিনে সংযুক্ত করতে হয়।
এখন প্রশ্ন হল কাদের জন্য ল্যাপটপ বেস্ট হবে? মূলত, যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে বেশিরভাগ সময়ই বাহিরে থাকে কিন্তু তাকে তার অফিসের কাজও করতে হয়, তাদের জন্য ল্যাপটপ ডেস্কটপের তুলনায় বেশি ফলপ্রসু। ল্যাপটপে যেহেতু ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়, তাই দূর দুরান্তে গেলও মুটামুটি অফিস ওয়ার্ক করা যেতে পারে ল্যাপটপের সাহায্যে। আর ল্যাপটপ যেহেতু ভাজ করা যায়, ফলে সহজে ব্যাগে রাখা সম্ভব। এছাড়া যেহেতু বর্তমানের আধুনিক ল্যাপটপ গুলো অনেক পাতলা আর স্লিপ ফলে পরিবহনে কোনো সমস্যা হয়না।
তাই আপনি যদি নিয়মিত ভ্রমণ করেন ও অফিস ওয়ার্কেরও প্রয়োজন হয় আপনার তাহলে ল্যাপটপ আপনার জন্য বেশি উপকারি হবে। আর আপনি যপদি প্রফেশনাল কোনো কাজ করেন বা ফ্রিলান্সিং করেন বা একজন শৌখিন গেমার হয়ে থাকেন থাহলে ল্যাপটপ থেকে আপনি ১০০ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করুন…
আপনি যদি ভেবে থাকেন "নাহ, আমার পোর্টেবিলিটির (পরিবহনযোগ্যতা) প্রয়োজন নেই”, তাহলে আপনার জন্য বাজেট বেস্ট কম্পিউটার হতে পারে ডেস্কটপ পিসি। আর যেহেতু ডেস্কটপ কাস্টম এক্সেসরিজ দিয়েও বিল্ড করা যায় ফলে আপনার বাজেট অনুযাইয়ি সেরা পিসিটি আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু ল্যাপটপের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়না। তাছাড়া ডেস্কটপের কেসিং যথেষ্ট বড় হওয়ায় সহজে গরম হয়না। তাই আপনি অনায়াসে দীর্ঘক্ষন ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া পরবর্তীতে আপনার বাগেট বৃদ্ধি পেলে আপনি সহজেই নিজের প্রয়োজন অনুসারে আপনার পিসি টি আপগ্রেড করে নিতে পারবেন যা ল্যাপটপের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কষ্টসাধ্য। সামগ্রিকভাবে বললে, যদি আপনি ফ্রিলান্সিং, গেমিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ভিডিও এডিটিং, অটোকেডের মতো কাজের জন্য পিসি কিনতে চান তাহলে আমার পরামর্শ ল্যাপটপ থেকে ডেস্কটপকে বেশি প্রাধান্য দিন।
পরিশেষে, আশা করছি আজকের টিউন থেকে আমার টিউডারদের মধ্যে যারা সংশয়ে ছিলেন "ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ কোনটি কিনব?”, তাদের কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি, তাদের জন্য কোনটি বেশি কার্যকর হতে পারে। আজকের মতো এখানেই। দেখা হবে পরবর্তী টিউনে, ইংশাআল্লাহ….
আমি মোঃ আহসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।