আমরা মানুষেরা পৃথিবীতে বাস করি। তবে যুগ যুগ ধরে এই পৃথিবীতে বাস করলেও আমরা মানুষেরা পুরো পৃথিবীকে এখনো নিজেদের সসীম জ্ঞানের গন্ডিতে আনতে পারিনি। এখনো এমন অনেক বিচিত্র বিষয় রয়ে গেছে যা আমাদের ধরা ছোয়ার বাইরে। বড় বড় রহস্যের কথা আমি এখন বলছিনা, আমরা এমন অনেক বিষয়ের ব্যাখ্যাই জানিনা যা আমাদের নিত্যদিনেই ঘটে চলেছে। এমন কিছু বিষয় নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের টিউন। আজকের টিউন হতে আমার প্রিয় টিউডাররা আশা করছি কিছু হলেও শিখতে পারবেন। তাহলে, মূল আলোচলায় লাফ দেওয়া যাক……
কথাটাতো আমরা ছোটোবেলা থেকেই শুনে আসছি। ঘোড়া নাকি দাঁড়িয়ে ঘুমায়। আসলে কথাটি আংশিক সত্য হলেও তা পুরোপুরি সত্য নয়। ঘোড়া আসলে দাঁড়িয়ে ঘুমোয় না কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হালকা করে ঘুমিয়ে নেয় (এটি কিন্তু গভীর ঘুম না)। "তন্দ্রা" শব্দটির ইংরেজী প্রতিশব্দ ন্যাপ অর্থাৎ হালকা ঘুম।
ঘোড়ার দাঁড়িয়ে ঘুমানোর মূল কারণ হচ্ছে, ঘোড়া একবার শুয়ে পড়ার পর তার আবার উঠতে অর্থাৎ দাড়াতে কিছুটা সময় লেগে যায়। এখন যদি কোনো শিকারি প্রাণী ঘোড়ার উপর আক্রমণ চালায় তাহলে যেন ঘোড়াটি দ্রুত তন্দ্রা ভেঙ্গে পালিয়ে আত্বরক্ষা করতে পারে তার জন্য ঘোড়া দাঁড়িয়ে হালকা ঘুমিয়ে নেয়। কিন্তু গভীর ঘুম হলে কিন্তু ঘোড়াও আরাম করতে শুয়ে ঘুমায়। এখন টিউডারদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ঘোড়া দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় ঘুমোয় কি করে?কেনই বা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়না?
এর কারণ হলো ঘোড়ার দেহের বিশেষ ধরনের লিগামেন্ট ও টেন্ডন। লিগামেন্ট দুটি হাড়কে জোড়া দেয় ও পরস্পর আটকে থাকতে সাহায্য করে। আর টেন্ডন হাড় ও পেশিকে একত্রে আটকে রাখে। ঘোড়ার যখন ঘুমোতে ইচ্ছে করে তখন সে তার পায়ের বিশেষ কিছু লেগামেন্ট ও টেন্ডনকে আটকে দিতে পারে এবং সে তাই করে। ফলে শরীরের ভারের ফলেও ঘোড়া তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েনা। ফলে আরামসে দাড়িয়েই বিশ্রাম নিতে পারে ঘোড়া।
যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, "বলুনতো মাছ ঘুমানোর সময় চোখ বন্ধ করে রাখে নাকি খোলা রাখে"। প্রশ্ন শুনা মাত্রই আপনি হয়ত বলে উঠবেন, ”এটা কে না জানে? মাছ চোখ খুলে ঘুমায়। ” কিন্তু মাছ কি আর সাধে চোখ খোলা রাখে? মাছ আসলে প্রকৃতিগত ভাবেই চোখ খোলা রেখেই ঘুমায়। এর কারণ আমাদের মতো চোখ খোলা কিংবা বন্ধ করার জন্য মাছের দেহে কোনো চোখের পাতা নেই। ফলে মাছ কখনো চোখ বন্ধ করতে পারেনা। অবশ্য তার দরকারও পড়েনা।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের এক গবেষণায় মাছেদের ঘুম সমপর্কে বেশ বৈচিত্র্যময় অনেক তথ্য জানা গেছে। তাদের গবেষণা অনুযায়ী সাধারণত মাছও রাতেই ঘুমায়। এমনকি মানুষের মতো বিভিন হরমোনের সাহায্যে ঘুমকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। আরো জানা গেছে, যদি মাছ তার প্রয়োজনের বেশি আলোর সংস্পর্শে চলে আসে এবং ঘুমাতে না পারে তাহলে পরের দিন আরো বেশি সময় ধরে ঘুমিয়ে দেহের ঘাটতি পূরণ করে মাছ। এছাড়া কিছু প্রজাতির মাছ এমনও আছে যারা নিজেদের প্রয়োজনে তাদের ঘুমের রুটিন বা ঋতুচক্রও পরিবর্তন করতে পারে।
ঘুমন্ত মাছের কিছু বাহ্যিক লক্ষণ আছে যা দেখে বুঝা যায় সে মাছটি ঘুমাচ্ছে বা বিশ্রাম করছে। যেমনঃ
দীর্ঘ নিস্ক্রিয়তাঃ মাছ সাধারণত প্রায় সারাদিনই সক্রিয় থাকে তবে কোনো ক্ষেত্রে কোন মাছকে যদি অনেক সময় ধরে অচল দেখা যায় কিংবা নড়াচড়া করতে না দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে মাছটি তখন ঘুমাচ্ছে অর্থাৎ বিশ্রাম নিচ্ছে।
আশ্রয় গ্রহণঃ মাছ যখন ঘুমায় তখন অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো ছোটো গুহায় বা সরু আটোশাটো জায়গায় আশ্রয় নেয় যেন শিকারি প্রাণী তাদের আক্রমন না করতে পারে।
সংবেদনশীলতা কমে যাওয়াঃ মাছ যখন ঘুমায় বা বিশ্রাম নেয় তখন আশেপাশের ছোটোখাটো বিষয়ে সাড়া দেয়না বা দিতে পারেনা। কিন্তু যথেষ্ট বড় ব্যাপার হলে মাছ তখন আবার সংবেদনশীল হয়ে উঠে। ঘুমানোর সময় সংবেদনশীলতা কমে যায় বলেই পরিবেশের ছোটখাটো ঘটনাগুলো টের পায়না মাছেরা।
আশাকরি আজকের এই টিউন থেকে টিউডারগণ কিছু হলেও শিখতে পেরেছেন। এমন তথ্যবহুল টিউন আরো পেতে চাইলে ফলো দিয়ে রাখতে পারেন। আজকের মতো এখানেই। দেখা হবে পরবর্তী টিউনে, ইংশাআল্লাহ.
আমি মোঃ আহসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।