আমার যদি পাখির মতো ডানা হতো, তবে আমিও কী সুন্দর আকাশে উড়তে পারতাম! আসলে এটা কি সত্যি? পাখির মতো আমার ডানা থাকলেই বুঝি আমি উড়তে পারতাম? না, পাখির ডানা উড়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগে না। অনেকেই বলবেন, এটাও সম্ভব? ছোট থেকেই জেনে আসছি, পাখির ডানা দিয়ে পাখি উড়ে। এটা কি তাহলে মিথ্যা ছিল?
না, ওটাও ঠিক। অনেকেই এবার ভাবছেন, একটু আগেই বললেন, পাখির ডানা তার উড়ার কাজে লাগে না, আবার এখন বলছেন পাখি ডানা দিয়ে উড়ে। আপনি কি পাগল হয়েছেন? আসলে পাখির ডানা পাখিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলের জোগান দেয় এবং ভারসাম্যতা রক্ষা করে।
পাখি যে বায়ুতে ভেসে থাকে, তার পিছনে রয়েছে অন্য এক কারণ। সেটা হচ্ছে, পাখিদের হাড় বা অস্থিগুলো ফাঁপা হয়। আপনারা যারা পাখির গোস্ত খেয়েছেন, তারা হাড় চিবানোর সময় নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, পাখির হাড় ফাঁপা। তো এই ফাঁপা হাড়ের ফলে পাখি সহজেই বায়ুতে ভেসে থাকে।
আবার পাখির হাড়গুলোতে বায়ুপূর্ণ অনেক গহ্বর থাকে, যা তাদেরকে বায়ুতে ভাসতে সাহায্য করে।
তবে ডানা কীসের জন্য রয়েছে? এটা আসলে পাখিদের উড্ডয়ন কাজে লাগে। কেননা, এই যে ডানা এটা যে বল প্রয়োগ করে, তা কিন্তু পাখিকে শুধু সামনে নিয়ে যাওয়ার কথা। আমরা বাস্তবে কি পাখিকে শুধু একদিকেই যেতে দেখি? না, পাখি সব দিকেই যায়। তো এটা কী করে হয়, নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা হচ্ছে? তো চলুন জেনে আসি পাখির উড়ার পিছনে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা।
আমরা জানতে পারলাম পাখি তার বায়ুপূর্ণ গহ্বরের জন্য ভেসে থাকে। তো এবার জানব, পাখি উড়ে কী করে। পাখি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য ডানা ঝাঁপটায়, তখন পাখির ডানা বায়ুতে পিছনের দিকে বল প্রয়োগ করে। ফলে নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে বায়ুও পাখিকে একটি সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রদান করে। এই প্রতিক্রিয়ামূলক বল পিছন থেকে সামনের দিকে কার্যকর হয়।
এই প্রতিক্রিয়ামূলক বলের কারণেই পাখি সামনে যাওয়ার বেগ পায়। যার ফলে পাখি সামনে অগ্রসর হয়। আর বায়ুপূর্ণ গহ্বরের জন্য পাখি বায়ুতে ভেসে থাকে। ফলে সামগ্রিকভাবে পাখি বায়ুতে উড়তে থাকে।
এবার আসি পাখি যদি তার দিক পালটাতে চায়, তবে কোন দিকে কী করলে সে তার দিক পালটাতে পারবে? এই ব্যাপারটাও খুব সহজ।
ধরেন একটা পাখি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ সে তার ডান পাশে মানে উত্তর পাশে কিছু খাবার দেখতে পেল। ফলে সে নিশ্চয়ই ডান পাশে মোড় ঘুরবে। তো ডান পাশে মোড় ঘুরার জন্য তার ডান পাশের ডানাটা গুটিয়ে আনবে। ফলে বাম পাশের ডানাটা দিয়েই শুধুমাত্র বল প্রয়োগ হবে।
বাম পাশের ডানাটা দক্ষিণ পাশের বায়ুকে ধাক্কা দিবে। ফলে নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে বায়ুও পাখিকে সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া বল দিবে। যার ফলে পাখিটি ডান পাশে তথা উত্তর পাশে যাওয়ার বল পাবে। আর এই বলের কারণে পাখিটি সেই খাবারের দিকে ধাবিত হবে।
এবার যদি পাখিটিকে নিচে নামতে হয়, তবে সে কী করবে? খুব সহজ। সে তার ডানা ২টা উপরের দিকে করে রাখবে। এই উপরের দিকে করার ফলে ডানা ২টি আর বায়ুকে ধাক্কা দিতে পারবে না। ফলে সামনে পিছনে, ডানে বামে যাওয়ার কোনো বেগ থাকবে না। আর পাখির বায়ুপূর্ণ গহ্বর তাকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নিয়ে আসবে।
এবার হঠাৎ যদি নিচে মানুষ বা অন্য কোনো শিকারি প্রাণী পাখিটি দেখতে পায়, তবে কী করবে? তখন সে তার উপরের দিকে করে রাখা ডানা ২টা নিচের দিকে ঝাপটাবে। যার অর্থ নিচের বায়ুকে আঘাত করা বা নিচের বায়ুতে বল প্রয়োগ করা। আর আপনারা তো জানেনই যে, প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই প্রতিক্রিয়া বল বায়ু নিচ থেকে উপরে দিবে। যার ফলে পাখিটি উপরের দিকে ধাবিত হবে।
এভাবে ডানার সাহায্যে পাখি উড়ার জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে। পাখি তার উড়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা রক্ষা করার জন্য তার এই ২টি ডানা ব্যবহার করে।
তাই আপনি যদি এরকম ডানা ব্যবহার করেন, তবে আপনি উড়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা রক্ষা করতে পারবেন। কিন্তু, আপনার তো উড়ার আসল হাতিয়ার, মানে বায়ুপূর্ণ গহ্বরই নেই। উড়বেন কী করে? সেজন্য উড়তে চাইলে বায়ুপূর্ণ গহ্বরের মতো ডিজিটাল কিছু তৈরি করে উড়ুন। ডানা না থাকলেও আপনি উড়তে পারবেন। তবে ভারসাম্যতা রাখতে পারবেন না।
আশাকরি সকলে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
এরকমই নিত্য নতুন টিউন পেতে উপরে ফলো বাটনে ক্লিক করে দিন।
আর টেকটিউনসের পাশেই থাকুন।
ধন্যবাদ সকলকে।
আমি মো মিরাজ ইসলাম। ১ম বর্ষ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 7 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোঃ মিরাজ ইসলাম। আমি আর্টিকেল লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। এছাড়া ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিও করি। আমি টেকটিউনসে টিউন লিখে আয় করার জন্য একাউন্ট ক্রিয়েট করেছি। ধন্যবাদ।