আমার অনেক শক্তি আছে। আমার অনেক ক্ষমতা আছে। কেউ যদি এরকম কিছু বলে তবে, আপনি কী মনে করবেন? নিশ্চয়ই লোকটার অনেক শক্তি আর ক্ষমতা আছে। তো বিজ্ঞান এখানেই আপনাকে আটকে দিবে। আপনাকে বলা হবে, একজনের শক্তি আছে, এর মানে কি তার ক্ষমতা বুঝাচ্ছে? বা, এরকম প্রশ্ন করতে পারে যে, একজনের অনেক ক্ষমতা আছে, এর মানে কি তার শক্তি বুঝাচ্ছে?
এককথায়, শক্তি ও ক্ষমতা কি এক, নাকি ভিন্ন? অনেকেই বলবেন, যেটাই শক্তি, সেটাই ক্ষমতা। আবার কেউ বলবেন, না, শক্তি ও ক্ষমতা এক নয়; বরং ভিন্ন। তো কাদের কথাটা সত্য? আসুন জেনে নিই, বিজ্ঞান কী বলে।
প্রথমে আসি শক্তি কী, তা নিয়ে। শক্তি হচ্ছে কাজ করার সামর্থ্য। অর্থাৎ, আপনি যে কাজ করবেন, তা জোগান দেওয়ার মাধ্যম হচ্ছে শক্তি। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ধরেন আপনি একজন রিকশাওয়ালা। আপনার কাজ হচ্ছে পা দিয়ে রিকশা চালিয়ে যাত্রীকে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়া। তার বিনিময়ে আপনি টাকা পাবেন। তো এই যে আপনার কাজ, পা দিয়ে রিকশা চালানো, এটা কি আপনি চাইলেই করতে পারবেন? অনেকেই বলবেন, হ্যাঁ অবশ্যই পারব। আসলে বন্ধুরা, আপনাদের শক্তি যদি না থাকে, তবে চাইলেও আপনি পা দিয়ে রিকশা চালাতে পারবেন না।
কেননা, আপনি যে কাজ করবেন, তার জোগান দিবে শক্তি। মূলত, শক্তির সৃষ্টি কিংবা ধ্বংস কোনোটাই নেই। শক্তি শুধুমাত্র এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। আপনি শক্তি নেওয়ার জন্য খাবার খান। এই খাবার হজম হয়ে আপনাকে রাসায়নিক শক্তি থেকে যান্ত্রিক কিংবা তাপশক্তি দান করে। ফলে রিকশা চালানোর সময় আপনি সহজেই একটা শক্তি পেয়ে যান।
এখন, অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে, রিকশা চালানোর সময় কি তাহলে আমরা শক্তি প্রয়োগ করি? না, সেখানে বল প্রয়োগ করা হয়। বল প্রয়োগ করে কাজ সম্পাদন করা হয়, যা জোগান দেয় আমাদের শক্তি।
আশাকরি সকলে বুঝতে পেরেছেন, শক্তি আসলে কোনটা।
এবার আসি ক্ষমতা নিয়ে। ক্ষমতা হচ্ছে কাজ করার হার। একক সময়ে কোনো বস্তু যে পরিমাণ কাজ সম্পাদন করবে, সেটাই হবে তার ক্ষমতা। অর্থাৎ, ক্ষমতা পরিমাপ করা হয়, আপনি একক সময়ে কতটুকু কাজ সম্পাদন করতে পেরেছেন, তার উপর। একটা উদাহরণ দিলে আপনারা বুঝতে পারবেন।
ধরেন আপনার শক্তি ১০০ জুল (শক্তি বা কাজের একক) আর আপনি ৪ তলা বিল্ডিং এর ছাদ পর্যন্ত উঠবেন। আপনার বন্ধুর শক্তি ৫০ জুল এবং সে ২ তলা বিল্ডিং এর ছাদে উঠবে। তাহলে বলতে পারি, আপনার শক্তি বেশি। কারণ, আপনার শক্তি ১০০ জুল।
এখন আপনি ও আপনার বন্ধু বিল্ডিং এর ছাদে উঠার জন্য একজন তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে এসেছেন। কার ক্ষমতা বেশি, তা এই তৃতীয় ব্যক্তি নির্ধারণ করবে।
তো খেলা শুরু হলো। আপনার বন্ধু ১০ সেকেন্ডেই তার গন্তব্য, ওই ২ তলা বিল্ডিং এর ছাদে উঠে গেলো। আর আপনি ৪ তলা বিল্ডিং এর ছাদে উঠতে উঠতে ২৫ সেকেন্ড সময় লেগে গেলো। যেহেতু আপনারা ২জনেই শক্তি দিয়ে কাজ করেছেন, তাই আপনাদের শক্তিই কাজে রূপান্তরিত হবে।
আপনার ১০০ জুল শক্তি কাজে রূপান্তরিত হয়ে ১০০ জুলই হবে। আর আপনি সময় নিয়েছেন ২৫ সেকেন্ড। সুতরাং, কাজ দ্বারা সময় ভাগ করলেই ক্ষমতা পেয়ে যাবে ওই তৃতীয় ব্যক্তি। ৩য় ব্যক্তিটি হিসাব কষলেন। আপনার ক্ষমতা বের হলো ৪ ওয়াট (ক্ষমতার একক)।
অন্যদিকে আপনার বন্ধুরও সব শক্তি কাজে রূপান্তরিত হয়ে ৫০ জুল হয়েছে। আর তার সময় লেগেছে ১০ সেকেন্ড। তাই আগের মতোই ৩য় ব্যক্তি হিসাব কষে দেখলেন আপনার বন্ধুর ক্ষমতা ৫০ ভাগ ১০ সমান ৫ ওয়াট।
দেখুন, আপনি বেশি কাজ করেছেন বেশি শক্তি দিয়ে। আর আপনার বন্ধু কম শক্তি দিয়ে কম কাজ করেছে। তবুও দেখা গেলো আপনার চাইতে আপনার বন্ধুর ক্ষমতা বেশি।
তাই এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, যার শক্তি বেশি, তার ক্ষমতা কমও হতে পারে!
আপনাদের কী মতামত?
এরকম নিত্য নতুন টিউন পেতে টেকটিউনসের পাশেই থাকুন।
আমি মো মিরাজ ইসলাম। ১ম বর্ষ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ, ঠাকুরগাঁও। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 7 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মোঃ মিরাজ ইসলাম। আমি আর্টিকেল লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। এছাড়া ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরিও করি। আমি টেকটিউনসে টিউন লিখে আয় করার জন্য একাউন্ট ক্রিয়েট করেছি। ধন্যবাদ।