আসসালামুয়ালাইকুম টেকটিউনবাসি। আশাকরি, সকলে ভালো আছেন। আজকে আবারও আমি বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা হয়তো অনেকেই চোরাবালি নামটা শুনে থাকবেন। চোরাবালিতে পড়ে গিয়ে অনেকেই মারা যায়। কেননা, এখানে বালিগুলো খুব নরম আর নিচের দিকে মাটি না থাকায়, এখানে পড়লেই আপনারা নিচের দিকে ঢুকে পড়বেন।

১. চোরাবালিতে ঢুকে পড়ি কী করে?

আপনারা সকলেই জানেন, আমরা যে দাঁড়িয়ে আছি, তার জন্য বিজ্ঞানের একটা নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে। সেটা হচ্ছে, প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আমরা যখন দাঁড়িয়ে থাকি, তখন আমরা মাটিতে বল প্রয়োগ করি। ফলে মাটিও আমাদের দিকে একটি সমান ও বিপরীত বল প্রয়োগ করে। ফলে আমরা মাটিতে ঢুকে যাই না।

কিন্তু চোরাবালিতে আমরা যে বল প্রয়োগ করি, তা বালিগুলোকে ঠেলে নিচের দিকে নিয়ে যায়। কারণ, বালিগুলো নরম হওয়ায় আমাদের বল সহ্য করতে পারে না। ফলে নিচের দিকে চলে যায়। আর যার কারণে আমরা প্রতিক্রিয়ামূলক বল পাই না। ফলে আমরা চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে আমরা চোরাবালিতে নিচের দিকে ঢুকে যাই।

তো এই যে ঢুকে পড়া, এক্ষেত্রে কী করলে আমরা সহজেই ঢুকে পড়ব না? দাঁড়িয়ে থাকলে, নাকি শুয়ে থাকলে? অনেকেই বলবেন, এসময় প্রাণ যায় যায় অবস্থা, আর আপনি বলছেন শুয়ে থাকার কথা!

আসলে এটাই সত্য যে, আপনারা যদি চোরাবালিতে পড়ে যান, তবে দাঁড়িয়ে না থেকে শুয়ে থাকলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি! কিন্তু কেন? তো চলুন জেনে আসি, এর পিছনে বিজ্ঞানের কোন নীতি কাজ করছে। এটা জানার জন্য আমাদেরকে চাপের কথা আগে জানতে হবে।

২. চাপ কী?

অনেকেই বলবেন, এটা বলার জিনিস নাকি? এটা তো অনুভব করার জিনিস। আমরা যখন কোনো ফ্যাসাদে পড়ি, বা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমরা বলি যে, আমরা চাপের মধ্যে রয়েছি।

মূলত আমাদের অনুভব করা চাপ, আর বিজ্ঞানের রাশি চাপ এক নয়। চাপের সংজ্ঞা হচ্ছেঃ একক ক্ষেত্রফলের কোনো বস্তুর উপর যে বল প্রয়োগ করা হয়, তারপরিমাণই হচ্ছে চাপ। এখানে বল বলতে রাশি বলকে বুঝানো হচ্ছে।

তার মানে আমরা যে বল প্রয়োগ করি, তা যার উপর করি, তার ক্ষেত্রটুকু দিয়ে ভাগ করলেই আমরা চাপ পেয়ে যাব। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যেখানে চাপ বেশি, সেখানে কাজ তাড়াতাড়ি হয়। তাহলে আমরা আমাদের উদাহরণটা দিয়ে বিষয়টা বুঝে আসি।

৩. চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে থাকলে চাপ কত?

প্রথমে আসি আমরা দাঁড়িয়ে থাকলে কী ঘটে সেটা নিয়ে। ধরেন, আমরা চোরাবালিতে ১০ নিউটন বল প্রয়োগ করছি। আমাদের দাঁড়িয়ে থাকার ফলে আমরা চোরাবালির যেটুকু জায়গা দখল করেছি, তা আমাদের পা দুটির মধ্যেই বিদ্যমান। অর্থাৎ, আমরা আমাদের পা ২টি দিয়ে চোরাবালির সামান্য অংশ দখল করে রেখেছি। ধরেন, পা ২টি মাত্র ০.১ বর্গমিটার ক্ষেত্রফল দখল করেছে। ফলে ১০ নিউটন বল মাত্র ০.১ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের উপর প্রযোজ্য হচ্ছে। তাহলে চাপ হবে বল ভাগ ক্ষেত্রফলের সমান। যার মান হচ্ছে ১০০ প্যাসকেল (চাপের একক)।

৪. চোরাবালিতে শুয়ে থাকলে চাপ কত?

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমরা শুয়ে থাকলেও একই বল, মানে ১০ নিউটন বল প্রয়োগ করব। কিন্তু ক্ষেত্রফল বেশি হবে। কেননা, আমাদের সারা শরীর তখন চোরাবালির মধ্যে বিরাজমান। ধরেন, আমাদের শরীর মোটামুটি ১ বর্গমিটার। তাহলে চাপ হবে, বল ভাগ ক্ষেত্রফল, যার মান ১০ প্যাসকেল।

৫. কোথায় চাপ বেশি তা হিসাব করি

এবার তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, শুয়ে থাকলে চাপের মান ১০ প্যাসকেল। আর দাঁড়িয়ে থাকলে চাপের মান ১০০ প্যাসকেল। আমি আগেই বলে দিয়েছি, যেখানে চাপ বেশি, সেখানে কাজ তাড়াতাড়ি হবে। সুতরাং, দাঁড়িয়ে থাকলে চাপ বেশি হওয়ায়, কাজ তাড়াতাড়ি হবে; তার মানে আপনারা তাড়াতাড়ি চোরাবালিতে ঢুকে যাবেন। আর শুয়ে থাকলে চাপ কম হওয়ায়, আপনারা সহজেই চোরাবালিতে ঢুকে পড়বেন না। কেউ আপনাদেরকে সাহায্য করার সময় কিছুটা বেশি পাবে, যদি চোরাবালিতে পড়া মাত্রই আপনি দাঁড়িয়ে না থেকে শুয়ে পড়েন।

এর মানে এই নয় যে, আপনি চোরাবালিতে শুয়ে থাকলে ঢুকবেন না; বরং, চোরাবালিতে পড়লে নিচের দিকে ঢুকতেই থাকবেন। তবে দাঁড়িয়ে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি নিচে ঢুকে পড়বেন। আর শুয়ে থাকলে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কিছুটা বেশি সময় পাবেন; এর মধ্যে কেউ আপনাদেরকে সাহায্য করলে আপনারা বেঁচেও যেতে পারেন।

সুতরাং, চোরাবালিতে পড়লে নিজেকে বাঁচানোর জন্য দাঁড়িয়ে না থেকে শুয়ে থাকা বেশি গ্রহণীয়।
আপনাদের কী মতামত?