প্রথমবার বিজ্ঞান মেলায় তোমার তৈরি করা কোনো প্রজেক্ট দিতে যাচ্ছো? অথবা ক্লাসে ম্যাম বা স্যার তোমার নিজের তৈরি করা কোনো সাইন্স প্রজেক্ট নিয়ে যেতে বলেছে? কী তৈরি করা যায় সেটা ভেবে পাচ্ছো না? অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে বিভিন্ন প্রজেক্ট দেখার পর শেষে সবকিছুই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে?
তাহলে তোমার জন্যই লেখা হয়েছে আজকের এই লেখাটি।
আবার, যারা এ ধরনের প্রজেক্ট তৈরি করা শিখতে চাও এবং অন্যকে শেখাতে চাও তারাও পড়ে দেখতে পারো চাইলে।
চলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক কীভাবে তৈরি করবে সবচেয়ে সহজ দুটি বিজ্ঞান প্রজেক্টঃ লাভা ল্যাম্প এবং ওয়াটার ফিল্টার।
১. লাভা ল্যাম্প তৈরি
সাধারণত দুইভাবে লাভা ল্যাম্প তৈরি করা হয়।
১. অ্যালকা সেল্টজার দিয়ে
২. ভিনেগার + বেকিং সোডা দিয়ে
১. অ্যালকা সেল্টজার দিয়ে
উপকরণ
১. ১টি কাঁচের গ্লাস অথবা জার,
২. রং (তরল হলে ভালো। যাতে পানির সাথে সুন্দর করে মিশে যায়। )
৩. তেল
৪. অ্যালকা সেল্টজার (Alka Seltzer)
৫. Puck Light / Under Cabinet Light ; যার উপর কাঁচের গ্লাসটি/জারটি বসানো যাবে এবং লাইট থেকে আসা আলো গ্লাসের/জারের ভিতরের তরল আলোকিত করে রাখবে। (অপশনাল)
যেভাবে তৈরি করবে
১. একটি কাঁচের গ্লাস/জার নাও। তাতে ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি পরিমাণ পানি নিয়ে নাও।
২. এবার এই পানিতে কিছুটা রং যোগ কর। তোমার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো রং ব্যবহার করতে পারো। তবে এক্ষেত্রে গাঢ় রংগুলো ব্যবহার করলে ভালো হয়। কারণ গাঢ় রংগুলো অন্যান্য রং থেকে বেশি স্পষ্ট হয়ে থাকে এবং আমাদের চোখে ধরা দেয় সবার প্রথমে। তাই গাঢ় রঙের তৈরি লাভা ল্যাম্পগুলো দেখতে সুন্দর লাগে। রং যোগ করে পানিটা একটু ঝাঁকিয়ে নিয়ে পানির সাথে রং টা মিশিয়ে নাও। তরল রং ব্যবহার করতে হবে। তবে অন্য রংও ব্যবহার করতে পারো। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে রংটাকে পানির সাথে ভালো করে মিশে যেতে হবে।
৩. তারপর গ্লাসের/জারের যে অংশটুকু খালি রয়েছে সেটুকু তেল ঢেলে পূর্ণ করে নাও। তবে একেবারে উপচে পড়ে এমনভাবে গ্লাসটি/জারটি পূর্ণ করা যাবে না। উপরের দিকে সামান্য একটু জায়গা খালি রাখতে হবে।
৪. এবার লাইটের উপর গ্লাসটি রেখে দাও। লাইট না থাকলে লাভা ল্যাম্পটি দিনের বেলায় তৈরি করতে চেষ্টা করবে।
৫. তারপর অ্যালকা সেল্টজারের বোতল থেকে একটি ট্যাবলেট নিয়ে গ্লাসটি/জারটির মধ্যে দিয়ে দাও। ট্যাবলেটটি দেওয়ার সাথে সাথে দেখবে নিচ থেকে উপরের দিকে বুদবুদ উঠতে থাকবে।
তৈরি হয়ে গেলো অ্যালকা সেল্টজার দিয়ে তৈরি সুন্দর লাভা ল্যাম্পটি।
২. ভিনেগার + বেকিং সোডা দিয়ে
উপকরণ
১. একটি কাঁচের গ্লাস অথবা জার,
২. রং (তরল- যেনো পানির সাথে সুন্দর করে মিশে যায়। )
৩. তেল
৪. ভিনেগার
৫. বেকিং সোডা
৬. উপরের ছবিটির মতো এমন একটি লাইট (Puck Light / Under Cabinet Light) ব্যবহার করতে হবে যার উপর কাঁচের গ্লাসটি/জারটি বসানো যাবে এবং লাইট থেকে আসা আলো গ্লাসের/জারের ভিতরের তরল অংশটি আলোকিত করে রাখবে। (অপশনাল)
যেভাবে তৈরি করবে
১. একটি কাঁচের গ্লাস অথবা জার নাও।
২. তাতে দু'চামচ বেকিং সোডা দিয়ে দাও।
৩. তারপর তেল ঢেলে গ্লাসটি/জারটি পূর্ণ করো। একেবারে উপচে পড়ে এমনভাবে গ্লাসটি/জারটি পূর্ণ করো না। উপরের দিকে সামান্য একটু জায়গা খালি রেখো।
৪. অপর একটা পাত্রে ১.৫ চামচ ভিনেগার নিয়ে তাতে সামান্য পরিমাণ রং যোগ করো। তোমার পছন্দমতো যেকোনো গাঢ় রং ব্যবহার করতে চেষ্টা করো। রংটা যেন পানির সাথে ভালোভাবে মিশে যায় সে বিষয়টা নিশ্চিত করো।
৫. এবার উপরে উল্লিখিত লাইটটির উপর গ্লাসটি/জারটি বসাও। লাইটটি না থাকলে দিনের বেলায় পরীক্ষাটি করার চেষ্টা করবে। এতে করে লাভা ল্যাম্পের ভিতরটা ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যাবে।
৬. এখন গ্লাস/জারের ভিতরে পূর্বে তৈরি করা ভিনেগার এবং রঙের মিশ্রণটি ঢেলে দাও। একটু পরেই দেখতে পাবে গ্লাস/জারের নিচের অংশ থেকে বুদবুদ উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে।
এভাবেই ভিনেগার এবং বেকিং সোডা দিয়েও তৈরি করা যাবে লাভা ল্যাম্প।
২. ওয়াটার ফিল্টার তৈরি
ওয়াটার ফিল্টার কয়েকভাবে তৈরি করা যায়। আমরা আজকে জানবো, কিভাবে আমাদের আশেপাশে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি উপাদান দিয়ে সহজভাবে এটি তৈরি করে ফেলা যায়।
উপকরণ
ওয়াটার ফিল্টার তৈরি করার জন্য যে উপাদানগুলো লাগবেঃ
১. একটি প্লাস্টিকের খালি বোতল। (ততটুকু বড় নিবে যতটুকু বড় ওয়াটার ফিল্টার তৈরি করতে চাও)
২. তুলা/পরিষ্কার এক খণ্ড কাপড়
৩. বালি
৪. মাটি (অপশনাল)
৫. কয়লা (ছোট ছোট। চাইলে বড় কয়লাগুলো ভেঙে ছোট করতে পারো। )
৬. কয়েক ধরনের নুড়ি পাথর।
যেভাবে তৈরি করবে
১. প্লাস্টিকের খালি বোতলটি মাঝ বরাবর কেটে নাও। তারপর বোতলের নিচের দিকের অংশটি একটি সুন্দর পরিষ্কার জায়গায় নিয়ে বসাও যেনো খোলা দিকটা উপরের দিকে মুখ করে থাকে। এরপর কেটে রাখা বোতলের উপরের অংশটি, নিচের অংশটির উপরে এমনভাবে বসাও যেন বোতলের মুখটি (যেখানে ক্যাপ লাগানো থাকে) পূর্বে স্থাপন করা বোতলের অংশটির ভেতরে থাকে। বোতলের ক্যাপটি যেন বোতলেই লাগানো থাকে। এই ছবিটির মতো করে ধাপটি সম্পন্ন করো।
২. এবার, প্রথমে কিছু তুলা নিয়ে বোতলের ভিতর প্রবেশ করাও। এমনভাবে তুলাটি স্থাপন করতে হবে যেন কোনো দিকে ফাঁকা না থাকে। তা নাহলে উপর থেকে পানি ঢালা হলে তুলা উপর দিয়ে না গিয়ে পাশের ফাঁকা জায়গা দিয়ে নিচে চলে যেতে পারে। নিচের উপাদানগুলোও একইভাবে স্থাপন করতে হবে।
৩. তুলার জায়গায় কাপড় ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে বোতলের ক্যাপটি সরিয়ে কাপড় দিয়ে বোতলের মুখটা শক্ত করে বাঁধতে হবে।
৪. তুলার উপর কিছু বালি নাও।
৫. কিছু মাটি ঢেলে নাও। (সাধারণত বাগানে যে ধরনের মাটি ব্যবহার করা হয় সেগুলো। তবে অন্যগুলো হলেও চলবে। )
৬. ভেঙে রাখা কয়লাগুলো দিয়ে দাও।
৭. তারপর কয়েক ধরনের নুড়ি পাথর উপরে ছড়িয়ে দাও। ছোট নুড়ি পাথরগুলো নিচে এবং বড় নুড়ি পাথরগুলো উপরের দিকে স্থাপন করবে।
এখন, কিছু ময়লাযুক্ত অস্বচ্ছ পানি নুড়ি পাথরগুলোর উপর একটু একটু করে ঢালতে থাকলে দেখবে, ময়লা পানিগুলো ফিল্টারের ভেতর দিয়ে গিয়ে বালি-কাদার স্তর পেরিয়ে বোতলের নিচের দিকের অংশে আস্তে আস্তে জমা হচ্ছে এবং যা কিনা দেখতে একেবারে পরিষ্কার টলটলে স্বচ্ছ পানির মতো। তবে এ পানি খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়। তাই পান করার আগে অবশ্যই ফুটিয়ে নিতে হবে।
নুড়ি পাথরগুলো অপরিষ্কার পানির তলানিতে জমে থাকা বড় কণাগুলো দূর করে, বালি সূক্ষ্ম এবং মিহি অপদ্রব্যগুলো দূর করে। কয়লা অপরিচ্ছন্ন অংশটুকু শুষে নেয় এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে তোমার নিজের হাতে বানানো পানির ফিল্টার।
পরবর্তীতে আরও এরকম বিজ্ঞান প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং সেগুলো কীভাবে তৈরি করা যায় তাও বর্ণনা করা হবে।
তাই নিয়মিত এ ধরনের লেখা পেতে টেকটিউনস এর সাথেই থাকো।
আমি জান্নাতুল ফেরদৌস ইভা। এসএসসি ২০২২, ময়মনসিংহ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 14 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 8 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 8 টিউনারকে ফলো করি।