মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছিলাে লাখাে বছর আগে। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতাে, খাবার পুড়িয়ে খেতাে। আদিকালের মানবেরা পাথরে পাথর ঠুকে তৈরি করতাে আগুনের ফুলকি। তারপর সেই ফুলকি আগুন ধরাতাে শুকনাে ঘাসে। পাথরে পাথরে ঘষলে যে আগুন জ্বলে এটাই হলাে দিয়াশলাই আবিষ্কারের আদি কথা।
আধুনিক দিয়াশলাইতেও আসলে ঘষেই আগুন জ্বালানাে হয়। প্রথম থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই পাথর ঘষে আগুন জ্বালানাের পদ্ধতিই প্রচলিত ছিলাে। সেই আদিকাল থেকে রােমান সভ্যতার যুগ পর্যন্ত এর খুব একটা উন্নতি হয়নি। রােমান সভ্যতার কালেও আগুন জ্বালানাের জন্য দুটো পাথর ঠুকার ব্যবস্থা ছিলাে। তারপর সেই আগুনের ফুলকি যাতে দ্রুত আগুন ধরে যায় তার জন্য কাছে রাখা হতাে (Sulpher) সালফার মেশানাে শুকনাে কাঠ। মধ্যযুগে এসে এই আগুন জ্বালানাের জন্য পাথর ঠুকার পদ্ধতির সামান্য পরিবর্তন। হয়। সাধারণ পাথরের স্থলে আসে চকমকি পাথর এবং স্টীল (Steel)। পরে এই পাথরে বা লােহায় ঘষা দিলে যে ফুলকি ছড়ায় তা দিয়ে আগুন জ্বালাবার জন্য রাখা হতাে আধাে পােড়া কাপড় (Charred rages), শুকনাে ব্যাঙের ছাতা | (Dried fungus) ইত্যাদি। এসব পদার্থে খুব দ্রুত আগুন ধরে যায়। আধুনিক দিয়াশলাই তৈরির পথ সহজ হয় ফসফরাস আবিষ্কারের পর থেকে৷ ফসফরাস অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ। সামান্য একটু তাপ পেলেই তাতে আগুন ধরে যায়।
১৬৮১ সালে রবার্ট বয়ল (Robert Boyle) নামে জনৈক ইংরেজ এক নতুন ধরনের দিয়াশলাই আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। তিনি এক টুকরাে কাঠকে সালফার এবং ফসফরাসের মিশ্রণে ডুবিয়ে তৈরি করেন দুটো কাঠি। এদুটো ঘষা দিলেই আগুন জ্বলে ওঠতাে। কিন্তু জিনিসটা তিনি নিরাপদ করতে পারেন নি। জিনিস দুটো ঘষা দিলেই বিপদজনক ভাবে আগুন জ্বলে ওঠতাে। তাই আগুন জ্বালানাে যতােটা সহজ ছিলাে তারচেয়ে বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা ছিলাে আরাে বেশি। তবে নিরাপদ দিয়াশলাই (Saftey Match) সর্বপ্রথম যিনি আবিষ্কার করেন তিনি ইংল্যাণ্ডের জনৈক ডাক্তার মিঃ জন ওয়াকার (John Walker)।
একটি কাঠের টুকরাের উপর কাগজ এটে দেন। তার উপর মাখানাে হয় ফসফরাস। এভাবেই তিনি আবিষ্কার করেন এক ধরনের দিয়াশলাই। ফসফরাস মাখানাে কাঠি এবং ফসফরাস মাখানো কাগজে ঘষা দিয়ে আগুন জ্বালানোর পদ্ধতিযুক্ত দিয়াশলাই সর্বপ্রথম তৈরি হয় ১৮৩৩ সালে অস্ট্রিয়াতে এবং জার্মানীতে। কিন্তু সেখানেও একটি বিপদ রয়েই গিয়েছিলাে। সাদা এবং হলুদ রঙের ফসফরাস ছিলো খুবই বিপদজনক। যারা এই ধরনের দিয়াশলাই কারখানায় কাজ করতাে সেখানে ভয়ানক দাহ্য ও বিষাক্ত পদার্থ ফসফরাস নিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতাে। শ্রমিকদের প্রায়ই বিপদ ঘটতাে। বিপদ আরাে ছিলাে। এই ধরনের ভয়ানক দাহ্য পদার্থ ব্যবহার আন্তর্জাতিক চুক্তিরও পরিপন্থী ছিলাে। অবশেষে এর পরিবর্তে প্রবর্তন করা হলাে বিষাক্ত নয় এমন ধরনের লাল ফসফরাস। এই ফসফরাস দিয়েই অবশেষে তৈরি হলাে সত্যিকার নিরাপদ দিয়াশলাই। এ ধরনের সত্যিকার নিরাপদ দিয়াশলাই সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয় সুইডেনে ১৮৪৪ সালে। এতে আধুনিক দিয়াশলাইয়ের মতােই তৈরি করা হয় একটি কাঠের বাক্স। তার উপর দিকটা থাকে কাগজে মােড়া। বাক্সর দুপাশে মাখানাে হয় লাল ফসফরাসের প্রলেপ। এমনি করে দিয়াশলাই লাভ করে তার আধুনিক রূপ।
আমি Saadman Rafeed Islam Promise। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।