একবার ভাবুন যে, আপনি আপনার পুরনো স্মৃতিগুলো স্ক্রল করে দেখছেন। ভালোভাবেই দেখছেন জীবনের সেরা মুহূর্তগুলো, গোপন কোন কর্ম কিংবা ফিরিয়ে আনছেন প্রিয় মানুষদের স্মৃতি।
এবার কল্পনা করুন এমন এক অরাজক ভবিষ্যতের, যেখানে হ্যাকাররা আপনার সেইসব স্মৃতি হ্যাক করে নিয়েছে এবং অর্থ না দিলে তা মুছে ফেলার হুমকি দিচ্ছে!
হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা বলছেন, পূর্বের স্মৃতিশক্তিকে এভাবে ফিরে দেখার প্রযুক্তির উদ্ভব হলে তারা মোটেও বিস্মিত হবেন না। কেননা তা কয়েক দশকের মধ্যে সম্ভব। প্রযুক্তি এখন সে পথেই হাঁটছে!
বিষয়টি এক দিকে যেমন খুব ভালো, অন্যদিকে রয়েছে তার বিরাট ক্ষতিকর দিক। যেমন, আপনার ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা জিমেইল আইডি নয়, বরং তখন হ্যাকাররা সরাসরি আপনার ব্রেইনকে হ্যাক করে আপনার সকল কর্মকান্ড নিমিষেই দেখে নিতে পারবে।
ব্রেইনে থাকা লজ্জার ও গোপনীয় স্মৃতির ভান্ডার, কিছু ভালবাসার স্মৃতি, কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি, কোন পাপের স্মৃতি যা আপনাকে সামাজের চোখে কলঙ্কিত করে তুলবে, এমন কিছু বিষয় যেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে পড়লে আপনি সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না।
চিন্তা করুন সে সমস্ত তথ্য যদি কোন হ্যাকারের কাছে চলে যায়, তাহলে সে কি পরিমাণ অর্থ দাবী করতে পারে! আর সেগুলো প্রকাশ হবার ভয়ে সেই পরিমাণ অর্থ হ্যাকারকে দিতে আপনি কতোটা বাধ্য হবেন!
আপনি এখন ভাবতে পারেন, ব্রেইন হ্যাক করা কি আদৌ সম্ভব? আপনার কাছে এমনটি মনে হলে বিগত কয়েক বছর আগের ব্রেইন হ্যাকিংয়ের একটি তথ্য দিই।
২০১২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক একটি গবেষণা করেন। গেমিংয়ের সময় হেডসেট ব্যবহার করা হয়, এমন একটি জনপ্রিয় গেমিং থেকে মানুষের ব্রেনওয়েভ পর্যবেক্ষণ করে ব্যাংক কার্ডের পিন নম্বরের মতো তথ্য বের করে ফেলেছিলেন গবেষক দলটি!
বিজ্ঞানীরা ইমোটিভ ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস নিয়েছিলেন, যার দাম প্রায় ২৯৯ ডলার। ব্যবহারকারী যা চিন্তা করে তা তাদের কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে, এভাবে ডিভাইসটি গেম নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়।
বিজ্ঞানীরা তখন তাদের বিষয়বস্তুকে একটি কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসিয়ে তাদের ব্যাঙ্ক, মানুষ এবং পিন নম্বরের ছবি দেখান। তারপরে তারা মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে আসা রিডিংগুলি ট্র্যাক করে, যা বিশেষত P300 নামের একটি সংকেত।
পুলিশরা রিমান্ডে আসামীদের তথ্য বের করতে সন্দেহজনক তথ্যগুলো আসামীদের সামনে তুলে ধরলে তাদের ব্রেইন থেকে সঠিক তথ্যটি বের করতে পারবেন।
এটা তো গেল আজ থেকে দশ বছর আগের কাহিনি। তাহলে ভবিষ্যত প্রযুক্তি কতটা শক্তিশালী হবে, কত বেশি ডেটা ব্রেইন থেকে হ্যাক করতে পারবে সেটির অনুমান করতে পারছেন তো এবার?
বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ধনী এলন মাস্কসহ অনেক ধনী ব্যক্তিই ব্রেইন হ্যাকিং নিয়ে কাজ করছে। অনলাইন ব্যাংক ব্রেইনট্রির উদ্যোক্তা ব্রায়ান জনসন প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কার্ণেল গঠন করেছেন। এই কোম্পানির উদ্দেশ্য হল এমন একটি ইলেক্ট্রনিক চিপ নির্মাণ করা যা বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড করতে পারে আর প্রয়োজন অনুসারে সেসব তথ্য মস্তিষ্কে প্রেরণ করতে পারে।
ব্রেইন হ্যাকিং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে ইমোটিভও, তবে একটু আলাদাভাবে। তাদের ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফি প্রযুক্তি মস্তিষ্কের কার্যবিধি রেকর্ড করতে সক্ষম।
বর্তমানে রয়েছে মাথায় হেডসেট লাগিয়ে ব্রেইন দিয়ে গেইম কন্ট্রোলের প্রযুক্তি। ফেসবুক কোম্পানিও বলেছে, তারা ক্যাপের মত একটি ডিভাইস নিয়ে আসবে যা প্রতি মিনিটে ব্রেইন থেকে ১০০ শব্দ টাইপ করার ক্ষমতা দেবে।
সম্প্রতি তৈরী হয়েছে ব্রেইনের সাহায্যে কম্পিউটার উইন্ডোজ পরিচালনার প্রযুক্তি। এভাবে কম্পিউটারের সাথে ব্রেইনের ডেটা আদান প্রদানের প্রযুক্তি চালু হতে চলেছে। আর তখনই বিভিন্ন পন্থায় শুরু হবে ব্রেইন হ্যাকিং।
আমি মুফতি রাকিবুল ইসলাম হোযায়ফী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তি যেন আপনাকে আল্লাহকে ভুলিয়ে না দেয়।